somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ প্রিয়তমা তোমার জন্য ভালোবাসা

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভাবতে অবাক লাগে,একটা সময় যে মানুষটাকে ভালবেসে পৃথিবীটা ফিরিয়ে দিতে পারতাম আজ আমি তাকেই এত ভয়াবহ রকম ঘৃণা করছি! আজকাল ইচ্ছে হয় সুসানকে খুন করে ফেলি। ওকে খুন করার ইচ্ছেটা খেয়ালি চিন্তা না। আমি আসলেই ওকে খুন করতে চাইছি। আমার লাইসেন্স করা পিস্তলটা বাসাতেই আছে। ইচ্ছে করলেই ওকে খুন করা যায়। ওকে খুন করলে না হয় খুব বেশী হলে জেলেই যাব। ওর মত ভন্ডটাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে জেলে যেতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই।

আজ সুসান বাসায় ফেরার সাথে সাথেই ওকে খুন করতে হবে। আরো ঘন্টাখানেক বাকি আছে ওর বাড়ি ফিরতে।

ড্রয়ার থেকে পিস্তলটা বের করা দরকার। ওয়ারড্রবের কোন ড্রয়ারে যে পিস্তলটা রেখেছিলাম কে তাও খেয়াল নেই। সুসান প্রায়ই বলে পিস্তলটা ব্যাংকের লকারে রেখে আসতে। না রেখে এসে ভালই করেছি। পিস্তলটা হাতের কাছে আছে বলেই হয়তো আজ ওকে খুন করার ইচ্ছাটা হয়তো আরো তীব্র হয়েছে ।

এই ড্রয়ার ঐ ড্রয়ার খুজে চলছি, রাজ্যের জিনিসপত্র দেখছি, অথচ পিস্তলটাই পাচ্ছি না। সুসানের ড্রয়ারে ভেবেছিলাম পিস্তলটা থাকতে পারে। ওখানে পিস্তলটা না পেলেও একটা ডায়েরী পেলাম। ডায়রীটা পড়া দরকার। কিন্তু তার আগে দরকার পিস্তলটা।

আরো কিছুক্ষণ খোজাখুজির পর পিস্তলটা পাওয়া গেল। এটাকে হাতের কাছেই রাখি। বেশ্যাটা আজ বাড়ি ফেরার সাথে সাথে ওকে গুলি করব। তার আগে ওর ডায়েরীটা পড়ে ফেলি।

ডায়েরীর ওপরে লেখাঃ তোমাকে নিয়ে।


পৃষ্ঠা ১
এরিক,
আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয়- তোমার সাথে দেখা না হলে, কিংবা তোমার ভালবাসা না পেলে আমার জন্ম হওয়াটাই মিথ্যা হয়ে যেত। বিশ্বাস করো, আমার এখন আর কিচ্ছু দরকার নেই। আমার কোনো চাহিদা নাই। আমি কেবল মনে প্রাণে চাই যেন প্রতিদিন সকালে উঠে আমি তোমার মুখটা দেখতে পাই। এরচেয়ে বেশী আর কিচ্ছু চাই না এরিক।

পৃষ্ঠা ২
এরিক,
তুমি কখনও আমাকে বলেছো, “আমি তোমাকে ভালবাসি”- এটা আমার স্মৃতিতে নেই। তুমি গত তিন বছরে একবারও বলনি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। প্রয়োজন নেই বলার। এ নিয়ে সত্যিই আমার কোনো অভিযোগ নেই। কারণ, যে মুহূর্তগুলোতে তুমি আমার দিকে তাকাও আমি তাতে দেখতে পাই-তুমি আমাকে ভালোবাসো; যখন তুমি আমাকে স্পর্শ কর তখন আমি তাতে ভালোবাসার আবেশ পাই। সত্যি বলতে তোমার ভালবাসাটা আমার কাছে অক্সিজেনের মত মনে হয়। আমার চারপাশে ভালোবাসাটাকে তুমি এমন ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছো যে মুখ ফুটে আর “ভালোবাসি” কথাটা বলার প্রয়োজন নেই।

পৃষ্ঠা ৩
এরিক,
তুমি এত বোকা কেন বলোতো? আজকে শপিংমলে উইনের সাথে দেখা হল। বাড়ি ফেরার পথে তোমাকে আমি বললাম যে একটা সময় উইনের সাথে আমার বন্ধুত্বর চেয়ে কিছু বেশী একটা সম্পর্ক ছিল। কথাটা শোনার পর থেকে তোমার মুখ এমন কালো হয়ে গেল কেন? গ্রেড এইটের সেই ব্যাপারটাকে নিয়ে তুমি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিলে কেন? উইনের সাথে যা ছিল তা হয়তো আদৌ প্রেম ছিল না। হয়তো কেবলি মোহ ছিল। আর আজকের এই আমি তো শুধুই তোমাকে ভালবাসি। এইটুকু কেন তুমি বুঝতে পারলে না?

পৃষ্ঠা ৪
এরিক,
তুমি বদলে যাচ্ছো। তুমি আমাকে অবিশ্বাস করা শুরু করেছো। তুমি মুখ ফুটে কিছুই বলনা। তবু আমি বুঝি- তুমি আমাকে অবিশ্বাস কর। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটাকে কেন এত পলকা ভাবছো? কেন তুমি বোঝোনা যে তোমার ভালবাসাটাকেই আমি শেষ আশ্রয় ভাবি? আজকাল আমার চারপাশের বাতাসটাকে অসহ্য লাগে এরিক। প্লিজ তুমি আমার দিকে আবার আগের মত করে তাকাও। আবার আগের মত করে স্পর্শ কর।


পৃষ্ঠা ৫

এরিক,
আমরা আজকাল ভালবাসার অভিনয় শুরু করেছি। প্রতিদিন রাতে এক সাথে ঘুমাতে যাই, পাশাপাশি শুয়ে থাকি, কখনও আমার শরীর তোমার স্পর্শ পায়, কিন্তু সব মিলিয়ে আমার মনে হয় যেন আমাদের দুজনার মাঝে একটা বিষধর সাপও শুয়ে থাকে। আমাদের অনবরত ভালবাসার অভিনয়ে সময় সেই সাপটা যেকোনো সময় ফনা তুলে মাথা জাগিয়ে ভালোবাসাটাকে আলগা করে দিচ্ছে। এমন কেন হচ্ছে এরিক? আমার দুস্বপ্নগুলোও তো এত বিশ্রী ছিল না।

পৃষ্ঠা ৫
এরিক,
মাঝে কিছুদিন তোমার চোখের চাহনীতে ভালোবাসা দেখিনি। কেমন একটা নিষ্পৃহ ভাব নিয়ে তুমি আমার দিকে তাকাতে। কিন্তু আজকাল আমার কেন জানি মনে হয় তোমার চোখের ভিতর আমি সেই বিষধর সাপটাকে দেখতে পাই। তুমি কি আমাকে খুন করতে চাইছো? কি জানি হয়তো আমার ভুলও হতে পারে!

পৃষ্ঠা ৬
এরিক,
তুমি আসলেই আমাকে হত্যা করতে চাইছো। এরিক তুমি উন্মাদ! তুমি বদ্ধ উন্মাদ!

পৃষ্ঠা ৭
এরিক
আমার আজকাল পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আমি জানি, আজ কিংবা কাল তুমি আমাকে খুন করবেই। আমি যতই বলি না কেন উইনের প্রতি একটা সময় আমার যে অনুভূতি ছিল তার ছিটেফোটাও এখন নেই, সেটা তুমি কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। আবার আমি যদি পালিয়ে যাই তাহলে তোমার ভেতরে এই বিশ্বাসটা আরো দৃঢ় হবে যে আমি তোমার চেয়ে উইনকেই বেশী প্রাধান্য দেই। অদ্ভুত দোলাচলের মাঝে বসবাস করছি আমি!

পৃষ্ঠা ৮
এরিক
আমার ভিতরে আরেকজন মানুষ বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। আমি মা হতে চলেছি। আমার ভিতরে তোমার সন্তান বেড়ে উঠছে এরিক! কি দারুন ব্যাপার তাইনা? কিন্তু আমি এই খবরটা তোমাকে দিতে ভয় পাচ্ছি। তোমার যদি মনে হয় যে এই সন্তান তোমার না! যদি সন্তানের খবর দেয়া মাত্র তুমি কোনো সুযোগ না দিয়ে আমাকে হত্যা কর? আমার সন্তানটাকে আমি এখন পৃথিবীর সবচাইতে বেশী ভালবাসি। হয়তো তোমার থেকেও বেশী ভালোবাসি এরিক!


এইটুকু পড়ার পর আমার মাথাটা কেমন খালি খালি মনে হল। সুসানের প্রতি আমার আচরণ ভেবে নিজের প্রতি বিশ্রী রকম বিতৃষ্ণা লাগল। আমার অনাগত সন্তানটার জন্য কিরকম যেন মনটা আকুলি বিকুলি করে উঠল। কতগুলো এলোমেলো আবেগে আমার চারপাশ যেন ভরে উঠেছে।

সুসানকে আর একটু হলেই আজ আমি হত্যা করতাম। একই সাথে হত্যা করতাম আমার অনাগত সন্তানকে। আজ সুসান আসলেই ওর কাছে মাফ চাইতে হবে।

নিচে গাড়ির আওয়াজ পেলাম। সুসান এসে গিয়েছে হয়তো। লিফটটায় কি যেন সমস্যা হয়েছে। কাজ চলছে। বেচারী সুসানকে সিড়ি বেয়েই উঠতে হবে। সুসান আসার আগেই দরজা খুজে দাঁড়িয়ে রইলাম। আজকে ওকে দেখার সাথে সাথে বলব- “সুসান তোমাকে আমি প্রচন্ড ভালবাসি। এই পৃথিবীর কাউকে এর চেয়ে বেশী ভালোবাসি না।”

সিড়ি বেয়ে বেয়ে সুসান আসছে। ওকে দেখেই আমি দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। আমাকে দৌড়ে আসতে দেখে ও কেন যেন আতংকিত হয়ে গেল।
কোনো ভাবে চিৎকার দিয়ে বলল, “তোমার হাতে পিস্তল কেন?”
তারপর আচমকাই সিড়ি থেকে পা ফসকে পড়ে গেল।
একটা সময় আমি দেখলাম, সুসান সিড়ির গোড়ায় পড়ে নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। মাথার পিছনের অংশটা ভেঙ্গে তা থেকে মগজের কিছু অংশ বের হয়ে এসেছে।

অবাক হয়ে দেখলাম, যতটা চেয়েছিলাম তার চেয়ে ভয়াবহভাবে সুসানের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫০
৪৭টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×