এক মধ্য দুপুরে...
ছাতি ফাটা গমগমে তীব্র রোদের
বায়ুহীন এক মধ্য দুপুরে
শহরের ব্যস্ততম সড়কের অববাহিকায়
সুসজ্জিত বিপণীর চত্বরে-সর্বসম্মুখে
এক দুষ্কৃতকারী ধরা হল হাতেনাতে;
আট বছর বয়সী সেই ছেলে-সেই সহিংস দুপুরে
সহসা অভিযুক্ত হল রুটি চুরির দুর্ধর্ষ অপরাধে।
মৌমাছির ঝাঁকের মত পলকেই
জুটে গেল গোটা বিশেক পথচারী;
আজ এই অপরাধের একটা বিহিত তারা করবেই,
হলেই বা হল গন্তব্যে একটু আধটু দেরী!
সম্মিলিত জনতা-
তাদের মধ্যে একজন ছিল প্রথম বর্ষের ছাত্র
সকাল বেলায় পিতার তিরস্কারে যার স্নায়ুতে
সঞ্চারিত হয়েছিল সীমাহীন ক্রোধ।
একজন ছিল প্রেমিক-বারবার ব্যর্থ,
প্রেমিকার প্রতি যার সঞ্চিত ছিল সহজাত ঘৃণা
এবং সমান্তরাল জীবনের প্রতি বিষম বিতৃষ্ণা,
স্রষ্টার কাছেই যেন তার নিরন্তর অভিশাপ আরাধনা।
দুইজন বেকারও ছিল এলোমেলো চুলের-
ভবঘুরে ও অস্বচ্ছল; জোচ্চুরি আর
হীনম্মন্যতাই ছিল যাদের অবশিষ্ট সম্বল।
আরো একজন ছিল সরকারী চাকুরে,
মাসের শেষ বলে যার সাংসারিক মনে ছিল
বেহিসেবী হিসেবের নৈমিত্তিক গরমিল;
বিগত শত রাত্রির অনন্ত অতৃপ্তি
আর অভিশপ্ত পৌরুষের ঘানি টানা
এক মধ্যবয়স্ক মাওলানাও ছিল-
দাড়িওয়ালা;
ছিল তীব্র সূর্যে মেজাজ হারানো জনৈক
হকার, যার মাথায় বাজছিলো
অগ্নুতপাতের অন্ধ বেহালা।
এরকম আরো অনেকেই ছিল
যাদের মনে প্রবল ছিল অনুরুপ অসন্তোষ;
প্রকৃত প্রতিবাদী তারা একজনও ছিলনা
তবু ব্যক্তিগত খেদ মিটানোর এই ছিল এক অপূর্ব সুযোগ।
তাই কোন মহৎ কাজের মতোই অকপটে
জোয়ান-বুড়ো-সম্মিলিত হাত চালালো একসাথে
যাতে ছোটলোকের বাচ্চাটার
একটা সমুচিত শিক্ষা হয়।
দিনে দুপুরে চুরি? এ যে কিছুতেই সহনীয় নয়...
কী ছিল তার ক্ষমাহীন অপরাধ?
কী ছিল তার প্রায়শ্চিত্তহীন পাপ?
বহুকাল...যেন অনন্তকাল তার লোভী পেটে
পড়েনি কোন দানা-পানি-ভাত;
উফফ! ছোটলোকের বাচ্চাগুলো বড্ড হাড়-হাভাত।
তাই আকাশ চেরা বিজলির মত নিমিষেই-
ন্যায়পরায়ণ হায়েনাদের চোখে দেখা দিল
উম্মত্ত উল্লাস।
এই তো, আর পাঁচ মিনিট;
তারপরেইঃ
সর্বংসহা ঈশ্বর পাবে ক্ষুধার্ত এক লাশ।
(সুযোগ পেলেই মানুষ ব্যক্তিগত খেদ মিটানোর জন্য দুর্বল ও অসহায় কাউকে বেছে নেয়। তাই নিতান্ত তুচ্ছ কারণে প্রতিবছর গণপিটুনীর শিকার হয়ে মারা যায় বহু মানুষ; তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়; আসুন চোখ কান একটু খোলা রাখি, প্রতিহত করি এইসব লঘুপাপে গুরুদন্ড।)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪৬