ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় নম্রতার, বিনয়ের, কৃপার। এই ব্যাপারে প্রচুর নির্দেশ আছে। যেমন মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, 'নিশ্চয় আল্লাহ কৃপাময়। তিনি সমস্ত বিষয়ে নম্রতা ও কৃপা পছন্দ করেন' (১)। তিনি বলেন, 'যে নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে সকল মঙ্গল থেকে বঞ্চিত' (২)। এছাড়াও বলেন, 'আমি কি তোমাদের এমন লোকের কথা বলে দেব না, যে জাহান্নামের জন্য অথবা জাহান্নাম যার জন্য হারাম হবে? প্রত্যেক জনপ্রিয়, সরল, বিনম্র ও অকুটিল লোকের জন্য জাহান্নাম হারাম' (৩)। আরো অনেক আছে, যেমন বলা হয়েছে আল্লাহ নম্রতার উপর যা দেন তা কঠোরতা বা এ ব্যাতীত অন্য কিছুর উপর প্রদান করেন না। নম্রতা যে জিনিসেই থাকে তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে তোলে, আর যাতে থাকেনা সেটা সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ে।
যাইহোক, এই নম্রতা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই দরকার এবং সবার সাথেই দরকার। পরিবারের লোক হোক বা স্ত্রী সন্তান অথবা সহকর্মী, বস কিংবা নিজের অধীনস্থ কেউ। এমনকি রিক্সাওয়ালা, ফকির কিংবা শত্রুই হোক! আর কাউকে দাওয়াহ দেওয়া বা ইসলাহ করার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিশীম। এই নম্রতা এত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা কুর'আনের একটা ঘটনা থেকেও উপলব্ধি করতে পারি। এই ঘটনায় আমরা শিক্ষা পায় কিভাবে ফিরাউনের মতো জালিম শাসক, যেকিনা নিজেকেই ভগবান বলে প্রচার করত! যার ব্যাপারে মুশা/মোজেস (আ.) -এর সময় থেকে আলোচনা হয়ে আসছে এবং কিয়ামাত পর্যন্ত তার নিকৃষ্টতার আলোচনা হবে; সেই অত্যাচারী ব্যক্তির সাথেও নবী মুশা এবং হারুন (আ.)-কে মহান আল্লাহ নম্রতার সাথে কথা বলতে বলেছেন! আল্লাহ বলেন, 'তোমরা দু'জন ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে; হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে' (৪)।
এব্যাপারে আরো একটি চমৎকার শিক্ষনীয় ঘটনা শুনুন। যেটা আমার খুব প্রিয়। বাদশা মামূনের নিকট একবার এক আলেম বক্তব্য দিতে গিয়ে বাদশাকে খুব কঠোর ভাষায় ওয়ায নসিহত করতে লাগলেন। তখন বাদশা মামূন সেই ওয়াযকারীর উদ্দেশ্যে বললেন, 'হে অমুক! নম্র ভাষায় কথা বলুন। আল্লাহ তা'আলা আপনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি (মুশা এবং হারুন) -কে আমার চেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ (ফেরাউন) এর নিকট পাঠিয়ে তাঁদেরকে নম্রভাবে কথা বলতে আদেশ দিয়েছিলেন'।
১. বুখারী/৬৯২৭
২. মুসলিম/৬৭৬৫; আবু দাউদ/৪৮০৯
৩. তিরমীযি/২৪৮৮; সহীহুল জামে/২৬০৯
৪. সুরা ত্ব-হা/৪৩-৪৪