বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতীয় রাজ্যসমূহে নির্মাণসামগ্রী বিশেষ করে ইট, রড, সিমেন্ট, বালুর দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায়, বৈধ ও অবৈধ পথে ব্যাপকভাবে বাংলাদেশ থেকে এসব সামগ্রী পাচার ও রফতানি হচ্ছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী- বৃহত্তর দিনাজপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোহর, কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে ভারতে ইট, বালি ও সিমেন্ট পাচার সাংঘাতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো সীমান্ত দিয়ে ইট তৈরির মাটিও পাচার হচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শাসনামলে গত আড়াই বছরে শুধুমাত্র হিলিস্থল বন্দরের আশপাশের এলাকায় ১৫০টি, রাজশাহী সীমান্তে ৯০টি, কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্তে ১২০টি, কুষ্টিয়া সীমান্তে ৬২টি, খুলনা ও যশোহর সীমান্তে ৯৮টিসহ দেশের সীমান্ত সন্নিহিত এলাকাসমূহে ছয় শতাধিক ইটের ভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ভাটায় ভারতে রফতানি ও পাচারের জন্য ইট তৈরি হচ্ছে এবং ইট তৈরির জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষিজমির মূল্যবান উর্বর মাটি তুলে এনে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের যে মানের ইট পশ্চিম বাংলা ও ত্রিপুরাসহ ভারতীয় রাজ্যগুলোতে পাচার ও রফতানি হচ্ছে সে মানের ইটের স্থানীয় মূল্য প্রতি হাজারে ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ইটই ভারতীয় বাজারে সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাস্টমস সূত্রের উল্লেখ করে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে যে, ইট রফতানি করতে ব্যবসায়ীদের কোনোও শুল্ক দিতে হয় না।
দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে বৈধ ও অবৈধভাবে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ইট যাচ্ছে ভারতে। আর তা ভুটানে উচ্চমূল্যে পুনঃরফতানি করছে ভারত। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে রফতানি করা প্রতি হাজার ইটের দাম দিচ্ছে ভারত সাড়ে ৭ হাজার টাকা। ভুটানে এই বাংলাদেশের প্রতিটি ইট আবার ভারত রফতানি করছে ১২ রূপী বা ২০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি হাজার ইট ২০ হাজার টাকা। কিন্তু খাতাকলমে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে মাত্র ৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। বাকি টাকার কিছু অংশ ভারতে পাচার হিসেবে রেখে দেয়া হচ্ছে এবং কেউ কেউ আবার তা গরু আমদানির মূল্য হিসেবেও ব্যবহার করছে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর বর্তমানে ইট রফতানির একটি চোরাচালানীর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। কাস্টমসের হিসাবে ২০১৩ সালের ৩ মার্চ হতে চলতি ২০১৪ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ইটভর্তি প্রায় ২০ হাজার ট্রাক ভারতে গেছে। প্রতি ট্রাকে গড়ে ৮ হাজার পিস করে মোট ১৬ কোটি পিস ইট রফতানি হয়েছে এ সময়ে। কিন্তু প্রতি ট্রাকে অফিশিয়ালি দেখানো হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ইট।