somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নষ্ট ছেলে (পর্ব ১)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" ছেলেটাকে মানুষ করতে পারলাম না;অন্তের মা । "আমার বাবার সব থেকে কমন ডায়ালগ এটি। সরকারী স্কুলের ভবানী স্যার যখন দেখল , সেভেনে উঠে আমার সিগারেট খাওয়ার হার বেড়ে গেছিল , আর নষ্ট ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ানোর হার বেড়ে গেছে আর আমাকে অন্য পথে আনাই যাচ্ছে না , তখন বাবাকে বলেছিলেন , আপনার ছেলেটা ভাই নষ্ট হয়ে গেছে।
বাবা এর পর থেকে আমার খোজ নিতেন না। আমাদের একটা স্টুডিও ছিল , যদিও বাবা সরকারী চাকুরী করতেন ! স্টুডিও এতদিন অন্য ছেলের দ্বারা চালাতেন। ছেলেটা অন্য এক স্থানে কাজ নিয়ে চলে যাওয়ায় , স্টুডিও এর কাজ করার দায়িত্ব আমার উপর আসল। এক বেয়াদপ নষ্ট ছেলে যদি কিছু করে খায়, এটাই অনেক। আমার থেক উন্নত ভিডিও র কাজ শহরে কেউ করত না। ব্যবসা টা ভালই চলে। অগত্যা শহরের স্কুল থেকে বাবা আমাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। কারন স্কুলে রেজাল্ট এত খারাপ হচ্ছিল , তা দেখার বাইরে। বাপের সম্মান আছে একটা সমাজে। আমার জন্য যা চলেই গেছিল। এইটে উঠার পর , পড়াশুনা করতাম অল্প স্বল্প। সিগারেট খোর মাথা দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও বন্ধুদের দেখাদেখি ম্যাথ অলিম্পিয়াডে গেছিলাম। সহজ ম্যাথ গুলো না করে কঠিন টি সলভ করে ফেল করলাম। আর যারা ওটা করতেই পারেনি , তারা প্রথম হল। লজ্জ্বায় আর কখনো অলিম্পিয়াডে যাই নাই। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি এক্সামে যখন জেলায় সেকেন্ড হলাম , তাও একটা গ্রামের স্কুল হতে তখনও বাবা আমাকে সেই স্টুডিও এর কাযে লাগাইলেন। অবশ্য আমার ভাললাগা সেই কম্পিউটারের উপর। সাইন্সে বাবা আমাকে পড়তে দিতে চাইতেন না! কিন্তু মায়ের জোড়াজোড়িতে সাইন্স এ পড়লাম। মোটামুটি একটা এ + পেলাম। নটর ডেমে পড়ার একটা সাধ ছিল। কিন্তু এ+ পাওয়ার সাথে সাথে তা বের হয়ে গেছিল। বাজে ভাবে এ + । সেইন্ট জোশেফে বাবা পড়তে দেয় নাই। ভর্তি হলাম একটা সরকারী কলেজে। এটাও নামী কলেজ। হিস্টোরী হওয়ায় তা আর নাইবা উল্লেখ করলাম। উল্লেখ করলে একটা বিদ্রোহ দেখা দিবে বৈ কি !
কলেজে ফার্স্ট টার্ম চলে গেল , আমার তখনও বই কেনা হয় নি। স্টুডিও চালাই। মিড টারমে বই কিনে পাশ করতে হবে। কারন , এবার না কলেজ থেকে বের করে দেয়!! কলেজে যে ছেলেটা আমাকে শোধরিইয়ে ছিল সে আজ মস্ত বড় এক ডাক্তার ! আমার লাস্ট আলচার টার চিকিতসা ঐ করেছিল। পড়াশুনায় আমিও কম ছিলাম না। আমার একটা গুন ছিল। ভোলাটাইল মেমোরী র‍্যাম এর মত পড়া একবার দেখে মনে রাখতে পারতাম। মযাথ খুব একটা খারাপ পারতাম না। যাই হোক রেজাল্ট একটা আসল ৩ .৪০ ।

সামনে ফাইনাল। পড়ার চাপে পড়ে গেছি। দোকান আজকাল যাওয়া হয় না। গেলে শুধু গেম খলা হয়। খোদ উপর মহল থেকে কাজ বন্ধ করে পড়াশুনার কথা প্রথম বাবের মত শুনতে পেলাম। ততদিনে আরেকজন লোক পাওয়া গেল।

সম্ভবত রঙিন স্বপ্ন গুলো এখান থেকেই শুরু হয়। এই রঙিন স্বপ্নগুলো এই অ্যামেচুরড বালকের জন্য আরো নাজুক করার পক্ষে যথেস্ট। যার পক্ষে স্বপ্ন দেখার কোন কারন ছিল , হঠাত করে স্বপ্ন হলে তা স্বপ্নদোষ ব্যতীত কিছু হতে পারে না।

ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় আমার সব থেকে ভাল বান্ধবী ছিল এডিসি স্যারের এক মেয়ে সাবরিনা। আগে বুঝিনাই , সামাজিকতার আর পার্শ্বজ্ঞান পাওয়ার পর বুঝলাম , ওর চুলের কাটিং ছিল খুবই সুন্দর। মিনিস্কাট কাটিং নামে ভার্সিটিতে পড়ার পর বুঝেছি। খুবই সুন্দর একটা কাটিং। ওরা রশি খেলত , আমি দেখতাম। আমি কিছুই পারতাম না। ফাইভ পর্যন্ত আমি নাকি ভাল ছেলে ছিলাম। একস্যারের কাছে পড়তাম। বৃত্তি স্যার। উনার কাছে যারা পড়ে সবাই বৃত্তি পায় বলে খ্যাত উনি। আমরা যেভাবে মিশতাম , এ নিয়ে খোদ এলাকার ঈর্ষাণ্বিত ছেলেদের কাছে , এখন শুনি , তোর প্রেম একবার হয়ছিল , আর হবে না এটাই স্বাভাবিক। মেয়েটা নাকি বুঝত। ও খোদ ওর খাতায় লিখেছে নিজেকে কোয়েল , আমার খাতায় দেব। ব্যাপার টুকু এতটুকু থাকলে হত। কিন্তু ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছিল। স্যার আমাকে খোদ গাধা বলত। আমিত কিছু বুঝতাম না তখন। প্রেম জিনিস টা কি ! আমার দোষ ছিল না এটা। বয়সেরদোষ। সবাই যখন ৭ বছর বয়সে ওয়ান এ পড়ত। আমার সাত হয়েছিল ক্লাস ৩ তে পরার সময়। প্রথম দুই ক্লাস আমার পড়াই হয়নি। ও ফাইভে ট্যালেন্ট ফুল বৃত্তি পেয়ে চলে গেল। আমি জেনারেল ছেলে , জেনারেল এ তাই সন্তষ্ট থাকতে হল। ওর বাবার সাথে সেই যে ময়মনসিংহ গিয়েছিল , আর কথা হয়নি। মাঝে মাঝে টেলিফোন দিতাম। কথা হত , নাইনে উঠার পর থেকে আর হয় নাই। শেষ দেখা হয়েছিল ও যখন বুয়েট শেষ করে ওর হ্যাজবেন্ড এর সাথে কানাডা গেল। এয়ারপোরটে একটা জব পেয়েছিলাম। চেকিং এর সময় নাম দেখে এই সেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়লে সময় ভাল চাকুরী যে করবেন , তা কিন্তু নয়। ছয়টা চাকুরী ছেড়েছি এই দুই বছরে। সব সেকেন্ড ক্লাস জব।

দুচোখ বেয়ে জল নেমে আসল। আমার যে সে ভালবাসা ছিল তা হাড়ে হাড়ে টের পেলুম সেদিন। কিছুদিন কে যেন নাই কে যেন নাই , বলে কাদলাম। তার পর আর সবের মত ঠিক হয়ে গেছিল। পুষ্পের দুঃখ একটা সে নিজের জন্য ফুটে না। আমার দুঃখ সে রকম , দুঃখ আমার জন্য যে নয়। মন আর জীবন এই দুটাই আছে মানুষের। আমি তখন মানে এখন জীবন নিয়ে বাচি। মন নিয়ে নয়। দুঃখটা তাই মনের আমার নয়। পরিচয় সেরে কফি খেয়ে সে চলে গেল। আবার কবে , কোথায় দেখা জানিনে।

" সে কি আকষ্মিক ?
না কি আন্তরিক ?
হয়ত সে দুটোই ,
নাহলে লিখনীতে সেইই কেন ,
সে বিনে নেই কেন কেউ ব্যতীরিক,
সে থাক তাই অন্তরে আন্তরিক"।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×