somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন পারবেজ
শখের অখ্যাত অক্ষরজীবি হয়ে লিখি বাউন্ডুলে মনের এলোমেলো কথাগুলো।।জীবন ফুরালে সময়ের নির্মম অত্যাচারে হয়তো আজকের লিখাগুলো রূপ নিবে ধূসর পান্ডুলিপিতে,নয়তো কোনো ডায়েরির ছেড়া পাতায়!!সেদিনও আমি বেচে থাকবো লিখাগুলো বিবর্ণ অক্ষর হয়ে!!

দুঃস্বপ্ন: অতঃপর....!!

২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওই মেয়েটা কি তনু?
নীল জামা পড়েই?
এইটা কি করে সম্ভব?
মেয়েটাকে না গত তিন বছর আগেই না
অস্থির চিত্তে কথাগুলো খুব দ্রুত ভাবছে অনিক।
না মাথায় একদম কাজ করছে না মেয়েটা কিভাবে এইখানে এল?
না একদম সামনাসামনি গিয়ে দেখতে হবে।
যদি তনুই হয় তাহলে আজ একদম নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে যেন আর ফিরে আসতে না পারে।
দ্রুত পা চালিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে ঠিক সেই সময় একটা বিকট শব্দ।
শরীরের বাম পাশের অংশটি সম্পূর্ন তেতলে গেছে।
তেতলে যাওয়ার পরও হৃত্‍পিন্ডটা লাফাচ্ছে।
নাআআ।
চিত্‍কার করে জেগে উঠে অনিক।
হৃত্‍পিন্ডটা একটু জোরেই লাফানো শুরু করে দিয়েছে অনিকের।
নিজের সারা শরীরের দিকে থাকায় অনিক।
না সব কিছু ঠিক আছে।
স্বপ্ন ভয়ানক দুঃস্বপ্ন।
মাথার কাছে টেবিলটাতে রাখা পিরিচে ঢাকা গ্লাসের পানিগুলো ডক ডক করে এক নিঃশ্বাসে গিলে ফেলে অনিক।
বালিশের নিচে রাখা মোবাইলটাতে সময় দেখে নেয় অনিক।
রাত ২.৫২ এ এম।
হকচকিয়ে তারিখটা দেখে অনিক।
২২/১১/২০১৫ইং।
ভয়ে সারা শরীরে কাটা দিয়ে উঠে অনিকের।
নভেম্বর এর ২২ তারিখটা তার জন্য অভিশপ্ত এক রাত।
গত তিনটি বছর ধরে কোনো বিপদ আসার আগে ঝড়ের পূর্ভাবাসের মত ২২ই নভেম্বর রাতে দুঃস্বপ্নে আগাম বার্তা পায় অনিক।
তিন বছর ধরে যথাক্রমে বাম হাত,এবং বাম পা টি হারিয়েছে।
তবে তখন বেছে ছিল কিন্তু আজকের স্বপ্নটি অতীব ভয়ানক।
ট্রাকের প্রকান্ড চাকাগুলো নির্মমভাবে তার শরীরের বাম পাশটা একদম পিষে ফেলেছে।
স্বপ্নটার দৃশ্যগুলো মনে পড়লেই শরীরের লোমগুলো সজারুর মত খাড়া হয়ে যাচ্ছে।
আর ঘুমুতে পারছে না অনিক।
আচ্ছা মেয়েটাকে কি আরেকটু বুঝালে হত না?
বিয়েটা করে ফেললেই তো হত।
বিয়ে যদি নাই করতে পারবে তাহলে মেয়েটাকে এত্তোবড় অভিশাপটা ঝুলিয়ে দিলো কেনো?
অনিকের কি মনে আছে তিন বছর আগে ঘটে যাওয়া নির্মম ২১-২২ নভেম্বর দুইটি দিনের কথা?
ভুলে যাওয়ার কথা না তবে একটু ছিন্নভিন্ন অবস্থা।
২১ই নভেম্বর ২০১৩ইং।

মোবাইলে অনবরত বাজছে ....
টাইটানিকের করুণ টোনটি।
টাইটানিক মুভিটা অনিকের খুব পছন্দের।
অনেকবার দেখেছিলো তবে তনুর সাথে বসেই কয়েকবার দেখছিলো।
টাইটানিকের প্রতি অনিকের ভালবাসা দেখে তনু অনিকের কলার টিউন চেঞ্জ করে দিয়েছিল।
টোনটা বাজছেই।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে মোবাইলটা হাতে নেয় অনিক।
৫৭ টি মিসড কল।
আবার টোন বাজতেই ফোন রিসিভ করে অনিক।
-হ্যালো।
-হ্যালো।অনিক তোমার কি হইছে?এত্তো ফোন দিচ্ছি রিসিভ করছো না।
-এতো ফোন দিচ্ছ কেন?
-অনিক

তোমার সাথে কিছু কথা...
তনুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অনিক বলতে শুরু করছে?
-কিসের কথা হ্যা কিসের কথা?আমি তো জানি তুমি কিসের কথা বলবা?ওই এক যুগ ধরে যা বলে আসতেছো তাইতো বলবা?"আমাকে বিয়ে কর,আমাকে বিয়ে করছো না কেনো" এইগুলাই তো বলবা?
অনিকের কথায় ক্রোধ ফেটে পড়ছে।
-আশ্চর্য!তুমি এইভাবেই কথা বলছো কেনো?বিয়ে তো তুমিই করবা বলছিলা।
-হ্যা বলছিলাম।কিন্তু আমি এখন তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।
-কি বলতে চাও তুমি?
-যা বলতে চাই একদম পরিষ্কার।আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।যা ইচ্ছা কর।আমি রাখলাম।আর হ্যা আমাকে আর ফোন দিবানা।
টুট টুট টুট..
তনুর নিজেকে কেমন পাথর ভাবতে ইচ্ছে করছে।
এইতো দুইদিন আগে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দিয়ে কি করছি না করছি সব জিজ্ঞেস করতো সেই আমাকে ফোন দিতে নিষেধ করলো?আমার প্রয়োজন কি তার কাছে ফুরিয়ে গেলো?
পাথর স্থির চোখ দুটি বেয়ে নোনা জলের ফোয়ারা নামে তনুর।

ক্রিং ক্রিং
-হ্যালো।
-দোস্ত কই তুই?
-কেন?বাসায় শুইয়্যা আছি।
-দোস্ত,শীঘ্রই বটগাছের নিচে আয়।কথা আছে।
-আরে বেটা হইছেটা কি বল?
-দোস্ত,তুই আয়,আমি তোরে সব বলতেছি।
গায়ে মোড়ানো খয়েরী কম্বলটা ছুড়ে ফেলে টি-শার্টনা গায়ে দিতে দিতেই বটগাছের উদ্দেশ্যে হাটা ধরে তুহিন।
তুহিন অনিকের বন্ধু।বলা ভালো যে সেই লেংটা কালের বন্ধু।কারো আপদ বিপদে একে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না।ভালো কিংবা খারাপ।
তুহিনের বাসা থেকে বটগাছটা দূরে নয়,পাচঁ মিনিটের পথ।
হাটতে হাটতে তুহিন প্রায় চলেই এসেছে।
অনিক চিন্তিত মনে বসে আছে বটগাছটার নিচে,তুহিন যে এসেই পড়েছে সেইদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।হঠাত্‍ তুহিনের ডাকে মাথা তুলি অনিক।
-কিরে নবাবের বেটা!এতো জরুরী তলব কিসের?
-আয় দোস্ত আয়।চল নদীর পাড়ে গিয়ে বসি।এইখানে কথাগুলি বলা যাবে না।
-এমন কি কথা,যা এইখানে বলা যাবে না?
কপাল কুচকে অনিকের দিকে থাকায় তুহিন।
-আরে আগে চলনা,সব বলছি।
অনেক আগের পুরনো নদী।আগের সেই সৌন্দর্য নেয় তারপরও অনেকে আসে।
একটু নির্জন জায়গা বলে জোড়ার সংখ্যা বেশী।
অনিক তুহিন তারা চলে এসেছে।
-বল,কি হইছে?
-দোস্ত,ঝামেলায় পড়ে গেছি।
-আরে শালা,ঝামেলার কথায় তো জিগায়।
-দোস্ত,মেয়েটা আবার ফোন দিছে।
-মেয়েটা মানে?তনু?
-হ্যা।
-কি বলে?
-তাকে বিয়ে করতে।
-তুই কি বলছস?
-আমি করব না বলছি সাথে ফোন দিতেই না করছি।
-তাইলে তো ঝামেলা শেষ।আবার ঝামেলা কিসের?
-তুই বুঝতেছস না কেন?মেয়েটা যদি এখন থানায় যায় আমার কি হবে
তুই বলতে পারিস?হয় বিয়ে করতে হবে নতুবা জেলের ঘানি টানতে হবে।
-তুই কি চাস?
-দোস্ত,শেষ করে দে।যেন থানা পর্যন্ত তার ডাক না পৌছায়।
-এইটা কেমনে সম্ভব?তুই কি ভেবে বলছিস?
-আর ভাবাভাবিতে কাজ নেই,তুই কেমনে শেষ করবি সেই উপায় বের কর।
দুজন মিলে বুদ্ধি খুজে।একটা জলজ্যান্ত মেয়েকে তো যেমন তেমন করে মেরে ফেলা যায়না।তনুর বাসায় তাদের সম্পর্কের কথা জানে।তনুর অস্বাভাবিক কিছু হলে সন্দেহের তীর অনিকের দিকেও আসবে না তা বলা যায় না।
-ইয়েস।পেয়ে গেছি।
অতি উতসাহী হয়ে বলল অনিক।
-কি?কি পাইলি?
-তোর বাবার করোল্লা কারটা তুরে দেয়?
-শালা,আমার বাবার গাড়ি আমাকে দেবেনা তো কাকে দিবে?
-তাইলে তুই কালকে রাত ১১.৩০ মিনিটে আমার বাসায় চলে আসবি।
-অকে।কিন্তু প্ল্যানটা কি?
-আগে কালকে ড্রাইভারের সিটে বসে গাড়িটা চালিয়ে আমার বাসায় আসিস তারপর দেখবি,অবশ্য তোকে কিছু করতে হবে না।শুধু গাড়িটা আর ড্রাইভারের সিটে তোকে লাগতেছে।
-অকে।গেলাম।
তুহিন চলে গেল।অনিক আগের মতই বসে থাকে।
একটু পর সন্ধ্যা নামবে।আস্তে আস্তে বাসার দিকে পা বাড়ায় অনিক।
২২ই নভেম্বর ২০১৩ইং।
-অনিক,এই অনিক।অনেক বেলা হল ঘুম থেকে উঠ।
ডাকতে ডাকতে অনিকের রুমে চলে আসে অনিকের মা।
-কি হইছে মা?
-উঠ,ফ্রেশ হয়ে তৈরী হয়ে নে।
-কেনো?কোথায় যাবা?
-গ্রামে,তোর দাদুর বাড়ি।
-ওইখানে তো এখন কোনো অনুষ্টান না।যাব কেনো?
-ওইখানে নাকি জায়গা-জমির দলিল নিয়ে কিছু কাজ আছে,তাই যেতে হচ্ছে।
হঠাত্‍ অনিকের মাথা খুব দ্রুত কাজ করে।
তার প্ল্যান কাজে লাগাতে আরেকটি বোনাস পয়েন্ট।
সব কিছু এতো সুন্দর মিলে যাচ্ছে,অনিকের মুখ ঝিলিক মেরে উঠে।
-কি হল?কই যাবি না?
-না,মা তোমরা যাও।ওইখানে তোমার বড়দের কাজ।তাছাড়া কাল ভার্সিটিতে একটা স্পেশাল ক্লাস আছে।
-ওহহ,তাইলে থাক।তবে শুন,রাতে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে শুয়ে যাবি।টিক মত খাওয়া দাওয়া করিস।
-আচ্ছা,মা।টেনশন করো না।সাবধানে যেও।
-আচ্ছা।টেবিলে নাসতা আছে।
খেয়ে নিস।আমরা গেলাম।
খুশিতে অনিকের মনটা নেচে উঠে।ভাবে একটা জম্পেশ ঘুম দিবে কিনা।ভাবতে ভাবতেই অনিক ঘুমিয়ে যায়।
হঠাত্‍ তুহিনের কল এ ঘুম ভাঙ্গে।
-কিরে,এহোনো ঘুমাস?
-দোস্ত,খুশিতে ঘুম আইস্যা গেছে।
-এত্তো খুশি কেন?
-প্ল্যান কাজে লাগানোর বোনাস পাইছি।আচ্ছা তুই রেডি তো?
-একদম।তোর একটা কাজ দিলি আর অমি রেডি থাকুমনা?
-আচ্ছা,তাইলে টিক আছে,সময়মতো চলে আসিস।
ঘড়িতে সময় দেখে অনিক।
দুপুর ২.১৫ মিনিট।
প্ল্যানটা আরেকটু ঘষামাজা করা যাক।
তনুকে কল দিতে দিতেই ভাবে অনিক।
প্রথম রিং পরেছে মাত্র দ্বিতীয় রিং পরার আগেই ফোন রিসিভ করে তনু।যেন অনিকের ফোনের অপেক্ষায় আছে।হ্যা,অপেক্ষায়ই তো আছে।
-হ্যালো।
-কেমন আছো?কালকের ব্যাপারটার জন্য সরি।
-আরে সরি বলার কি আছে?আমি কিছু মনে করিনি।কোনো কারনে হয়তো তোমার মেজাজ খারাপ ছিল।
-কি করো?লাঞ্চ করছো?
-না,তুমি?
-আমি করি নাই।আম্মুরা নাই,তাই নিচে গিয়ে খেয়ে আসবো।তুমি খাও নাই কেন?

-এমনিতেই।আচ্ছা তুমি দশ মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি।
অনিকের মনে একটা পৈশাচিক পুলক অনূভুত হয়।
শিকার নিজেই হাতের মুঠোয় চলে আসতেছে।
-আচ্ছা আসো।ও হ্যা বাসায় বলে আসিও ফিরতে রাত হবে।রাতের খাবারটা তোমার হাতেই খাবো।
-অকে।
টুট টুট টুট
অনিকের ইচ্ছে করে উম্মাদের মত নাচতে,একদম লাফিয়ে লাফিয়ে,মাথা ঝাকিয়ে,বিছানায় কয়েকটা লাফ দিয়েও দেয় অনিক।
তার প্ল্যানটা এতোই সুন্দর করে মিলে যাবে ভাবতেই আনন্দের মাত্রা একটু বেশীই মাথা চাড়া দিতে চায়।
ঢিং ঢং,ঢিং ঢং।
অনিক সহজাত সারল্যতা আর মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে দরজা খুলে দেয়।
-আসো।
-আব্বু,আম্মু নেই তাই মোষের মত ঘুমুচ্ছ তাই না?
-আচ্ছা মহারানী,এই প্রজার বিচার পরে হবে আগে পেটে কিছু দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন।

একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে কিচেনে চলে গেলো তনু।
নতুন করে কিছু রান্না করতে হলো না।
অনিকের মা সব রেডি করে দিয়ে গেছেন।
একটু গরম করেই খেয়ে নেওয়া যাবে।
তনু খুব দ্রুত খাবার গুলো গরম করে ডাইনিংয়ে সাজিয়ে অনিককে ডাকে।
অনিক ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে গিয়ে খেতে বসে।
দুজনে দুষ্টুমি করতে করতেই খাওয়া শেষ করে।
-তনু,কই?আসো দুজনে একটু ঘুমাই।
-না,ঘুমুতে হবে না।
আসো টিভি দেখি।
অনিক তাই করে।
অনিক বলে উঠে..
-চলো টাইটানিক মুভিটাই দেখি।
-এইটা আর কত বার দেখবা?
-এইটা ভালো লাগে,বলতে বলতে দৌড়ে এসে ল্যাপটপটা নিয়ে যায় অনিক।
মুভিটা প্লে করে দুজনে আয়েশী ভঙ্গিতে বসে দেখতে থাকে।
মুভি দেখতে দেখতে কখন যে রাত আটটা বেজে গেছে কেউ বলতে পারে না।
তনু উঠে গিয়ে দুজনের জন্য নাসতা রেডি করে।
মেয়েটা কাজগুলো এমন ভাবেই করছে যেন নিজের সংসার খুলে বসেছে।
নাসতা খেয়ে অনিক ল্যাপটপে কি যেন কাজ করে আর তনু কিচেনে রাতের খাবার তৈরীতে ব্যস্ত।
রাত প্রায় দশটা।
দুজনে খাওয়া শেষ করে বসে আছে।
হঠাত্‍ অনিক বলল
-চলো,একটু ঘুরতে বেরুই।
-এখন কোথায় যাবা?
-চলো না।দু-চোখ যেদিকে যায়।
-তোমাকে নিয়ে আর পারি না,সবসময় কেমন যেন?
প্ল্যানমত তুহিনকে ফোন দেয় অনিক।
ক্রিং,ক্রিং
-হ্যালো,বল।
-দোস্ত,তনুকে নিয়ে ঘুরতে বেরুবো তোর গাড়িটা নিয়ে আসবি?
-আরে বেটা,বাসায় বলবে কি?
-প্লিজ দোস্ত,আয় না।
-অকে।
এমনভাবে কথাগুলো বলছিল যেন সত্যি সত্যি ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
দশ মিনিট পর গাড়ি নিয়ে হাজির হয় তুহিন।
তনু নিজেকে একটু সাজিয়ে নিচ্ছিল।
যদিও রাতে আধারে দেখা যাবে না তারপরও অনিকের সাথে ঘুরতে বেরুচ্ছে বলে কথা।
অবশ্য এইটা তার শেষ সাজগোজ জানলে এত্তো খুটিয়ে খুটিয়ে সাজতো কিনা জানে না।
-কই?হলো?
-এইতো,আসছি।
রাত ১২.০০ টা।
তুহিন প্ল্যানমতো ড্রাইভিং করবে,অনিক-তনু পেছনের সিটে।
রাস্তায় এখন তেমন একটা লোকজন নেই।
গাড়ির আধিক্য তেমন নেই।
গুটি কয়েক রিকশা মাঝে মাঝে প্রকান্ড কয়েকটি ট্রাক যাচ্ছে।
শহরে থেকে প্রায় বেরিয়েই এসেছে তারা।
সামনে বেশ উচু একটা ব্রীজ।
-তুহিন্যা।সামনের ব্রীজটাতে গাড়ি পার্ক কর।কিছুক্ষন বসি।
তুহিনও বেশ পারদর্শী অভিনেতার মত হ্যা
না করেই ব্রীজের টিক মাঝখানেই গাড়িটি পার্ক করে তুহিন।গাড়ি থেকে নেমে অনিক আর তনু গাড়ির সাথেই হেলান দিয়ে নিঝুম রাতের সাথে সোডিয়াম বাতির হলুদ আলো ভালোয় উপভোগ করে।তুহিন একটু দূরেই যায়।
হঠাত্‍ একটু ট্রাক বেপু বাজিয়ে সাই করে তাদের সামনে দিয়ে চলে যায়।
চাইলেই এখানেই তনু নামের সমাপ্তি করে দিতে পারতো অনিক কেন জানি করলো না।হয়তো আরেকটু নির্মম হতে চেয়েছিল।
তনু কিছু একটা বলছিল অনিককে।অনিক হা,হু করেই তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।তার মনোযোগ এখন অন্যদিকে।অনিক তার প্রেমের ইনিংস অপরাজিত থেকেই শেষ করতেই মরিয়া।একটু পর বেশ উজ্জ্বল একটা আলো তাদের দিকে ধেয়ে আসে।প্রকান্ড একটা ট্রাক।বেশ বোঝায় করা।অনিকের ভেতরের পশুটি মুহুর্তে খুব হিংস্র হয়ে জেগে উঠে।একটু নড়ে চড়ে দাড়ায় অনিক।আড়চোখে তনুর দিকে থাকিয়েই ট্রাকটির দিকে চোখ ফেরায় অনিক।ট্রাকটি ব্রীজের উপর এসে পড়েছে।চূড়ান্ত মুহুর্তে প্রস্তুতি।অতঃপর কয়েকটি মুহুর্ত।
পিনপতন নীরবতা।ট্রাকটি টিক তাদের সামনের চলে আসে।অনিক লক্ষ্যভেদে ভুল করে না,খপ করে তনুর বা হাতটি টান দিয়ে ঠেলে দেয় ট্রাকটির সম্মুখে।একটি গগনবিধারী চিত্‍কার।
অদূরে নিশাচর পাখিগুলো যেন ভয়ে ডানা ঝাপটায়।
তুহিন ততক্ষনে গাড়ি স্টার্ট করে অনিকের জন্য দরজা খুলে দেয়।অনিকও দেরী করে আপদ গিয়েছে বলেই দ্রুত গাড়িতে উঠে।এর পরের দিন টিভিতে খবরে দেখে তনুর শরীরের বা পাশটি রাস্তার সাথে পিষ্ট হয়ে পরে আছে।
না আর মনে করতে পারছে না অনিক।শুয়ে শুয়ে আর কতক্ষন নিষ্টুর বর্বরতা আর মনে করা যায়?
দ্রুত বিচানা ছেড়ে উঠে টি-শার্টটা কাধে ঝুলিয়েই রাস্তায় বের হয়ে পড়ে অনিক।
রাত থেকেই মাথাটা ঝিম ঝিম করছে।কিছুই যেন কাজ করছে না।একটা সিগারেট মুখে জ্বালিয়েই মস্তিষ্কটাকে একটু প্রশান্তি দেওয়ার চেষ্টা।
সিগারেটে একটি লম্বা টান দিয়ে ফুটপাত ছেড়ে দিয়েই রাস্তা দিয়ে হাটছে অনিক।
মাথা কাজ করছে না।গত রাতের স্বপ্নগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।অতঃপর কয়েটি মুহুর্ত,তবে সেদিন রাতের মত নীরবতা নেয়।এবং হঠাত্‍ একটি বিকট শব্দ।
একদম শরীরের বা পাশটা তেতলে ফেলেছে তনুরটা যেমন ঠিক তেমনি।
মুহুর্তেই বহু লোক জমা হয়,হা হুতাশ করে অনিক একটু চোখ মেলে থাকাল হয়তো তনুকে শেষ বার দেখার ইচ্ছাটা মনে চেপে বসেছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×