জাহিদ আহমেদ লিটন : যশোরের ২০ হাজার কমিউনিটি পুলিশের কোন কাজ নেই। গত দেড় বছর যাবৎ তারা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। অথচ তাদের কার্যক্রম চালু থাকলে জেলাব্যাপী অব্যাহত চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধে তারা ভূমিকা রাখতে পারতো। জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সমন্বয় সভায় এ দাবি উত্থাপিত হয়।
দেশব্যাপী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও স্থানীয় ভাবে ছোট খাট অপরাধ মিমাংসার লক্ষে গত ২০০৮ সালের মাঝামাঝি নাগাদ কমিউনিটি পুলিশিং গঠন ও কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের গ্রাম পর্যায়ে এ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। এ উদ্যোগের ফলস্বরূপ যশোর জেলাতেও কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠন করা হয়। জেলা, উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এসব কমিটি গঠন করা হয়। যদিও এসব কমিটির সদস্যদের নিয়ে তৎকালীন সময়ে ব্যাপক বিতর্কের ঝড় ওঠে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যশোর টাউন হল ময়দানে পুলিশের মহাপরিদর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় পুলিশিং কমিটির জেলা সম্মেলন। এ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক জমির আহমেদ টুন ও সদস্য সচিব যশোর বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আলী আকবর। ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট এ জেলা কমিটি গঠিত হয়।
জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক জমির আহমেদ টুন বলেন, জেলায় ২০ হাজার ৬শ' ৫৫ জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি থানা কমিটি, ৯১টি ইউনিয়ন কমিটি ও ৯শ'টি ওয়ার্ড কমিটি আছে। এছাড়া ১৫ সদস্য বিশিষ্ট ওয়ার্ড কমিটিতে ৭ জন উপদেষ্টা রয়েছে। তিনি জানান, পুলিশিং কমিটি গঠনের পর সদস্যরা রাতে তাদের স্ব স্ব এলাকায় নিয়মিত টহল ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। এ কারণে তৎকালীন সময়ে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি অনেকাংশে কম ছিল। এছাড়া গ্রাম্য স্থানীয় সমস্যা কমিউনিটি পুলিশ সদস্যরা সমাধান করতেন। এ জাতীয় সমস্যা ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সমাদান করতে না পারলে ইউনিয়ন কমিটিতে পাঠাতেন আর ইউনিয়ন কমিটি না পারলে থানা কমিটিতে ও পরে জেলা কমিটি সমাধান করতে না পারলে তবেই মামলার মাধ্যমে আদালত নিষ্পত্তি করতেন। এভাবে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলেছে গোটা জেলাব্যাপী কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেলায় ২০ হাজার ৬শ' ৫২ কমিউনিটি পুলিশ সদস্য বেকার হয়ে পড়েছেন। গত প্রায় দেড় বছর যাবৎ তাদের কোন কার্যক্রম নেই। গোটা জেলায় বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ে তাদের যে কার্যক্রম ছিল সেটা বর্তমানে নেই বললেই চলে। জেলা পুলিশ প্রশাসন থেকে তাদের কোন খোঁজ নেয়া হচ্ছে না। এ কারণে তারা বর্তমানে শুয়ে, বসে ও তাদের নিজস্ব কাজ করে সময় অতিবাহিত করছেন। অথচ তাদেরকে আবারো কাজে লাগাতে পারলে বা তাদের কার্যক্রম চালু করতে পারলে জেলায় অব্যাহত চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হতো। গত ১৬ মে জেলা আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি জোরেসোরে উচ্চারিত হয়। সভায় বলা হয়, কমিউনিটি পুলিশিং মুখ থুবড়ে পড়ায় জেলায় চুরি, ছিনতাই, মারামারি ও নারী নির্যাতন বেড়েছ্ েপ্রশাসন তাদের সাথে যোগাযোগ করছে না। বর্তমানে তাদের ছাতা ও টর্চ লাইট নেই। এসব দাবি প্রশাসন পূরণ করতে পারছে না। এ কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বর্তমানে কমিউনিটি পুলিশ থাকলেও তাদের কোন কাজ নেই। গ্রামের পুলিশ এখন বেকার।
এ ব্যাপারে সভায় পুলিশ সুপার দিদার আহমেদ বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য প্রশাসনে কোন ফান্ড না থাকায় তাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করে নতুনভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য সচিব আলহাজ্ব আলী আকবর বলেন, দেড় বছর আগে তারা মাঠে নেমে তদারকি করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের খোঁজ না নেয়া ও গাইড লাইনের অভাবে তারা নীরব রয়েছেন। আবারো তাদেরকে সহযোগিতা করা হলে ২০ হাজার সদস্য পুলিশের পাশাপাশি ছোটখাট অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




