যশোর শহরের কাজীপাড়া পুরাতন কসবার বাসিন্দা ও সোনালী ব্যাংক গরীব শাহ সড়ক শাখার ম্যানেজার মহিরুল আজম গত ১০ মে সেবা সংঘ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকান থেকে এককেজি আপেল কেনেন। কয়েকটি আপেল পরিবারের সবাই মিলে খেয়েছেন। বাকি গুলো পাত্রবন্দিই রয়েছে। একদিন, দু'দিন করে মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আপেল গুলো খাওয়া হয়নি। মহিরুল আজমের স্ত্রী শেফালী খাতুন ১৩ জুন সকালে পাত্রের আপেল গুলো দেখে বিষ্মিত হন। রং বদলানাতো দুরে থাক কোথাও পচন ধরেনি। একেবারে তরতাজা রয়েছে। কেমিকেল দিয়ে বাজারজাত করা হয়েছে ভেবে তিনিসহ পরিবারের কাউকে আপেলগুলো খেতে দেননি। ১২ জুন বিকেল মহিরুল আজম এককেজি জাম কিনেছেন। অল্পকিছু জাম তারা খেয়েছেন। বাকিগুলো গতকাল বিকেল পর্যন্ত রয়েছে একেবারে টাটকা। মনে হচ্ছে গাছ থেকে সবে পাড়া হয়েছে। একটি জামও নরম হয়নি এমনকি পঁচেনি। দু'দফা একই দোকান থেকে আপেল ও জাম কিনে দীর্ঘদিন তরতজা পেয়ে খুঁশি হওয়ার চেয়ে বড় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা মহিরুল আজম ও তার স্ত্রী শেফালী খাতুন। তারা ভাবছেন, এ ফলগুলো কোন প্রক্রিয়ায় বাজারজাত হচ্ছে। ফ্রিজে না রাখলেও দিনের পর দিন এমনকি মাস পেরিয়ে গেলেও বিভাবে যেমনটি কেনা হয়েছিল ঠিক তেমনটি থাকছে। এসব প্রশ্নে জবাব খুঁজতে গ্রামের কাগজের সাংবাদিকরা অনুসন্ধানে বের হয় । অনুসন্ধানে জানা যায়, বাজারে যত প্রকার ফল বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশ পাকানো ও টাটকা রাখানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে ফরমালিনসহ বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ। রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আপেল, আঙ্গুর, বেদানা,কমলা, আম এমনকি সবচেয়ে পঁচনশীল ফল জামও দীর্ঘদিন ধরে তাজা রাখা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ফরমালিন বা অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করতে একেবারে নারাজ। মানুষের ক্ষতি হোক এমন কোন পদার্থ ফলে দেয়া হয় না বলে তারা দোর দাবি করে। কিন্তু কিভাবে দীর্ঘদিন ফল তাজা থাকছে এবং রং এর কোন পরিবর্তণ হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারেনি।
দীর্ঘসময় ফল তাজা থাকা এবং তা খাওয়া মোটেও মঙ্গলজনক নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। ২৫০ শয্যা বিষিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার কাজল কান্তি দাঁ বলেন, ফল দীর্ঘ সময় তাজা রাখার জন্য অবশ্যই ফরমালিনসহ মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়কি পদার্থ মেশানো হচ্ছে। ফরমালিন বিভিন্ন ল্যাবরেটরির কাচামাল ও মরদেহ তাজা রাখা ও পচন রোধের জন্য ব্যবহার হয়। বিভিন্ন শীতাতপ যন্ত্র ও মরচুয়ারি আবিস্কার হওয়ার পর ফরমালিন ওই সব কাজে ব্যবহারের মাত্র কমেছে। কিন্তু সহজ লভ্যতা কমেনি। একারণে ব্যবসায়ীরা ফরমালিন সংগ্রহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহার করছে। ফরমালিন বা কোন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের লিভার ও কিডনী স্থায়ীভাবে নষ্ট হতে পারে। তবে আক্রান্ত হয় ধীরে ধীরে। বর্তমানে লিভার ও কিডনীর সমস্যা নিয়ে যদি কোন রোগী আসে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিণ বন্ধ করতে যদি এ মুহূর্তে প্রশাসন কার্যকরি পদক্ষেপ না নেয় তাহলে লিভার ও কিডনী রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে ধনী-গরীব কেউ বাদ পড়বে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১০ রাত ৩:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




