যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এবারের ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপনের জন্যে যশোর জেলার জন্যে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির তৈরী এক লাখ ইউনিটের ৫৪ হাজার দু’শ ৪৩টি (নীল রং) ভারতীয় অলিভ হেলথ কেয়ারের তৈরী দু’লাখ ইউনিটের ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮শ’৫২টি ক্যাপসুল সরবরাহ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে পাওয়া এই ক্যাপসুল দিয়ে পুরো জেলায় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ইউনিটের ৩৩ হাজার ৬শ’৪৫টি ও দু’লাখ ইউনিটের ২লাখ ৭৯ হাজার ৮শ’৮২টি ক্যাপসুল শিশুদের খাওয়ানো হয়েছে। স্টোরে এখনো ১ লাখ ইউনিটের ২০ হাজার ৫শ’৯৮টি ও ২ লাখ ইউনিটের ৩৫ হাজার ১শ’৩৫টি ভিটামিন এ ক্যাপসুল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ভিটামিন ‘এ’প্লাস ক্যাম্পইনে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির তৈরীকৃত কোন ক্যাপসুল সরবরাহ পাওয়া বা শিশুদের খাওয়ানোর কথা ছিল না। অসৎ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের একটি চক্র যশোরসহ বিভিন্ন জেলা শহরে এ কোম্পানিটির নকল ভিটামিন এ ক্যাপসুল সরবরাহ করেছে। এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমনকি, সরকারও চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। নকল ওষুধ সরবরাহের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত ক্যাম্পেইনে এ জেলায় ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়ে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে এক হাজার ৪শ’৩১ শিশু অসুস্থ হয়েছিল। এর মধ্যে এক হাজার তিন’শ ২২ শিশু প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। বাকি একশ’ ৯ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করানো হয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। একই সাথে তারা দাবি করেছে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়ে কোন শিশুর মৃত্যু ঘটেনি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যশোরে যে বিপুল সংখ্যক শিশু অসুস্থ হয়েছে তাদের অধিকাংশই এক লাখ ইউনিটের নীল রংয়ের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়েছিল। ২০১৩ সালের ক্যাম্পেইনে ওষুধ সরবারের জন্যে অনুমোদনহীন গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির তৈরী নকল ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়ে শিশুগুলো অসুস্থ হয়েছে। তবে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের তড়িৎ পদক্ষেপ ও উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানে শিশুগুলো দ্রুত সুস্থ হয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন বানচাল ও চরম বিতর্কের মুখে ফেলার জন্যে অনেক আগে থেকে তৎপর ছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ চক্রের সদস্যরা রয়েছেন ক্যাম্পেইন উদযাপনের সাথে সংশ্লিষ্টরাও। কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে নকল ভিটামিন এ ক্যাপসুল সরবারের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল নিয়ে অপপ্রচার মূলতঃ শুরু হয়েছিল ফেসবুক স্টাটাস থেকে। গত ১৩ মার্চ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘ডয়েচে ভেলে’ প্রকাশ করেছে জামায়াত শিবির পরিচালিত ‘বাঁশের কেল্লা’সহ সমমনা কয়েকটি ফেসবুক পেজে ভিটামিন এ ক্যাপসুল সম্পর্কে ভীতিকর তথ্য প্রচার করা হয়েছে। জামায়াত শিবিরের অনুসারীরা প্রচার করেছে ভারত থেকে আমদানিকৃত ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷'এমনকি মৃত্যুর খবরও প্রচার করা হয়েছিল ফেসবুকে। সরকারের তরফ থেকে ওই সময় বলা হয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যে দেশের একটি সফল কর্মসূচি বিতর্কিত করার একটি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ছড়ানো হয়েছে এ ষড়যন্ত্রের জাল। কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে নকল ভিটামিন এ ক্যাপসুল সরবরাহ না হলে সংঘবদ্ধ চক্রটির ষড়যন্ত্র আটকে যেত। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধাচারণকারীদের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রেখে কখনো ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা।
নকল ভিটামিন এ ক্যাপসুল দিয়ে যশোরে ক্যাম্পেইন উদযাপনের বিষয়ে সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার আতিকুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে যে ক্যাপসুল সরবরাহের বাইরে স্থানীয়ভাবে কোন ক্যাপসুল শিশুদের খাওয়ানো হয়নি। কেন্দ্র থেকে যা পাঠানো হয় তা দিয়েই জাতীয় এ ক্যাম্পেইনটি উদযাপন করা হয়। এক্ষেত্রে আসল নকল যাচাই বাছাই করার ক্ষমতা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নেই। জাতীয় ইস্যুতে বাড়তি কোন মন্তব্য তিনি করতে রাজি হননি।
http://www.gramerkagoj.com
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




