ডাক্তারের মহানুভবতায় স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে যাচ্ছেন হাসেম আলী নামে এক ব্যক্তি। ২০ বছর বয়স থেকে দুরারোগ্য ব্যাধি নিউরো ফাইব্রোমেটোসিস (সারা শরীরে অসংখ্য মাংসের পিন্ডের বিস্তার) আক্রান্ত হলেও উন্নত চিকিৎসা শুরু হয়েছে ৫৫ বছরে বয়সে এসে। হাসেম আলীর চিকিৎসার গুরু দায়িত্ব নিয়েছেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শরিফুল আলম খান।
হাসেম আলীর বাড়ি যশোর শহরতলীর নাজির শংকরপুর এলাকায়। ২০ বছর বয়সে তার সারা শরীরে বাড়তি মাংস পিন্ডের বিস্তার শুরু হয়। তখন ডাক্তারের কাছে গেলে টিউমার ভেবে চিকিৎসা দেয়। কিন্তু রোগ নিরাময় হয়নি। বরং দিনকে দিন শরীরে হাজারো মাংস পিন্ডের বিস্তার ঘটে। চেহারা বিকৃত হয়ে যেতে থাকে। চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় বিকৃত চেহারা ও শরীরের বাড়তি মাংস পিন্ডকে নিয়তির লিখন মেনে নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালাতে থাকেন হাসেম আলী। এরই মধ্যে তার কোমরের বাম পাশে বৃহৎ আকারের একটি মাংস পিন্ড ঝুলে পড়ে। এতে তার স্বাভাবিক জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ঠিকমতো হাটাচলা করা ও প্রয়োজনীয় কর্মে বাধার সৃষ্টি করে বাড়তি মাংস পিন্ডটি। জীবনের শেষ চিকিৎসা ভেবে যে যখন যেখানে যেতে বলেছে হাসেম আলী সেখানে গিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তাকে কোন আসার বাণী শোনাতে পারেননি। বরং নানা ভীতিকর কথা বলে তার জীবনকে অভিশপ্ত করে তুলেছেন। হাসেম আলীকে জানানো হয়েছিল কোমরের বাড়তি মাংস পিন্ড অপসারণ করা হলে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেন। তা না হলে প্যারালাইজড হয়ে যাবেন। এমন ভীতিকর তথ্যে বিশ্বাস করে তিনি চিকিৎসার উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেন।
স¤প্রতি হাসেম আলীর কোমরের বাড়তি মাংস পিন্ডে ইনফেকশন হয়। সেখানে পঁচন ধরে। এলাকাবাসীর পরামর্শে তিনি যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শরিফুল আলম খানের শরাণাপন্ন হন। ডাক্তার শরিফুল আলম খান পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিতভাবে হাসেম আলীকে আশ্বস্ত করেন তার অপারেশন সম্ভব। এমনকি সফল অপারেশন করা গেলে কোন ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
১২ মার্চ তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থা অপারেশনের জন্যে উপযুক্ত কিনা পরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় শনিবার অপারেশন করার। শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ডাক্তার শরিফুল আলম খানের নেতৃত্বে রোগীর শরীরের বাড়তি মাংস পিন্ড অপসারণের জন্যে অপারেশন শুরু হয়। ঘন্টা দেড়েক চেষ্টার পর সাড়ে ৩ কেজি ওজনের মাংস পিন্ড শরীর থেকে আলাদা করা হয়। কোন প্রকার বাড়তি রক্তপাত ছাড়াই সফলভাবে অপারেশনটি সম্পন্ন হয়। অপারেশনে ডাক্তার শরিফুল আলম খানকে সহযোগিতা করেন ডাক্তার কৌশিক শিকদার ও ডাক্তার মাশহুরুল হক জুয়েল। এ্যানেসথেশিয়ায় ছিলেন ডাক্তার বিপুল কান্তি হালদার।
অপারেশনের পর সন্ধ্যা ৭ টায় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় হাসেম আলীর। তিনি সুস্থবোধ করছেন বলে জানিয়েছেন। সফল অপারেশন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে সহযোগিতা করার জন্যে ডাক্তারদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
ডাক্তার শরিফুল আলম খান বলেন, হাসেম আলীর শারীরিক অবস্থা খুবই জটিল। তিনি যে রোগে আক্রান্ত তা স্থায়ী নিরাময়যোগ্য নয়। জিনগত কারণে তিনি এ রোগে আক্রান্ত। তার অতীতের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তাররা ঝুঁকি নিতে চাননি। অপারেশনের সময় মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। ওই রক্তপাত বন্ধের চিকিৎসা পদ্ধতি জানা থাকলে ডাক্তাররা ঝুঁকি নিতে পারেন। তার অপারেশনটি করা হয়েছে পেশাগত দায়িত্ব, কর্তব্য ও মানবিকতার দিক বিবেচনা করে। আশা করা হচ্ছে শিগগির হাসেম আলী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




