বিশ্ব ফুটবলে আজকের দিনটা আবারও কালো অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকলো । কথাটি কেন বললাম সেটা জানতে হলে একটু পিছনে ফিরে যায় চলুন । ২০১০ সালের কথা ফুটবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল তখন স্পেন ।ওই বছর নেদারল্যান্ডকে ১ - ০ গোলে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন । একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন আন্দ্রেস ইয়েনেস্তা । তার পায়ের জাদুতে প্রথমবারের মতন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন ফুটবল দল । ওই বছরেরই বার্সেলোনা হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লীগ জিতেন সে । ইয়েনেস্তা ক্যারিয়ারে সব থেকে সাফল্যমন্ডিত বছর বলা চলে । এত অর্জনের পর ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অন্যায়টি হয় তার সঙ্গে ।যেটাকে অনেকের চোখে রীতিমত ডাকাতি বলে মনে করা হয় কেননা সেই বছর ফিফার বর্ষসেরার ফুটবল বা ব্যালন ডি অর পাই মেসি । জানি আমার এই কথার সাথে অনেক মেসি ভক্ত এক হবেন না । কিন্তু সবটা শেষ পর্যন্ত পড়ুন তারপর ন্যায় অন্যায় আপনারাই বিচার করেন । এবার আসি ২০১৪ বিশ্বকাপে পুরো টুর্নামেন্টে অবিশ্বাস্য ফুটবল উপহার দিয়োও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পরাজিত হয়ে শিরোপাবঞ্চিত হয় মেসিসহ পুরো আর্জেন্টিনা টীম । আমাদের এই সমাজে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে দিনশেষে আমরা জয়ীকে মনে রাখি পরাজিতকে না ।তাই হয়তবা ওই বছর বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েও মেসি ব্যালন ডিঅর পাই নাই । একই সাথে অন্যায় করা হয় ওই বছর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়ার প্রতি । অথচ তার দৃষ্টিনন্দন ফুটবল শৈলীতে মুগ্ধ তখন ফুটবল বিশ্ব । একের পর এক অবিশ্বাস্য সেভ করে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
জিতেছেন বিশ্বকাপের মতন বড় শিরোপা তারপরও তাকেও সেরা তিনে মনোনীত করা হলেও ব্যালন ডিঅর দেওয়া হয়না । ওই বছর অর্থ্যাৎ ২০১৪ সালে ব্যালন ডি অর পাই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কারন রোনালদো চ্যাম্পিয়ন লীগে সবথেকে বেশি গোল করার অনন্য রেকর্ড স্থাপন করেন কিন্তু ব্যালন ডিঅর ওই বছর তার প্রাপ্য নয় ।কারন ক্লাব ফুটবল কখনো বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে বড় হতে পারে না । আর যদি তাই হবে তাহলে বিশ্বকাপের আয়োজন কেন করে থাকে ফিফা । এবার আসি সর্বশেষ বিশ্বকাপ তথা ২০১৮ বিশ্বকাপে রীতিমতন প্রতিপক্ষকে নাচিয়ে কাঁদিয়ে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে ফ্রান্স ফুটবল টীম । যোগ্য দল হিসেবে বিশ্বকাপের মুকুট পুনরুদ্ধার করেছে তারা । তরুন ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে , আন্তোনিও গ্রিজম্যানসহ রাফায়েল ভারানের চোখ জুড়ানো পারফরমেন্স মুগ্ধ পুরো বিশ্ব । এত কিছু অর্জনের পর ফলাফল সেই একাই । মর্যাদা পেল না বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়গুলো আবারও হল ডাকাতি । এইবার ডাকাতির দলে শামিল হল লুকা মডরিচ । লুকা মডরিচের কথা একটু বলে নেয় ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলের অধিনায়ক তিনি পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবে খেলেন তিনি । বিশ্বকাপে নজর কাড়ানো পারফরমেন্সে নিজের নামের সুবিচার করেছেন । তিনিই সর্বশেষ খেলোয়াড় যে মেসি আর রোনালদোর ১০ বছরের রাজত্বে হানা দিয়েছে । কিন্তু আমার মূল কথাটি হচ্ছে এই লুকা মডরিচ কিভাবে ব্যালন ডি অর পাই .....???? আমার ভাবনাবোধে কেন পৃথিবীর কোনো ফুটবল পন্ডিতের ভাবনাবোধে আসবে না তিনি কিভাবে ব্যালন ডি, অর পাই ???? বিশ্বকাপের সেরা পরাজিত সৈনিক যদি ব্যালন ডি অর পাই তাহলে মেসি কেন ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েও ব্যালন ডিঅর পাই নাই ।এখন অনেকেই বলবে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদ হয়ে এই বছর চ্যাম্পিয়ন লীগ জিতছে তাই তার প্রাপ্য। লুকা মডরিচ না থাকলে রিয়াল চ্যাম্পিয়ান লীগ জিততো কিন্তু রোনালদো না থাকলে জিততো না রিয়াল কারন সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন লিগে ১৬ গোল আসছে তার পা থেকে । তাই এই লুকা মডরিচ কিভাবে ক্রেডিট পাই এটা অর্জনে । আমি বলব এটি তাহলে রাফায়েল ভারান কেন পেল না সেও তো রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় পাশাপাশি এই বছর বিশ্বকাপ জয়ী খেলোয়াড় তাহলে তার দোষ কোথায় ....??? তিনি ডিফেন্ডার তাই তার দোষ...!!! ডিফেন্ডার কি ফুটবল ইতিহাসে কখনো সেরা খেলোয়াড় হয়নি ........ নাকি বিশ্বকাপে কোনো গোলকিপার এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি অর পাইনি তাহলে অলিভার কানরা কিভাবে এই পুরস্কার অর্জন করছে ... ???
সত্যেই ক্ষমতার এই দৃশ্যমান প্রহসন আর দেখতে ভালো লাগে না ......আজ অনেক বেশি উপলব্ধি করতে পারছি ফুটবলের নাট্যমঞ্চে সবকিছু আগে থেকে সাজিয়ে রাখা হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৩