ফুটবল খেলা যে আমার প্রিয়, ব্যাপারটা তেমন নয়। আমি শুধু বিশ্বকাপ এলেই ফুটবল খেলা দেখি। সিজনাল দর্শক বলতে যা বোঝায়। হাতে গোনা কয়েকটা প্লেয়ারকে চিনি তবে নাম জানি আর একটু বেশি।
একটা সময় ছিল তখন অর্থাভাবে আমরা দুই বেলা রুটি খেতাম। রুটি খাওয়া ছিল গরীবের খাদ্য। বাবার অত টাকা ছিল না যে, প্রায় সময় বড় মাছ বা মাংস এনে খাওয়াবে। আমারা খেতাম ছোট মাছ, পুঁটি মাছ। সে সময় মাছ ভাগা করে (বেশ কিছু মাছ এক ভাগ) বিক্রি হতো, ১ ভাগ ২টাকা, ৩ ভাগ ৫ টাকা। শাক সবজি বেশি খাওয়া হতো।
একটা সময় দেখি কমদামী জিনিষগুলোর দাম বেড়েই চলেছে। কারণ কি ? ওসব খাবারে নাকি ভিটামিন বেশি তাই ধনী লোকেরা খাওয়া শুরু করেছে। সবকিছু চলে গেল ওদের দখলে।
এই তো ক’দিন আগে একদল মেয়ে ছিনিয়ে এনেছে আমাদের জন্য “সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২২” ট্রফি। ওদের এই অর্জনে ওরা যতটা খুশি, আমি মনে হয় তার চাইতে কম না, ওরা আমাদের গর্বিত করেছে। মন থেকে কখন যে ওদের জন্য শুভকামনা বেরিয়ে গেছে টেরও পাইনি। বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের অর্জন এতটা কম যে, ওরা যদি খেলায় হেরে আসতো ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হতো কিন্তু ওদের এই অর্জন খুশির বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে।
এই কদিনে খন্ড খন্ড খেলার ভিডিও, প্লেয়ারদের সাক্ষাৎকার দেখলাম, ওদের খেলা এতটা উন্নত কল্পনাও করিনি।
এক বড়ভাই বলেছিল সব সুন্দর জন্মায় অসুন্দরে। পঙ্কিলে ফোটে পদ্ম ফুল, কয়লার খনিতে পাওয়া যায় হীরা আর ভাঙ্গা টিনের বাড়ী থেকে তৈরী হয় সাবিনারা। এই মেয়েরা কেউ পেশা হিসাবে পছন্দ করে ফুটবল খেলতে আসেনি, তারা এসেছে সখ থেকে। আমাদের এই পরিবেশে কোন মেয়ে ফুটবল খেলা হৃদয়ে ধারণ করতে না পারলে এরা সাবিনা, শামসুন্নাহার বা কৃষ্ণা রানি হতে পারতো না। এর এখন আইডল, এদের বদৌলতে বেতন বৃদ্ধি পাবে, এরা আরো কিছুদিন ভালো খেলবে এবং আমাদের গর্বিত করবে। তারপর ?
এর পরে ফুটবল খেলা নিয়ে অনেকে স্বপ্ন দেখবে, এটা তখন একটা ভালো পেশা হিসাবে গন্য করা হবে, ধনী লোকের মেয়েরা আসবে ফুটবল খেলতে তখন আর সাবিনাদের আমরা খুঁজে পাব না।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সকল সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
প্রচ্ছদ