somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয়ের দিন এবং পরের দু’দিন

০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাঙ্গালী বীরের জাতি, আবেগী জাতি, সুযোগসন্ধানী জাতি এরুপ অনেক বিশেষণ আমরা জাতি হিসাবে পেয়ে থাকি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা কেমন জাতি কেউ কি বলতে পারেন ?
তবে একটা কথা ভালো ভাবেই বলতে পারি, তা হলো আমরা অতীতের শিক্ষা গ্রহণ করি না। যাইহোক এই ক’দিনে যা যা দেখলাম।
বিজয়ের মুহুর্তটা বাসায় বসে অনলাইনে দেখছিলাম। এক বন্ধু কল দিয়ে বললো বিজয় উল্লাসে বাইরে যেতে। আমি বললাম একটু পরে বের হবো। এর মাঝে অনেকের সাথেই কথা হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর ঢাকা থেকে এক বন্ধু বললো তার বোন যে বাসায় থাকে (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর বাসা) সেটাতে আগুন ধরে দিয়েছে, তার বোন, ভগ্নিপতি এবং ছেলেসহ ছাদে অবস্থান করছে, আমি যেন একটু হেল্প করি। আমি গিয়ে দেখি প্রচুর লোকজন, তার মাঝ থেকে ভগ্নিপতি বের হয়ে আসছে। আমি তাকে একপাশে নিরাপদে রেখে বাকীদের কথা জিজ্ঞেস করলাম, সে জানালো ওরা আসছে, তবে মোবাইল কেড়ে নিয়েছে এবং মটর সাইকেল রাস্তায় মাঝে ফেলে রেখেছে আগুন দেয়ার জন্য। আমি দ্রুত গিয়ে বোন আর তার ছেলেকে নিয়ে ভগ্নিপতির কাছে গিয়ে বললাম ওদের নিয়ে দূরে চলে যান আমি মোবাইল আর মটর সাইকেলের ব্যবস্থা করছি। আমি ওদের আশ্বস্ত করলাম ঠিকই কিন্তু আমি নিজে অতখানি আত্মবিশ্বাসী না। কারণ ঐ গ্রুপটাই ছিল বিএনপি’র ছেলেরা, আমার পরিচিত। একজনকে বললাম মটর সাইকেল আমার আত্মীয়র, সে বললো এখন কিছু না করে একটু পর নিয়েন। কিছুক্ষণ পর আর ২/১ জনের সাথে কথা বলে মটর সাইকেল উদ্ধার করে আমার বাসায় রেখে আসি। যে বিষয়টা প্রথম দর্শনে বোঝা যায়নি তা হলো, একটা গ্রুপ বাসায় আগুন দিয়ে গেছে, পরবর্তীতে এলাকার লোকজন স্থানীয় কমিশনারকে (বিএনপি সমর্থিত, বর্তমানে বহিস্কৃত) বিষয়টি জানায়, কমিশনার তার দলবল নিয়ে একদিকে আগুন নেভানোর কাজ অন্য দিকে ৬ তলা বিল্ডিং এর ছাদসহ উপর থেকে সব বাসিন্দাদের নিরাপদে নামানোর ব্যবস্থা করে। যাইহোক পরবর্তীতে মোবাইলটাও উদ্ধার করে দিয়েছি।
সন্ধার দিকে গেলাম শহরের দিকে, রাস্তায় আলো নেই, বিধ্বস্ত নগরী। দেখলাম একটা বহুতল শপিং কমপ্লেক্সে তখনও মোবাইলের আলো জ্বেলে লুটপাট চলছে, শুরু হয়েছিল দুপুর থেকে। একটু যাওয়ার পর মুল নগরীর অবস্থা ভয়ঙ্কর খারাপ, ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। মানুষ দেখা যাচ্ছে না ঠিকভাবে তবে গলার আওয়াজে বুঝলাম ওরা ছিন্নমুল এবং একসাথে অনেকজন, পাশেই দুটো মদের দোকান লুট হয়েছে। বিজয়ের দিনে নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ী ফিরে এলাম।
পরের দিন অফিস করলাম সারাদিন। অফিসে একটা ম্যুরাল ছিল গিয়ে দেখি সেটা নাই, খোঁজ নিয়ে জানলাম অফিস যেন আক্রান্ত না হয় তার জন্য কর্মকর্তারা ওটা ভেঙ্গেছে। এছাড়া অতি উৎসাহী এক কর্মকর্তা ছিলেন যিনি সরকারি টাকা খরচ করে দেয়ালে বড় বড় কাঁচের ফ্রেমে ছবি বাঁধাই করে রেখেছিলেন, সেগুলোও নেই।
বিকালে হাঁটতে বের হলাম, যেদিকে হাঁটতে যাই সেই এলাকায় এক কমিশনারের পুড়ে যাওয়া বিল্ডিং দেখলাম, বাসার সামনে তখনো পুড়ে যাওয়া মটর সাইকেলের কঙ্কাল পড়ে আছে।
সন্ধায় গেলাম শহরে। যাওয়ার সময় দেখি ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। জেলখানা থেকে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের ছাড়া হচ্ছে তাই রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। ফেরার সময় দেখি বিএনপি অফিসে লোকজন গমগম করছে। জামায়াতে ইসলামীর অফিস অনেক বছর পর সেদিনই খুলেছে, ঝাড়ামোছার কাজ চলছে।
দ্বিতীয় দিন সকালে চা এর দোকানে চা খাওয়া সময় জামায়াতের এক সাংবাদিক একজনকে বলছে গতকাল তারা প্রেসক্লাবের দখল নিয়েছে। যাইহোক, অফিস যাওয়া আগে কম্পিউটার মার্কেটে গেলাম, দেখি দোকান কিছু খোলা তবে একটু ভয়ে আছে তারা। মার্কেট কমিটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিভাবে নিরাপত্তা রক্ষা করা যায়, যেতে এবং আসতে যেটুকু বুঝলাম তারা কয়েকটা গেটের বাইরে চেয়ার নিয়ে বসে থাকবে।
রাতে বাইরে গিয়ে এক হিন্দু বন্ধুর সাথে দেখা, জিজ্ঞেস করলাম তার জানামতে আমাদের শহরে বা আশেপাশে কোন মন্দির ভাংচুর হয়েছে কিনা, সে জানালো হয়নি তবে দাড়ি টুপিওয়ালা কিছু মানুষ কিছু কিছু মন্দির পাহারা দিচ্ছে। আমিও দেখলাম একটা বিশেষ জায়গায় (এখানে মন্দির মসজিদ পাশাপাশি) এধরনের কয়েকজনকে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়েছিল এবং পরবর্তীতে সুবিধাভোগীরা তাদের ফায়দা লুটেছে। বর্তমান সময়ে ছাত্ররা দেশটাকে নতুন করে স্বাধীন করে গত দুইদিন ধরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে আর পাশাপাশি সময়ে অনেকে দল গোছাতে ব্যস্ত, চেয়ারটা খুব দরকার!!!!

যাদের আত্মত্যাগে আবার আমরা নতুন করে স্বাধীনতা পেলাম, ভাই আমি তোমাদের কাছে ঋণী।

ছবি
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১:৫৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×