ঊনিশ শতকে বাংলা সাহিত্যে মুসলিম
কবি হিসাবে দাদ আলি বিশেষ স্থান
অধিকার করেছিলেন। ব্যক্তিগত
অনুরাগ ও অনুভূতিকে কবি দাদ
আলী অপূর্ব ছন্দে প্রকাশ
করে খ্যাতি অর্জন করেন। কবি দাদ
আলী মিঞা ১৮৫২ সালে ২৬ জৈষ্ঠ
১২৫৯ বঙ্গাব্দে বর্তমান কুষ্টিয়ার
মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান
ইউনিয়নের আটিগ্রামে এক সম্ভ্রান্ত
মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহন
করেন। পিতার নাম মৃত নাদ
আলী মিঞা। ছোটবেলায় কবির
পিতা প্রচেষ্টায় বাড়িতেই গৃহ শিক্ষকের
কাছে আরবী, ফারসী, উর্দু ও
বাংলা শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
তিনি লোক কাহিনী, ধর্ম কাহিনী,
ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা,
এমনকি চিকিৎসা ও ফারায়েজ বিষয়েও
কাব্য রচনা করেন।
যতদূর জানা যায়, কবি দাদ আলীর
পিতা নাদ আলীও ছিলেন সাহিত্য
অনুরাগী, লেখালেখিও করতেন। পিতার সাহিত্য বিষয় নিয়ে লেখালেখি এবং ২টি কষ্টের ঘটনা দাদ আলীকে কাব্য লেখার
প্রতি অনুপ্রাণীত করে। ২টি ঘটনার
একটি ছিলো তার পিতার আকষ্মিক অকাল
মৃত্যু এবং প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও
অসুস্থতার কারনে মদিনা শরীফ
জেয়ারত করতে যেতে না পারার কষ্ট
থেকে সে বেদনায় কবি “আশেকে রাসুল” কাব্য লেখেন। তার কাব্যগুলোতে মদিনা জিয়ারতের হৃদয় বেদনার হাহাকার ও
অশ্র“তে উচ্ছ্বাস প্রধান। এসব কষ্টের
কথাগুলো তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যেও
পাওয়া যায়। কবি দাদ আলী মিঞার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে,
আশেকে রাসুল (১ম খন্ড, ২য় খন্ড),
শান্তিকুঞ্জ, মসালা শিক্ষা, ভাঙ্গা প্রাণ
(১ম ও ২য় খন্ড), দেওয়ানে দাদ, সমাজ
শিক্ষা, ফারায়েজ (মুসলমানী দায়ভাগ
পদ্যে লিখিত), সংগীত প্রসূন,
উপদেশমালা, এলোপ্যাথিক জ্বর
চিকিৎসা, আয়ুর্বেদ , আখেরী মউত, জাতিশত্রু বড় শত্রু। কবি দাদ আলী রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে মুসলমানী দায়ভাগ
নিয়ে লেখা ‘ফারায়েজ’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁকে আকাশচুম্মি জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
ইউসুফ আলী, এহসান আলী, মুনসুর আলী, ইদ্রিস আলী ও আমেনা বেগম নামের ৭ সন্তানের জনক ইসলামীক ঘরানার এই মহান কবি দাদ আলী ১৯৩৬ সালে ৫
পৌষ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে আটিগ্রাম নিজ
গ্রামে মৃত্যুবরন করেন। কবির ৭
সন্তানের কেউই বেঁচে নেই। কবি ও কবির স্ত্রীর পাশাপাশি যে কবরটি রয়েছে অযত্নে আর অবহেলায় সেটিও আগাছায়ন ঢেকে গিয়ে ও ভেঙ্গেচুরে বিলিন হতে চলেছে। মৃত্যুর ৮০ বছর অতিক্রান্ত হলেও এই মহান কবির বাস্তুভিটাও সৃষ্টিশীল অমর কাব্যগ্রন্থগুলো সংরণে সরকারি-
বেসরকারিভাবে কোন উদ্যোগ
নেয়া হয়নি। কবির সন্তানরা জীবিত
থাকা কালে তাঁর মৃত্যু ও জন্ম দিবস
পালন করলেও সন্তানদের কেউ
বেঁচেনা থাকায় তাও আর পালন
করা হয় না। আটিগ্রামে কবির বাস্তুভিটায়
কবি দাদ আলী সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে পাশা পাশি শায়িত কবি ও কবি স্ত্রীর কবর ও রয়েছে অযত্নে আর অবহেলায়। আগাছায় ঢেকে গিয়ে ভেঙ্গে চুরে বিলিন হতে চলেছে।
কবি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে কি এটাই চেয়েছিল?