somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আমার মা এবং আমার সব থেকে পুরোনো বন্ধু"

১২ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আমি আমার সবথেকে পুরোনো একটা বন্ধুর কথা বলছি। অবশ্য এই বন্ধুটার সাথে যখন আমার বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল তখন কিন্তু আমি কথাই বলা শিখিনী । শুধু কি কথা বলাই, তখনোতো আমি কাউকে চিনিইনা, কাউকে দেখিইনি । আরে, আমি চিনবো কিভাবে, দেখবো কিভাবে, আমার যে তখনও জন্মই হয়নি । কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের জন্ম ঠিকই হয়ে গেছে । আমার মায়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব আমার জন্মের ১০ মাস আগে থেকেই । আমি তখনও পৃথিবীতেই আসিনি অথচ আমার জন্য মা'র কত দুশ্চিন্তা, কত ব্যাকুলতা, কত যত্ন, কত ভালবাসা । আমিও কম যাইনা, মাঝে মাঝেই একটু নড়েচড়ে উঠতাম । আমার অস্তিত্ব টের পেয়ে মা যে কতই খুশি হতেন । অবশ্য আমার ব্যাপারে মা ছিলেন ভীষণ সাবধানী । আমি যেন ব্যথা না পাই সেজন্য মা হাঁটতেন খুব ধীরে ধীরে । রান্নাঘরেও যেতেন সাবধানে যেন আমার কোনও ক্ষতি না হয়। আর আমি যখন পৃথিবীতে আসলাম তখন মা যে কি পরিমান ব্যথা সহ্য করেছিলেন, কি পরিমান কষ্ট অনুভব করেছিলেন সেটা শুধু মা'ই জানেন। সে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আমাদের পুরুষ জাতিকে দেননি। আমি পৃথিবীতে আসলাম। আমার মায়ের খুশি দেখে কে। আমি কিন্তু একটানা কেঁদে চলেছি। আর আমার মা আমার কান্না দেখে হাসছেন। জীবনে শুধুমাত্র এই একটা দিনই সন্তান কাঁদলে মা হাসেন। বাকিটা জীবনই সন্তান কাঁদলে মা কাঁদেন, সন্তান হাসলে মা হাসেন। সেই তখন থেকেই আজ অবধি মা আমার জন্য কি কষ্টই না স্বীকার করেছেন। রাতের বেলা কোচিং ক্লাস করে বাড়ি ফিরতে ভয় পেতাম বলে ছুটির আগেই কোচিং এ গিয়ে মা বসে থাকতেন। বাড়ি ফেরার সময় আমার ব্যাগটা হাতে নিতেন। আমার মনে আছে একবার ভাইয়া কোনও একটা কারণে খুব ক্ষিপ্রতা নিয়ে আমাকে মারতে এগিয়ে আসছিলেন আর এটা দেখে মা যেভাবে অশ্রু জড়ানো কণ্ঠে আর্তনাদ করে আমার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ভাইয়া কিন্তু আর এক পা 'ও এগোতে পারেনি। ছোট বেলায় আমার শুধুই অসুখ লেগে থাকতো আমার অসুখে কত রাত যে মা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন তার হিসাব নেই। এখনতো অনেক বড় হয়ে গেছি। তবে মায়ের কাছে সন্তান সব সময় ছোটই থাকে। মায়ের দুশ্চিন্তা কমেনা বরং বাড়ে। ছেলেটা কিভাবে থাকে, কি খায়, টাকাপয়সার কোনও কমতি হচ্ছে নাতো। মাকে শান্ত রাখতে মাঝেমাঝে আমাকে দুই একটা মিথ্যার আশ্রয়ও নিতে হয়, শরীর খারাপ হলে সেটা লুকিয়ে চলা, বুয়ার রান্না করা স্বাদহীন তরকারীর গুণকীর্তন মায়ের কাছে মাঝে মাঝেই করতে হয়। তবে অভিনয়ের এই প্রতিযোগিতায়ও আমি মায়ের কাছে পরাজিত। মা তো ফোনে প্রতিদিনই বলেন ভাল আছেন। যেন আমি চিন্তা না করি। কিন্তু আমি জানি সন্তান দূরে থাকলে মা ভাল থাকতে পারেনা। ভাল থাকার অভিনয় করে মাত্র। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব একা লাগে। ক্লাস-খাওয়া-ঘুম এর এই ছকবাধা জীবন একঘেয়েমি লাগে। হোস্টেল লাইফের কিছু পাগলামি আড্ডা, খেলার চ্যানেল, ইংলিশ মুভি, তুরুপের তাস, ইন্টারনেট এসব রেখে মায়ের কাছে গিয়ে একটু শীতল হতে ইচ্ছা করে। এখনতো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। নিজের বুঝ নিজে বুঝতে শিখেছি। শুধু বুঝতে শিখেছি বললে ভুল হবে, দু-এক লাইন বেশিও বুঝে ফেলি মাঝে মাঝে। কথায় কথায় মায়ের সাথে রাগারাগি করি, খাবার নিয়ে রাগারাগি করি, সকাল-সকালে ঘুম থেকে ডেকে তুললে রাগারাগি করি। এসব নিজে নিজেই শিখে গেছি। শুধু মায়ের কাছে ক্ষমাটা আজও চাইতে পারিনি। মা, তোমাকে বলছি মা, বিশ্বাস করো, জীবনে যতবারই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি ততবারই আড়ালে কেঁদেছি। কিন্তু তোমার কাছে গিয়ে সরি বলতে পারিনি। তোমাকে ভালবাসি এই কথাটাও মুখফুটে আজও বলতে পারিনি। আজ তোমাকে বলছি মা, তোমাকে ভালবাসি, অনেক অনেক ভালবাসি, ভালবাসি। ভালথেকো মা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×