একটি বিষয় আজকাল খুব বেশী নজরে পড়ছে , আর তা হলো কোচিং সেন্টার । প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কোচিং সেন্টারের সংখ্যা অনেক বেশী । আবার অনেক কোচিং সেন্টার দেখা যায় ৩-৪ বছর পর স্কুল/কলেজ হয়ে যায়। ছাত্র/ছাত্রীরা এখন পূরাই কোচিং নির্ভর হয়ে পড়েছে। বর্তমান মা বাবারা মনে করেন ছেলে মেয়েকে কোচিংয়ে ভর্তি না করলে হয়তো তারা অনেক পিছিয়ে পরবে। তাই তারা বাধ্য হয়ে টাকার দিকে না চেয়ে তাদেরকে কোচিংয়ে ভর্তি করান।
এখন আমার কথা হচ্ছে স্টুডেন্টরা কোচিংয়ে কেনো পড়ে ? কি জন্যে পড়ে ?
একটু বেশী শেখার জন্য, সব থেকে আগে থাকার জন্য এইতো ! কিনতু এইটা কতটুকু সম্ভব ?
যে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোচিং সেন্টার রয়েছে এগুলার অবস্থা তো করুন।
যে শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে অংকের ক্লাস করান একি শিক্ষক কোচিংয়ে ও অংকের ক্লাস করান, তাইলে ছাত্ররা/ছাত্রীরা আলাদা করে কি শিখলো ? তিনি কোচিংয়ে যা পড়ান তা কি ক্লাসে পড়াতে পারতেননা ? নাকি ক্লাসে ঠিকমত পড়ান না কোচিংয়ে পড়ানোর জন্য ?
প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্ট সংখ্যা ৪৫ জন আর কোচিং এ ভর্তি হয় ৩৫ জন । (অনেক কে ভর্তি হতে বাধ্য করা হয়) বাকি যে দশ জন হতভাগা রয়ে গেলো তারা হয়তো গরীবি হালতের কারনে কোচিং এর ধারেও কাছেও ঘেসেনা । প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার খাতায় সেই ১০ হতভাগা গরীব ছাত্রই পিছিয়ে থাকে। (যদিও তাদের মাঝে অনেকেই প্রতিভাবান থাকে।) ধারণাটা এমন, কোচিং করেনাই সেতো পিছিয়ে থাকবেই। আসলে কোচিং শিক্ষক ইচ্ছা করেই তাদের কিছু মার্ক কম দেন, তা না হলে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের অভিভাবকদের কিভাবে বলবেন আপনার ছেলে কোচিংয়ে পড়ায় মার্ক আগের চেয়ে বেশী পেয়েছে।
অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন ক্লাসে স্টুডেন্ট বেশী তাই কোচিং এর দরকার, কিন্তু কোচিংয়ে কম কিসে ? কোচিং এ তো প্রার সবাই ভর্তি হয় । আসলে কম বেশী কিছু না, সবি হচ্ছে ধান্ধা । টাকার ধান্ধা । টাকার কাছে মানবিকতা উঠে গেছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান আর শিক্ষকরা মিলে অভিভাবকদের কাছ থেকে কিভাবে টাকা শুষে নেয়া যায় সেই ধান্ধা।
সবচেয়ে কষ্ট লাগে মেধাবী ছাত্রটা কোচিং না করার কারণে যখন পিছিয়ে পড়ে। আচ্ছা যখন এই দেশে কোচিং সেন্টার ছিলনা তখন দেশে কি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এর জন্ম হয় নাই, কোন মন্ত্রী মিনিষ্টার জন্মে নাই এ দেশে ? তাইলে এখন কোচিং এর দরকার হলো কেনো ?
কোচিং এর কারনে আবার অন্য ধরনের কিছু সমস্যা ও সৃষ্টি হয়। কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকলে অভিভাবকরা তা খেয়াল করেন না , এই ফাকে অনেকেই কোচিংয়ের কথা বলে মা বাবাকে ফাকি দিয়ে ডেটিংয়ে চলে যায় । আবার কোচিং এর অনেক পার্ট টাইম শিক্ষক আছেন যারা পড়ানো থেকে ছাত্রীদের সাথে ইটিশ পিটিশ করতেই পারদর্শী বেশি। ১ মাসে ২ খানা লিপি এই অধমের হস্তগত হয়েছে যা কোচিং সেন্টারে পড়–য়া এইট এবং নাইন এর দুই ছাত্রীর লেখা । শিক্ষক শিক্ষকের মতো থাকলে ছাত্রীরা কিভাবে চিটি লেখার সাহস পায় ?
সব শেষে বলতে চাই বর্তমানে কোচিং সেন্টার সমাজের জন্য অভিশাপ ছাড়া কিছু না। শিক্ষকদের পড়ানোর প্রতি মনযোগ, আন্তরিকতা থাকলে ছাত্ররা রিজাল্ট ভালো করতে বাধ্য। কোচিং সেন্টারের দরকার নাই। বাংলাদেশের মতো এতো কোচিং সেন্টার পৃথিবীর অন্য কোথাও অছে বলে আমার জানা নাই।
সরকার যদি এ বিষয়ে কোন আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন করে তাহলে হয়তো কোচিং এর করাল ঘ্রাস থেকে এই জাতী রক্ষা পাবে।