somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি চাকরির বিজ্ঞাপণ ও আমি ..................

২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১।
২০০১ সনের প্রথম দিকের কথা,
বয়স কম, সবে কৈশোর পেরুলাম, শরীরের রক্ত গরম . সবার সাথে দূর্ব্যবহার করতাম,
এই করমু সেই করমু, পরিবারের সবাইকে একটা অশান্তির মধ্যে রাখতাম সবসময়।
একটা ডেম কেয়ার ভাব আরকি, “হাম ছে বাড়া কৌন হ্যায়” এই টাইপ।
একদিন মাথায় চিন্তা আসলো নাহ ,বাড়িতে আর থাকবোনা । কোথাও চলে যাবো,
কিন্তু কিভাবে যাওয়া যায় ?
তাইলে এক কাজ করা যাক, একটা চাকরী যদি যোগাড় করতে পারি তাইলে হয়ত বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারবো .
এক সপ্তাহ ধরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ খোজা শুরু করলাম । একদিন পেয়েও গেলাম লোভনীয় কয়েকটা বিজ্ঞাপণ ।
একটা বিজ্ঞাপণ ছিল এমনঃ
জরুরী ভিত্তিতে শুণ্য পদে কয়েকজন লোক আবশ্যক
পদ ছিল ৫ টা তার মধ্যে সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৭৫০০টাকা
সর্বোচ্চ ছিলো ১৫০০০টাকা
অভিজ্ঞতার দরকার নাই ।
বিজ্ঞাপন দেখে আমি তো পূরাই পান্খা । যাই হোক দিনক্ষন দেখে রওয়ানা দিলাম রাজধানী ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে।
মনে রঙ্গিন স্বপ্ন, স্বপ্নের ঘোরেই ঢাকা পৌছলাম।
একটা হোটেলে উঠলাম, রাতে তেমন ভালা ঘুম হলোনা।

২।
আহ ....... অফিসের লোকজন আমায় এমন ভাবে অভ্যর্থনা জানালো, আমি তো পূরাই ফিদা ।
যেন সদ্য বিদেশ ফেরত কোন মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে । আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম।
এতটা খাতিরের জন্য আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না।
এই টেবিল থেকে ঐ টেবিল, আমি যেন তাদের কত পরিচিত লোাক ।
ওদের কথাবার্তা অচার আচরণ আমার শুধু ভালই লাগছিল।
মনে হচ্চিল এমন সম্মান তো আমাকে কেউ কোনদিন দেয়নি।
অর্থাৎ আমি এত আদর যত্ন পেয়ে একটা মোহের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম।
পূরা দিন ঐখানেই কেটে গেল।

সন্ধার দিকে আসলেন অফিসের বড় বস ।
অমায়িক মানুষ, সব সময় হাসি হাসি মূখ। একান্তে বসলাাম উনার সাথে।
উনি ইন্টারভিউয়ের কাছ দিয়েই গেলেন না।
উনার কথাবার্তায় বুঝছিলাম আমার চাকরি পাক্কা। মনে যে কিছুটা খটকা ছিলনা তানা,
কিন্তু এক বাড়ি থেকে চলে এসেছি, ফিরে যাওয়াটা লজ্জাজনক। দুই চাকরিটারও খুব দরকার ছিল।
তাই মনের সন্দেহ কে পাত্তাই দিলাম না ।
বসের সাথে কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে উনি বল্লেন

দেখেন সাদেক সাহেব,
আপনি যে পদের জন্য দরখাস্ত করেছেন, ঐ পদে এখন পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী সিভি জমা দিয়েছেন।

আমি বললাম বাকি সবাই কোথায় ?
বাকি সবাই একেকদিন একেকজন আসবেন। একসাথে অনেক লোক আসলে অফিসে ঝামেলা হয়,
তাই একেক জন কে একেক দিন আসতে বলেছি।

আমি মনে করলাম হয়ত ঠিক, কারণ আমার আবার ইন্টারভিউ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলনা।

বস বললেন, আপনার কথাবার্তা শুনে আমার খুব পছন্দ হয়েছে, আমি চাই এই পদে আপনিই জয়েন করেন।
মনে মনে আমি আকাশে উড়তেছি। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।

আচ্ছা টাকাটুকা কিছু এনেছেন ? এতবড় একটা চাকরি পেলেন আপ্যায়ন টাপ্যায়ন না হলে কি চলে ?

আছে স্যার ৩০০০/=

তাইলে আপনি এক কাজ করেন টাকাগুলা আমার কাছে দিয়ে দেন, এখন থেকে তো আপনার দায়িত্ন আমাদেরই।
আমি আর কি করবো এমন এক গ্যাড়াকলে ঢুকলাম যে টাকা বের করতে বাধ্য হলাম।

ব্যাগ বেগেজ এগুলো কোথায় ?

স্যার এগুলো তো হোটেলে।
উফ কি বলেন ! আপনি আমাদের লোক না ? তাড়াতাড়ি নিয়ে আসেন, আপনি আমাদের সাথে থাকবেন।

স্যার হোটেল তো ২ দিনের জন্য বুক দিয়েছিলাম। কাল থেকে না হয় আপনাদের সাথে থাকবো।

আচ্ছা ঠিক আছে আপনি কাল ঠিক ৯ টায় আমাদের অফিসে চলে আসবেন, আমাদের শহিদ মিয়া আপনাকে কোম্পানীতে নিয়ে যাবে।

ঠিক আছে স্যার।

৩।
শহিদ মিয়ার সাথে কোম্পানীতে রওয়ানা দিলাম।
হেটে হেটে গেলাম, শহিদ মিয়াও খুব বাকপটু ছিল। কথাবার্তায় এমন ভূলিয়ে রাখলো যে,
কোনদিক থেকে কোনদিকে নিয়ে গেলো টের পেলাম না। পৌছলাম আমাদের কোম্পানীতে।

ও খোদা এইটা তো একটা গার্মেন্টস !!!
প্রচন্ড ধাক্কা খেলাম। শহিদ মিয়া ডিউটিরত একলোকের সাথে কি কি বলে আমার কাছে এসে বললো আমি আপনাকে ঠিক ২টায় এখান খেকে নিয়ে যাবো।

আমি বল্লাম ঠিক আছে, এছাড়া উপায়ও ছিলনা, এতক্ষনে বুঝছিলাম জালের মধ্যে পূরাই ফেসে গেছি।
২টার আগ পর্যন্ত গার্মেন্টস এ কাজ করলাম।
আশেপাশের কর্মচারীদের কাছ থেকে জানলাম তাদের একেকজনের বেতন ১৫০০ টাকা মাস।

৪।
শহিদ মিয়ার সাথে অফিসে আসলাম, মন খুব খারাপ ছিল। রাস্তায় তেমন আলাপ হলোনা,
ফন্দি রাস্তায়ই আটলাম, কি ভাবে কি করতে হবে।
অফিসে এসে দেখলাম কেউ নাই, শহিদ মিয়া বললো সবাই রেষ্টে গেছে।
আমি সময়ের অপেক্ষা করলাম...............................

শহিদ মিয়া বাথরুমে ঢুকলো, আমি আস্তে করে বাইরে থেকে ছিটকিনি এটে দিলাম।
কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে এক প্রকার ঝড়ের বেগে বের হলাম অফিস থেকে, সোজা সায়দাবাদ বাসষ্টেন্ড।

আমার চাকরির সখ মিঠে গেছে,
পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম মাত্র ১০০টাকা আছে।
কি করা যায় ?
বাস ভাড়া তো ২০০টাকা।
যাই হোক এক হেল্পার কে বলে কয়ে রাজি করালাম ১০০ টাকায় ।
শর্ত হচ্ছে সামনে ইঞ্জিনের উপড় বসতে হবে।
ঢাকা টু সিলেট..............................



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×