[গাঢ়] দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত এই নিবন্ধটি আমার ভালো লেগেছে। আশা করি আপনাদেরও মনে ধরবে।[/গাঢ়]
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন 14 দলীয় জোট মহাজোটে রূপ নিয়ে অবশেষে নির্বাচনে যাচ্ছে। এ সিদ্ধানত্দ স্পষ্টভাবে জানানো হলো গতকাল। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আন্দোলন করতে গিয়ে সদ্য বিদায়ী জোট সরকারের কাছে তথা 4 দলীয় জোটের কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে অবশেষে তারা নির্বাচনে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে_ মহাজোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণ গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকার আদায় আন্দোলনের একটি অংশ। বিচারপতি কেএম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের দায়িত্ব না নেয়া, নির্বাচন কমিশন থেকে বিচারপতি আজিজ ও সম জাকারিয়া বিদায় নিশ্চিত হলেও 14 দলকে এর জন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক বেশি। ফলে জোট সরকারের সাজিয়ে রাখা প্রশাসনের পুনর্বিন্যাস, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বিগত সরকারের আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীচক্রকে নিষ্ক্রিয় করার প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ না করেই এখন মহাজোট নির্বাচনে যাচ্ছে।
জোট সরকারের বিদায়লগ্নে 14 দলের তীব্র আন্দোলন সাবেক প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পেরেছে ঠিকই কিন' বিনিময়ে তাদেরকে মেনে নিতে হয়েছে জোট সরকারের দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে। যার পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিগত প্রায় দুমাস।
নির্দলীয় সরকারের সময়ে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এমএ আজিজকে সরিয়ে জোট সরকারের মতাদর্শী আরো বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত বিচারপতি মাহফুজকে ভারপ্রাপ্ত সিইসি হিসেবে হজম করতে হয়েছে 14 দলকে। একজন পেশাদার কর্মকর্তা সম জাকারিয়াকে সরিয়ে তারা ইসি হিসেবে পেয়েছেন চারদলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোদাবি্বর হোসেন চৌধুরীকে। যিনি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি পাকিসত্দান আর্মির হয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাকে মেনে নিয়েই নির্বাচন করতে হচ্ছে 14 দল তথা মহাজোটকে। একটি নিভর্ুল ও পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকার দাবি করে শেষ পর্যনত্দ একটি বিশৃঙ্খল, অনিশ্চিত ও অসম্পূর্ণ ভোটার তালিকার অধীনেই নির্বাচন করতে হচ্ছে তাদের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্যাকেজ প্যাকেজ খেলায় শেষতক তাদের ভাষায় বেআইনি তসফিলের আওতায় নির্বাচন করতে হচ্ছে।
জোট সরকারের 5 বছর 14 দল দেশের বিভিন্নস্থানে নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করে নির্বাচনের প্রস'তি নিতে পারতো। কিন' আন্দোলন করেই তাদের পার হয়েছে প্রায় দুমাস। এখন নির্বাচনের প্রস'তি নিতে হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহে। আর নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ পাচ্ছে মাত্র 25 দিন।
14 দল যথাসময়ে নির্বাচনে নামলে সাধারণ মানুষের কাছে বিগত সরকারের সময়ে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊধর্্বগতি, বিদু্যৎ ঘাটতি ও দুর্নীতি থাকতো মুখ্য আলোচ্য বিষয়। কিন' বিগত 2 মাসে তা অনেকখানি চাপা পড়ে মানুষের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আর অনিশ্চিত রাজনীতি।
14 দল রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোখলেসুর রহমান চৌধুরীর অপসারণ দাবি করার বিনিময়ে তাকে করা হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা। আন্দোলনের ফসল হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে অত্যনত্দ দক্ষ, নিরপেক্ষ ও আত্দমর্যাদা জ্ঞানসম্পন্ন আইজিপি আনোয়ারুল ইকবালকে সরিয়ে বিএনপি দলীয় হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা খোদা বক্স চৌধুরীকে করা হয়েছে আইজিপি।
সদ্য ক্ষমতা থেকে বেরিয়ে বিএনপিসহ 4 দলীয় জোট মনসত্দাত্তি্বকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় কোণঠাসা ছিল, 14 দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণে তারা চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তারা এখন ফুরফরে মেজাজে নির্বাচনে যাচ্ছে।
14 দল দাবি পূরণের আন্দোলন নিয়ে ব্যসত্দ থাকায় নিরাপদে রয়েছে মাসত্দান-সন্ত্রাসীরা। এ সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সম্ভব হতো।
তাদের আন্দোলনের ফসল হচ্ছে আত্দমর্যাদা জ্ঞানসম্পন্ন নিরপেক্ষ 4 জন উপদেষ্টাকে হারিয়ে অধিকতর 4 দলীয় জোট মনোভাবাপন্ন নতুন 4 উপদেষ্টা নিয়ে ইয়াজউদ্দিন নিজের মতাদর্শী উপদেষ্টা পরিষদ নিরঙ্কুশ করেছেন।
স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা করে যে মহাজোট হলো সেই জামায়াতের চেয়েও উগ্র মৌলবাদী স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বিস্ময়কর চুক্তি করতে হলো আওয়ামী লীগকে। তার প্রধান শর্ত হচ্ছে, আওয়ামী লীগ মেনে নিলো যে সনদ পাওয়া মাওলানারা ফোতোয়া দিতে পারবে। যা আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চরিত্রের উল্টো।
গোপালগঞ্জে বোমা পুঁতে শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টায় অভিযুক্ত উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের সংগঠক মুফতি শহিদুলকেও শেষ পর্যনত্দ জোটে ভেড়ালো 14 দল।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ 14 দলের 31 দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল অবৈধ সম্পদ ও কালো টাকার মালিকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা। কিন' সুপ্রিম কোর্টের আদেশের ফলে এখন আর প্রার্থীদেরকে তাদের সম্পদের যে তালিকা নির্বাচন কমিশনে দেয়ার কথা ছিল তার কার্যকারিতাও আর নেই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




