করিম সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ছাত্রদল সেক্রেটারী। আজকের ইত্তেফাকে প্রকাশ- প্রতিদিন রাতে গেস্টরুমে ছাত্রদলের হলের লিডারদের নিকট হাজিরা দেবার কাজে অবহেলার দায়ে ছাত্রদল ২২ জন প্রথম বর্ষের ছাত্রকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। আর তার নেতৃত্বে ছিল করিম সরকারের বাহিনী।
সূর্যসেন হলে থাকার অভিজ্ঞতা আমার আছে। করিম সরকারের হাতে পড়ার অভিজ্ঞতাও আমার আছে। ঢাবিতে ছাত্ররাজনীতির চাপে পিষ্ঠ ছাত্রদের হয়রানীর এটি মাত্র একটি চিত্র। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের কি যে এক দূর্বহ মানসিক কষ্টে মাথা নিচু করে আত্মমর্যাদাবোধে লাথি মেরে করিম সরকারদের আনুগত্য করতে হয় সে অভিজ্ঞতাও আমার আছে। দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদের এভাবে নিগৃহিত হওয়াটা জাতির জন্য একটি কলঙ্ক বৈ আর কিছু নয়।
দীর্ঘদিন পর চলতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি বছরই এমন গেল যখন প্রথম বর্ষের ছাত্ররা এক নিঃসীম স্বাধীনতা ভোগ করেছিল। লিডররা সব পালিয়ে গেল। সাধারণ ছাত্ররা বিশেষত প্রথম বর্ষের ছাত্ররা বুক ভরে নিশ্বাস নিল। ওই সমস্ত লিডারদের কাউকে পাওয়া গেল নিয়মিত নামাজি, কাউকে দেখা গেল সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে, আর করিম সরকারকে পাওয়া গেল ব্যাগ কাধে ইভিনিং এমবিএ ক্লাসে। কিন্তু প্রথম বর্ষের ছাত্রদের কপালে সৌভাগ্য বেশিদিন স্থায়ী হলো না। আবার জেকে বসলো রাজনীতির করাল ছোবল। করিম সরকারদের বাহিনী হানা দিল আবার। আবারও সেই দাসত্বের শৃঙ্খল। পরীক্ষার কারণে হাজিরা না দেয়ায় হল থেকে উচ্ছেদ হতে হল প্রথম বর্ষের দেশ সেরা মেধাবী ছাত্রদের। প্রশাসনের ভিতরে কি অবাক করা এক শক্তিমান ছায়া প্রশাসন। যেই ছাত্ররা নিত্য মানবাধিকারের কথা বলে বিতর্কে বক্তৃতায় কিংবা লেখনিতে, তারাই কণ্ঠনালীতে বহন করে চলে এক অদৃশ্য দাসত্বের শৃঙ্খল। এদের মানবাধিকারের গ্যারান্টি দেবে কে? এই "গৌরবময়" ছাত্ররাজনীতির কি দরকার আমাদের দেশে? ছাত্রদের চরম ঘৃণার পাত্র এই সমস্ত তথাকথিত ছাত্ররাজনীতিকরা। তাইতো ছাত্রদের প্রতি এদের ন্যুনতম আস্থা থাকেনা। ২০০১ এ যেই রাতে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পেল, পরাজয়ের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র ছাত্রলীগ মাঝরাতেই পালিয়ে গেল। এমন কি কেউ কেউ স্যান্ডেল পড়ারও সময় পায়নি। কেননা তারা জানে- হঠাৎ করে গণরোষে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার যদি ক্ষমতার পালা পরবর্তিত হয়, বর্তমানদেরও একই দশাই হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক কাজেই আমরা বিরক্ত, ক্ষুদ্ধ, আতঙ্কিত। তবে তাদের সুযোগ ছিল এই অপরাজনীতির কবল থেকে ছাত্রদের উদ্ধার করার। অন্তত একটা কাজে সবাই খুশি হত নিদারূনভাবে। কিন্তু তারা কাজে লাগালো না। এখনও সুযোগ আছে। যাবার আগে ছাত্রসমাজের অন্তত এতটুকু উপকার তারা করে যাক এটাই আন্তরিক প্রত্যাশা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক। গুনগত পরিবর্তন ব্যাতিত এই ছাত্ররাজনীতির জোয়াল আমরা আর কাধে রাখতে চাইনা, আর পারিনা।