somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভগবান // জগদীশচন্দ্র রায়

০২ রা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভগবান আছে কি নেই? আমি যদি বলি ভগবান আছে; তাহলে আমাকে কি মনে করবেন আমি আস্তিক? কি ভাবছেন এই লোকটির ভীমরতি হোল না কি? এতোদিন শুনে আসছি কোন ভগবান মানেন না; আর এখন বলছেন কিনা ভগবান আছে???
আরে মশায় একটু দাঁড়ান না। একটু ধৈর্য ধরে নিচের কথাগুলো পড়ুন।
হ্যা, আমি বলছি, ভগবান আছে। তবে আমার ভগবানের ব্যাখ্যা আর গতানুগতিক ব্যাখ্যা কিন্তু অন্যরকম। ভগবান= ভ+গ+ব+আ+ন
ভ>ভূমি-মাটি- ক্ষিতি-EARTH
গ>গগন-আকাশ-ব্যোম- SKY
ব>বায়ু- হাওয়া-মরুৎ -AIR
আ>আগুন-তেজ-(SUN) ENERGY
ন> নীর-জল –অপ্‌-WATER
তাহলে আমার ভগবান এই পাঁচটি উপাদান নিয়ে গঠিত। যাকে প্রকৃতি বলা হয়। যাকে পঞ্চভুতও বলা হয়। অর্থাৎ প্রকৃতির অপর নাম ভগবান। আর এই প্রকৃতির পাচঁটি উপাদানকেই ভগবান নাম দেওয়া হয়েছে।
কিভাবে এই প্রকৃতির পাঁচটি উপদানকে ভগবান নাম দেওয়া হয়েছে, আসুন এর বিশ্লেষণে আরো একটু প্রবেশ করা যাক।
বিশ্বের যাকিছু সৃষ্টি-ধ্বংস, সব কিছু এই পঞ্চভুতের মধ্যে বিরাজ মান। একটু ভাবুনতো আপনার যে শরীরটা; এই শরীরে বায়ু চলাচল করছে। এর অনুপস্থিত মানে আপনার অবস্থা বুঝেনিন। আপনি যে খাবার খাচ্ছেন যে খাবার থেকে আপনার শরীরে শক্তি উৎপন্ন হচ্ছে সেটা কিভাবে? শক্তি (Energy)’র মূল উৎস সূর্য এটা জানেন কি? উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরীর জন্য ঐ সূর্য থেকে আলো গ্রহণ করে, আর পরিমানমত জল ও খনিজ পদার্থ গ্রহণ করে সালোক সংশ্লেষণের (Photo synthesis system) মাধ্যমে খাদ্য তৈরী করে। এটা নিশ্চয় মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়েছেন বা জানেন। সেই উদ্ভিদকে মানুষেরা বা অন্য প্রাণীরা বিভিন্ন প্রকৃয়ায় বা সরাসরি গ্রহণ করে। আবার বিভিন্ন প্রাণীকে মানুষ তথা অন্যান্য প্রাণী খায়। আর এই খাওয়ার ফলে শরীরে শক্তি উৎপন্ন হয়। আশাকরি, বোঝাতে পারলাম। তাহলে আপনার শরীরে বায়ু লাগবে বেঁচে থাকার জন্য। খাদ্য গ্রহণ করতে হবে শরীরে শক্তি উৎপন্নের জন্য ও শরীরের বৃদ্ধির জন্য এবং চেতনার বিকাশের জন্য। আর সঙ্গে আপনার শরীরে জলের প্রবেশও অবশ্যম্ভাবী সেটাও ভালো করে জানেন।
তাহলে আমরা আপাতত দেখছি, পঞ্চভুতের তিনটি ভুতকে আমরা গ্রহণ না করলে আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তারপরে ধরুন, এই শরীরের চেতনা কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেল। তখন কি হবে বা হয়? তখন শরীরের জন্য আর শক্তির প্রয়োজন হয় না। শরীরে যে জলযুক্ত পদার্থ থাকে সেটা ঐ শরীরকে দাহ বা সমাধি দিলে বেরিয়ে যায়। আর বাকি থাকে শরীরে মাংস ও হাড়; সেগুলোও ঐ দাহ বা সমাধির মাধ্যমে ধীরে ধীরে মাটিতে পরিনত হয়। কি ঠিক বোঝাতে পারলাম কি?
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটা জীবের সৃষ্টির জন্য প্রধান উপাদান হচ্ছে পঞ্চভুতের চারভুত। ব্যোম বা মহাশূণ্যকে জীব সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন হয়না। আর মৃত্যুর পরে আবার এই চারটি উপাদান নিজের জায়গায় চলে যায়। যদিও বলা হয় মৃত্যুর পর পঞ্চভুতে বিলিন হয়েগেছে।

এবার কিছু প্রশ্নের উত্তরে আসি। যেমন বলা হয় বাচ্চা হচ্ছে ভগবানের রূপ। সত্যিইতো। কারণ, বাচ্ছা জন্মের জন্য প্রকৃতির চারভুতের পরিমানমত মিশ্রণের প্রয়োজন, যেটা জীব সৃষ্টির আদিতে ঘটেছিল। এর পরে প্রজননের মাধ্যমে বাচ্চার জন্ম হয়। আর জন্মের পর তিনটি ভুত সব সময় দরকার।
আবার বলা হয়, ভগবানের ইচ্ছা না হলে গাছের পাতাও নড়ে না। এটাও একদম ঠিক কথা। কিকরে? কেন গাছের পাতা নড়তে হলে ভগবানের পাঁচ ভুতের মধ্যে থেকে বাতাসকে ডাকতে হবে। সে না আসলে কি করে নড়বে। আর না হলে আপনাকেই নাড়া দিতে হবে। এখানেও আপনি সেই ভগবানের উপাদানের মিশ্রণে তৈরী প্রাণী বা মানুষ।
সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে- বলা হয় এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড ভগবান সৃষ্টি করেছে। হ্যা, এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড ভগবানই তৈরী করেছে। আশাকরি, এর বিশ্লেষণের আর দরকার নেই।
আরো বলা হয়, ভগবান স্বয়ম্ভু। এর কোন সৃষ্টি কর্তা নেই। এটাও সঠিক কথা। আমার ভগবান স্বয়ম্ভু। এর কোন সৃষ্টি কর্তা নেই। থাকতেও পারেনা।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিশ্বে যাকিছু ঘটনা ঘটছে, সবকিছু এই পঞ্চভুতকে নিয়ে। এর থেকেই সৃষ্টি আর এতেই বিনাশ।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে এতোতো বুঝলাম। তাহলে আর ভগবান বলার কি প্রয়োজন? প্রকৃতি ও তার পাঁচটি উপাদান বা পঞ্চভুত বললেই হয়? না তা হয় না। কেন? তাহলে তথাকথিত ধর্মীয় ব্যবসা কিভাবে চলবে? মানুষকে কিভাবে বৌদ্ধিকভাবে অন্ধ বা বোকা বানিয়ে রাখা যাবে?
এরপরেও আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। সেটা হচ্ছে আত্মা নিয়ে। আপনারা শুনে থাকবেন মৃত্যুর পরে আত্মার মৃত্যু বা ধ্বংস হয় না। তাকে কোন ভাবে নষ্ট করা যায়না। ইত্যাদি। এখানে আমার একটা প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে আপনাদের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। বৈদ্যুতিক আলো যখন নিভে যায় তখন সেটা কোথায় যায়? একটা প্রদীপ যখন নিভিয়ে দেওয়া হয় তখন সেই অগ্নিশিখা কোথায় যায়? আশাকরি, কেউ কেউ কিছুটা আবার কেউ কেউ সবটার উত্তর পেয়েগেছেন।
এবার একটু বিশ্লেষণে যাওয়া যাক। কোন প্রদীপের তেল ও সল্‌তের মিশ্রণে আলো জ্বলতে থাকে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে। এর যেকোন একটা বন্ধ করে দিলে আলো জ্বলবে না। আবার প্রাণীর বা মানব শরীরে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের মাধ্যমে শক্তির উৎপন্ন হচ্ছে। এই শক্তির ফলে চেতনার সঞ্চালন হচ্ছে বা আমরা বলতে পারি মনের প্রকৃয়া ঘটছে। তাহলে এর উৎস হচ্ছে খাদ্য দ্রব্য ও পানীয়ের মাধ্যমে শক্তির উৎপাদন। যখন শরীর আর এই শক্তি উৎপাদন করতে পারবেনা তখন চেতনা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। এবার আপনারা যদি এই চেতনাকে আত্মা নাম দেন তাহলে সেটা ততক্ষণই স্থায়ী থাকবে যতক্ষণ শরীরে চেতনা বইতে থাকবে। চেতনার বন্ধ মানে শরীরের মৃত্যু সঙ্গে চেতনার মৃত্যু। তাই মৃত্যুর পরে আত্মার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করা হচ্ছে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অঙ্গ। ঈশ্বরের বিশ্বাস যতখানি কুসংস্কারের উৎস, আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসও ততখানি কুসংস্কারের উৎস। প্রকৃত পক্ষে আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের চেয়েও ভয়ংকর। কারণ, এটা শুধুমাত্র পুরোহিত শ্রেণীর জন্ম দেয়না, এটা কেবল সমস্ত কুসংস্কারের মূল উৎস নয়, এটা পুরোহিত সম্প্রদায়ের হাতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের উপর নিয়ন্ত্রণ চালানোর ক্ষমতা দান করে।
এই লেখা শেষ করছি ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে-
মহাকবি তারক সরকার রচিত গ্রন্থ শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতে ৭৩ পৃষ্ঠায় (ঠাকুর নগর প্রকাশ ২০০৯) দেখতে পাই- “তুমি-স্থুল আমি-সূক্ষ্ম উভয়ে অভিন্ন।
দেহ আত্মা মোরা দোঁহে মূলে নহি ভিন্ন।।”
এখানে “তুমি” কে? তুমি হচ্ছে আমার এই শরীর বা দেহ। আর “আমি” হচ্ছে- আমার এই দেহের ভিতরের চেতনা শক্তি। যাকে আত্মা বলা হয়েছে। তাই বলা হয়েছে-
তুমি স্থুল আমি শুক্ষ, উভয়ে অভিন্ন

লেখাটি গৌতমী সাময়িকী 'সপ্তম সংখ্যা' থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×