একটা খুন করতে চলেছি। নিখুঁত মার্ডার। যা টেকনিকালি সম্ভব নয়। আসলে খুন নিখুঁত বা খুঁতে হয়না। হয় পরের আনুষঙ্গিক কাজটা। বডি ডিসপোজ করা।
ভাবছেন ভুল বকছি?
আমি সরল লোক। নেশা করিনা, ভুল বকিনা। খুনটা করতেই হবে। আমার বৌকে। সে ইদানিং অসহ্য হয়ে উঠেছে। সন্দেহবাতিক, অসুস্থ, উদ্ধত আর বিরক্তিকর। সম্ভবত পুরোনো রোগটা মাথাচাড়া দিয়েছে। খামার থেকে বাড়ি ফিরতে দেখি ঘরদোর ছন্নছাড়া হয়ে রয়েছে। জিনিসপত্র ভাঙচুর, চিৎকার চোটপাট, আত্মহত্যার হুমকি। প্রভাবশালী বড়োলোকের হিস্টিরিয়াগ্রস্ত একমাত্র কন্যার সাথে আমার মত বোকা মধ্যবিত্ত পোল্ট্রি ব্যবসায়ীর কিকরে বিয়ে হল তার বিরক্তিকর বর্ণনা দিয়ে বোর করবনা। আপনারা তরুন মজুমদারের ভালবাসা ভালবাসা ছবিটা দেখেছেন। এক অপ্রতিভ মুরগি ব্যবসায়ী তাপস পালের সাথে বড়লোক মেয়ের প্রেম। আমার অবস্থা কতকটা তাই।
জীবনটা ছারখার হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমি মারা যাব। যথেষ্ট হয়েছে। এবার শান্তিতে বাঁচতে চাই। একা। নিসঃঙ্গ।
চিন্তাজাল ছিন্ন হল, ভাগাড় থেকে লোক এসেছে। শস্তায় ওদের কাছ থেকে কিনে নিই পশুর দেহাবশেষ। হাড়গোর গ্রাইন্ডিং মেশিনে গুঁড়ো করে মুরগির খাবার বানাতে হবে। এই বিরাট খামার আমার পেট চালায় যে।
কাজ শেষে ফিরে কষে ভাবতে লাগলাম
একটা খুন মানে অনেক ঝামেলা। মার্ডার করতে যে নার্ভ লাগে তা আমার আছে, কিন্তু সুচারুভাবে লাশ গায়েব করার টেকনিক আমার জানা নেই।
দুটো কঠিন কাজ আছে। লাশ হাপিস আর তার অন্তর্ধানের ব্যাখ্যা। অবশ্য প্রথমটা যদি ঠিকঠাক করতে পারি দ্বিতীয়টা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবেনা। কত মানুষই, বিশেষত আমাদের দেশের কত মেয়েই তো হারিয়ে যায় চিরকালের জন্য। কিন্তু এই মফস্বলি শহরে লাশ গায়েব করা খুব কঠিন ব্যাপার।
হেডলি চেজের গল্পে গাড়ি করে দেহ খাদে ফেলা দেওয়ার আজগুবি প্লট কি করে লোকে পড়ে ভেবে পাইনা। প্লট এতটাই ফুলপ্রুফ হবে কাজ যে সে স্রেফ হাওয়া হয়ে যাবে দুনিয়া থেকে। কিছুটি খুঁজে পাবেনা কেউ। যদি ট্রেস না মেলে কারো বাপের সাধ্যি নেই আমায় ফাঁসায়।
কাল রটিয়ে দেব ভোর থেকে আর বৌকে খুঁজে পাচ্ছিনা৷ বাপের বাড়ি যাবে যাবে বলছিল কিন্তু না বলে তো যায়না... বিরহের কান্নায় ভেঙে পড়তে হবে। তারপর থানা পুলিশ এনকোয়ারির জন্য প্রস্তুত হবে এই বোকা অপদার্থ লোকটা।
*********************
আটমাস কেটে গেছে। পুলিশ তন্ন তন্ন করেও আমার বৌ এর হদিশ পায়নি। তদন্তকারী অফিসার খুঁজেছে বাড়ির আনাচ কানাচ এমনকি মুরগিঘরেও। সন্দেহ হতে খুঁড়িয়েছে উঠোন। ঠুকে ঠুকে দেখেছে দেওয়াল। যদি কিছু মিলতো, আমাকে দাঁড়াতে হত ফাঁসির তক্তায়। ক্ষমতাবান শশুর হন্যে হয়ে খুঁজেছে। এক রাত্রের মধ্যে হতচ্ছাড়ি কিকরে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ভেবে কূল কিনারা পায়নি।
আজ সকালে যখন মুরগিকে খাবার দিচ্ছি সেই তদন্তকারী অফিসার এসে হাজির। তারা নাকি ফাইল ক্লোজ করে দিচ্ছে। আসলে এতবার থানা কাছারি করতে হয়েছে যে একটা ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে ওদের সাথে। আমি মুক্তির আনন্দে ওদের নেমন্তন্ন করলাম আজ রাত্রে। হাল্কা খাওয়াদাওয়া, একটু পাণভোজন আর কি। পাড়ার দু চারজন মুরুব্বিকেও বলব।
এইমাত্র থানার কজন অফিসার ঢেঁকুর তুলতে তুলতে ফিরে গেল। যারা আমায় সন্দেহের চোখে দেখত সেই প্রতিবেশীরাও খেল পেটপুরে। প্রত্যেককে হজমি গুলি সাপ্লাই করলাম।
আমার খুনের সাক্ষী সত্যিই নেই আর। যারা ছিল তাদের খতম করে ফেলা হল। গ্রাইন্ডিং মেশিনে লাশটা পিষে থেঁতলে, গুঁড়ো করে মাংস রক্ত হাড় মিশিয়ে দিয়েছিলাম প্রচুর পরিমান মুরগির খাবারের সাথে। একটু একটু করে কয়েক দিন ধরে... সেই উৎকৃষ্ট খাদ্য খুঁটে খুঁটে খেয়েছে আমার পালিত পোষ্যরা। আজ তারাই খাদ্য হয়ে চালান হয়ে গেল সন্দেহবাতিকদের উদরে৷
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৯