somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যরচনা : করোনা ও লকডাউন

২৮ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্কালবেলায় সবে আলু-কুমড়োর তরকারি দিয়ে রুটি খেয়ে দুটো বৃহৎ পরিমাণ ঢেকুর তুলেছি এমন সময় ফোন বেজে উঠল।
শ্বশুরমশাই। এই সকালে আবার কী হল!
ফোন ধরতেই বললেন, "আমাকে বাঁচাও। কিছু সিগারেট যেখান থেকে পারো জোগাড় করে আমায় দিয়ে যাও। নইলে মরে যাব।"
আমি বললাম, "এই লকডাউনে এখন কোথায় পাব সিগারেট? তার চেয়ে এই সুযোগে সিগারেট ছেড়ে দিন।"
কাঁদো কাঁদো হয়ে শ্বশুরমশাই বললেন, "চুল্লীতে ঢোকার পর আর খাব না গ্যারান্টি দিচ্ছি। কিন্তু এখন না পেলে জাস্ট মরে যাব। দুদিন আগে সব শেষ হয়ে গেছে। টয়লেট হচ্ছে না। অন্তত সকালে একটা আর দুপুর আর রাত্রে খাওয়ার পর একটা করে, মোট তিনটে লাগবেই। তুমি প্লিজ একটু দয়া করো আমাকে। প্লিজ! আর হ্যাঁ বুড়ুকে বোলো না, অন্য যাহোক কিছু বলে দিও কিন্তু সিগারেটের কথা বোলো না।"
খুব মায়া হল বুড়োর ওপর। একটা মুদি দোকানে সিগারেট বিক্রি করে জানি। সেখানেই ট্রাই করে দেখি।
জামা-প্যান্ট ছাড়া শুরু করেছি, বউ এসে বলল, "কোথায় বেরোচ্ছ?"
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, "তোমার বাবার একটা ওষুধ কিনে দিতে হবে। ফোন করেছিলেন।"
বউ অবাক হয়ে বলল, "বাবার ওষুধ মানে? ইয়ার্কি নাকি? আমি এক মাসের সমস্ত ওষুধ মায় ইসবগুল পর্যন্ত কিনে দিয়ে এসেছি। কী ওষুধ?"
বেশ ফেচাংয়ে পড়া গেল তো! এদিকে আবার সিগারেটের কথাও বলা যাবে না। বললাম, "সে অন্য ওষুধ। ওই কিট।"
তিনি ভুরু ব্যাপক ভাবে কুঁচকে বললেন, "কিট মানে? কিসের কিট?"
আমি জলে ডুবে যাচ্ছি। ওহ্ এই মহিলা যে কেন উকিল হলেন না, প্রতিভার কী বিপুল অপচয়!
এইসময় দেওয়ালে একটা ফুটফুটে বাচ্চার ছবি দেখে মনে হল ভেসে ওঠার জন্য খড়কুটো পেয়ে গেছি।
বললাম, "ওই প্রেগনেন্সি টেস্টের কিট।"
ঘরে অ্যাটম বোমা পড়ল। বউয়ের চোখ গোল হয়ে স্থির হয়ে গেল। তারপর অনেকক্ষণ পরে বহুকষ্টে বলল, "বাবা চেয়েছে? বাবার কী হবে?"
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, "দরকার আছে নিশ্চই।"
ততক্ষণে ফোনে শ্বশুরমশাইকে ধরা হয়ে গেছে। লাউডস্পীকার অন করে বউ বলল, "তুমি ওকে কী আনতে দিয়েছ? তোমার লজ্জা করে না? এত বয়স হল!"
শ্বশুরমশাই তখন চুরি করে ধরা পড়া বাচ্চার মতো বলছেন, "তুই রাগ করিস না। ওহ্ এত করে জামাইকে বলতে বারণ করলাম তাও বলে দিল? ট্রেটার!"
--"ও তুমি চাও তোমার জামাই আমাকে মিথ্যে কথা বলুক? ছিঃ বাবা। ও সত্যিটাই আমাকে বলে দিয়েছে। কিন্তু কেন বাবা? এত বয়সে এসব কী?"
শ্বশুরমশাই বোঝানোর ভঙ্গিতে বললেন, "দ্যাখ বুড়ু, আমি ডাক্তারবাবুকে জিগ্যেস করেছি। ডাক্তারবাবুর পারমিশান নিয়েই..."
-- "তুমি এসব ডাক্তারবাবুকে জিগ্যেস করেছ! আচ্ছা বাবা তোমার কী বুড়ো বয়সে ভিমরতি হল! আমার তো পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এখন লোকের কাছে মুখ দেখাব কেমন করে?"
শ্বশুরমশাই বললেন, "ঠিক আছে তুই যখন এত কষ্ট পাচ্ছিস তখন এবার থেকে ছেড়ে দেব আমি। প্রমিস।"
কাঁদো কাঁদো স্বরে তাঁর মেয়ে বলল, "কিন্তু এখন কী হবে বাবা! যদি পজিটিভ হয়? উফ লজ্জায় মরে যাই মরে যাই! আমাকে নির্ঘাত আত্মহত্যা করতে হবে। তুমি এক্ষুনি মাকে ডাকো। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে।"
আমি বুঝলাম এবার আমাকে বেরোতে হবে। এখন এখানে থাকা নিরাপদ নয়। বললাম, "তুমি কথা বলো। আমি বেরোচ্ছি। হ্যাঁ দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে যাও।"
নিজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের এই কাণ্ডকারখানায় বউ লজ্জায় আমার মুখের দিকে তাকাতে আর পারল না......
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৫৬
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×