রাত আটটা বাজে। দেখলাম মিসেস শর্মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।
ওষুধ কিনে ফেরার সময়ও দেখলাম একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। জিগ্যেস করলাম, "কিছু প্রবলেম নাকি?"
মিসেস শর্মা উদ্বেগের সঙ্গে বললেন, "আমার হাসব্যান্ড এখনও ফেরেনি। আর ফোন ভি ধরছে না। ইতনা দের তো করে না!"
শর্মাজী একটা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কাজ করেন।
ভজহরিদা কোথা থেকে হুট্ করে এসে পড়ে বলল, "ফোন ধরছে না? এ তো ভাল কথা নয়!"
মানে আড়াল থেকে শুনেছে আমাদের কথা। ভজহরিদার কথা শুনে মিসেস শর্মার সুন্দর মুখে অন্ধকার নেমে এল। বললেন, "ওহি তো! খুব ডর লাগছে!"
ভজহরিদা বলল, "আমি বাইক বের করছি। চ ওনার ব্যাঙ্কে গিয়ে আগে খোঁজ নিই।"
মিসেস শর্মা যেন হাতে চাঁদ পেলেন! (আচ্ছা হাতে চাঁদ মানুষ কী করে পায়! ব্যাপারটা পরে ভাল করে বুঝতে হবে।)
আমি ঘরে গেলাম পাজামা ছেড়ে প্যান্ট পরতে।
.
মিস্টার শর্মার ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখলাম দরজা বন্ধ। শাটার নামানো। ভজহরিদা বলল, "ব্যাঙ্কে লোক আছে। দেখছিস না শাটারের নীচ দিয়ে আলো বেরোচ্ছে?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ। পেছনে মনে হয় দরজা আছে। চলো তো দেখি।"
দেখলাম পেছনে দরজা আছে এবং দরজার মুখে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা রক্ষী দাঁড়িয়ে আছে।
ভজহরিদা বলল, "মিস্টার শর্মার বাড়ি থেকে আসছি। ওনাকে ডেকে দিন।"
গার্ড বলল, "এখন ডাকা যাবে না। জরুরি কাজ করছেন।"
ভজহরিদা বলল, "ডাকা যাবে না মানে? ওনার স্ত্রীর যদি কিছু হয়ে যায় আপনার চাকরি যাবে কিন্তু!"
রক্ষী ভয় পেয়ে বলল, "তাহলে যান।"
.
প্যাসেজ পেরিয়ে বিশাল হলঘর। বিশাল হলঘর পেরিয়ে ক্যান্টিন।
এরপর যা দেখলাম চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ক্যান্টিনের মাঝখানে একটা বড় টেবিল পেতে পার্টি চলছে। শর্মাজী ছাড়াও আরও তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা আছেন। টেবিলে রয়েছে নানা রকম খাবার, স্যালাড, মদের কয়েকটা বোতল, গ্লাস।
শর্মাজী চোখ বুজে একটা ইয়া বড় মুরগির ঠ্যাঙ খাচ্ছেন আর মাঝে মাঝে গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন।
সবারই ভরপুর নেশা হয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। মহিলা শর্মাজীর গায়ে ঢলে ঢলে পড়ছেন।
আমাদের ওই মহিলাই দেখলেন প্রথমে। দেখতে পেয়েই চেঁচালেন, "সিকিউরিটি সিকিউরিটি! এখানে পাব্লিক ঢুকল কী করে! হাও?"
সঙ্গে সঙ্গে সবাই বলে উঠল, "হাও?"
ভজহরিদা বলল, "শর্মাজীর ওয়াইফ আমাদের পাঠিয়েছেন, ওনার খবর নিতে!"
শর্মাজী পুরো আউট হয়ে গেছেন। উনি যাতে চিনতে পারেন তাই মাস্কটা নামালাম।অনেকক্ষণ ভাল করে দেখে আধবোজা চোখে বললেন, "ও আপলোগ। লেকিন ইঁহা কিঁউ?"
দুজন লোক তাল দিল, "কিঁউ ভাই?"
ভজহরিদা বলল, "আপনি মিসেস শর্মার ফোন ধরে পার্টির কথাটা বলে দিলে আর আমাদের আসতে হত না।"
শর্মাজী গর্জে উঠলেন, "এ মিসেস শর্মা কৌন?"
মহিলা বললেন, "তোমার পটের বিবি গো!"
.
এইসময় সিকিউরিটি গার্ড এসে বলল, "ওঁরা বললেন শর্মাসাহেবের বউ অসুস্থ তাই আসতে দিয়েছি।"
মহিলা হা হা করে হেসে বললেন, "অসুস্থ! ওই মহিলা! বাচ্চা-কাচ্চা নেই, সারাক্ষণই নাকি শরীরচর্চা করছে, তাও অসুস্থ? আরে সুরজ কী বলছে শোনো।"
সুরজ অর্থাৎ শর্মাজীর মাথায় কিছু ঢুকল বলে মনে হল না। হেঁড়ে গলায় গেয়ে উঠলেন, "কুছ তো লোক ক্যাহেঙ্গে... "
তারপরেই গান থামিয়ে মহিলাকে বললেন, "তুম ভি গাও মেরে সাথ।"
আবার দুজনে মিলে শুরু হল ডুয়েটে গান। সে গানের না আছে মাথা না আছে মুণ্ডু। এ গানের এক লাইন তো অন্য গানের এক লাইন। মাতালের কাণ্ড!
.
শর্মাজীকে দেখে আমি তাজ্জব বনে যাচ্ছি। লোকটাকে 'ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না' টাইপের বলেই মনে হত। আর মনে হত পত্নীগতপ্রাণ! ওনার এই রূপ দেখে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।
মহিলা গান থামিয়ে শর্মাজীকে বললেন, "তুমি আর বেশি খেও না ডার্লিং।"
তারপরেই আমাদের কথা মনে পড়তেই গার্ডকে বললেন, "এই দুটোকে বের করে দে।"
আমি ভজহরিদাকে বললাম, "ভজহরিদা চলো।"
আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম। বেরোনোর সময় শুনতে পেলাম শর্মাজী বলছেন, "আভি তো পার্টি স্টার্ট হুয়া সুইটি। আভি বন্ধ কর দেগা?"
সবাই হা হা করে হেসে উঠল। যদিও এতে হাসির কী আছে ওরাই জানে!
.
বাইরে বেরিয়ে মেন গেটের কাছে বাইক যেখানে রাখা ছিল সেখানে গেলাম। ভজহরিদা বলল, "তুই দাঁড়া আমি এক্ষুনি আসছি।"
আমি বললাম, "আর ভাল লাগছে না। চলো গিয়ে মিসেস শর্মাকে বলে ঘরে চলে যাই।"
ভজহরিদা বলল, "তুই একটু দাঁড়া আমি আসছি।"
কিছুক্ষণ পরে ভজহরিদা এল সিগারেট নিয়ে।
ভজহরিদা বলল, "দাঁড়া আয়েশ করে সিগারেট খাই তারপর যাব।"
আমি সিগারেট খাই না। কিন্তু এখন একটা খেতে ইচ্ছে করল। অপমানে কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে।
.
ভজহরিদা দেখলাম গুনগুন করে গান করছে। অদ্ভুত মানুষ!
একটু পরেই অবাক হয়ে দেখলাম দুটো পুলিশের গাড়ি এসে ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়াল। লাফিয়ে পুলিশেরা নামল। দৌড়ে কজন পেছনের দরজার দিকে গেল।
আমি ভজহরিদাকে বললাম, "কী ব্যাপার গো? এখন পুলিশ এল? ওইরকম দৌড়ে দৌড়ে ঢুকল?"
আমার কথার উত্তর না দিয়ে ভজহরিদা গেয়ে যাচ্ছে, "যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে, লাটাই তো আমার হাতে..."
একটু পরেই দেখলাম দুজন পুলিশ শর্মাজীকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে। শর্মাজীর অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। একজন উর্দিধারী শর্মাজীকে বলছে, "ব্যাঙ্কের মধ্যে পার্টি বসিয়েছেন? এটাও তো ঠিক নয়! অবশ্য আপনার যা অবস্থা এখন কিছু বলা বেকার..."
.
ভজহরিদা গান থামিয়ে বলল, "চল।"
বললাম, "তুমি নিশ্চই আছ এইসবের পেছনে?"
ভজহরিদা বলল, "আরে ফোনের বুথই পাওয়া যায় না আজকাল। একটা জেরক্স দোকানে ফোনের বুথ পেলাম যাহোক। থানায় ফোন করে বললাম, এই ব্যাঙ্কে ডাকাতি হচ্ছে। তাড়াতাড়ি আসুন। চলে এল মাইরি! লেহ্ আর কিছু না হোক পার্টির তো বারোটা বাজিয়ে দিলাম। শালা আমাদেরকে না খাওয়াস তাবলে এভাবে বের করে দিবি! নে এবার তোরাও বেরো..."
ভজহরিদা বাইকে স্টার্ট দিল। মনের মধ্যে গুমোট ভাবটা কেটে যাচ্ছে... একটা ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল বাতাস বইছে ...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ১:২২