স্থান - বেজিং সেন্ট্রাল ডিফেন্স হাসপাতাল।
কাল - ১৩/১২/২০২২‚ গভীর রাত।
অজস্র থ্যাঁতলানো বিভৎস মৃতদেহ পড়ে আছে যত্রতত্র। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুড়িয়ে ফেলার তোড়জোড় হচ্ছে। তিনজন সিস্টার হাতে ক্লিপবোর্ডে সাঁটা কাগজে মৃতদেহ গুনতি করছেন। তাদেরও খুব তাড়া। এক জেনারেল এসে সিস্টারদের জিগ্যেস করে জানতে পারলেন যে ওনারা মৃতদেহ কাউন্ট করছেন ! জেনারেল সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিশর্মা হয়ে মান্দারিন ভাষায় কুশ্রী গালাগাল বর্ষণ করে হাত থেকে ছিনিয়ে নিলেন ক্লিপবোর্ড, ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললেন কাগজ। ওদের বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে চললেন পাশের ওয়ার্ডে।
সেখানে প্রচুর সংখ্যায় সাংঘাতিক আহত, কোমায় চলে যাওয়া, অল্প আহত এমন নানারকম পেশেন্ট কাতরাচ্ছে। পুরো ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে এসে নিজের চেয়ারে বসলেন। একটা কাগজে খস খস করে রিপোর্ট লিখলেন। একটা ফোন কল এল। লেখায় বাধা পেয়ে প্রথমে বিরক্তি প্রকাশ করে আড়চোখে এল সি ডি তে নাম টা দেখেই তড়াক করে লাফ দিয়ে স্যালুট ঠুকে একটা দীর্ঘ মেয়াদি ইয়েসসস স্যর !! স্বয়ং জিং পিং !! কিছু উত্তেজিত কথা নিচুগলায় ফিসফিস করে বিনিময় হল। লেখা শেষ করে একজন কে আদেশ করলেন অল্প আহত একজন সৈনিককে তার কাছে আনতে।
একজন অসম্ভব কষ্ট করে খোঁড়াতে খোড়াতে কাছে এলে তার কাছে জানতে চাইলেন ঠিক কি হয়েছিল। সে মান্দারিন ভাষায় যা বললে তার মানে এইরকম, আমরা তো তৈরি ছিলাম যে ওরা আসলেই আচমকা লোহার রড, পাথর, তারকাঁটা ইত্যাদি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বো।সেই মত ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ওরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অনেকেই মার খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল, কেউ কেউ মরেও গেল। তারপরেই স্যর কি বলবো কি একটা অদ্ভুত শব্দ করে অনেকেই উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের পাল্টা মার দিতে থাকল, আর অনবরত সেই শব্দ বলতেই থাকল !! আমাদের অনেক সৈন্য এক এক ঘায়েই সব মরে গেল ! কিছু পরে ইন্ডিয়ানরা আরও দল বেঁধে এল হাতে সব লাঠিসোঁটা নিয়ে আর প্রত্যেকের মুখে সেই অদ্ভুত পবিত্র মন্ত্র ! আপনি স্যর বললে বিশ্বাস করবেন না ওদের হাতে এমনি অনেক মার খেয়েছি কিন্তু যদি ওরা একই মার ওই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে দেয় তবে সেই মারের চোট ভয়ানক হয় !!
তুমি এবার যাও -
আদেশ পেয়ে সে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে যায়। জেনারেল আরও অনেক আহত সৈনিকের ইন্টারভিউ নিলেন, নোট করলেন। কিন্তু সবচেয়ে ভাবাচ্ছে ওই সেই "মন্ত্র" !! প্রত্যেকের মুখেই ঘুরে ফিরে সেই "মন্ত্রের" কথা ! কি জানি ইন্ডিয়া সাধু-সন্তদের দেশ, অনেক মন্ত্রটন্ত্র জানে। কিন্তু মন্ত্রটা কি তা তো জানতেই হবে। কি মন্ত্র জিগ্যেস করলে ভালভাবে বলতেও পারেনা ভাষার উচ্চারণের সাংঘাতিক বিভ্রাটে। একজন অতি কষ্টে মনে করে বলেছিল "মাং চোং", "ব্যাঙ চোং", "গাঙ তোং দেংগা" ইত্যাদি। হয়তো এসব ধাপ্পাবাজি ! কমিউনিস্টদের কোন মন্ত্র-টন্ত্রে বিশ্বাস করাই পাপ ! শেষে একজন মৃত কর্নেল পাওয়া গেল যে সিভিয়ার অন্ডকোষ বার্সট করে মারা গেছিল তার বুকে একটি হাই রেজোলিউশন মাইক্রোফোন রাখা ছিল, উন্নত দেশ বলে কথা! শত্রুসৈন্যের মৌখিক শব্দ, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি রেকর্ড করে অনেক কিছু সাইকোলজিক্যাল বিশ্লেষণ করতে হয়!
জেনারেলের আদেশে অতি উচ্চ ভল্যুমে বোস সাউন্ড সিস্টেমে বাজানো হল। একথা জেনে রাখা ভাল যে সূক্ষ্মতম পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ওরা কখোনই নিজেদের দেশীয় জিনিসে ভরসা করেনা !!
সমস্ত ওয়ার্ড, পাশের ওয়ার্ড স্টিরিও ফোনিক আওয়াজে গমগম করে উঠল........
মাদারচোদ,বহেনচোদ,লাঊড়ে কা লৌন্ড,তেরা গাঁড় তোড় দেঙ্গে........!!!!
এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেল !!
কিছু আহত সৈনিক বেডে শুয়ে কেউ স্যালাইন, কেউ ব্লাড,কেউ অক্সিজেন নিচ্ছিল। এই ইন্ডিয়ান "মন্ত্র" শুনে সব ছিঁড়ে খুঁড়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সিস্টারদের, ডাক্তারদের ধাক্কা মেরে হাসপাতালের দরজা খুলে গভীর অন্ধকারে বিলীন হয়ে গেল !!
(সাম্প্রতিক সময়ে তাওয়াং বর্ডারে ভারতের সেনাদের কাছে চীনা সেনারা প্রচন্ড মার খেয়ে পালাতে বাধ্য হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই রম্যটি লিখেছেন আমার বন্ধু পঙ্কজ কুমার দাস।)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৩৩