somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য্ : শাহরুখের ফ্যান কানু

৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

.
সাতদিন পর জেল থেকে ছাড়া পেল কানু। এখন কী করবে সে? সাতদিন আগে দুপুরবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়েছিল কানু। মায়ের অত্যাচারে। মায়ের শুধু একটাই কথা, "কিছু কাজ কর, কিছু কাজ কর।"
.
কিন্তু কী কাজ করবে কানু? সে তো কিছুই জানে না। ছোট থেকে তো একজনকেই জানে সে। তার গুরু। শাহরুখ খান। সে মনে মনে শাহরুখ খানের সঙ্গেই থাকে সব সময়। খায় ঘুমায়। কেউ শাহরুখ নিয়ে আনসান কথা বললে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শাহরুখের ছবির ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখে। তারপরেও সেই সিনেমা বহুবার দেখে, তবে শুরুর একটু পর থেকে। সুজাতা হলের স্টাফেরা তাকে চেনে। সিনেমা শুরু হওয়ার একটু পরে ঢুকতে দেয়। ও পেছনে দাঁড়িয়ে গুরুর সিনেমা দেখতে দেখতে কখনও হাততালি দেয় সিটি বাজায়, আবার কখনও কাঁদে।
.
অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিল সে। কাজ যদি করতেই হয় শাহরুখের কাছেই করবে। ওর বাড়ি 'মন্নত'এ যাবে। গুরুর পা ধরে বলবে, "আমাকে তোমার চাকরবাকর যা হোক করে নাও।"
হ্যাঁ, মুম্বাই যাবে সে।
.
খোঁজ খবর নিল ট্রেনের। তারপর একদিন খড়্গপুরে গিয়ে গীতাজ্ঞলি এক্সপ্রেসে চড়ে পড়ল। পকেটে সাকুল্যে শ দেড়েক টাকা। এটাই হাতাতে পেরেছিল মায়ের ট্রাংক থেকে। আর মায়ের কাছেই বা কত থাকবে। করে তো লোকের বাড়িতে ঠিকে ঝিয়ের কাজ।
.
পকেটে দেড়শো টাকা, শাহরুখ খানের ছবি আর একটা ব্যাগে জামা-গামছা ছবি নিয়ে সোয়া তিনটের সময় ট্রেনে উঠে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকিট চেকারের হাতে ধরা পড়ে গেল। টাটানগর স্টেশনে জি আর পি'র হাতে তাকে তুলে দেওয়া হল। ফাইন দেওয়ার টাকা নেই তাই কোর্টে চালান হয়ে গেল। তারপর সাতদিনের জেল।
.
টাটানগর স্টেশনে একটা বেঞ্চে বসে ছিল কানু। মুম্বাই যাওয়া হবে না। বাড়িতেই ফিরতে হবে। পরে টাকার জোগাড় করে টিকিট কেটে যাবে।
.
ট্রেন এখনও অনেকটা দেরি আছে। পাশে একটা লোক এসে বসল। লোকটার একটা পা কাটা। হাতে ক্রাচ। পিঠে বড় একটা ব্যাগ আর এক হাতে রং-বেরঙের রুমাল। লোকটা বাঙালি। এখানে প্রচুর বাঙালি আছে।
কানুর কাছ থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব কথা জেনে নিল লোকটা।
.
তারপর বলল, "শালা গান্ডু। তোর মতন বয়স থেকে আমি ট্রেনে হকারি করি বুঝলি। বিন্দাস চলছিল। পাঁচ বছর আগে ট্রেনে একটা পা চলে গেল। তারপর শালা লড়াই। হাসপাতালের খরচ, সংসারের খরচ, সাহায্যের জন্য সব জায়গায় চিঠি লেখা হল। ওই হকাররাই সব করল। তোর ওই শাহরুখ, অমিতাভ, সালমন সবার কাছে, বুঝলি? সব শালা মুতে দিয়েছে চিঠিতে। রোজ হাজার হাজার চিঠি ওদের কাছে যায়, সাহায্য চেয়ে, সব ওজন দরে ওদের কাজের লোকেরা বিক্রি করে দেয়।"
কানু জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, "আমার গুরু এমন নয়।"
--"তুই কী জানিস রে শালা? শুধু রাঁচি থেকে আমাদের ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী দশ হাজার টাকার চেক পাঠিয়েছিল। এক বছর ঘরে বসেছিলাম। কী করে বউ সংসার চালিয়েছে শুধু সেই জানে আর জানে ওপরওয়ালা। তারপর আবার নেমে পড়লাম লাইনে। কেউ শালা কিছু করবে না। নিজের হাত পা আছে। খেটে খা।"
একটা ট্রেন এসে দাঁড়াল। লোকটা সামনের কম্পার্টমেন্টে লাফিয়ে উঠে পড়ল।
.
মা কানুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই আকুল। একটাই কথা, "তোকে কোনও কাজ করতে হবে নে রে।"
কানু যেন ফিল্মস্টার। পাড়ার লোক তাকে ঘিরে বসে আছে। তারা চলে যেতে কানুর মা ছেলের প্রিয় মুরগির মাংস আনিয়ে রান্না বসাল।
কানু বলল, "মা আমি ট্রেনে হকারি করব।"
কানুর মা ভয়ে চিৎকার করে উঠল, "না না বাবা ট্রেনে-ফ্রেনে নয়। ও তুই পারবি নে।"
কানুর চোখের সামনে সেই সময় ভেসে উঠল একটা সীন, ক্রাচ নিয়ে একটা খোঁড়া লোক কী অবলীলায় এক কামরা থেকে আর এক কামরায় যাচ্ছে!
না এ তার গুরুর সিনেমা নয়। সত্যিকারের সীন।
দৃঢ় স্বরে কানু বলল, "আমি পারব মা।"

ছবি : গুগল
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:০০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×