
পেছনে আবার দিব্যি দেয়া থাকতো "সাড়ে চুয়াত্তর", কোথায় গেল সেই দিন!"
আজ কোথায় গেল সেই দিন! এখন কেউ আর চিঠি লিখে না, প্রযুক্তির ঝলকানিতে খুব দরকার হলে অনুভূতিহীন একখানা ই মেইল পাঠায় মাত্র....
চিঠির উপরে এখন থাকে না কোন দিব্যি, কিংবা চিঠির শেষে নিজ হাতে আঁকা ছবি! শুনেছি মির্জা গালিব হৃদয়ের আকুতি নিয়ে লিখেছিলেন -
"চিঠি শুরুতেই চোখের ছবি এঁকে দিয়েছি, যাতে তুমি বুঝতে পারো,তোমাকে দেখার জন্য ব্যাকুল।"
কন্যাকে উদ্দেশ্য করে পিতার চিঠির সংকলন নিয়ে বই বেরিয়ে গিয়েছে । রাজনৈতিক মতের ঊর্ধ্বে উঠে বলা যায় ওইসব চিঠিগুলো এক একটি জীবন দর্শন ---- 'Letters from a Father to His Daughter' জহরলাল নেহেরুর লেখা কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর উদ্দেশ্যে চিঠিগুলো এক একটি Gold Mine . আগের যুগে বিখ্যাত মানুষদের প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত দুই পত্রাবলীর ছিল অপরিসীম সাহিত্য মূল্যের পাশাপাশি মানুষটিকে চেনার উপায়ও বটে ।
আগের যুগে কেন আমাদের ছাত্র জীবনেও প্রেম নিবেদনের ক্ষেত্রে চিঠির একটা বড় ভূমিকা ছিল । আমার বন্ধুদের ধারণা ছিল আমার নাকি বাংলা ভাষায় ভালো দখল রয়েছে , ফলে আমাকে দিয়ে কত প্রেমের চিঠি লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে । তবে সার্ভিস চার্জ ছিল । লেখানোর চার্জ ভেজিটেবিল চপ আর প্রেম নিবেদন সফল হলে এগ মটন রোল । কলেজে গিয়ে অবশ্য নগদে সার্ভিস চার্জ নিতাম । এতে করে বছরে দু একদিন বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়ার খরচটা উঠে আসত । আবার শুনেছি আমাদের বাবা কাকাদের যুগে প্রেমের আগেই নাকি দাঁড়িয়ে থাকতো ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে বিরহ । সেখানেও ছিল চিঠির ভূমিকা । এখন অবশ্য দেখছি বিরহ বলে কোনো বস্তু নেই । আজকাল সেই অর্থে প্রেমের কমিটমেন্টগুলোই বা কোথায় ?
তবে আমাদের সময় ব্রেকআপ গুলো বেশ নাটকীয় ছিল । আমরা যখন উচ্চ মাধ্যমিকে তখন সবে dial -up নেট এসেছে আর যখন মাস্টার্স করে বেড়িয়েছি তখনও অর্কুট আসে নি । তাই তখন ব্রেকআপগুলো বেশ নাটক করেই হতো । কত ব্রেকআপের ঘটনা এখনো স্মৃতি হয়ে রয়েছে ।
এখন অবশ্য সেই ঝামেলা নেই -- সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটে গেল কিন্তু কেউ কিছু বুঝলো না । শুধু হোয়াটস্যাপে প্রোফাইল পিকচারটা বদল হয়ে গেল সঙ্গে স্টেটাস চেঞ্জ করে ' Single ready to mingle ' লিখে দিলেই হল ।
একখানা পত্র পাওয়ার বাসনায় মির্জা গালিব লিখে গিয়েছেন -
“খত লিখেঙ্গে গরচে মতলব কুছ না হো
হাম তো আশিক হ্যায় তুমহারে নাম কে”
"চিঠি লিখবো, কোনো উদ্দেশ্য নাই থাকুক
আমি তো তোমার নামেরই প্রেমিক ।"
গালিবের সুরে সুর মিলিয়ে আমিও তাই বলি --
"করুণা করে হলেও চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি দিও, দিও খামে..."
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




