সৃষ্টিকর্তা ভণ্ডকে ডেকে বললেন,‘তুমি কী চাও?’
ভণ্ড চমকে উঠলেন! তারপর পকেট থেকে লিস্ট বের করে বলতে শুরু করলেন,‘আমি অনেক কিছু চাই! আমার ভাই-বেরাদরদের পাপ থেকে বাঁচাতে চাই!’
সৃষ্টিকর্তা মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন,‘বলো কী কী চাও! তুমি যা চাও আজ তোমাকে তার সবই দিবো!’
ভণ্ডটা বলা শুরু করলো।
‘সৃষ্টিকর্তা আমি চাই ইহুদি নাসারদের বানানো সব জিনিস ধ্বংস হয়ে যাক! আমার ভাই-বেরাদররা যেন তাদের বানানো জিনিসের কাছে জিম্মি না থাকে!’
সৃষ্টিকর্তা বললেন,‘ঠিক তো? করে দিবো ধ্বংস?’
ভণ্ড বললো,‘জি করে দেন!’
ভণ্ডের কথা শেষ হবার সাথে সাথে তার হাত থেকে ট্যাবটা গায়েব হয়ে গেল! পকেটে আইফোন ছিলো, সেটাও নাই হয়ে গেল! হাতের ঘড়িটাও ফুস করে কোথায় জানি হারিয়ে গেল!’
ভণ্ড এবার হায় হায় করে উঠলো! সৃষ্টিকর্তার কাছে হাত তুলে বললো,‘এটা কী করলেন! আমার ট্যাব, আইফোন, ঘড়ি সব নাই করে দিলেন! আচ্ছা ঘড়িটা রেখে দেন! বাকি ট্যাব ও আইফোনটা ফেরত দিন! ইয়ে মানে আমার ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অসংখ্য ফলোয়ার আছে! প্রতিমাসে ওখান থেকে ডলার আসে! ইনকাম ভালো!’
সৃষ্টিকর্তা মুচকি হেসে বললেন,‘তোমার ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল সব মুছে দিয়েছি! কারণ তোমার ওসব ইহুদি-নাসারদের তৈরি!’
ভণ্ড ঢোক গিললেন। সৃষ্টিকর্তা মুচকি হাসলেন।
হঠাৎ ভণ্ড খেয়াল করলেন, তার হাতে লিস্ট লেখা কাগজটা নেই! ভণ্ড এবার আকাশের দিকে মুখ তলে বললেন,‘কাগজটা একটু পরে নিলে পারতেন! এখন আমি কী দেখে বলবো?’
সৃষ্টিকর্তা মুচকি হেসে বললেন,‘কাগজ বানানোর মেশিনও ইহুদি-নাসারদের তৈরি! কাজেই কাগজ রাখার কোন মানেই হয় না! তুমি ভেবোনা আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিবো!’
ভণ্ডের মনে পড়লো, লিস্টের ২য় নম্বরে কী ছিলো! কিন্তু বললে আবার কোন বিপদে পড়ে এটা ভেবে সে এখন আর বলতে চায় না!
সৃষ্টিকর্তা বললেন,‘এবার তাহলে তোমার ২য় চাওয়া পূরণ করছি! ভণ্ড ঢোক গিলে বললেন,‘লাগবে না!’
সৃষ্টিকর্তা মুচকি হেসে বললেন,‘অবশ্যই লাগবে!’
এবার ভণ্ডের পরনের সব কাপড় নাই হয়ে গেল! ভণ্ড হয়ে গেল নেংটুপুটু! ভণ্ড দ্রুত একটা ঝোপের মধ্যে ঢুকে সৃষ্টিকর্তাকে বললেন,‘আমি তো নেংটুপুটু হতে চাইনি! এমন চাওয়া আমার লিস্টে ছিলো না!’
সৃষ্টিকর্তা বললেন,‘তুমি চেয়েছো, এদেশের মেয়েরা যেন গার্মেন্টসে কাজ না করে! ওখানে বেলেল্লাপনা হয়! জেনা হয়! ওই পাপ যেন তোমাকে স্পর্শ না করে! তাই আমি তোমার পোশাক হরণ করে নিলাম! তোমাকে বাঁচিয়ে দিলাম পাপ থেকে!’
ভণ্ড ঝোপে বসে ঢোক গিললেন! তারপর কাঁদো কাঁদোয় হয়ে বললেন,‘দয়াকরে আমার পোশাকটা ফিরিয়ে দিন! এই অবস্থায় আমি বাড়ি যাবো কী করে?’
সৃষ্টিকর্তা বললেন,‘বাড়ি? সেটাও কী আছে বলে মনে করো? রড তৈরি হয়েছে ইহুদি নাসারদের বানানো মেশিনে, সিমেন্ট তৈরি হয়েছে ইহুদি-নাসারদের বানানো মেশিনে! তাই রড ও সিমেন্ট আমি নাই করে দিয়েছি! শুধু ইট পড়ে আছে সেখানে! কারণ ইট ইহুদি-নাসারদের কোন মেশিনে বানানো হয়নি!’
ভণ্ড এবার হাউমাউ করে কান্নাকাটি করা শুরু করলেন। সৃষ্টিকর্তা হেসে বললেন,‘ আমি জানি তুমি কিসের জন্য কাঁদছো! কিন্তু কাঁদাকাটি করে লাভ নেই! তোমার বিএমডব্লিউ গাড়িটাও আমি নাই করে দিয়েছি! কারণ ওটাও ইহুদি নাসারদের বানানো!’
ভণ্ড এবার গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,‘এটা আপনি কী করলেন?’
সৃষ্টিকর্তা বললেন,‘আমিতো ইচ্ছা করে করিনি! তুমিই নিজেই তো আমার কাছে সকাল বিকাল এগুলো চাইতে! আজ আমি তোমার সেই চাওয়া পূরণ করলাম!’
ভণ্ড কেঁদেই চলেছে। সৃষ্টিকর্তা বললেন,‘এবার তোমার ৩য় চাওয়ায় আসি!’
সাথে সাথে ভণ্ড লাফিয়ে উঠে, গলা ছেড়ে কেঁদে দিয়ে বললেন,‘আমি আর কিছু চাইনা আমাকে মাফ করে দিন! সৃষ্টিকর্তা আপনি ওই লিস্ট ভুলে যান! আমিও ভুলে গেছি! আমার আর কিছুই চাই না! শুধু আমাকে মাফ কইরা আমার সব ফিরায় দেন!’
সৃষ্টিকর্তা বললেন,‘তোমাকে কিছুই ফিরিয়ে দেয়া হবে না!’
ভণ্ড আৎকে উঠলো,‘বলেন কী, কাপড় ছাড়া আমি এই জঙ্গল থেকে বের হব কী করে? অন্তত ওটা ফিরিয়ে দিন!’
সৃষ্টিকর্তা এবার রাগতস্বরে বললেন,‘তুমি যা চেয়েছো, তাই পেয়েছো। এবার থাকো জঙ্গলে। যদি কোনদিন মানুষ হতে পারো, তাহলে আমাকে ডেকো।’
ভণ্ডটা সৃষ্টিকর্তাকে আর কোনদিনই ডাকতে পারেনি! হয়তোবা ডেকেছিলো! কিন্তু মানুষ না হওয়ার কারণে সৃষ্টিকর্তা নিজেও আর সাড়া দেননি!
(Rohit Hasan Kislu.)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১০