somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঁতেলীয় আলোচনাঃ জাতীয় উৎসব

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি সারাটাক্ষণ আতঙ্কে থাকি। পহেলা বৈশাখের মতো জাতীয় উৎসব গুলো এলে আমার আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। এসব দিনে আমার ইচ্ছে করে সোফায় আধশোয়া হয়ে টেলিভিশন দেখি, অথবা গল্পের বইয়ে, ইন্টারনেটে কিংবা ভিডিও গেমস-এ ডুবে যাই।

আতংকটা খুব ভালভাবে সংজ্ঞায়িত নয়। অনেকগুলো ছোট ছোট বাজে ঘটনার সংমিশ্রণ। খুব ছোট্ট আমাদের এই শহর। আর জনসংখ্যার চাপে পর্যদুস্ত এই নগরীতে উৎসবের স্থানগুলো আরো ছোট। ফলাফল অমানুষিক ভিড়। আমি নাদুস নুদুস আরামপ্রিয় মানুষ। বৈশাখের প্রচণ্ড রোদ সহ্য হয় না। আর মানুষের ঠেলাঠেলি তো আরোই না। এর সাথে যোগ হয় যানবাহনের অতিরিক্ত উঁচু ভাড়া আর বৈশাখী পদের নামে অযথা বেড়ে যাওয়া খাবারের দাম। সব মিলিয়ে এই উৎসব আমার জন্য এক বিভীষিকা।

তারপরও আমি সমাজে বাস করি। সামাজিক রীতি-নীতি পালন করি। আমি বাঙালী হিসেবে গর্বিত। পহেলা বৈশাখে বের হই। যতটুকু সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলাফেরা করি। সাধারণত বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করি। দু'এক নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন - ঢোল, হাতপাখা ইত্যাদি, কিনে নিয়ে আসি। আর ছবি তুলি। নিজেদের ছবি।

এবারের ঘটনাগুলোতে মনে হচ্ছে আমার আতঙ্ক আরো বেড়ে যাবে। যে আমি একসময় রুটিন করে শোভাযাত্রায় যেতাম সেই আমি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনকে এড়িয়ে চলবো। দ্বিধায় থাকবো আমার প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিয়ে। আমি এড়িয়ে চলি, কিন্তু আমার বন্ধুরা পরিবার পরিজন নিয়ে রমনার বটমূলে যায়, টিএসসিতে যায়, শাহবাগে যায়, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে যায়। তারা ঝুঁকিটা নেয়। আমার আতঙ্ককে বাড়িয়ে তোলে।

আসা করি সম্প্রতি টিএসসিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা সকলে জানেন। এধরণের ঘটনা ইদানিং খুব ঘন ঘন হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর সমাধান কী?

হয়তো কেউ কেউ বলবেন ভিড় এড়িয়ে চললেই তো এধরণের অনভিপ্রেত ঘটনাও এড়ানো যায়। আসলে সমাধান কি এটাই? এরা যদি এইসব উৎসবে অংশ না-ই নেয় তা'হলে উৎসব তার বৈচিত্র হারাবে, সৌন্দর্য হারাবে। তার ওপরে একজন স্বাধীন মানুষ হয়ে আরেকজন স্বাধীন মানুষকে কোথাও যেতে বারণ করা মনুষ্যত্বেরই অপমান। সেই অধিকারও কারো নেই। কাজেই আপাত দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য সমাধান মনে হলেও এর প্রচারে শুরুতেই বাধা আসবে।

হয়তো কেউ কেউ বলবেন সামাজিক সুশিক্ষার অভাবে আজকের তরুণদের এই অবস্থা। তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু রাতারাতি তো 'এটা ভাল, ওটা ভাল নয়' বলে তাদেরকে ঘরে ফেরানো যাবে না। এর জন্য এক প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হবে।

আর পোষাকের ব্যাপারে যারা অঙ্গুলি তোলেন, তারা মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন তো ননই, ‘অধিকার’ শব্দটার অর্থও বোঝেন না। কাজেই, সেই আলোচনায় গেলাম না।

তা'হলে প্রশ্ন হচ্ছে সমাধান কী? আইনের প্রতিষ্ঠা? এত গুলো মানুষকে অল্প ক'জন পুলিশ মিলে সামলানো কি আসলেই সম্ভব? আর সাধারনেরা এত মানুষের মাঝে নিজেকে সামলাবেন, নাকি অন্যকে রক্ষা করবেন এটা ঠিক করতে করতেই আর অন্য কোন দিকে তাকাতে পারেন না।

আমার পর্যবেক্ষণে মূল সমস্যাটা হচ্ছে - লোকের ভিড়। যেটা কমানো যাবে না। আগেই বলেছি ছোট্ট শহর, ছোট ছোট উৎসবের স্থান। কাকে রেখে কাকে জায়গা দেবেন? কাজেই ভিড় কমানোর একমাত্র উপায় বোধকরি উৎসবের স্থান গুলোর বিকেন্দ্রীকরণ। পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন ধরণের উৎসব গুলোতে মূলধারার মিডিয়া ও সংস্কৃতি কর্মীরা ঘুরেফিরে সেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রমনা পার্ক, রবীন্দ্র সরোবরেই মনোযোগ দেন। তাদের উচিৎ হবে সারা ঢাকায় ছড়িয়ে যাওয়া। তারা এই বিষয়গুলোতে দেশের প্রতিনিধি, তারা উদ্যোগটা নিলেই বাকিরা অনুসরণ করবে। এই ভিড়ও পাঁচভাগ দশভাগ হতে হতে ছড়িয়ে যাবে।

এখানে যে প্রশ্নটা আসে তা হলো ঐতিহ্য। রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব, শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রা - এসব কিন্তু চিরকেলে ঐতিহ্য নয়। উইকিপিডিয়ায় দেখলাম রমনার বটমূলে এই বর্ষবরণ উৎসবের শুরু ১৯৬৭ সালে, ছায়ানটের উদ্যোগে। আর মঙ্গল শোভাযাত্রা তো আমাদের অনেকের পিতা মাতারাও তাদের যৌবনে পান নি। এর শুরু ১৯৮৯ সালে। কাজেই আমরা দেখতে পাই যুগে যুগে উৎসবের আধুনিকায়ন হয়েছে। শাহবাগে মোড় বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারিদিকে ব্যারিয়ার দিয়ে যেমন একে সংস্কৃতির কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে, সেরকম ঢাকার উত্তরাংশে যদি এরকম একটা কেন্দ্র করা যেত তা’হলে এদিককার লোকে ওদিকে গিয়ে আর ভিড় বাড়াতো না। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে গুলশান-বারিধারার সংযোগস্থলে যে পার্কটি আছে, সেটি। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। বসুন্ধরায় করা যেতে পারে, উত্তরায় করা যেতে পারে। দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন অংশেও করা যেতে পারে। হয়তো ছায়ানট বর্ষবরণ করছে রমনা পার্কে, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী গোষ্ঠী হয়তো গুলশান পার্কে বর্ষবরণ করবে। চারুকলা থেকে যেমন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়, তেমনি বনানীর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোগে কামাল আতাতুর্ক বা গুলশান অ্যাভেনিউ-য়ে বের হতে পারে বৈশাখী মিছিল। এখনো যে হয় না তা নয়। তবে মূল ধারার সংস্কৃতি কর্মীদের ঘোষনা দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে এই উৎসবকে ছড়িয়ে দিতে। এটি এখন সময়ের দাবী।

যুগে যুগে মানুষের প্রয়োজনে উৎসব গুলো নানা দিক পেয়েছে। এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে, সংস্কৃতিমনাদের জিইয়ে রাখতে এরকম বিকল্প খুঁজতে হবে। নতুবা, সত্যি সত্যিই, দিনশেষে সবকিছু তাদের অধিকারে চলে যাবে যারা এই উৎসবকে নষ্ট করতে চাইছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×