somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি ওবামা'র ১৮০ ডিগ্রি পল্টি এবং তার বিশ্লেষন

০৭ ই জুন, ২০১১ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূচনা:

কয়েকদিন আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা ( যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি তথা "বিশ্ব সম্রাট" ) ১৯৬৭ সালের সীমান্ত নকশা অনুযায়ী ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যা'র সমাধান করার কথা পুনরায় জানিয়েছেন।

ওবামা যখন ১৯৬৭'র সীমানা'র কথা উল্লেখ করলেন তখনই বিশ্বজুড়ে এই সমস্যা সমাধানের একটা আশা জেগেছিল সবার মাঝে। কারন ফিলিস্তিন তথা আরব বিশ্ব ১৯৬৭ সালের জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত সীমানা মেনে নিয়েছে অনেক আগেই। এবার ইসরাইলকে সাড়ে৩০০ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর সাহায্য ও সর্বক্ষেত্রে প্রোটেকশন দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যখন ৬৭'র সীমানাকে সমর্থন দেয় তখন সংশয় কেটে যায়।

কিন্তু পরিস্থিতি উল্টে যায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেন্জামিন নেতানিয়াহু এর তীব্র প্রতিবাদ এই বলে জানালে যে, ১৯৬৭ সালের সীমান্ত নকশা ইসরাইলের নিরাপত্তা'র জন্য হুমকী এবং ইসরাইলের মুল্যে কোন ফিলিস্তিন তৈরী করা হবে না।

১৯৪৮ সালে যেই এলাকাটা ফিলিস্তিনের মাটি নিয়ে ইসরাইল বানালো তারা আজ মাত্র ৬২ বছর পরে এসে বলে ইসরাইলের মুল্যে ফিলিস্তিন হবে না!!! এটাই হলো বিশ্বপরিস্থিতি - :|


মূল ঘটনা :

আন্তর্জাতিক ও সার্বজনীন নৈতিকতা দ্বারা স্বীকৃতই নয় বরং প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি'র ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ১৯৬৭'র সীমানা

ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের সব দেশে'র বিরোধীতা স্বত্ত্বেও ঐ ১৯৬৭ সীমান্ত চুক্তি'র বাইরে পূর্ব জেরুজালেম সহ নতুন নতুন এলাকা দখল করে বসতি স্থাপনের কাজ নিয়মিত চলছে। আর ফিলিস্তিনিরা নিয়মিত ঘরছারা হচ্ছে। তবুও ইসরাইলের অবস্থানই শক্তিশালী হয়ে টিকে আছে!!!

এমনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন এবং ল্যাটিন আমেরিকার অনেকগুলো দেশের ( ৫টি সম্ভবত) ১৯৬৭'র সীমান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবার পর স্বয়ং আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যখন ১৯৬৭ সালের সীমান্তকে আলোচনার টেবিলে উঠায় তখন ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর প্রচন্ড ধমকে খেতে বাধ্য হন।





ধমক বিশ্লেষন :

ওয়াশিংটনভিত্তিক দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর জিওনিস্ট কমিটি আইপ্যাকে'র সমর্থনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে হুকুম করে ২০০৪ সালে ইসরাইলের প্রতি একটি চিঠিতে করা বুশের লিখিত অঙ্গিকার মেনে চলতে। ২০০৪ এ একটি চিঠিতে প্রেসিডেন্ট বুশ, লিখেছিল যে, ১৯৬৭'র সীমান্ত ইসরাইলের সীমান্তের নিরাপত্তা'র জন্য নিরাপদ নয়।

কিন্তু স্বয়ং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঐ চিঠি আইনগত ভিত্তিহীন কারন সেখানে বলা আছে যে, জোরপুর্বক অধিগ্রহন করা এলাকা ইসরাইলের সাথে একীভুত করার প্রয়াস অগ্রহনযোগ্য!!

তবুও ধমকে যে কাজ হয় তা প্রমানে এরপরই শুরু হয় খেলা!!!




ধমকের প্রতিক্রিয়ায় কারা কি বললো :

মধ্যপ্রাচ্যে'র শান্তি'র সাবেক দুত এবং সুপার ডিপ্লোম্যাট জর্জ মিটচেল যার গ্রহনযোগ্যতা ব্যাপক সেই তিনি একটি সাক্ষাৎকারে ওবামা'র অবস্থান তুলে ধরতে বলেন, "প্রেসিডেন্ট ১৯৬৭'র সীমানায় ফেরৎ যাবার বিষয়ে কিছু বলে নাই বরং বলেছে ওটা একটি ফলক " :)

চিন্হিত জায়োনিস্ট ইসরাইলের পাসপোর্টধারী ও ৯১ এর গালফ ওয়ারে ইসরাইলী আর্মিতে যোগ দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী এবং ওবামা'র সাবেক চিফ অব স্টাফ ও বর্তমানে শিকাগো শহরের মেয়র র‌্যাম ইম্যানুয়্যাল যিনি ওবামা'র সাথে ইসরাইল লবি'র একজন বিশ্বস্ত মধ্যস্ততাকারী। সেই ইম্যানুয়্যাল ওয়াশিংটন পোস্টে লিখে জানিয়েছেন, "যে প্রেসিডেন্ট কে আমি জানি এবং তার সাথে কাজ করেছি সেই প্রেসিডেন্ট ওবামা "ইসরাইলের শান্তি ও নিরাপত্তা'র" বিষয়ে গভীর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ"।

রিপাবলিকান সিনেটর মাইক হুকাবি ইসরাইলের সাথে ওবামাকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন!

চারদিক থেকে এভাবে চাপে পড়ার পরে,
সবশেষে প্রেসিডেন্ট ওবামা স্বয়ং নিজ মুখে আইপ্যাকের কংগ্রেসে দাড়িয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছে যে," ১৯৬৭'র বর্ডার মেনে নেয়ার কথা বলি নাই বরং শান্তি আলোচনা শুরু করার পয়েন্ট হিসেবে নিতে বলেছি।" :)






আমার বিশ্লেষন :

প্রথমে বক্তব্য দিয়ে পরে সারা বিশ্বের চাহিদা'র উল্টো দিকে যেয়ে এই যে ১৮০ ডিগ্রী ডিগবাজী এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? ধর্ম নাকি রাজনীতি ? নাকি বলবেন, সমরনীতি বা অর্থনীতি ?

বিশ্লেষন করার অনেক এ্যাঙ্গেল পাওয়া যাবে কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ফিলিস্তিন বিষয়ে ইসরাইলে'র সাথে ইউরোপের এমনকি আমেরিকার ভিন্নমত থাকলেও চুড়ান্ত ফলাফল প্রভাবিত করার শক্তি ইসরাইলের রয়েছে।

আরেকটি বিষয়ও পরিষ্কার হয় যে, পৃথিবীতে সবার বিচারে'র জন্যই আইন কমবেশী কার্যকর রয়েছে কিন্তু ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে বিচারক হলো "পেশী শক্তি"।

কিন্তু সার্বজনীন আইনের এমন কেন্দ্রীয় চরিত্র ও অঞ্চলভেদে ভিন্ন প্রয়োগ দেখলে বিশ্বমোড়লের মুখে অন্যান্য অঞ্চলে আইনের শাষনের আহবান তার গ্রহনযোগ্যতা হারায়।

আর মুসলিম বিশ্বের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কে যতরকমের সমস্যা তৈরী হচ্ছে তার মূলে এই ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যা। ইউরোপীয়ানরা ইদানিং বিষয়টিকে গুরুত্বদিয়ে সমাধান করার কথা ভাবছে এবং আমেরিকান প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৬৭'র সীমানা মোতাবেক ফিলিস্তিনকে মেনে নেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

আমিও অপেক্ষা করছি আগামীতে ওবামা ইসরাইলের অন্যায্য দাবীকে উপেক্ষা করে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য ১৯৬৭'র সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী একটি সমাধান বের করবে এবং সাম্প্রদায়িক জিওনবাদী রাষ্ট্রটিকে অন্যায় সমর্থন বন্ধ করবে।





শেষ কথা :

এবারের মত ওবামাকে ক্ষমা করা ছাড়া উপায় নাই কারন, তিনি কাজে করতে না পারলেও ১৯৬৭'র সীমান্ত চুক্তি'র প্রতি পজেটিভ মনোভাব অন্তত মুখে প্রকাশ করেছেন। তিনি ছাড়া অন্যান্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই অবস্থানেও কোনদিন আসতে পারে নাই।

আর মনে রাখতে হয় যে, তিনি সমাধান চাইলেই হবে না যুক্তরাষ্ট্র নামক দেশটাতে আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেকশন :) যে কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা বাস্তবায়ন করতে হলে তাকে প্রথমে টিকে থাকতে হবে। এই পর্যায়ে ওবামা নেতানিয়াহু'র ধমক খেয়ে অবস্থান পরিবর্তন ও জবাবদিহি করতে বাধ্য কারন ইসরাইলী লবিং আর নিদৃষ্ট করে বলতে আমেরিকান-ইসরাইল পাবলিক এ্যাফেয়ার্স কমিটি ( আইপ্যাক ) এর সমর্থন ছাড়া ওয়াশিংটনে কেউ বসতে পারে না। এই জন্য জানতে এই লিংকের Click This Link ভিডিওটা দেখে ফেলুন, দুনিয়ার বাস্তবতা কি জিনিস সেটা বুঝতে সহজ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১১ রাত ৮:৫২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×