কিছুক্ষন আগে বাংলা লেখার জন্য সামু'তে এসে দেখি ব্লগিংয়ের ৩ বছর হয়ে গেছে!
নষ্টালজিক হয়ে পড়লাম, আহ ব্লগ!
২০১০ এর শুরু'র দিকে এক বন্ধুর কাছ থেকে মুক্তমনা ব্লগের নাম শুনে ঢু মারলাম। স্বাভাবিকভাবেই ওদের ইসলাম বিদ্বেষী সব লেখা পড়ে চুপ করে থাকতে পারি নাই। জবাব দেয়ার তাগিদে মুক্তমনার ভার্চুয়াল কি-বোর্ডের একটা একটা অক্ষর ক্লিক করে করে ঘন্টা ধরে একটা মন্তব্য করতাম। প্রথম মন্তব্য পাবলিশ হলো, আল্লাচালাইনা আর লীনা নামের ২জন রিপ্লাইও করলো, এভাবেই চলছিল। কিন্তু ধর্মবিদ্বেষী বিদ্বানদের মাঝে হাসফাঁস করতাম। মাঝে মাঝে ওখানে দেখতাম, সামু'র নামে বেশ নালিশ করতো অনেকে, আমি বুঝলাম, ঐখানেই আমার যাওয়া দরকার। কিন্তু বাংলা দেখা যেত না আমার ল্যাপটপে। কিভাবে যেন ডিসেম্বর মাসে প্রবলেম সল্ভড হয়ে গেল।
সামুতে রেজিস্ট্রেশন করলাম। দেখলাম, বাহ ধর্মপ্রেমী বিদ্বানরাও আছে বাংলা ব্লগ জগতে, এস. এম. রায়হান, ডঃ মাহফুজদের মত খাঁটি ভদ্রলোকদের দেখলাম, এক্স নামের এক চরম হিউমোরাস একজনও ছিল, ম.জ. বাসার নামের আরেক মহাপাপী ছিল, রাগ ইমনের লেখাগুলো দেখে বেশ চমকিতই হলাম, ফিউশন ফাইভকে দেখে বুঝলাম সুন্দর সবসময় সহজ, আসিফকে দেখে মনে হতো ভবিষ্যতে ইসলামিক জাগরন তৈরীর জন্য না বুঝেই 'শক থেরাপী' ব্যাবহার করছে, পারভেজ ভাইকে দেখলাম যৌক্তিক ও সজ্জন ভদ্রলোক, দাসত্বকে মনে হতো বিএনপি নামের একটা একলা তরী, মাঝে মধ্যে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে এসে ঢেউ তুলে যায়, ধীবর ভাইকে দেখতাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ঝান্ডা নিয়ে দৌড়াতে, দূর্যোধনকে পেলাম অসম্ভব রকমের হিউমোর নিয়ে লেখতে, ইমন জুবায়ের ভাইয়ের মত ঋষিকে দেখলাম এই ব্লগেই, যিনি প্রতিদিন ঢাকা'র উচু ভবন থেকে সুর্যোদয়ের ছবি পোস্ট করতেন আর আমি ফেসবুক থেকে ৬ হাজার কিলোমিটার দুরে বসেই ঢাকা'র সূর্যোদয় দেখতাম। চিরতরুন এবং আমার চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক প্রজন্মের ত্রিশোনকু মল্লিক ভাইকে পেয়েছি একটি মাত্র কবিতা দিয়েই। ম্যাভেরিক ভাইকে দেখলাম নিরলস জ্ঞানচর্চা করতে, মশিউর মামা'কে পেলাম যিনি শুধুমাত্র অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্যই জ্বলে উঠে দাড়িয়েছিলেন আমার পাশে, ব্লগার অনিরুদ্ধের কমেন্টেই প্রথম উৎসাহ পেয়েছিলাম। এর বাইরেও বহু ভাল মানুষ দেখেছি, নারী ব্লগারের প্রতি ভাললাগা জন্মেছিল, আবার অনেক অনেক জঘন্য কিন্তু অসহায় তরুনদের ঘৃণাও করেছি।
আমার ইচ্ছা ছিল একেবারে এ্যাকাডেমিক দৃষ্টিতে একেবারে নিরপেক্ষ বিশ্লেষন করা, যেন আমার পড়াশোনার নোট হয়ে যায় সাথে সহব্লগারদের সাথেও এ্যাকাডেমিক কিছু বিষয় শেয়ার করতে পারি। কিন্তু নতুন ঢাকায় আসা অল্পবয়সী কিছু ছ্যাচরা পোলাপানের খোঁচাখুচিতে বুঝলাম আমি ভেজিটেরিয়ান হবার মানে এই নয় যে হায়েনার পাল আমাকে খাবে না।
যাইহোক, এরপর দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া হয়ে গেল। যা মন চেয়েছে তাই লিখেছি, জেনে শুনে কখনো অন্যায় আক্রমন করি নাই কাউকে, আলোচনা করেছি, ক্যাচাল করেছি, সমর্থন দিয়েছি, ব্যান হয়েছি, ব্যান করিয়েছি, সিন্ডিকেট ভেঙ্গেছি কিন্তু সিন্ডিকেট গড়ি নাই। সামু'তে তো বটেই আমু, সচল, নাগরিক ব্লগগুলোতেও ভিন্ন নিকে যেয়ে মাঝে মধ্যে ঢু মেরে দেশ ও জাতি'র শত্রুদের মখা আলমগীরের মত 'ঝাঁকি' দিয়ে এসেছি।
সবসময় প্রায় একলাই চলেছি, সেজন্যই ব্লগের অশুভ চক্রের সাথে সবসময় লড়াই করতে হয়েছে, তবুও দেশ ও ধর্মের বিপক্ষে যায় এমন কোনকিছুর সাথেই আপোষ করি নাই।
আস্তে আস্তে ব্লগের মেধাবী লেখক-পাঠক কমে গেল, ব্লগ আকর্ষনহীন হয়ে গেল, আমি ফেসবুকে চলে এলাম, ব্লগার হিসেবেই ফেসবুকে ছিলাম এখন স্বনামে আছি, এখন ব্লগে যাই শুধু বাংলা লিখতে আর বড় বড় স্ট্যাটাস পোস্ট করতে!
কিন্তু আমাকে বলতেই হবে যে, ব্লগ আমার জন্য বিশেষ কিছু। এই ব্লগের আকর্ষনের কারনেই আন্ডারগ্র্যাডে প্রত্যাশিত ভাল রেজাল্ট হয় নাই কারন ক্যাচালগুলো সব শুরু হতো পরিক্ষার সময় আর গত ৩ বছর ধরে আমি অতিরিক্ত সময় দিচ্ছি ব্লগিংয়ের পেছনে (যদিও ২০১৩'র শুরু থেকেই ব্লগে প্রায় নেই বললেই চলে), কিন্তু ব্লগ আমাকে রেজাল্টের চেয়ে অনেক বেশী কিছু এনে দিয়েছে।
সামহোয়ারইনব্লগ যেমনই হোক, যাদেরই হোক আমার জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে গেছে এটা নিশ্চিত।
যদিও আপনাদের প্রতি অনেক যৌক্তিক ক্ষোভ ধারন করি তারপরও আমাকে ব্লগিংয়ের তাগিদ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ মুক্তমনা, আর আমাকে ব্লগার বানানোর জন্য ধন্যবাদ সামু।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪১