আমরা প্রতারিত প্রজন্ম।
সৈয়দ আশরাফ একবার আমাদের "নষ্ট প্রজন্ম" বলেছিল পরবর্তীতে প্রথম আলো আমাদের তরুণ প্রজন্ম / নতুন প্রজন্ম, এসব নামে ডেকে ক্ষতে প্রলেপ দেবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার মনে হয় আমরা প্রতারিত প্রজন্ম।
৮০র দশকে জন্ম নেয়া বা বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কথা বলছি। মূলত দেশে, তবে বিদেশেও।
আমরা কৈশরে পড়তেই সুনীলের "কেউ কথা রাখেনি" কবিতাটা পড়লেও কিংবা শিমুল মুস্তফার কণ্ঠে শুনলেও বুঝিনি আমাদের ভবিষ্যৎও এমন হতে যাচ্ছে।
দেশে গণতন্ত্র এলো, কথা ছিল জনগণের হাতে ক্ষমতা আসবে, কিন্তু আসেনি, বরং দেখেছি চক্রবৃদ্ধিহারে দলীয় দুশ্চরিত্রের মানুষদের ক্ষমতায়ন।
হুমায়ুন আহমেদ তার বইয়ে অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার স্যাপারের সাথে সাথে প্লেটোনিক ভালবাসা, পারিবারিক বন্ধন এবং কাছের মানুষদের গুরুত্ব দেয়াড় কথা শিখিয়ে, ২য় বিয়ে করে তার পরিবার ছেড়ে চলে গেলেন।
জেমস তার ব্যান্ড "ফিলিংস" নিয়ে চরমভাবে মাতিয়ে বললো, আমি এক নগর বাউল। আমরা তার কথায় ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বাউল হয়ে গেলাম। সেই জেমস পরে নাবালিকা বিয়ে করে ভুরু ফুটো করে, টি শার্ট পড়ে বলে, সিগারেট বাদ দিয়ে জিমে যাওয়া উচিত!
আইয়ুব বাচ্চু যখন ব্যান্ড সংগীতের আইকন, তখন কেন যেন বাংলা ছবিতে যেয়ে আম্মাজান গান গেয়ে বসলো। ম্যাকসুদ সুবিচারের কথা বলতে বলতে ওর বউকে টেবিলের সাথে বেঁধে পেটালো।
স্টেডিয়ামে যেয়ে মোহামেডান-আবাহনীর খেলা দেখার মত বড় হতে হতেই দেশ থেকে ফুটবল বিদায় নিল। অনেক আয়োজন করে টেস্ট স্ট্যাটাস এনে দিল সাবের হোসেন চৌধুরী, কিন্তু সেই টেস্ট স্ট্যটাস শুধু লজ্জাই দিল।
জাফর ইকবালের শিশুতোষ বইগুলো ছিল বিন্দুমাত্র কলুষতামুক্ত, সেই জাফর ইকবাল দেখলাম নাৎসি গুরু হয়ে চেতনার ফিল্টার নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে এখন।
৩উদ্দিনের সরকার আসলো, মনে হলো এবার অনেক কিছুই বদলে যাবে, কিন্তু আওয়ামী লিগকে ক্ষমতা দিয়ে ওরাও পালিয়ে গেল।
দুনিয়ার প্রেসিডেন্ট হলো, বারাক ওবামা, ভাবলাম এবার আমেরিকা মানবিক হবে, কিন্তু ইরাক থেকে ইজিপ্ট, আরও বেশি বেশি জ্বলছে!
দুনিয়ার দেশে দেশে ব্লগ-ফেসবুক কেন্দ্রিক বিপ্লব হলো, আমাদের দেশেও হলো, কিন্তু আমাদেরটা হলো বিপ্লব নামের নিকৃষ্ট প্রহসন।
আরও কত উদাহরণ, কেউ কথা রাখেনি। আমরা এমন সময়ে বড় হয়েছি, যখন কেউই আমাদের কাছে দেয়া কথা রাখেনি।
তাই, আমরা এক প্রতারিত প্রজন্ম!