somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যবসা (কল্প গল্প)

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পাশ করে কোথাও যখন কোন চাকুরী হচ্ছিল না তখন বোন জামাই্-ই প্রস্তাব দিলেন তার ঠিকাদারী ব্যবসায় যোগ দিতে। রাসেলের স্বপ্ন ছিল সরকারী চাকুরী করবে। আর তা না পেলে অন্তঃত বেসরকারী কোন প্রতিষ্টানে। ব্যবসার কথা সে কোনদিনও চিন্তা করেনি। অথচ তাকে শেষ পর্যন্ত ব্যবসায় যোগ দিতে হলো। তাও আবার বোন জামাইয়ের ঠিকাদারী ব্যবসায়। এজন্যই বলে মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক।

কিছুদিনের মধ্যেই রাসেল দেখে তার দুলাভাই এ লাইনে অনেক কামেল লোক। তার নীতি হলো প্রথমে কৌশল অবলম্বন কর, দেখ কাজ হয় কি না; না হলে বল প্রয়োগ। আর তাতেও না হলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দাও। প্রথম প্রথম এসব দেখে রাসেলের ভয় হতো। খারাপ লাগত। একসময় অবশ্য সব গা সয়া হয়ে যায়। অনুভূতিগুলো ভোতা হতে যতক্ষণ সময় লাগে আর কি।




কোন এক ভর দুপুরে বাসা থেকে খাবার খেয়ে বের হওয়ার সময় রাসেলের দুলাভাইয়ের উপর হামলা হয়। হামলাকারীরা নিশ্চিত করে যাতে তাকে আর হাসপাতালে নিতে না হয়। বিভিন্ন পত্রিকা আর চ্যানলের সাংবাদিকার আসেন। সাংবাদিকদের দেখে মনে হয় তারা বেশ খুশী হয়েছেন। একজন নামকরা ব্যবসায়ীর রক্তে ভেজা শরীরের ছবি আর খবরে আগামী কয়েকদিন পত্রিকা আর চ্যানেল গরম থাকবে হয়তো এই ভাবনায়। পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা আসেন। সাথে আসেন রাসেলের দুলাভাইয়ের ঘনিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা রাসেল, তার বোন এবং চার বছরের ভাগ্নী রায়না কে আশ্বাস দেন..খুনি যেই হোক, তাকে ধরা পড়তেই হবে। ফাসীর কাষ্টে না ঝুলিয়ে তাকে তারা ছাড়বেন না।

ঘঠনার কয়েকদিন পর্যন্ত পুলিশ এবং ডিবির লোকজন নিয়মিত আসা যাওয়া করত। আশে পাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করত। যদিও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না, মাঝখান থেকে পাড়া প্রতিবেশীরা রাসেলদের উপর বিরক্ত হচ্ছিল। একসময় অবশ্য সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে। শুধু স্বাভাবিক হতে পারে না রায়না। এখনো সে খাবার টেবিলে বাবার জন্য অপেক্ষা করে। এখনো মায়ের বকুনি খেয়ে মুখ লুকিয়ে কাঁদে আর অপেক্ষা করে কখন বাবা আসবে, মায়ের নামে নালিশ করবে। কখনো কখনো ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে মাঝ রাতে চিৎকার করে উঠে, অজ্ঞান হয়ে যায়। রায়নার কথা ভেবে রাসেলের খুব খারাপ লাগে। কষ্ট হয়। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় রায়না কি তার বাবার কর্মফল ভোগ করছে?





ব্যবসার পুরো দায়িত্ব রাসেলের হাতে আসার পর সিদ্বান্ত নেয়, সে আর যাই করুক খুন খারাবীতে জড়াবে না। বরং আরো কৌশলী হবে। কিন্তু কিছুদিন পর সে টের পায় এই লাইনে কাজ করা অত সহজ না। পুলিশ থেকে শুরু করে স্হানীয় মাস্তান, নেতা, পাতি নেতা, সাংসদ এমনকি মন্ত্রী পর্যন্ত খাওয়াতে হয়। খাওয়ানোর এই লম্বা শেকল দেখে সে কিছুটা হতাশ হয়। অনেকে আবার খাওয়ার পরও বেইমানি করে।

রাসেলের দুলাভাই মারা যাবার আগে 'রোডস এন্ড হাইওয়েস' এর একটা কাজ পেয়েছিলেন। প্রায় এগারোশে কোটি টাকার কাজ। কাজটা উনি শুরুও করে দিয়েছিলেন। প্রাথমিক কাজ হওয়ার পর ইন্সপেকশন হয়। ইন্সপেক্টর সাহেব কে যথাসাধ্য খাওয়ানো হয়েছে। উনি খুশী মনে ভালই রিপোর্ট দিয়েছেন। তারপরও প্রাথমিক কাজের বিল আটকে আছে। মন্ত্রী সাহেব না কি স্বাক্ষর করছেন না। উনি রাসেল কে একটা বিশেষ জায়গায় তার সাথে দেখা করার কথা বলেছেন।




স্যার, এটা আমার পক্ষ দেয়া অসম্ভব। আপনি আমাকে আরেকটু বিবেচনা করুন, রাসেলের করুন আর্তি মন্ত্রী সাহেবের কাছে।

এগারোশোর মাঝে চাইছি মাত্র চারশো কোটি। তারপরও তুমি আমারে বিবেচনা করতে কও? তোমার তো মিয়া দেখি ইনসাফ নাই। খালি একলা খাইতে চাও।

স্যার, অনেক জায়গায় দিতে হয়। সব জায়গায় দিয়ে যে টাকা থাকবে সেটা দিয়েতো কোন কাজই করতে পারব না।

তো..তুমারে কাজ করতে কইছে কেডায়। মন্ত্রী সাহেব ধামকি দিয়ে বলেন। মন্ত্রী সাহেব বয়সে নবীন, স্বাস্হ্যটাও বেশ ভাল। উনার ধামকিতেও বেশ জোর আছে।

কি বলেন স্যার! এখন জনগণ অনেক সচেতন। কাজ না করলে পরের ইলেকশনে তো জনগণ আপনাদের ধরবে।

ধরবে মানে?

ভোট দেবে না।

দুর মিয়া...পাবলিক কি আর রাস্তাঘাট দেখে ভোট দেয় না কি? তারা দেখে মার্কা। পাবলিকরে নিয়া আমি তাই টেনশন করি না। আমার টেনশন হইল গিয়া নমিনেশন। এজন্য তুমাদের কাছ থেকে যা নেই, তার বড় একটা অংশ পার্টি ফান্ডে দিয়া দেই।

স্যার..তারপরও আমাদের কথাটা একটু বিবেচনা করেন। তা না হলে তো এই লাইনে ঠিকতে পারব না।

মন্ত্রী সাহেব কোন কিছু চিন্তা না করেই বলেন, কাজটা কয় মাসে করতে হবে?

এক বছরে।

এক কাজ কর..তুমি এটাকে টেনে টেনে তিন বছরে নিয়া যাও। প্রজেক্ট কস্ট কিভাবে বাড়াতে হয় সেটা আমি দেখছি। ঠিকাছে?

এই না হলে মন্ত্রী। মন্ত্রীর বুদ্বি দেখে রাসেল অবাক হয়। পার্টিতে এত ভাল ভাল অভিজ্ঞ নেতা থাকা স্বত্তেও এসব লোক কে মন্ত্রী করা হয় কেন রাসেলের কাছে তা পরিষ্কার হলো।
মন্ত্রীর প্রস্তাবে রাসেল মনে মনে বেশ খুশী হয়। তবে বাইরে সেটা প্রকাশ করে না। শুধু বলে, আপনি যা বলবেন স্যার, সেটা কি আর আমি না করতে পারি?

মন্ত্রী হেসে বলেন, এতক্ষনতো মিয়া না না ই করতেছিলা। যাইহোক আমার টাকাটা জায়গামতো পৌছে দিও।

মন্ত্রীর হাসি দেখে রাসেল কিছুটা সাহস পায়। সে সাহস করে বলেই ফেলে..স্যার, আপনি রাজনীতি না করে ব্যবসা করলেই ভাল করতেন।

তাই? তাহলে রাজনীতি থেকে ভাল কোন ব্যবসা থাকলে তার নাম বল। আমি সেটাই করব। মন্ত্রী সাহেবের তড়িৎ জবাব।

মন্ত্রীর সাথে দেখা করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রচন্ড শীতেও রাস্তায় নগ্ন প্রায় মানুষজন দেখে রাসেলের মনে হয়, মন্ত্রী সাহেব ঠিকই বলেছেন, রাজনীতির চেয়ে ভাল ব্যবসা কি আর হতে পারে। অন্তঃত যতদিন এই সব গরীব লোক কে কেনাবেচা করা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:০৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×