১
স্পর্শের বাইরে
ভাবনার শুন্যতায়, নিসঙ্গ প্রহরে
একাকিত্ব কে সঙ্গী করে
ব্যস্ত আমি তোমায় খুঁজে ।
তুমি বলেছিলে আসবে
থাকবে প্রদীপের আলোয়।
আমি তাই তোমাকে খুঁজে ফিরি
অনেকক্ষন, বহুক্ষন
কালের হিসেবে অনন্তকাল ধরে যেন
নিরন্তর সে খুঁজে ফেরা।
তবুও কেন দেখতে পাইনা তোমাকে?
আমি শুধু দেখি, পিন পতন
নিঃশব্দতার দেয়ালে ঘেরা
অন্তহীন, অসীম
ঘন নিকষ কালো অন্ধকার।
রিক্ত শুন্য বিষন্ন
ক্রোধ, ক্লেশে অবসন্ন
আমি ভাবি, ভুল স্হানে
ভুল সময়ের গোলক ধাধায়
বন্দী কি তবে আমি?
কিংবা নির্ভূল স্হান, ভুলহীন কাল..
অথবা নয় কোন মায়াজাল
আমিই শুধু অন্ধ হয়ে গেছি, আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে
এখন তাই অন্ধকারের অস্তিত্ব
আর তুমি হয়তো অবহেলায় দুরে সরে আছো
নিরাপদ দুরত্বে, যতটুকু দুরত্ব হলে বলা যায়
স্পর্শের বাইরে.....।
২.
পরাবাস্তব ভালবাসা
তোমাকে ভালবাসি
নয় স্বপ্নে কিংবা বাস্তবতায়
ভালবাসি পরাবাস্তবতায়।
পরাবাস্তবতার চাদরের আদর মাখা
স্পর্শবিহীন সেই ভালবাসায়ও তুমি,
তোমার উপস্হিতি, উষ্ণতার অনুভূতি এতটাই নিখাদ
আমার আত্মতৃপ্তিতে একবিন্দুও ঘাটতি নেই।
তোমাকে ভালবাসি
তাই সময় কে ফিরিয়ে দিয়েছি
তোমার জন্য দিন অথবা রাত্রি হারিয়েছে তার নিজস্বতা
তোমার জন্য প্রতিটা মূহূর্ত আমার ফুল ফোটার প্রহর
তোমার জন্য হই বিবর কিংবা ভ্রমর মধু সিঞ্চনের নিমিত্তে
তোমার জন্য আমার জেগে উঠা, তোমাকে ভেবে আমার সুখ
সাগরের ডুব দিয়ে ভালবাসায় সিক্ত হওয়া।
তুমি এবং তোমাকে চাই
নয় স্বপ্নে কিংবা বাস্তবতায়
আমার তাতেই চলবে যতটুক পাই পরাবাস্তবতায়।
তোমাকে জাগিয়ে তুলবো ভালবাসার আদরে আদরে চোখের পাতায়
তৃষ্ণার্ত ঠোট, কানের লতি কিংবা গ্রীবায়
তোমার কল্পনায় আমার স্পর্শের ছোয়ায়।
ঘুম ঘুম রাত জাগা চোখ, স্বপ্নগুলো যখন নিয়েছে বিদায়
আমার বিনিদ্র মন শুধুই তোমার প্রতীক্ষায়।
স্বপ্ন নয়, পরাবাস্তবতায়
স্পর্শবিহীন ভালবাসার কাতরতায়,
উন্মুক্ততায়, উন্মাদনায়, মাদকতায়
চাই, চাই এবং চাই; শুধুই তোমায়..।
৩.
মৃত্যু এবং তুমি
তোমার সাথে পরিচয় হবার আগে
কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো পৃথিবীর পরিধি কত?
আমি নির্দ্বিধায় বলতাম, সেটা জানার প্রয়োজন আছে কি?
কারণ আমার কাছে পৃধিবী মানে আমি। বাকী সব কিছু অস্তিত্বহীন।
হ্যা, নিজের মাঝে এতটাই নিমগ্ন ছিলাম আমি ।
আমি তো বেশ ছিলাম
প্রতিদিন গদবাধা জীবনের বেড়াজালে আবদ্ব আর কর্মে ভারাক্রান্ত স্কন্ধ
তবুও জীবনের প্রতি তীব্র এক ভালবাসায় ছিলাম আমি অন্ধ।
আমি তাই অতি সন্তর্পণে পৃথিবীর সব পাপ তাপ ধুলো ময়লা এড়িয়ে
নিজেকে ভালবেসে পৃথিবী বুকে লুকানো সৌন্দর্য্য সন্ধানে ব্যস্ত হতাম
আমি ঘাস ফড়িং এর সবুজ মায়ায় মুগ্ধ হতাম
নীল আকাশে বুকে উড়ে চলা সাদা বকের ডানায়
আর ভেসে যাওয়া পেজা তোলার মত মেঘের ভেলায়
নিজেকে খুজে পেয়ে গভীর আনন্দে বিভোর হতাম।
আমি হেমন্তে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে যেমন মাতাল হতাম
আবার শীতে নাম না জানা অতিথী পাখীর বিদায় বিরহে কাতর হতাম।
বেশ তো চলে যাচ্ছিলো সময়ের স্রোতে আমার সময়।
অতঃপর....
কোন এক অলস দুপুর যখন বিকেলের কাছে হার স্বীকার করে বিদায় নিচ্ছে
এক রাশ বিষন্নতা ছড়িয়ে তোমার আগমন আমার পৃথিবীতে।
আমার পৃথিবী যেখানে আমি ছাড়া আর কারো অস্তিত্ব ছিলো না
ধীরে ধীরে তুমি সেখানে বৃক্ষরোপে সবুজ পত্র পল্লবে শাখা প্রশাখায় বিস্তার করলে।
পাখী আসলো, ভালবাসার ফুল ফুটলো, সিসিফাসের সিস্ফোনি আমার হৃদয়ে বেজে উঠলো।
আমি তখন যে দিকে তাকাই রঙধনু দেখি
যা স্পর্শ করি উজ্জল আলোয় আলোকিত হয়ে হৃদয়পঠে খেলা করে।
যা বলি সেটাই যেন বিতোভেনের সুরে সুমধুর কোন গান হয়ে বেজে উঠে।
আমার প্রতিটা মুহুর্ত যখন আনন্দের, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
তারপর হঠাৎ কোন এক দিন, সুর্যটা যখন হারিয়ে যায় কালো মেঘের আড়ালে
পৃখিবীর বুকে নেমে আসে গহীন অন্ধকার
তুমিও তখন মিলিয়ে যাও কোন এক অদৃশ্য দেয়ালের আড়ালে।
আমি কত খুঁজি তবুও কোথাও খুঁজে পাই না তোমাকে
ক্লান্ত হই তবে হতাশ নয়, ভাবি ফিরে আসবে আবার নিশ্চয়
কত বিনিদ্র প্রহর কাটাই তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায়
সব অপেক্ষা হয় এক সময় অসার।
তোমার অনুপস্হিতি যেন বিষাক্ত কেউটের মত ফনা তুলে ক্রমাগত দংশন করে আমাকে
নীল বিষে আকণ্ঠ ডুবে যাওয়া দংশিত আমি তখন তীব্র মরণ ব্যথায় আক্রান্ত হই
তোমার স্মৃতিগুলো সুতীক্ষ্ণ শেলের মত প্রতিনিয়ত বুকে এসে বিধে
ক্ষতবিক্ষত আমি ক্ষরণে ক্ষরণে নিঃশেষিত হই তবুও স্মৃতিগুলো পিছু ছাড়ে না
বরং জ্বালিয়ে দেয় আমার বুকে ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাত, কাটে স্মৃতি যন্ত্রনাময় বিনিদ্র রাত।
কত বিনিদ্র রাত নিসঙ্গ আমি শুধু মৃত্যু ভাবনা কে সঙ্গী করে
অপেক্ষার প্রহর কাটিয়েছি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো বলে।
মৃত্যু আসেনি যেমনটা আসোনি তুমি অনেক অপেক্ষার পরও।
মৃত্যু এবং তুমি
যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
তোমরা, শুধু অপেক্ষা করাতেই জানো, কষ্ট দিতে জানো;
জানো না কিভাবে কাছে আসতে হয়, ভালবেসে
আপন করে নিতে হয়; ভালবাসা দেয়া এবং নেয়ার খেলায়
কিভাবে অমর হতে হয়..।