somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মকে পুঁজি করে গড়ে উঠা সামাজিক ক্যান্সারঃ হিন্দু বিবাহে বর্ণ বৈষম্য

০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আহা এ এক উল্টোরাজার দেশ বাপু...
ধর্মের নামে দিনশেষে আজো এখানে অধর্মেরই জয় হয় !
হিন্দু-মুসলমান ইস্যুতে , ব্রাহ্মণ-শুদ্র ইস্যুতে কত মৃত্তিকা হারায় তার নিজস্ব ঘ্রাণ,কত প্রেম হারায় তার অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা !!
ক্লাসের সেরা ছেলেটাও পড়াশোনার নেশা কাটিয়ে এখন বেছে নেয় ড্রাগস,হয়ে যায় এলাকার উঠতি মাস্তান !

সত্যি এ এক আজব দেশ বাপু,আজব তার সমাজ ব্যবস্থা...

"চিৎকার করে চাই অধিকার
ভাবি না আমরা কে দাবিদার,
কোন সভ্যতা প্রজনন করি, কি আমার দায়ভার......
আজো ধর্মকে করতে ধারণ, রাম রহিমের সন্ধি বারণ
নির্দেশ করি আমরাই রাজশ্রী,
যদি জানতে......"

-(নচিকেতা/রাজশ্রী ২)

হিন্দু ধর্মে মেয়েদেরকে কোন জাত দেয়া হয় নি । মেয়েরা ব্রাহ্মনও নয়,শুদ্র,বৈষ্য,ক্ষত্রিও নয় । এজন্য ব্রাহ্মণ ঘরে জন্মালেও নীচু শ্রেনীর আরাধ্য দেবী লক্ষী ছাড়া নারীদের আর কারোর পূজা করার অধিকার নাই।
কোন ধর্মীয় শাস্ত্র পাঠ করার অধিকারও নারীকে দেয়া হয় নেই।


শুক্লযজুর্বেদের অন্তর্গত "শতপথ ব্রাহ্মণে" নারীকে তুলনা করা হয়েছে এভাবে, “সে ব্যক্তিই ভাগ্যবান, যার পশুসংখ্যা স্ত্রীর সংখ্যার চেয়ে বেশি”(২/৩/২/৮)।

নারীরা ধর্মজ্ঞ নয়, এরা মন্ত্রহীন এবং মিথ্যার ন্যায়। এটাই শাস্ত্রীয় নিয়ম।”(মনুসংহিতা ৯/১৮)।

কন্যা, যুবতী, রোগাদি পীড়িত ব্যক্তির হোম(যজ্ঞ) নিষিদ্ধ এবং করলে নরকে পতিত হয় (মনুসংহিতা ১১/৩৭)!!

স্ত্রীগণের প্রতি কোন কার্য বা ধর্ম নেই। (কারণ) তারা বীর্যশূণ্য, শাস্ত্রজ্ঞানহীন।(মহাভারতঃ ভীষ্মপর্ব ৩৩/৩২)

মজার ব্যপার হচ্ছে, যে ধর্মগ্রন্থগুলোতে নারীদের কোন ধর্মই দেয়া হয় নি সে ধর্মগ্রন্থগুলোতেই আবার ব্রাহ্মণ পুত্রকে শুদ্র নারী বিয়ে করতে মানা করা হয়েছে !! ক্যামনে কি ??
যেমন,
সবর্ণা স্ত্রী বিবাহ না করে শূদ্রা নারীকে প্রথমে বিবাহ করে নিজ শয্যায় গ্রহণ করলে ব্রাহ্মণ অধোগতি (নরক) প্রাপ্ত হন; আবার সেই স্ত্রীতে সন্তানোৎপাদন করলে তিনি ব্রাহ্মণত্ব থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পড়েন।(মনুসংহিতা ৩/১৭)

হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ অনেক । যতগুলা ধর্মগ্রন্থ আমার পক্ষে পড়া সম্ভব হয়েছে মনুসংহিতা ছাড়া আর কোথাওই আমি এমন কোন বিধান পাইনি যে, একজন ব্রাহ্মণ পুত্র একজন শুদ্র কন্যাকে বিয়ে করতে পারবে না অথবা তার ভাইসভার্সা।
এখানে উল্লেখ্য যে হিন্দু ধর্মে বর্ণবাদ বিষয়ে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তার শতকরা ৯৯ ভাগই মনুসংহিতা থেকে প্রাপ্ত । মনুসংহিতাকে বলা হয়ে থাকে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ি ব্রহ্মার মানসপুত্র মনুর উক্তি। সেখানেই বিয়ের ক্ষেত্রে এইসব বর্ণবৈষম্যের কথা উল্লেখ আছে । ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু কতটা রেসিস্ট ছিলেন চিন্তা করুন ।

ধর্মগ্রন্থ গুলোতে যে শুধু রেসিজমের পক্ষাই লিখা আছে তা নয় । কিছু কিছু জায়গায় এই ধরণের অসম বিবাহের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে ।
তারই কয়েকটি হচ্ছে,
অনুলোম বিবাহ ও প্রতিলোম বিবাহঃ
অনুলোম বিবাহ হচ্ছে উচ্চবর্ণের পুরুষের সাথে অপেক্ষাকৃত নিম্নবর্ণের কন্যার বিবাহ ।এর বিপরীত বিবাহের নাম প্রতিলোম বিবাহ।অর্থাৎ নিম্ন বর্ণের পুরুষের সাথে উচ্চ বর্ণের কন্যার বিবাহ।

হিন্দু ধর্মে এই দুই ধরণের বিয়েরই অনুমোদন থাকলেও বাস্তবে আমাদের অজ্ঞতার কারনেই হোক কিংবা ব্রাহ্মন্যবাদী চিন্তাভাবনার কারনেই হোক এই দুই ধরণের বিয়েই সমাজে নিন্দিত ।

গান্ধর্ব বিবাহঃ এটা হচ্ছে হিন্দু বিবাহের এক ধরণের প্রকার।মনুসংহিতায় বর্ণিত আট প্রকারের বিয়ের মধ্যে এটি এক প্রকার । এই ধরণের বিয়েতে পরিবারের সম্মতির প্রয়োজন পড়ে না , অর্থাৎ পাত্র পাত্রী রাজি থাকলে যে কেউ যে কাউকেই বিয়ে করতে পারবে । বর্তমানে প্রচলিত কোর্ট ম্যারিজের'ই শাস্ত্রীয় রূপ এটি ।

আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় অসম বিবাহ বা দুই ধর্মের মানুষের বিয়ে কতটুকু তাৎপর্য বহন করে??

বর্তমানে প্রচলিত ধর্মীয় ব্যবস্থার সব চাইতে বড় যে অসঙ্গতি আমার কাছে মনে হয়েছে তা হচ্ছে উত্তরাধিকার সুত্রে ধর্মীয় পরিচয় প্রাপ্তি। হিন্দু পরিবারে জন্মেছি বলেই আমি হিন্দু , আপনি মুসলমান। কিংবা ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মেছি বলেই আমি ব্রাহ্মণ অন্যজন শুদ্র ।
একবার চিন্তা করুন তো হিন্দু,মুসলমান কিংবা ব্রাহ্মণ হবার পেছনে আমার নিজের কি কোন চয়েস ছিলো ?? বাস্তবে কিন্তু সেটাই হওয়া উচিত ছিলো। আমি দেখে শুনে বুঝে তারপর চয়েস করবো আমি কোন ধর্মের অনুসারী হবো কিংবা আদৌ হবো কিনা ।
আমাদের প্রচলিত সিস্টেমে আমরা একজন মানুষকে সেই সুযোগ দিচ্ছি না ।

অসম বিবাহের ক্ষেত্রে একজন সন্তান সে সুযোগ পাবে ।

ধর্ম পরিবর্তন না করেই দু’টি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে বিয়ে হতেই পারে । দুই ধর্মের দু’জন তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস ঠিক রেখে বিয়ে করতে পারেন। আচার-আচরণ পালন করবেন যে যার বিশ্বাস মত।
আর এই বিয়ের ফলে বেড়ে উঠবে নতুন একটি প্রজন্ম। যারা উত্তরাধিকার সূত্রে কোন ধর্মীয় পরিচয় বহন করবে না।তাদের কাছে সুযোগ থাকবে নিজের পছন্দ মত ধর্ম বেছে নেবার ।

বাংলাদেশের বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ (সংশোধিত ২০০৭) অনুযায়ী, একজন মুসলমান, হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, ইহুদি বা অন্য যে কোন ধর্মের যে কেউ যে কারো সাথে বিয়ে করতে পারবে। ধর্মের পরিবর্তন করা প্রয়োজন হবে না। অথবা দু’জনই ধর্মীয় বিশ্বাস বাদ দিয়ে বিয়ে করতে পারবে। অথবা একজন অন্যজনের ধর্ম মেনে নিতে পারবে।

চলবে ......

পোস্টের উদ্দেশ্য বিশেষ কোন ধর্মকে ছোট করা নয়,শুধুমাত্র ধর্মকে পুঁজি করে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে যে বৈষম্য দানা বেধে আছে সেটা তুলে ধরাই উদ্দেশ্য। তাই অনুভুতিতে নিজ দায়িত্বে আঘাত নিবেন ।

তথ্যসূত্রঃ ১) ভারতীয় দর্শন-দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
২) মনুসংহিতা- ড. মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
৩)দৈনিক ইত্তেফাক-৩১শে জুলাই ২০১১
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৯
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×