somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোদা কে লিয়ে (In the name of God) : মৌলবাদীদের জন্য একটি মাস্ট ওয়াচ মুভি

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুভি রিভিউ লিখি নাই । মুভি রিভিউ আমি লিখতেও জানিনা । আমার উদ্দেশ্য শুধু এই মুভিটি সম্বন্ধে এখনো যারা অবগত নন , তাদেরকে এটি সম্পর্কে সামান্য কিছু জানানো ।

কিছু কিছু মুভি থাকে যেইগুলা দেখার পর এইগুলা নিয়ে কিছু বলতে, কিছু লিখতে , অন্তত ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিতেও ইচ্ছা করবে। পাকিস্তানী মুভি খোদা কে লিয়ে হচ্ছে সেই রকমই একটা মুভি।

পাকিস্তানী জিনিসের প্রতি অনেকেরই অনেক ধরণের চুলকানি থাকতে পারে , আমারো আছে , থাকাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু পাকিস্তানী কোন মুভিতেই যদি টেরোরিজমের বিরুদ্ধে , ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে , ধর্মের নামে পাপ কাজ গুলোকে জিহাদ বলে চালিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে ম্যাসেজ থাকে তাহলে সেই পাকিস্তানী জিনিসকে , সেই পাকিস্তানী মুভিকে গ্রহণ করতে আমার আপত্তি কোথায় ? বিশ্বায়নের এই যুগে এইরকমটাই তো হওয়া উচিত । যদিও আমরা করছি তার উল্টোটা , ভালোটা গ্রহণ না করে , গ্রহণ করছি খারাপটা ।

যাই হুক , এইবার আসল ব্যাপারে আসি , এইবার মুভির ব্যাপারে কিছু বলি ।



খোদা কে লিয়ে (ইন দ্যা নেইম অব গড) ২০০৭ সালে পাকিস্তানে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি উর্দু সিনেমা । পাকিস্তানে ব্যাপক সাফল্যের পর হিন্দীতেও এটি রিলিজ করা হয় ভারতে । পরবর্তীতে অবশ্য আরবী , ইংরেজী সহ আরো কয়েকটি ভাষায়ও পরিচালক মুভিটিকে রিলিজ করেন সারা বিশ্বেই ।

আইডিএমে ৮.২ রেটিং প্রাপ্ত মুভিটির কাহিনী লিখেছেন শোয়েব মনসুর । প্রযোজনা ও পরিচালনাও তারই । যারা অভিনয় করেছেন তাদের বেশীরভাগই পাকিস্তানী অভিনেতা , তাদের কাউকেই চিনিনা বলে নামও বলছি না । তবে ছবিটিতে সব চাইতে কম সময়ের কিন্তু সব চাইতে গুরুত্তপূর্ন একটি পার্ট করেছেন ভারতীয় অভিনেতা নাসিরউদ্দীন শাহ ।

ধর্মীয় গোঁড়ামি , এবং সেটাকে পুঁজি করে গড়ে উঠা বিভিন্ন টেরোরিস্ট সংঘটনের কার্যকলাপ , নাইন ইলাভেনের পর টেরোরিস্ট সন্দেহে সাধারণ মুসলমানদের উপর এফ বি আই এর নির্যাতন; মূলত এই সকল বিষয়ের উপরই নির্মিত হয়েছে ছবিটি । আপাতদৃষ্টিতে মুভিটির প্লট অতি সাধারণ মনে হলেও
মুসলামন-ক্রিশ্চিয়ান বিয়ে , ধর্মের কথা বলে, জিহাদের কথা বলে মানুষকে ব্রেইন ওয়াশ করা, টেরোরিজমের পথে ধাবিত করা , মেয়েদের উপর নির্যাতন করা , নারী শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এইসব বিষয়কে পরিচালক খুব সুন্দরভাবে , বাস্তবতার সাথে তুলে ধরতে পেরেছেন বলেই মুভিটি এতো সফলতা অর্জন করতে পেরেছে ।


মুভিটির মূল দুই চরিত্রে আছেন দুই ভাই সারমদ এবং মনসুর। ছোটবেলা থেকেই সেক্যুলার মানসিকতা সম্পন্ন ফ্যামিলিতে বড় হয়ে উঠা এই দুই ভাইয়েরই ছিলো গান বাজনার প্রতি প্রবল আগ্রহ । নিজেরাও গাইতেন , কট্টর মোল্লাদের তীব্র বাধার মুখে স্টেজেও পার্ফরম করতেন ।

বন্ধুর পরামর্শে একদিন হটাৎ করেই সারমদ দেখা করেন মোল্লা তাহিরির সাথে । মোল্লা তাহিরি ছিলেন ধর্মীয় নেতার আদলে তালেবান জঙ্গীর একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা । কোরআন হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মোল্লা তাহিরি সারমদকে বুঝাতে শুরু করেন যে , গান বাজনা ইসলামের চোখে হারাম । সারমদের এই সুর আল্লাহ দিয়েছেন আল্লাহর স্তব করার জন্য, আযান দেয়ার জন্য; শরিয়ত বিরোধী কাজের জন্য নয় ।

মোল্লা তাহিরির করা ব্রেইনওয়াশে প্রভাবিত হতে থাকেন সারমদ , এবং ধীরে ধীরে গান বাজনা ছেড়ে দিয়ে তিনিও তালেবানে যোগ দেন জিহাদের জন্য , ঈমানি দায়িত্ব ( মোল্লা তাহিরের ভাষ্যমতে) পালন করার জন্য ।


সারমদের বড় ভাই মনসুর সঙ্গীতে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য শিকাগো যান এবং নাইন ইলাভেনের পর জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হন ।

সারমদ এবং মনসুরের চাচাতো বোন(মেরি/মরিয়ম) লন্ডনে থাকেন , এবং ক্রিশ্চিয়ান ছেলের সাথে তার গভীর প্রণয় থাকে। কিন্তু মেয়ের এই সম্পর্ক মেনে নেন নি তার বাবা । এই হারাম(!) কাজের হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করার জন্য মেয়েকে নিয়ে আসেন পকিস্তান , মেয়ের অমতেই বিয়ে দিতে চান নিজের বড় ভাইয়ের ছোট ছেলে সারমদের সাথে ।
সারমদের বাবা মা এই বিয়েতে রাজী না হওয়ায় মোল্লা তাহিরির নির্দেশে মেয়েকে নিয়ে যান পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এক গ্রামে । সেখানেই মেয়ের অমতে বাবা জোর করে বিয়ে দেন সারমদের সাথে ।

তালেবান অধ্যুষিত ঐ গ্রামে মেরি (সারমদের স্ত্রী) এর উপর করা নানা ধরণের নির্যাতন,সারমদের জঙ্গি জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এগুলোর উপর ভিত্তি করেই এগুতে থাকে সিনেমাটি ।

কিভাবে কি হয়েছে এবং নাসিরউদ্দীন শাহ'র এই মুভিতে কি ভূমিকাই আছে সেটা জানতে হলে দেখতে হবে মুভিটি ।
তবে আগেই বলেছি এবং এখন আরেকবার বলে নিচ্ছি যে , নাসিরউদ্দীন শাহ'র পার্ট টাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে , এবং ইসলাম সম্বন্ধে মোল্লা তাহিরির কাছ থেকে যা জেনেছিলেন সারমদ সেটা যে ভুল ছিলো সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে ।

মুভিটি মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে ইসলাম সম্বন্ধে বিভিন্ন মানুষের ফ্যানাটিজম । মুভিটির কিছু গুরুত্তপুর্ন লাইন এবং তার প্রেক্ষাপট আমি কোট করছি ,

ইসলামি পোশাকের ব্যাপারে মুভ্যিটিতে বলা হয়েছে,
"Dressing is a part of culture,not of religion."


দাড়ির রাখার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে , The beard is
a part of religion not the vice versa .
Beard is not the begining of love,
its the zenith of love ."


"Even Abu jahel had the beard ,
and his dress too was no different
than the prophet's . Bring a change in the inside,rather than the outside .
Light a fire inside,it will come out on its own ."


৯/১১ এর পর মুসলমানদের উপর করা নির্যাতনের ব্যাপারে মুভিটিতে বলা হয়েছে যে,
"I can't hate all Americans, because
some of them have done injustice to me .
In the same way, please don't hate
all muslims, because some of them
have done harm to your country. "


মুভিটির ডাউনলোড লিঙ্কঃ টরেন্ট

আইডিএম

উৎসর্গঃ তোমরা যারা হেফাজত কিংবা শিবির করো
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২৮
৩৪টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×