somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুড্ডির পাইলট কিভাবে হইলাম শুনেন।আর ঘুড্ডির পাইলটের ব্যার্থতার ইতিহাস।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন অনার্স এ পড়ি তখন একটা মেসে থাকতাম। মেস বল্তে একটা ফ্লাট ভারা কইরা কয়েকজন স্টুডেন্ট মিইলা থাকা আরকি। আমরা প্রত্যেক রুমে দুইজন কইরা থাকতাম। মালিবাগ এর পরে মৌচাক মোড়ের কাছে ছিলো মেছটা। আমরা যেই বিল্ডিং এ থাকতাম তার পাশের একটা বিল্ডিং এ ছিল একটা মেয়েদের হোস্টেল। হোস্টেল বলতে স্বিদ্ধেশ্বরি গার্লস কলেজ আর ঢাকা ইউনির: কয়েকজন মেয়ে একটা ফ্লাট ভারা কইরা আমাদের মতো মেছ স্টাইলে থাকতো। তাদের মইদ্যে কেউ খুব সম্ভবত কেমিস্ট্রি তে পর্তো। আমার জানামতে তাদের মধ্যে কারও একজনের আত্মিয়র বাসা ছিলো এটা।
একদিন এলাকার চায়ের দোকানে চা খাইতে গেছি। চা শেষ কইরা একটা বিরি ধরাইয়া বাসার দিকে হাটা ধরলাম। আমার পিছনে পিছনে একটা আংকেল আসতাছিলো ,যখন আমি আমার বাসার গেট দিয়া ঢুকতে যামু তহন অই আংকেল আমারে ডাকদিলো। বাবা শুনেন। আমি দারাইলাম , মনে কর্ছি ঠিকানা টিকানা জিগাইবো।
>আপ্নে এই বাসায় থাকেন?
>>জি আংকেল, আমি এই বাসার ৫ তলায় থাকি।
> পাশের বিল্ডিং এ একটা ছাত্রি হোস্টেল আছে না ?
>> জি আংকেল আছে তো।
>ঐ খানে আমার মেয়ে থাকে। আমার মেযে কে নিয়া আমি খুব চিন্তা করি।আমি জানতাম না যে এখানে একটা ছেলে হোস্টেলও আছে। আমি গ্রাম থেকে এসেছি।শহরের হাল চাল কম বুজি । শুনছি আপ্নেরা অনেক দুস্টামি করেন। তাই আমার আরও বেশি টেনশন হয়। আপ্নেরে একটা অনুরোধ করি? আপ্নেরা কখনও ওদের ডিস্টার্ব করবেন না। আংকেলের চেহারায় একটা কনফিউজড ভাব , মানে তার রিকোয়েস্ট রাখুম কিনা এইটা নিয়া সে চিন্তিত। আমি পুরা ভোদাই হইয়া গেলাম। আমারে দেকতে ইভটিজার লাগে নাকি? উপ্রে উইঠা আয়নায় অনেকক্ষন চেহারা দেখলাম। নাহ ! ইভটিজার লাগে না তয় দারি না কামাইলে কয়েদি কয়েদি লাগে ।
আমার আবার অনেক ঘুড্ডি উরানোর সখ আছিলো। প্রতিদিন ঘুড্ডি উরাইতাম দুপুর থিকা বিকাল শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। আর ঐ দিকে গার্লস হোস্টেল এর মেয়েরা বিকালে ছাদে উইঠা হাটা হাটি কর্তো। একদিন (পাচটা মেয়ে ছিলো মনে হয়) মেয়েরা ছাদে হাটতেছে আর আমি আমার ঘুড্ডি উরাইতাছি। ঘুড্ডি মেয়েদের বিল্ডিং এর উপ্রে দিয়া উরতাছে। এক মেয়ে কর্ছে কি একটা ঝুল ঝারু (ঘড়ের সিলিং এর ঝারু)আইনা আমার ঘুড্ডির সুতার লগে দিলো প্যাচ , হের পর সুতা হাতের নাগালে আইনা সুতা ছিরা ঘুড্ডি তাগোর কন্ট্রোলে নিয়া নিলো। আমি যতোই চিল্লা ফাল্লা কর্তাছি হেরা আমার কথা শুনে না। আমি খুব করুন ভাবে বলছিলাম প্লিজ ঘুড্ডি ডা দিয়া দেন। হেরা কোন কতা না কইয়া বিজয়ীর বেশে সিড়ি দিয়া নাইমা গেলো , আর যাওনের সময় থাম্বস ডাউন দেহাইলো। ঘুড্ডির বাকি সুতাডা নাটাইতে পেচাইয়া মনডা খারাপ কইরা অনেকক্ষন বইসা রইলাম। কারন আমি ঘুড্ডি কিনতাম না, বানাইয়া উরাইতাম (গেরামের পুলা হইয়া ঘুড্ডি কিনুম আমরা বানাইতারি না ?)আর একটাই ঘুড্ডি আমার গোডাউনে আছিলো। আমার বাসার বাড়ি অলনি খালাম্মা ছাদে আইসা ঘুড্ডি বিহিন নাটাই দেইখা বুজলো ঘুড্ডির লাইগা মন খারাপ, উনি কিছু স্বান্তনা দিলো , এরপর আমি নিচে চইলা গেলাম।

এর পর কয়দিন আমর জ্বর আছিলো তাই বাসা থিকা বাইর হই নাই, বারান্দা বা ছাদেও যাই নাই। একদিন সুমন আমারে কইলো দোস্ত তরে ডাকে। কেডায় ডাকে ? কয় বারান্দায় যা, দেহি অই মেয়ে গুলান অগো বারান্দায় খারাইয়া রইছে এবার সংখ্যায় আরও বেশি। হাতে একটা মাঝারি সাইজের প্লাকার্ড টাইপের , তাতে লেখা "ঘুড্ডির পাইলটরে ছরি " । আমি জিগাইলাম বিষয় কি ? তারা অল্প আওয়াজে চিচি কইরা কইলো , আমরা ছরি, আজকে আপ্নে কর্নফুলি মার্কেটের উপ্রে আসেন। আমি কইলাম সম্ভব না গায়ে জ্বর । তবে মনে হয় কালকা পারুম। হেতেরা হগলতে ফাল দিয়া উটলো কইলো ঠিক ১১.৩০ অবশ্যই থাকবেন।

আমি দারি টারি শেভ কইরা কয়েদি থিকা জামিন প্রাপ্ত হইলাম। পাংখা একখান ড্রেসআপ কইরা প্রায় ১২ টায় গেলাম কর্নফুলির উপ্রে , একলা গেছিলাম। দেহি হেরা প্রায় ৮/৯ জন হইবো (সঠিক মনে নাই) দুই টেবিল জোরা দিয়া দহল কইরা বইসা আছে। আমি গেলাম ,হেরা আমারে খুব ছরি টরি কইলো, আমারে পেস্ট্রি কেক আর পিজা খাওয়াইলো,কুকও খাওয়াইছিলো (বিল হেরা দিছে) কিছু গল্পগুজব , এবার বিদায়ের পালা যাওয়ার আগে তারা আমারে একটা টি শার্ট গিফট কর্লো, এই ডার বুকে একটা ঘুড্ডির ছবি আছে (মনে হয় আজিজ থিকা কিনছে)। যাওয়ার আগে কইছে এই টা পইরা বাসায় যাবেন , ওয়াসরুম থিকা চেঞ্জ করে তারপর এখান থেকে বের হবেন । আমরা কিন্তু বারান্দা থেকে দেকবো ওকে?

আমি হেরা যাওনের পরে ওয়াস রুমে গিয়া আগের কোর্তাডা (জামা) চেঞ্জ কর্লাম। রিকসা পাই নাই তাই হাইটা মালিবাগ মোড় পর্যন্ত আইলাম তাগোর দান করা টিশার্ট গায় দিয়া, আমার শরিলে কিমুন যেন জ্বলানি টের পাইতাছিলাম। বাসার গেট দিয়া ঢুকনের সময় দারোয়ান চাচায় কইলো ভাতিজা খারাও, তোমার কি মাতা নস্ট? আমি কইলাম কেলা এই কতা কন কা ?! তোমার পিডে এই ডি কি লেকছো? ঘার ঘুরাইয়া দেকলাম পিডে কিছু লেখা আছে। টিশার্ট টা খুইলা দেকলাম তাতে লেহা "ঘুড্ডির পাইলট, ছাদে ফিল্ডিং মারি" । তারা তারি টিশার্ট দলামোচরা কইরা উপ্রে উইঠা গেলাম। কোন একটা বিশেষ কালি দিয়া লেকছে , যেইডা প্রথমে চোখে পরে নাই , ঘামে ভিজার কারনে লেখাডা স্পস্ট হইয়া ভাইসা উঠছে। আর পিডের জ্বলানি হইছে অই কালির কারনে।

আমার পিঠ পুরা লাল হইয়া গেছিলো, রাইতে চিত হইয়া ঘুমাইতে পারি নাই।
আমার আগের নিকের পোস্ট গুলান পর্লে বুজবেন আমি বন্ধুগোরে কত ছুড ছুড দোষের কারনে কতো বড় বড় সাইজ দিছি , আমি ছাইরা দেওনের লোক না। পর্দিন সকালে মাথা পুরা আউলা। যেমতেই হউক এইডার একটা প্রতিশোদ নিতেই হইবো। কিন্তু দুপুরে যহন আদার পানি খাইলাম (দুপুরের খাবার) তহন মনডা নরম হইলো। বার বার এক চিন্তা গ্রস্থ পিতার মুখ আমার সামনে ভাইসা উটলো , সেই আংকেলের কনফিউজড চেহারাডা। তহন প্রতিশোধের চিন্তা বাদ দিলাম। মনডারে বুজাইলাম মেয়েরা দুস্টামি কর্ছে করুক কিন্তু আমার তাগোরে কিছু বলা সাজে না। কি হয় এইটুকু দুস্টামিতে ? কতো জনরেই তো সাইজ দিছি , এই বার না হয় ঐ আংকেলের লাইগা হার মাইনা গেলাম। এইবার না হয় ব্যার্থ ই হইলো এই ডাকুরেজিমেন্টের চিফ(এইডা আমার ছুডকালের নাম)।আমি এহন অগোরে কিছু কইতে গেলে এইটা ইবটিজিং হইবো।এটা আমার দ্বারা সম্ভব না।আমি কোন প্রতিশোধ নিলাম না। এইটা আমার প্রতিশোদের ব্যার্থতার কাহিনি আর সেই আংকেলটার অনুরোধ রক্ষার কাহিনি।

ইভটিজাররা কি চিন্তা করে , যে মেয়েটারে টিজ কর্তাছে তার বাবা মা কতোডা টেনশন এ থাকে মেয়েরে নিয়া? আমি কতো দুস্টু আছিলাম, আমার মতো তারা কি পারে না টিজ করার চিন্তাডা মাতা থিকা বাদ দিতে ? ইবটিজিং এ আক্রান্ত সব মেয়েরা নিশ্চই ঐ হোস্টেলের মেয়েদের মতো এমন দুস্টামি করে না ? তাইলে আমি যদি নিজেরে সামলাইতে পারি ইবটিজাররা পারে না কেন?

এইবার গল্পের দ্বিতীয় পার্ট
কিছুদিন আগে একদিন বসুন্ধরা মার্কেটে গেছিলাম একা । একটা সুন্দর ছোট বাচ্চা ছেলে আমারে আইসা একটা টিশু দিয়া বানানো ঘুড্ডি দিলো (যেটা পুরোপুরি ঘুড্ডি হয় নাই) আর তাতে লেখা "ঘুড্ডির পাইলটরে ছরি" ! লেখাডা পইরা আমার শরিরের লোম খারা হইয়া গেলো। দেখলাম একটু দুরেই একটা মেয়ে দারানো ফর্সা, মোটা । আরে ! এই ডাতো জয়া ! সেই হোস্টেলে থাকতো , আর সেই অনুরোধকারী আংকেল অর আব্বা (অবশ্য এটা সাইজ খাওয়ার অনেক পরে জানছিলাম) আর জয়া আছিলো সেই "মিশন ঘুড্ডির পাইলট" এর সেকেন্ড ইন কমান্ড। কালি ডা অয় সিস্টেম কর্ছিলো। এহন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এ চাকরি করে।বাচ্চা ছেলে টা ওর। পুরানো স্মৃতি মনে কইরা অনেক হাসা হাসি হইলো। সামুতে নাকি জয়ার একটা নিক আছে , কিন্তু এইটা জয়া নামে না অন্য নামে খুলছে। পোস্ট বেশি দেয় না কিন্তু পোস্ট পড়ে বেশি। সেদিন বিদায় নেওয়ার আগে জয়া একটা প্রশ্ন কর্ছিলো , আমার মতো একটা দুরন্ত ছেলে কেন এই ভাবে সেদিন হার মেনে গেলো? আমি তো চাইলে ওদের উপ্রে একশন নিয়া একটা পাল্টা জবাব দিতে পার্তাম। জয়ারে উত্তরে বলছিলাম সামুতে নিক আছে না? উত্তর টা সামুতেই দেব । কস্ট কইরা সামুতে পইরা নিও। উপ্রের বোল্ট করা লেখা গুলা জয়ার সেই প্রশ্নের উত্তর।
(লেখাটা আমার আগের নিক রাফাত নুর দিয়ে পোষ্ট দিছিলাম, অনেকেরই পড়া আছে তারপরও আবার দিলাম,লেখাটা এই নিকেও রাখতে চাচ্ছি।)
এই লেখাটা উৎসর্গ কর্লাম তাকে :
যে আমাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখে আমাকে সবসময় বলে : ..... যা ভাগ
;)
;)
B-)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৫
১৩০টি মন্তব্য ১৩২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×