সরকারের অসচেতনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত-শিবির এখন আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম বাহন ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার ক্ষেত্র হিসেবে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ব্লগের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক লেখা প্রকাশ করা হচ্ছে। ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নানা ধরনের ভুল তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সারা পৃথিবীতে। এসব লেখায় যুক্ত করা হচ্ছে নানা ধরনের অপমানসূচক ব্যঙ্গচিত্র এবং সংবাদপত্রের কাটিং। সত্য-মিথ্যা নানা তথ্য উপস্থাপন করে সরকারের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে বিষোদগার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতেও চালানো হচ্ছে প্রচারণা। জামায়াতের নেতাদের মুক্তির দাবিতে নেয়া হচ্ছে গণস্বাক্ষর। এসব প্রচারণায় বর্তমান সরকার ইসলামের শত্রু এবং দেশ থেকে ইসলাম ধর্মকে উৎখাত করতে চায়, এমন কথাও বলা হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ ধর্মপ্রাণ ও রাজনীতি অসচেতন মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। অনেক লেখায় সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ডাক দেয়া হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ দাবি করেছেন আরেকটি ১৫ আগস্ট। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস মৃত্যুর জন্য প্রার্থনাও করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ কাজে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়–য়া শিবিরকর্মী। বিদেশে অবস্থানকারী কর্মজীবী সাবেক শিবিরকর্মীদেরও একটা বড় অংশ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। যদিও কেউ কেউ মনে করছেন একই সঙ্গে এসব কাজ করার জন্য জামায়াত বিভিন্ন সংস্থাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে লবিস্ট ও এজেন্টও নিয়োগ করিয়েছে।
ইন্টারনেট ভ্রমণকারী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ নানাভাবে জামায়াতের এ ধরনের প্রচারণার বিরোধিতা করছে। অনেকে মনে করছেন এতে করে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ। ইন্টারনেটে অপরাধ সংঘটন এবং এভাবে প্রপাগান্ডামূলক কাজে ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ব্যবহারকে ঠেকাতে সরকারের স্পষ্ট কোনো নীতিমালা বা আইন না থাকার বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে। এই নীতিমালা না থাকায় দেশের সাধারণ ইন্টারনেট ভ্রমণকারীরা অনেকেই সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন। প্রশ্ন উঠেছে সরকারের কর্মকর্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক পশ্চাৎপদতা নিয়েও।
প্রচারণার পদ্ধতি
ইন্টারনেটে এ সমস্ত প্রচারণা চালানো হচ্ছে সুকৌশলে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে। ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। সরাসরি প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ব্লগ বা বিভিন্ন ফোরামে সাধারণত ভুয়া ছদ্মনাম নিয়ে একাধিক এ্যাকাউন্ট খুলে কাজ চালানো হয়। তবে ব্লগে বা ফোরামে সাধারণত সরাসরি কোনো মত প্রচারে না গিয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়। প্রথম দিকে এ ধরনের এ্যাকাউন্টধারীরা শুধু ধর্ম নিয়ে আলাপ চালায়। পরবর্তীতে সুকৌশলে রাজনৈতিক কর্মসূচি উপস্থাপন করা হয়। ফেসবুকের ক্ষেত্রে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম কাজ করছে না। কিছু এ্যাকাউন্ট, পাতা (পেজ) ও দল (গ্রুপ) পরিকল্পনামাফিক খোলা হলেও এর বাইরে যে যার ইচ্ছেমতো এ ধরনের এ্যাকাউন্ট, পাতা ও দল খুলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর সঙ্গে জামায়াত-শিবির সমর্থিত একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞও কাজ করে যাচ্ছেন। যারা নিজেরা নানা ধরনের ওয়েবসাইট, ফোরাম ও ব্লগের বিনির্মাণের সঙ্গে যুক্ত।
ওয়েবসাইট
বাংলা, ইংরেজি উভয় ভাষায় ইন্টারনেটে চলছে এ ধরনের বেশ কিছু ওয়েবসাইট। কোনো কোনো ওয়েবসাইট দেখে বোঝাই যায় না ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বরং মনে হবে এটি এখনো পূর্ব পাকিস্তান রয়ে গেছে। এসব ওয়েবসাইটের দিকে এক নজর তাকালেই বোঝা যায় এগুলো জামায়াতপন্থিরা পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করছে।
- ফ্রি জামায়াত লিডারস
এই ওয়েবসাইটটির নাম রাখা হয়েছে ইংরেজিতে। বাংলা, ইংরেজি উভয় ভাষাই এতে যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে চালানো হচ্ছে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মুক্তির পক্ষে প্রচারণা। সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের আদলে এই ওয়েবসাইটটিতে প্রতিনিয়ত যোগ করা হচ্ছে ঘটে যাওয়া এ সংক্রান্ত সব খবরাখবর। প্রতিদিন এই সাইটটিতে কয়েক হাজার মানুষ ঢুকছেন। গত রোববার বেলা তিনটা পর্যন্ত ওই সাইটটির ব্যানার হেডিংয়ে লেখা ছিল ‘যত থাক বাধা ভয়, যত থাক দুশমন, মৃত্যুর সাথে নেই চুক্তি’। এর ওপরে ছোট হরফে লেখা রয়েছে ‘রাজনৈতিক এই নিপীড়ন মানবতাবিরোধী’। এ ছাড়া সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের আদলে পৃষ্ঠা বিন্যাসে এইদিন প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘নাশকতা ও সন্ত্রাসের সাথে ছাত্রশিবিরকে মিলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেইÑ শিবির সভাপতি’, ‘সরকার ইসলামী আন্দোলনকে উৎখাত করতে চায়’, ‘জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস তল্লাশির নামে হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ’, ‘সিলেট ওসমানী মেডিকেলের ঘটনায় সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে : এটিএম আজহার’। এ ধরনের আরো অনেক লেখা ও ভিডিও ক্লিপস এতে যুক্ত রয়েছে।
এই ওয়েবসাইটটিতে ভ্রমণকারীদের জন্য মন্তব্য করার সুযোগ রাখা হয়েছে। মন্তব্য করতে একটি ইমেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড সহকারে প্রথমে একটি এ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এবং ওই এ্যাকাউন্টে ব্যবহৃত নাম দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি পরিচিত হন। এ ধরনের মন্তব্যকারীরা যা খুশি বলতে পারেন। সাধারণত ওয়েবসাইটের কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে সচেতন থাকেন। এবং কখনো কেউ কোনো আপত্তিকর মন্তব্য করলে সেটা মুছে দেন। কিন্তু জামায়াত নেতাদের মুক্তি আন্দোলন নামের এই ওয়েবসাইটটিতে কর্তৃপক্ষ কোনো কিছুর পরোয়া না করে আপত্তিকর মন্তব্যগুলো মুছে দেয়ার কোনো চেষ্টাই করেননি। ৪ জুলাই থেকে এই সাইটটিতে মোট মন্তব্য এসেছে ১৭৪টি। ৪ জুলাই রাত ৮টা ৫৯ মিনিটে এসএম নূরই এলাহি নামের একজন তার মন্তব্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন ‘আমেরিকা+ইসরায়েল+ভারত+বাকশাল আমাদেরকে একযোগে আক্রমণ করেছে। মুসলিম নেতাদের রক্ষা কর।’ ৫ জুলাই ভোর ৬টা ১ মিনিটে রুহুল আমিন নামের একজন লিখেছেন ‘সব কিছুর একটা শেষ আছে। অতিরিক্ত কিছুই ভালো না। বাংলাদেশের মানুষ এতই বিরক্ত যে আরেকটা ১৫ আগস্ট হলে আশ্চর্য হব না।’ ৭ জুলাই ভোর ৬টা ৪৭ মিনিটে মামুন নামের একজন লিখেছেন ‘হে আল্লাহ, তুমি তোমার বান্দাদের সাহায্য কর। ওই জালিমদের হেদায়াত দান কর। আর যদি এদের হেদায়াত না থাকে তাহলে আর একবার ডালিম, ফারুক, রশীদদের পাঠাও। আরো একটি ১৫ আগস্ট আমাদের ভাগ্যে লিখে দাও। আমিন।’ ২২ জুলাই বিকেল ৩টা ৫৩ মিনিটে ওমর নামের একজন লিখেছেন, ‘নামায আদায় এবং ধৈর্যের সঙ্গে দয়া করে সবাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন তিনি যেন ইবলিশ, নমরুদ, সাদ্দাদ ও কারুণের মিত্রদের নিপীড়ন থেকে আমাদের নেতাদের রক্ষা করেন।’ ১৪ নবেম্বর রাত নয়টায় ফাহিম নামের একজন মন্তব্য করেছেন ‘যে সরকার জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তার করে তারা মুসলিম নয়, মুরতাদ।’
নাম-পরিচয়হীন মন্তব্য বেশি হলেও পরিচয়সংবলিত কিছু মন্তব্যও এতে রয়েছে। ৭ জুলাই রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে ইমদাদুল হক নামের একজন লিখেছেন ‘উল্লসিত কিংবা দুঃখিত নই বরং শঙ্কিত’ শিরোনামে দীর্ঘ একটি লেখা। লেখার শেষে তিনি নিজের মোবাইল নম্বর হিসেবে ০১৫৫২৬০০৫৭৯ সংখ্যাটি উল্লেখ করেছেন। ১০ জুলাই দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে এনামুল হক, বিরামপুর, দিনাজপুর নামের একজন ‘আল্লাহ অতি শীঘ্রই এ জালেমদেরকে লজ্জাজনকভাবে পর্যুদস্ত করবেন’ শিরোনামে সুদীর্ঘ একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধটির মধ্যে এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আজকের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আমরাও একই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী দজ্জাল সরকারের কঠোরতম নির্যাতনের শিকার!’ নিজের পরিচয় হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রধান মুহাদ্দিস, (সহকারী অধ্যাপক) বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা, বিরামপুর, দিনাজপুর, ০১৭১৩৩১৪৬৮৯; ০১৮২০৫০৬৪১০। এ ধরনের মন্তব্যের পাশাপাশি অনেকে সরকারকে হুমকিও দিচ্ছেন। ৩১ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিটে এম ডি নাজমুল হক লিখেছেন ‘আমি মনে করি আওয়ামী সরকার কিছু ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের উচিত জামায়াত নেতাদের মুক্ত করে দেয়া। তা না হলে আমরা ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করব।’
- শাহরিয়ারের স্বপ্নবিলাস
এই ওয়েবসাইটটির পরিচালকের নাম শাহরিয়ার। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা হচ্ছে http://www.shahriar.info/ সরাসরি জামায়াত-শিবিরপন্থি ওয়েবসাইট এটি। বেশ কয়েকটি বিভাগে এতে লেখা সংরক্ষিত হচ্ছে। কিছু বিভাগ হচ্ছে, চেতনায় ইসলাম, জাগো!!, দিনলিপি, বাংলাদেশ, মওদুদী (রহ
- স্টোরি অব বাংলাদেশ
আমরা যে বাংলাদেশকে জানি এই ওয়েবসাইটটি দেখলে মনে হবে না বাংলাদেশ নামে এমন কোনো রাষ্ট্র আছে। এই ওয়েবসাইট ধারণা দেবে ভারতের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং বাংলাদেশ ভারতের একটি করদ রাজ্য। দেশের ব্যাপক জনসাধারণ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দিতে চাইছে। কেবল ভারতীয় এজেন্টদের জন্য তারা পেরে উঠছে না। এই ওয়েবসাইট দেখলে মনে হবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মতো কোনো সামরিক জান্তা বাহিনী বা স্বৈরাচারী কোনো শাসকের দ্বারা পদদলিত একটি দেশ। সাইটটিতে পিডিএফ ফরম্যাটে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অনেকগুলো পুস্তিকা ও বই (ই বুক) যুক্ত আছে। কয়েকটি বইয়ের নাম হচ্ছে, ‘৭১-এর আত্মঘাতের ইতিহাস’, ‘একাত্তরের স্মৃতি’, ‘আমি আলবদর বলছি’, ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের ইতিহাস’, ‘মিথ অব থ্রি মিলিয়ন’, ‘ওয়েস্টেস অব টাইম’, ‘পেট্রিয়ট-ট্রেইটর কোশ্চেন’, ‘ব্লাড এ্যান্ড টিয়ারস’ প্রভৃতি। এই লেখাগুলো সরাসরি ডাউনলোড করার সুযোগ রয়েছে। সাইটটিতে ঢুকলে প্রথমেই দেখা যায় একটি বইয়ের অংশবিশেষ শিরোনামসহ তুলে ধরা হয়েছে। বইটির নাম হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ : মারাত্মক অপপ্রচারণা, ষড়যন্ত্র ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের শিকার’। লিখেছেন এম টি হোসেন। লেখকের নামের নিচেই হুবহু বইটির কিছু অংশ তুলে দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে এরকম- ‘‘পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার যে প্রক্রিয়া ১৯৭১ সালে পূর্ণতা লাভ করে তার স্থপতি-কারিগর হচ্ছে ভারত। নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের জন্মলাভের পরপরই ভারতীয় সংবাদপত্র এই মর্মে এক বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা শুরু করে যে, পূর্ব পাকিস্তান হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের ‘কলোনি’ এবং উক্ত প্রচারণায় এটাও বলা হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানকে কেবল নিষ্ঠুর রাজনৈতিক শোষণই নয়, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও শোষণ করা হচ্ছে। ঐ বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণাকে আরো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলার জন্যে সেই সময়কার পূর্ব পাকিস্তানের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরূপী ভারতীয় চর অতি উৎসাহের সঙ্গে উঠেপড়ে লাগে এবং সে কাজে তারা বছরের পর বছর থেকে লেগে থাকে।’’
এই সাইটটিতে পাওয়া যাচ্ছে ‘আমি আলবদর বলছি’ নামক একটি বই। লেখক কে এম আমিনুল হক। সাইটটিতে লেখকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘৭১-এর উত্তাল সময়গুলো এসে যাওয়ায় তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সম্ভব হয়নি। তিনি সে সময় পাকিস্তানকে অনিবার্য ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য বিবেকের তাড়নায় সক্রিয় অবস্থান নেন। ’৭১-এর ডিসেম্বরে তাকে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। ধারাবাহিক জুলুম-নির্যাতন ও কারাদণ্ড পরিণত হয় তার ভাগ্যলিপিতে।’
সাধারণ ইন্টারনেট ভ্রমণকারীরা অনেকেই এই সাইটে ঢুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশে কিভাবে এ ধরনের একটি ওয়েবসাইট চলতে পারে? ১৯ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ : মারাত্মক অপপ্রচারণা, ষড়যন্ত্র ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের শিকার’ বইটি পড়ে অনেস্ট স্পিকার নামের একজন লিখেছেন ‘কেন এই মিথ্যাচার! কেন অবাঙালিদের জন্য এত কান্না?’ ‘ভাষা আন্দোলনের নাশকতা’ বইটি লিখেছেন ড. ফিরোজ মাহবুব কামাল। ২৫ মার্চ এটি পড়ে প্রতিক্রিয়ায় সাইমুম পারভেজ লেখেন ‘এই লেখাটিই এই লেখকের সবচেয়ে বড় শত্রু। এই লেখাটি পড়লেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও ভাষা আন্দোলন যে কতটা প্রয়োজনীয় ও দরকারি তা স্পষ্ট বোঝা যায়। শুধু পড়ার সময় নিজের জ্ঞানের সঙ্গে যাচাই করে নিলেই হয়।’ ‘একাত্তরে নারীধর্ষণ ও সত্যধর্ষণ’ বইটিও লিখেছেন ড. ফিরোজ মাহবুব কামাল। গত ১৭ ডিসেম্বর এটি পড়ে মিলন নামের একজন লেখেন ‘আপনার লেখা পড়ে বুঝলাম আপনি বাংলাদেশের চাইতে পাকিস্তানের ইতিহাস বিষয়ে খুব জানেন। আপনি খাঁটি জামাতি রাজাকার।’ সাধারণ মানুষ এভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও সরকারের এদিকে কোনো চোখ নেই।
ব্লগ ও ফোরাম
ওয়েবসাইটের মতো বিভিন্ন ব্লগেও চলছে দেশ, সরকার ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা। ওয়েবসাইটের সঙ্গে ব্লগের পার্থক্য হলো কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকলে একজন তা দেখা এবং মন্তব্য করার সুযোগ পান। কিন্তু ব্লগ বা ফোরামে মন্তব্য করার পাশাপাশি একজন নিজেও লেখা দিতে পারেন। প্রযুক্তির এই সুযোগকে বেশ সুচারুভাবে কাজে লাগাচ্ছে জামায়াত-শিবিরপন্থিরা।
- আইডি ফোরাম
এই ফোরামটিতে মূলত ধর্মীয় আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি দেশের চলমান বিভিন্ন ঘটনা নিয়েও বিভিন্ন লেখা দেয়া হয়। ফোরামটির নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ৭৫৫ জন। এই ফোরামে এসেছে এমন কিছু লেখা হচ্ছে, ‘সকল আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ একাত্ম হয়েও জামায়াত আজ দেশবিরোধী’, ‘পিলখানা! ভুলে যেতে বসা একটি অমীমাংসিত সন্দেহ’, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পথে আসল বাধাটা কোথায়?’ প্রভৃতি। এই ফোরামে আশরাফ নামের একজন ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার : জামায়াতকে বেকায়দায় ফেলাই টার্গেট’ শীর্ষক একটি লেখা দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘১২ বছর পর আবার যুদ্ধাপরাধের বিচারের জিগির তোলা হয়েছে। প্রতিবার প্রতিদিন আওয়ামী নিয়ন্ত্রিত ডজনখানেক দৈনিক পত্রিকা এবং অর্ধডজন টেলিভিশন নিয়মিতভাবে জামায়াত নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন করে যাবে। এসবের উত্তরে নেতারা তাদের সমর্থনে যেসব কথা বলবেন, যেসব তথ্যপ্রমাণ হাজির করবেন সেগুলো আওয়ামী নিয়ন্ত্রিত প্রিন্ট এবং ইলেক্টনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ ব্ল্যাক আউট করবে।’
এর প্রতিক্রিয়ায় আবূসামীহা নামের একজন লিখেছেন, ‘মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা কোনো আইনেই অপরাধ নয়। বরং প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সে দেশের আইনের বিরুদ্ধে অপরাধ। জামা’য়াতের কোনো নেতাই স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার পর এর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কোনো ভূমিকা গ্রহন করেননি। সে হিসেবে তাদেরকে কোনোভাবেই দোষী করা চলে না। ...যুদ্ধাপরাধ করেছে যেমন কিছু রাজাকার ও পাকিস্তানি সৈন্য, ঠিক তেমনি যুদ্ধাপরাধ করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই। বাঙালি বেসামরিক লোকজন হত্যা ও ধর্ষণ যেমন যুদ্ধাপরাধ ঠিক তেমনি বিহারি বেসামরিক লোকজন হত্যা ও ধর্ষণও যুদ্ধাপরাধ।
আজমেরী নামের আরেকজন লিখেছেন ‘শেখ হাসিনার বেয়াই (বর্তমান মন্ত্রী) ছিলেন ফরিদপুরের শান্তি কমিটির নেতা। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা সাবের হোসেন চৌধুরীর পিতা ছিলেন রাজধানী ঢাকার শান্তি কমিটির নেতা। বার বার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংগ্রামী সভাপতি মেয়র হানিফের শ্বশুর মাজেদ সরদার একাত্তরে পুরান ঢাকার একচ্ছত্র অধিপতি ও নেতা ছিলেন। শুধু ঢাকা মহানগরী বা কেন্দ্রীয় নেতা নয়, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতে ছিলেন।’
ফোরামটির বিভিন্ন লেখা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিরা একত্রিত হচ্ছে। ফোরামটির প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন ত্রিভুজ নামের একজন। নিজেকে তিনি এ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এই ফোরামটি ছাড়াও প্রথম আলো ব্লগ, সামহোয়্যারইনব্লগ এবং ফেসবুকে লেখালেখি করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি একজন মাঝারি মানের আইটি বিশেষজ্ঞ। শাবাকা সফট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জড়িত আছেন। তার নিজস্ব একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে। ইন্টারনেটে তার কয়েকটি কিরণ রয়েছে। যেমন,
http://trivuz.com, http://trivuz.blogspot.com/, http://www.facebook.com/trivuz, Click This Link Click This Link এবং http://prothom-aloblog.com/profile/trivuz আইডি ফোরামের জন্য তিনি ফেসবুকে একটি পাতা এবং একটি দল খুলেছেন। রোববার দুপুর পর্যন্ত পাতাটি ৭০০ জন পছন্দ করেছেন এবং দলটির সদস্য ছিল ১১৪৫ জন। দলটির আলোচনাস্থলে (ডিসকাশন বোর্ড) ’৭২ এর সংবিধান ফিরছে : আপনি কি সমর্থন করেন শীর্ষক একটি বিষয় (টপিক) ছিল। এতে দল নির্মাতা ত্রিভুজ মন্তব্য করেছেন, ‘তাদেরকে এটা করতে দিন এবং দেখেন কি ঘটে.. আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ থেকে চিরতরে মুছে যাবে...।’ ত্রিভুজ একযোগে ফেসবুক , আইডি বাংলা ও প্রথম আলো ব্লগ ও সামহোয়্যারইনব্লগে ‘আল-কায়েদা বনাম বুশ ও জেএমবি বনাম হাসিনা’ শিরোনামে একটি লেখা দিয়েছেন। তাতে তিনি জেএমবি সদস্য জাবেদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন যে, ‘জাবেদ আদালতকে আরো বলেন, ‘‘সারাদেশে যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তা বন্ধ হবে না।”... তার মানে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, পিলখানার ঘটনা সবকিছুর দায় জেএমবি স্বেচ্ছায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিল? আওয়ামী লীগের গত কয়েক সপ্তাহের প্রচারণাগুলোকে হালাল করতে? উল্লেখ্য, পিলখানার ঘটনার তদন্তকারীরা দুইদিন আগেও বলেছে এই ঘটনায় তারা জেএমবির সংশ্লিষ্টতা পায়নি। এমতাবস্থায় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের জেএমবি কানেকশন সম্পর্কিত বক্তব্যগুলোকে হালাল করার এর চাইতে আর উৎকৃষ্ট পদ্ধতি কী হতে পারে?’
এই লেখাটিতে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে চন্দন নামের একজন বলেছেন, ‘জেএমবি আসলে ভারত ইসরাইল ও আওয়ামী লীগ এর জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রজেক্ট তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য এই ধারাটি সৃষ্টি করেছে।’ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ নামধারী একজন বলেছেন, ‘জেএমবি = জয় মহাভারত। জেএমবির প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ড ভারত ও তার তাঁবেদার আ’লীগের ফেভারে গেছে।’ রাজনীতিক বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের জঙ্গি কানেকশনের ব্যাপারে যে কোনো তথ্যের জন্য যুবলীগ নেতা ও হুইপ মীর্জা আযমের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
- সোনার বাংলাদেশ ব্লগ
এই ব্লগটির মূলমন্ত্র হিসেবে বলা হয়েছে ‘সকল মতের মিলনমেলা’। ব্লগটি পুরোপুরি জামায়াত-শিবিরপন্থিদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ভিন্ন মতাবলম্বীরা কেউ কেউ থাকলেও তারা একেবারেই কোণঠাসা। দুষ্টু মেয়ে নামধারী একজন ভিন্ন মতাবলম্বী ‘জামায়াত-শিবির সম্পর্কে ১০১টি প্রশ্ন (প্রশ্ন-১)’ শীর্ষক একটি লেখা দিয়েছেন ২০ আগস্ট। লেখাটি ৯৯৬ বার পঠিত হয়েছে। মন্তব্য এসেছে ৬৬ টি। ২৫ জন লেখাটি পছন্দ করেছেন। বিরোধিতা করেছেন ৩৮ জন। ১৮ নবেম্বর রোদেলা নামের একজন লিখেছেন ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদমুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রত্যাশায় বাঙ্গালী জাতির ঈদ উদযাপন’ শীর্ষক একটি লেখা। এটি ৪৪০ বার পঠিত হয়েছে। ৯৭টি মন্তব্য এসেছে। ৫ জন লেখাটি পছন্দ করেছেন। বিরোধিতা করেছেন ৪৫ জন। এতে লেখিকা লিখেছেন ‘মাইনাসের পরিমাণ দেখে মনে হয় দেশে তালেবানপন্থী জামাতিদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিষয়টা এলার্মিং। দেশে দারিদ্র্য বাড়ার কারণে তালেবানপন্থী জামায়াতিদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।’ নিরীহ এই লেখাটি তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। ১৮ নবেম্বর তিতুমীর নামের একজন লিখেছেন, ‘মহাত্মা গান্ধী লিখেছেন : ইশ আমার ছেঁড়া জুতা জোড়া কিছুদিন আগে ফেলে দিয়েছি, রাখলে আজ কাজে লাগত... দুঃখিত, প্রগতিশীল ভদ্রমহিলার জন্য কিছু করতে না পেরে।’ একই দিনে পঁচাত্তরের হাতিয়ার নামধারী একজন লিখেছেন, ‘১৯৭১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী জঙ্গিরা বাংলার জনগণের ওপর চালায় তাণ্ডবলীলা।’ ১৯ নবেম্বর পঁচাত্তরের হাতিয়ার আবার লিখেছেন ‘আওয়ামীদের কাছ থেকে এ ধরনের কল্পকাহিনী অনেক শুনেছি। ৭৫-এর আগে অবস্থা এখন খারাপ ছিল যে আওয়ামীদের মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল বিপ্লবীরা। জনগণ বিপ্লবীদের জন্য দোয়া করছিল। শুকরানা নামাজ আদায় করেছিল।’ ২২ নবেম্বর সুমাইয়া জামান নামের একজন দাবি করেছেন ‘আমি একজন মুসলিম মৌলবাদী।’ ২২ নবেম্বর শান্তিপ্রিয় লিখেছেন, ‘আরে বিডিয়ার মেরে বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে, শেখ হাসিনা। এত দিনে এই গোমর ফাঁক হয়ে যেত, যদি মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার না করা হতো।’
২৪ নবেম্বর রাতে এ্যাডভেঞ্চারাস ভয়েজ নামের একজন লিখেছেন ‘যে সকল কারণে জামায়াত শিবিরকে ভালো পাই : একজন থার্ড পার্সনের একটি বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক একটি লেখা। এটি ছিল জামায়াত শিবিরের গুণকীর্তনমূলক একটি রচনা। লেখাটি ৩৯৮ বার পঠিত হয়েছে। ৫৪টি মন্তব্য এসেছে। ৩১ জন লেখাটি পছন্দ করেছেন। বিরোধিতা করেছেন মাত্র ৮ জন। ২১ নবেম্বর রাতে এ্যাডভেঞ্চারাস ভয়েজ নামধারী ব্যক্তিটি ‘খালেদা হাসিনা নিজামী : একটি আধুনিক এবং সত্যনিষ্ঠ বিশ্লেষণ’ শীর্ষক একটি লেখা দিয়েছেন। এটি ৫৯৬ বার পঠিত হয়েছে। ৯১টি মন্তব্য এসেছে। ৩২ জন লেখাটি পছন্দ করেছেন। বিরোধিতা করেছেন মাত্র ৯ জন। পছন্দ অপছন্দের এই হিসেব দেখলে বোঝা যায় ব্লগটি সম্পূর্ণভাবে জামায়াত-শিবিরপন্থিরা দখল করে আছে।
- সামহোয়্যারইনব্লগ
এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্লগসাইট হিসেবে স্বীকৃত। এই ব্লগটিতে সব মত-পথের লোকই লেখালেখি করেন। তবে সাম্প্রতিককালে এই ব্লগটির বিরুদ্ধে শিবির তোষণের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে প্রকাশ, এই ব্লগের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক এবং বর্তমান বেশ কয়েকজন শিবিরকর্মী রয়েছেন। রোহান নামের একজন ব্লগ সদস্য তার নিজের এ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘ছাগু তোষণ নীতি নির্ভর মডারেশন প্রক্রিয়াকে ধিক্কার জানাই। ব্লগের এক কোণায় জেনোসাইড বাংলাদেশের লোগো ঝুলিয়ে ছাগু তোষণ নীতির নামে ভণ্ডামি বন্ধ করুন... নইলে এই মডারেশন নীতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার নাটক বন্ধ করুন।’ এখানে ছাগু উপাধিতে জামায়াত-শিবিরকে বোঝানো হচ্ছে।
এই ব্লগে ১৯ জানুয়ারি দুপুরে বোবাবৃক্ষ নামের একজন ‘ইসলামী ছাত্র শিবিরের সপক্ষে ব্লগিং। সঙ্গে শিবের গীত বোনাস’ শীর্ষক একটি লেখা দিয়েছেন। এতে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কয়েকজন কর্মী (যারা আবার সামহোয়্যারের মহামান্য সদস্য) একাগ্রচিত্তে বসে প্রতিটি লেখার কমেন্টেস এর ঘরে একটা অতি সুন্দর নূরানী চেহারার দাওয়াতপত্র সেটে দিচ্ছেÑ শিবিরের সম্মেলন লাইভ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে...। কেউ কেউ ক্ষিপ্ত হয়ে শিবিরকে গালাগালি করতে গিয়ে ব্যান পর্যন্ত খেয়েছে।’ এ লেখা থেকেও এই ব্লগের কর্তৃপক্ষের শিবির তোষণের প্রমাণ মেলে।
১৫ নবেম্বর রাতে ওবায়েদ ‘আইএসপিআরের পরিচালক কার লিখে দেয়া লেখাগুলো পড়লেন?’ শীর্ষক একটি লেখা লিখেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘উনি যেন হাসিনার লিখে দেয়া লেখা পড়ছেন এবং মাঝে মাঝে ভুলও করেছেন....। কিন্তু এ নিয়ে কোনো সুশীলকে প্রশ্ন তুলতে দেখলাম না।’ লেখাটি ২৩৯ বার পঠিত হয়েছে। মন্তব্য এসেছে ৯টি। লেখাটি ১৫ জনের ভালো লেগেছে, ০ জনের ভালো লাগেনি। ‘যুদ্ধাপরাধ কি, কারা যুদ্ধাপরাধী?’ শিরোনামে আবূসামীহা একটি লেখা লিখেছেন ৫ নবেম্বর। লেখাটি ১৭৬৮ বার পঠিত হয়েছে। এতে ৮৭টি মন্তব্য এসেছে। লেখাটি ৬৪ জনের ভালো লেগেছে, ১৫ জনের ভালো লাগেনি। এখানেও পছন্দ-অপছন্দের হিসেবে জামায়াত-শিবিরপন্থিরা এগিয়ে আছে।
ফেসবুক
ব্লগের চেয়ে ফেসবুক প্রযুক্তিগতভাবে অনেক এগিয়ে। এটি সাধারণ মানুষের সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। জামায়াত-শিবিরপন্থিরা এর যথেচ্ছ ব্যবহার শুরু করেছেন। মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে দেশবিরোধী নানা প্রচারণা। প্রতিদিন ব্যক্তি নামে অসংখ্য ভুয়া এ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে এসব প্রচারণা চালানোর জন্য। তৈরি করা হচ্ছে দল ও পাতা। এসব দল ও পাতায় আসছে একের পর এক মন্তব্য, প্রকাশ হচ্ছে লেখা ও ছবি, চলছে আলোচনা। ব্যক্তিগত ভুয়া এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চলছে কথোপকথন। এর মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে ভুল তথ্য। ছড়ানো হচ্ছে হিংসা।
ক্স নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদ মুক্তি আন্দোলন
এটি ফেসবুকের একটি পাতা। রোববার দুপুর পর্যন্ত ২৮১৫ জন পাতাটি পছন্দ করেছেন। পাতাটিতে ১৯টি এ্যালবাম, ১২টি ভিডিও এবং ২৯টি লিঙ্ক রয়েছে। আলোচনাস্থলে তিনটি বিষয়ে মোট ৩০টি মন্তব্য রয়েছে। একটিতে এটিএম কামরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘আন্দোলন কখন শুরু হবে? হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আমাদের প্রিয় নেতাদের মুক্তি করতে হবে। দ্রুত করতে হবে। ধৈর্যের সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আর কত ধৈর্য ধরতে হবে?’ ফেসবুক এ্যাকাউন্টে এটিএম কামরুজ্জামানের দেয়া তথ্যমতে, তিনি দিনাজপুর হাইস্কুলের ছাত্র। পাতাটি ‘ফ্রি জামায়াত লিডারস’ এর কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
- উই হেট বাকশাল আওয়ামী লীগ
এটি একটি দল। এর সদস্য ৮০৯ জন। এতে মোট ১০২টি ছবি সংযোজিত হয়েছে। দলটি তৈরিতে ছিলেন ১. এবিএম মামুন, ২. বন্ধু বান্ধব, ৩. বাংলার চোখ (ফোকাস বাংলা)। এদের কারো কোনো তথ্য উন্মুক্ত নয়। ২৮ মে রাত ১টা ৫৫ মিনিটে আরেফিন শাহ নামে একজন এই দলটির সকল সদস্যদের লক্ষ্য করে লিখেছেন, ‘চৌদ্দশত মানুষের বিনিময়ে চৌদ্দ কোটি মানুষের সুখ চাই -অর্থাৎ চৌদ্দ শত আওয়ামী শয়তান লীগ-এর শয়তানদের হত্যার বিনিময়ে এ দেশের চৌদ্দ কোটি মানুষ সুখ পাবে। (বিশ্বাস করুন আর নাই করুন)। তার এই বক্তব্য আবার চারজন ব্যক্তি পছন্দ করেছেন। এই ব্যক্তি ১৪ মে বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটে আরো লিখেছেন, ‘যুগে যুগে শয়তানের সেøাগান আপডেট হয়। শয়তানের নতুন নতুন দলের সৃষ্টি হয়। বাংলার বুকে শয়তান নিশান উড়িয়েছে আওয়ামী লীগ-এর হাতে।’
- Digitalbangladesh ডিজিটাল বাংলাদেশ
এটি একটি ব্যক্তি এ্যাকাউন্ট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এর শিরোনামে লেখা হয়েছে এটি একটি ‘বাকশাল ও ডিজিটালবিরোধী সংগঠন’। এই এ্যাকাউন্টধারী ৩,৩৪২ জন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন। এ্যাকাউন্টটিতে ৫টি এ্যালবাম রয়েছে। এ্যালবামে কিছু শব্দচিত্র রয়েছে। যাতে লেখা আছে ‘১৫ই আগস্ট বাংলার ফেরাউন মুজিবের পতনদিবস’, ‘শেখ মুজিবের খলচরিত্র জানতে যে বইগুলো সহযোগিতা করবে’, ‘আওয়ামী জাহেলিয়াত, ১৯৭১-এ শেখ হাসিনা পাকবাহিনীর টাকা খেয়েছেন’ এবং আরো রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অনেকগুলো বিকৃত প্রতিচিত্র
- বাংলার চোখ (Focus Bangla)
এটি একটি ব্যক্তি এ্যাকাউন্ট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এই এ্যাকাউন্টধারী ৭৪৫ জন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন। এ্যাকাউন্টটিতে ৫টি এ্যালবামে মোট ৪৫৮টি ছবি রয়েছে। এর মধ্যে একটি এ্যালবামের নাম দেয়া হয়েছে ডিফিকাল্ট বাংলাদেশ ২০২১। এর মূল দেয়ালে মন্তব্য নয় আছে শুধু ছবি। ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে আপত্তিকর নানা সংবাদ দিয়ে।
- বাকশাল যখন ডিজিটাল
একটি ব্যক্তি এ্যাকাউন্ট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এই এ্যাকাউন্টধারী ১৩২৬ জন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন। এ্যাকাউন্টটিতে ৫টি এ্যালবামে মোট ২৫৫টি ছবি রয়েছে। এর মধ্যে একটি এ্যালবামের নাম দেয়া হয়েছে ডিফিকাল্ট বাংলাদেশ ২০২১। এটিরও মূল দেয়ালে মন্তব্য নয় আছে শুধু আপত্তিকর নানা শব্দচিত্র।
- Digitalbangladesh ডিজিটাল বাংলাদেশ
এটি ফেসবুকের একটি পাতা। রোববার দুপুর পর্যন্ত ১৩২১৩ জন পাতাটি পছন্দ করেছেন। পাতাটিতে ৬০ লিঙ্ক, ২৯ ভিডিও এবং ৪ এ্যালবাম রয়েছে। পাতাটির দেয়ালে লেখা আছে, ‘শহীদ হতে কে রাজি আয়?’, ‘শেখ হাসিনা এক নির্লজ্জ শয়তানির নাম। এই শয়তানি জাতির কলঙ্ক। জাতি কখন মুক্তি পাবে এই পশুদের হাত থেকে? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন?।’ এর পাশাপাশি পাতাটিতে আরো আছে জামায়াত-শিবিরের নেতাদের সাক্ষাৎকার ও সাঈদীর ওয়াজের ভিডিও।
- ফাইট এগেইনস্ট হাসিনা এ্যান্ড অল ইন্ডিয়ান এজেন্ট টু সেভ বাংলাদেশ
এটি ফেসবুকের একটি দল। এর শিরোনামে লেখা হয়েছে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তাকে রক্ষা করা কঠিন। দলটির সদস্য সংখ্যা ৭০৯ জন। এতে ৫৩টি ছবি, ১৩টি ভিডিও এবং ৯৬টি লিঙ্ক রয়েছে।
- শেখ মুজিবুর রহমান : ফাদার অব পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ
এটি ফেসবুকে সদ্য নির্মিত একটি পাতা। ৩১ জন এটি পছন্দ করেছেন। এর দেয়ালে লেখা হয়েছে, ‘কোনো মুজীববাদীকে দেখলেই আঙ্গুল তুলে বলুন : তুই বাকশালী’।
- দুর্লভ ছবি : সকল আন্দোলন সংগ্রামে একাত্ম জামায়াত ও আওয়ামী লীগ !!!
এটি ফেসবুকের একটি পাতা। ২২৯২ জন পাতাটি পছন্দ করেছেন। এতে ১৬টি এ্যালবাম রয়েছে। এর দেয়ালে লেখা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জনপ্রতিনিধি হয়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড সাজেদা চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। তারা কেউ ছিলেন এমএনএ (জাতীয় পরিষদ সদস্য), আবার কেউ ছিলেন এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য)। হানাদার বাহিনীকে তারা সবধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন। দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গেও তাদের কয়েকজন যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।’
সরকার নিশ্চুপ কেন?
ইন্টারনেটে এ ধরনের প্রচারণা চলছে অথচ সরকার নিশ্চুপ। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আলামত দেখা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, ‘তারা এগুলো করছে কারণ তারা কাজের লোক। সব যুগেই আমরা দেখেছি অপশক্তি, শয়তানের শক্তি একটু বেশি হয়। ছদ্মবেশী শয়তানরা এদের সাহায্য করে। জাতিকে রক্ষা করা তাদের কোনো কাজ নয়। তাদের কাজ বাড়ি-গাড়ি রক্ষা করা। আজ পর্যন্ত এরা অনেক কিছু করেছে কিন্তু বেশিদূর এগুতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের তারা রক্ষার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। এখন তারা আবার নতুন মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। এ ধরনের দেশ ও জাতিবিরোধী প্রচারণা যারা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আমরা চাচ্ছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা দ্রুত শেষ করতে। এটা করতে পারলেই সব দাপাদাপি শেষ হয়ে যাবে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




