২৫ মার্চ ১৯৭১, আজিমপুর, ঢাকা
রাতের আধারে আমার নানাভাইকে স্বপরিবারে পালিয়ে আসতে হয় । পাকিস্তানি মিলিটারিরা জ্বালিয়ে দেয় সব কিছু। অজানা কিছু মানুষ দরজায় দরজায় গিয়ে সবাইকে সাবধান হতে ও নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে না বললে হয়ত সে রাতেই প্রান হারাতে হতো সবার, আমার মাকেও। তাই হয়তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নিজের অস্তিত্বের পিছনে একটা যোগসূত্র খুজে পাই আমি।
ঢাকা থেকে নিরাপদে আসার জন্য সবজির ট্রলারের কাঠের খাচের নিচে লুকাতে হয়েছিল সবাইকে। ফাকা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল নদীতে ভেসে থাকা লাশগুলো। মাঝিকে তলবও করেছিল মিলিটারি। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়, তল্লাশি হয়নি। বেচে যায় সবাই। এই মাঝি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটধারি না, তার যোগ্য/অযোগ্য সন্তান দেশ চালাবে নিজের যোগ্যতায়। গৌরবময় ভাতা/কোটার আশীর্বাদে না।
যুদ্ধের বাকি অধিকাংশ সময় সবাই ছিল মানিকগঞ্জের ইব্রাহিমপুরে। এখন সেটা পদ্মায় বিলীন হয়ে গিয়েছে। মা'র দাদু মাঝরাতে উঠে বড় হাড়িতে খিচুড়ি রান্না করতো। দলবেধে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকা করে এসে খাওয়া-দাওয়া করে সূর্যোদয়ের আগেই আবার চলে যেতো।
দেশ শুধু বারুদ দিয়ে স্বাধীন হয়নি। হয়েছে এমন সাহসি মানুষদের সহযোগিতাতেও। এরা নিজের সন্তানদের জন্য আসন চায়নি, নিজের প্রাণটাও যেন এখানে তুচ্ছ। এরা চেয়েছিল ন্যায়, সবার জন্য।
ঠিক যেমন পলাশীর যুদ্ধ বা ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা পাওয়াকে আমাদের প্রজন্ম এতটা সিরিয়াসলি চিন্তা করে না। হয়তো একটা সময় এই দিনটা শুধুই সোশাল মিডিয়ার হ্যাশট্যাগ, ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন আর পলিটিকাল ডিসপ্লের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৫৩