[১]
কোনটা বেশি হতাশাজনক? পুলিশ-ডাক্তারের দাম্ভিকতার বিচ্ছিন্ন ঘটনা? নাকি ন্যায্য আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৬জন শ্রমিকের লাশ? বাঁশখালীর ঘটনা সংবাদমাধ্যমের কোন চিপার মধ্যে পড়ে থাকে। লাশের পরিচয়ে ঢাবির স্টুডেন্ট থাকলে পুরো ব্যাপারটাই ভিন্ন হয়ে যেতো। আমরা পেশাকে গ্লোরিফাই করার কথা বলছি; ফেয়ার এনাফ। অথচ পুরো একটা ক্লাসকে আমরা দিনের আলোতেও চোখে দেখি না। আমরা নিজেরাও না; অনেকাংশে নীতিনির্ধারকরাও না।
[২]
প্রশাসনে বুদ্ধিদীপ্ত ও বিনয়ী মানুষের অভাব নাই। নাহলে দেশের যা উন্নয়ন হয়েছে তাও কোনভাবেই সম্ভব হত না। তবে প্রশাসনের কালচারে উদ্ভাবনবিমুখিতাও লক্ষণীয়; যার কারনে বারবার একই ভুল করে। ভোগান্তির আর চরম সমালোচনার পরে গিয়ে নীতিতে সংশোধন আসে । নীতিনির্ধারণের সময় রিসোর্স এর সীমাবদ্ধতা থাকবে। দেশের জনগণের সহজাত ত্রুটিপূর্ণ স্বভাব বুঝতে হবে। এগুলো আমলে এনেই কার্যকরী পলিসি আনতে হবে। তাই আমার দৃষ্টিতে নীতিনির্ধারণ জিনিসটা অনেক জটিল; এখানে Outside the box চিন্তা করা খুব জরুরি। বিশেষ করে আমাদের মত দেশে। এই চ্যালেঞ্জ এর জন্যই দেশের সবচেয়ে মেধাবী মানুষকে আমরা প্রশাসনে চাই।
[৩]
লকডাউনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ যাতে ঘরের বাইরে না যায়। এই সিস্টেমে সংক্রামণ তখনই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব; যখন অন্তত একমাস এভাবে থাকা সম্ভব হবে। ভিড়ের মধ্যে গিয়ে প্রয়োজনীয় বাজার/মেডিসিন/ব্যাংকিং করার সুযোগ দিলেন, বিশেষ ইন্ডাস্ট্রি সচল রাখলেন; এখানে কি গ্যারান্টি দেয়া সম্ভব যে সংক্রামণ হবে না? যদি না হয় সিলেক্টিভ পলিসি দিয়ে লাভ কি?
[৪]
আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। গতবছরের অভিজ্ঞতা বলছে এক শ্রেণীর মানুষ আছে যাদের হাড্ডি ভাঙলেও প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য বের হবে। আবার অনেকে অযথাই বের হবে। আবার সরকারের কাছে এক্সটেনসিভ ডেটা নাই কাকে প্রণোদনার অধীনে আনা যায় সে ব্যাপারে; আর সরকারি সাপ্লাইতেও নেই ভারসাম্য। ভারসাম্য না আনার পিছনে কারণ দুইটা। প্রথমত, সরকারের সীমাবদ্ধতা; কারণ দেশব্যাপী কার্যকর করা যাবে এমন সিস্টেম প্লেসমেন্ট ছিলই না। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রযন্ত্রের অধীনে এমন এক শ্রেণী আছে যারা লুটেপুটে খাবে। মানে লকডাউন দিয়ে সরকারি প্রণোদনা দেয়াটা অফলপ্রসূ। মানুষের ভোগান্তি দূর করা সম্ভব না এভাবে।
করোনার আগে দেশে ২৪% ছিল দারিদ্রসীমার নিচে ছিল; এখন সেটা ৪০% [ সূত্রঃ প্রথম আলো]। সরকারের কি এইসবের সঠিক হিসেব আছে? আছে দুয়ারে গিয়ে প্রণোদনার ক্ষমতা?
[৫]
আমার দৃষ্টিতে এটা একটা Sophie's choice সিচুয়েশন। হ্যাঁ, লকডাউন খুলে দিলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তবে সরকারের সেন্ট্রালাইজ সলিউশন যেখানে মৌলিকভাবে অফলপ্রসূ, তার মানে সংক্রামণ এমনিতেও বাড়বে। আমাদের Decentralized ভাবেই চিন্তা করতে হবে। দেশের অর্থনীতি সচল থাকলে কমপক্ষে প্রতিটা মানুষ নিজের দিক থেকে ভোগান্তি দূর করার সুযোগ পাবে।
দীর্ঘদিন প্রণোদনার জন্য রাষ্ট্রের যে পরিমাণ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন তার তুলনায় অনেক কম প্রয়োজন মেডিক্যাল সাপ্লাইজ নিশ্চিত করতে। এখানেও ত্রুটি থাকবে; তবে ভোগান্তির মাত্রা ভগ্নাংশমাত্র। দেশের কোটি কোটি মানুষের ভোগান্তি, অনাহার, আর অনিশ্চয়তা কমে আসবে।
[৬]
কামনা করি করোনায় যেন আমার পরিবারের কোন খারাপ কিছু না হউক। কিন্তু আমরা নিজের পরিবারের সচ্ছলতা আর সক্ষমতায় চিন্তায় যেন দেশের ৪০% মানুষের দুর্দশার বেলায় বধির না হয়ে যাই। এতটা স্বার্থপর না হই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৪২