এই পড়তি বেলার আয়নায় নিজেকেই অস্পষ্ট দেখি এক ‘পড়তি চোখে’।
চশমা হলে কাছের সব কিছুই ঠিকঠাক,
খালি চোখে শুধুই দূরের জিনিস খুব স্পষ্ট দেখি আজকাল!
আজ এই পড়তি বেলায় মুখে কথা কম বলি,
সব চিৎকার শব্দহীন থাকে শুধুই বুকে।
মানিয়ে নিই, সব মানিয়ে নিই।
-ভালোবাসা আর অবহেলাকে মানিয়ে এক ঘরেই রাখি,
স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নকে বন্ধুর মতো বসিয়ে দেই গল্প করতে।
পাওয়া না-পাওয়ার আক্ষেপ প্রতিদিনই তুলে রাখি আলমারিতে।
বিশ্বাস আর প্রতারণার রঙের পার্থক্য এখন আর চোখে ধরা পরেনা।
পড়তি বেলায় আনমনে শুধু দূর আকাশে তাকালেই স্পষ্ট দেখি,
-সেখানে আমার রংবেরঙের হাহাকার ভাসছে।
আমি সেই হাহাকারগুলো চিনে ফেলি অনায়াসে
শিশুবেলার
-একটা লাল চকলেট, কুলফি আইসক্রীম কিংবা খেলনা গাড়ির হাহাকার।
বালকবেলার
-একটা সাইকেল,
ঈদে নতুন একটা শার্ট অথবা টাকার অভাবে হেটে হেটে প্রতিদিন স্কুলে যাবার হাহাকার,
অথচ তখন প্রায় সব বন্ধুরা রিকশা অথবা গাড়িতে চড়ে স্কুলে আসতো।
কিশোরবেলায়
- ‘ভাড়াটিয়া’ বলে অনেকবার গালি শুনেছিলাম,
এমনকি এক প্রিয় কিশোরির কাছেও, সেই অস্পৃশ্যতার গোপন অপমান।
টাকার অভাবে মহল্লার বন্ধুদের সাথে পিকনিকে যেতে না পেরে তিনদিন ঘরেই লুকিয়েছিলাম অসুস্থতার ভান করে,
সেই লুকানো হাহাকার।
যুবক বয়সের
-হাকাকার আসলে টেরই পাইনি জীবনের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে!
আশ্চর্য, সেই এক দৌড়েই কখন যে পরতি বয়সে চলে আসলাম বুঝিনি!
তবুও না দেখা হাহাকারে অনেকবার বুকেই মরেছি যৌবনে।
সেই মরন এখন টের পাই প্রতি বেলায়
কাছের জিনিস খালি চোখে আর স্পষ্ট দেখিনা।
আয়নায় নিজেকে স্পষ্ট দেখতেও চশমা হাতড়ে বেড়াতে হয়।
পড়তি বেলায় এসে শুধু বেঁচে আছি
-মানিয়ে, শুধুই মানিয়ে।
চেহারায় সুখী সুখী ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
আর সুযোগ পেলেই লুকিয়ে লুকিয়ে
দূর আকাশে ভেসে বেড়ানো হাহাকারের সাথে গল্প করি,
-এই পড়তি বেলার এভাবে বেঁচে থাকাটাকে সহ্য করার জন্য।
—————————————
রশিদ হারুন
কাব্যগ্রন্থ- এই শহরের সব ডাকবাক্স চুরি হয়ে গেছে
২৭/০৬/২০২0
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৩৬