মনোলীনা,
আজ তোমার বিয়ে
অদ্ভুত সুন্দর সাঁজে সেঁজেছে আজ তোমাদের বাড়ি,
তুমি কি পার্লারে গিয়ে সেঁজেছ?
তোমার না সাঁজলেও চলবে,
আমার কাছে তোমাকে বিশ্বসুন্দরীই মনে হয়,
শুধু শুধু বিউটি পার্লারে টাকা নষ্টের কোন মানে হয় না।
আমি ভাবতাম তোমার সাথে আমার একটা প্রেম হয়েছে,
প্রেমটা তোমার দিক থেকে কখনো
হয়েছিলো কিনা
তা এখনো বুঝেই উঠতে পারি নাই!
তুমি আমার কাছে যখন যা চাইতে
একজন ক্রীতদাসের মতো আমি তাই করতাম,
আমি বোধহয় ছিলাম একজন দাস প্রেমিক।
তোমার ফুট ফরমাস খাটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতাম,
তোমাদের বাসার বাজার করে দেওয়া থেকে শুরু করে
বিদূত্যের বিল দেওয়া সবই করেছি এই তিনটি বছর!
অথচ নিজের বাড়ির বিদূত্যের বিল আমি কখনো দেইনি।
তুমি কি জানো?
ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাংকের লাইন দাঁড়িয়ে বিদুৎ বিল দেওয়া
আমার জন্য একটা বিরাট প্রেস্টিজের ব্যাপার।
শুধু তোমার চাওয়ার কাছে
আমার একজীবনের সব প্রেষ্টিজ ডাষ্টবিনে ফেলে দিতাম অনায়াশে,
বিনিময়ে তুমি মাঝে মাঝে
আমাকে দান করতে করুনার হাসি,
শুধু একবার দয়া করে তোমার হাতটুকু ধরতে দিয়েছিলে কিছুক্ষনের জন্য!
একটি চুম্বনের জন্য
আমি ভিখারীর মতো কতোবার যে তোমার দরবারে হাত পেতেছি।
পরের বার দিবে বলে আমাকে সান্ত্বনা দিতে
আর নতুন নতুন ফুট ফরমাস ধরিয়ে দিতে!
আমি কোন প্রশ্ন ছাড়াই গত তিন বছর
একজন দাস প্রেমিকের মত তোমার সেবায় শ্রম দিয়েছি।
মনোলীনা,
আজ তোমার বিয়ে!
বিয়ে করছো মহল্লার সবচেয়ে বড়লোকের একমাত্র ছেলেকে,
বরের যোগ্যতা শুধু বাবা বড়লোক,
তিনি কয়েকটি বাড়ির মালিক,
আমার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা এখানেই
আমরা ভাড়া বাড়িতে থাকি আজীবন,
বাবা একজন সরকারী কেরানী।
আয়নায় নিজের দিকে তাকালে
আমাকে মোটামুটি মানানসই লাগে,
লম্বায় পাঁচ ফিট এগারো
আমি সিউর
তোমার হবু বরের চেয়েও অনেকখানি উচ্চতা বেশি আমার.
অথচ সারাজীবন তোমার ফুট ফরমাস খাটাতে খাটতে আর ভাড়াটিয়া হওয়ার কারনে
আমি আজ উচ্চতায় তোমার বরের চেয়ে অনেক ছোট।
তোমার বিয়ের দিনেও
আমি তোমাদের বাড়ির উল্টোদিকেই দাঁড়িয়ে আছি
একজন দাস প্রেমিকের মতো,
যদি আজও তোমার কোন কাজে ডাক পড়ে।
ধরো,
বিয়ের সাঁজের লাল টিপগুলো হারিয়ে ফেললে,
বর যাত্রীদের জন্য মিষ্টি আনতে ভুলে গেছে তোমার বাবা,
আমাকে বললেই আমি এক দৌঁড়ে নিয়ে আসবো,
যা করতে বলবে তাই করবো।
একজন বড়লোক বাবার এই বাড়িগুলো আমার প্রেমের সাথে চরম বৈষম্য করেছে।
এই বাড়িগুলো তোমাকেও মায়া মমতাহীন একজন স্বৈরাচারী প্রেমিকা বানিয়েছে।
মনোলীনা,
আমার একজীবনের সব প্রেষ্টিজ ডাষ্টবিনে ফেলতে ফেলতে এখন বুঝেছি,
“তুমি একজন বৈষম্যকারী
তোমার প্রেমে বৈষম্য ছিলো”।
—————
রশিদ হারুন
১০/০২/২০২৫
ক্যালগেরি, কানাডা
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


