আজ অফিসে দুইজন জয়েন দিয়েছে। একজন পিওন, একজন সিকিউরিটি গার্ড।এতোটুকু স্বাভাবিক। যেটা অসাধারণ সেটা হলো দুইজন পিতা পুত্র। পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম ছেলেকে পড়ালেখা না করিয়ে এই বয়সে চাকুরী কেন করতে দিচ্ছেন? শান্ত ভাবে উত্তর দিলেন- ক্ষুধার যন্ত্রণায়। বড় ছেলেকে এইচ এস সি পাস করিয়েছেন। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।ছেলে একটা গার্মেন্টস এর ফ্লোর সুপারভাইজার।গার্মেন্টসের এক মেয়ের পাল্লায় পড়ে তাকে বিয়ে করে, তার প্ররোচনায় আলাদা।বৃদ্ধ মা বাবাকে দেখে না। মেয়ের অভাবের সংসার।
তাই এই বয়সে তিনি সিকিউরিটি গার্ড এর কাজ করছেন। সামান্য বেতনে আরেক ছেলে, এক মেয়ে স্ত্রী তিনি নিজে। ঘর ভাড়া, খানা মিলিয়ে সারভাইব করা অসম্ভব। সব কিছুর দাম বাড়তি। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের যেখানে চলতে খবর হয়ে যাচ্ছে সেখানে দরিদ্ররা কতো মানবেতর জীবন যাপন করছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
ছেলেটিকে দেখতে ছোট মনে হলেও ওর বয়স ১৯।সিকিউরিটির মনের অবস্থা বুঝার চিন্তা করলাম। যে বয়সে ছেলেটির পড়ালেখা করার কথা সে বয়সে তিনি যেখানে কর্ম করেন সেখানে কর্ম করবে তার নিজের সন্তান শুধু দারিদ্রতার কারণে। তার সামর্থ্য থাকলে হয়তো ছেলেকে পড়া লেখা করাতেন। কিন্তু বিধিবাম ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। পিতা পুত্র মিলে সারাদিন ডিউটি করে মাস শেষে হাজার বিশেক টাকা রোজগার করবে।তার চোখের সামনে ছেলেটির বয়সি ছেলে মেয়েরা যখন কলেজে পড়া লেখা করতে যায় তার কেমন লাগে! এই সামান্য টাকা দিয়ে থেকে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে ৫ জন মানুষ।
খেটে খাওয়া হালাল রোজগার এর মধ্যে যে বরকত ও শান্তি আছে সে শান্তি অবৈধ ভাবে হওয়া কোটিপতিও পায়না।আমরা লাখ টাকা সেলারি পেয়েও কাভার করতে পারিনা। আর ওরা মাত্র ২০ হাজার দিয়ে কত সুন্দর ভাবে চলে যায়।
গরীবের অফিসে ২ জন খেটে খাওয়া।ছেলেটা নিজেই তার বাবাকে অফিসে চা বানিয়ে খাইয়েছে জয়েনিং এর ১ম দিনই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪০