ব্লগে আমাকে কিছু ব্লগার পছন্দ করেন কিছু ব্লগার অপছন্দ করেন। অবশ্য এতে আমি মহা খুশি। একজন মানুষ কখনই সকলের পছন্দের হতে পারেনা।যে সবাইকে খুশি করে চলে তার মধ্যে বিরাট সমস্যা আছে। সে ফেক ও ডাবল ফেসিং হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আমার প্রতিটি লেখা সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ মানসিকতার লোকদের বিপক্ষে। আমি ৭ জনকে ব্লক করছি সম্প্রতি। কারণ এরা নিজেদের আমার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে নিজেদের সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। না হলে ধর্মান্ধতা সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদের বিপক্ষে লিখলে তাদের জ্বলবে কেন?
কালো বা ফর্সা বলে কিছু নেই।প্রতিজনই মানুষ। গায়ের রঙ কালো হলেই হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই। কনফিডেন্ট লেভেল হাই হলে ও উচ্চ শিক্ষিত হলে একটি কালো রঙ এর মেয়েকেও অতুলনীয় লাগে ছবিটি তার প্রমান। কালো মেয়েদের বিয়েতে পন বেশী দেয়া লাগে। কালো মেয়ে জন্ম দেয়া যেন একটি অপরাধ। ছবিতে মাহি।
অধিকাংশ মৌলবাদী নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে। তারা চায়না ওরা চাকুরী করুক। কয়েকদিন আগে তারেক জিয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট দিলে তাদের শরীক দল জামাতের নোংরা মানসিকতার কর্মীরা গালাগালি শুরু করে, শাহাবাগী বলে তিরস্কার করে। শেষ পর্যন্ত তারেক জিয়ার পেজ থেকে এডমিন পোস্টটি ডিলিট করে জামাতিদের খুশী করে চরম সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহি:প্রকাশ ঘঠায়।এই নোংরা মৌলবাদীরা নারীদের দাসী বানিয়ে রাখতে চায়। তাদের জন্য এই পোস্ট।
রাতে খাবারের পর, বারান্দায় গিয়ে সিগারেট খাচ্ছি, হঠাত দেখি সামনের বিল্ডিং এর রেলিং এ একটা কালো বিড়াল। অন্ধকারে চোখ গুলো জ্বলছে। বউ বললো 'আজকে বিপদ হতে পারে, আয়াতুল কুরসি পড়,কালো বিড়ালে জ্বিন ভর করে। অমঙ্গল হবে।' হেসে উত্তর দিলাম। তুমি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, আধুনিক মেয়ে।এগুলো বিশ্বাস কর? সাদা বা লাল বিড়াল লোকে পছন্দ করে কালো বিড়াল কে অমঙ্গলের প্রতিক মনে করে।কি অদ্ভুত!
ছোট বোন সামিরা খান মাহি ফেসবুকে একটা ভিডিও আপলোড করেছিল। সেখানে সে বলেছে - "অন্যান্য কালারের মত ব্ল্যাক ও একটা কালার, ড্রেস কিনতে গেলে, গাড়ি কিনতে গেলে ব্ল্যাক চুজ করে, অথচ কালো মানুষের ক্ষেত্রে যত সমস্যা! কালোতে কি সমস্যা! কোরান শরীফ এর অক্ষরের কালারও কিন্তু কালো। কালো সাদা দিয়ে মানুষের সৌন্দর্য নির্ধারণ করা বন্ধ হোক '
সৌন্দর্য বলতে কে কি বুঝে আমি জানিনা। আমার কাছে সবচেয়ে বেশী সুন্দর সে, যার সাথে আমি কথা বলতে, আড্ডা দিতে, সিগারেট শেয়ার করতে, মন খারাপের কারণ শেয়ার করতে কমফোর্ট ফীল করি।যার সাথে একান্তই নিজের ব্যাক্তিগত বিষয় গুলো শেয়ার করতে সিকিউর ফীল করি। আমাদের দেশে একজন মানুষকে মূল্যায়ন করা হয় রূপ সৌন্দর্য এবং আর্থিক অবস্থা দিয়ে। অথচ সে পৃথিবীর সেরা মানুষ যার মনে হিংসা নেই। যে স্রষ্টার সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসে। আমাদের দেশের লোকজন গায়ের রঙ কে সৌন্দর্যের নির্ধারক মনে করে। গায়ের রঙ ফর্সা হলে সুন্দর ভাবা হয়, ফর্সা না হলে কালো বলা হয়।কি লোটলোকী কারবার!
"এই যে সুন্দর মানে গায়ের রং সাদা বা ফর্সা হতে হবে, এই ধারণা মূলত এসেছে আমাদের কলোনিয়াল লিগেসি থেকে। কারণ ভিক্টোরিয়ান সৌন্দর্যের যে সংজ্ঞা তাতে গায়ের রং খুব গুরুত্বপূর্ণ। গায়ের রং সাদা হবে, নাক চোখা হতে হবে। চোখ নীল হলে আভিজাত্য আরো বাড়ে। এবং সৌন্দর্যের ধারণার ক্ষেত্রে আমরা কখনো কলোনিয়াল লিগেসি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করিনি, বরং সেটা ক্রমে আরো বিস্তৃত হয়েছে।"
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, "মিশ্র জাতিগোষ্ঠী হবার কারণে এ অঞ্চলের মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য সকলের একই রকম নয়। গায়ের রং এবং উচ্চতার বিচারে যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি অমিল আছে চোখ ও নাকের আকৃতিতেও।আর দ্রাবিড় শংকর জাতি হওয়ার কারণে, এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের গায়ের রং বাদামী বা গাঢ় কালো।প্রথমত সেজন্যই যাদের গায়ের রং উজ্জ্বল মানে যারা দেখতে ফর্সা, তারা শতশত বছর ধরেই সমাজে কদর পেয়ে আসছেন।"
ওহে মৌলবাদী আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ে কালো। যে সমাজ বা দেশ কালো বলে একটি মেয়েকে চরম অপমান করে, তিরস্কার করে, তারা যদি পড়ালেখা করে নিজের পায়ে না দাঁড়ায়, নিজে রোজগার না করব তবে এই দেশের গায়ের রঙ দিয়ে সৌন্দর্য নির্ধারণকারীরা ওদের এত অপমান করবে যে ওরা সহ্য করতে না আত্নহত্যা করতে বাধ্য হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪