somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"টেলিভিশন" সিনেমা - গল্পের সমস্যা (প্রথম পর্ব)

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর সিনেমা ‘টেলিভিশন’ রিলিজ হয়েছে সম্প্রতি সিনেমা হলে। কিছু তরুণ বন্ধুদের উৎসাহে শুক্রবার সকালে দশটায় অর্থাৎ প্রথম দিনের প্রথম শো দেখতে গিয়েছিলাম। আম দর্শকরা ছবিটি কিভাবে নেয়, কি ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখায় জানায় ইত্যাদি জানার সুবিধার দিক চিন্তা ভাবনা করে বন্ধুরা বলাকা হল বেছে নিয়েছিল।
সে হিসাবে যথারীতি সকালে যাওয়া। গিয়ে দেখা গেল টিকেটের চাহিদা এত বেশি যে বলাকা-২ (আগের নাম বিনাকা হলে), তাও ব্যালকনি নয়, নীচতলার টিকেট পাওয়া গেল। সকাল দশটার আগেই হাউসফুল বোর্ডও টাঙানো হয়েছিল দেখেছিলাম। সকাল নয়টার দিকে বাসা থেকে রওয়ানা দেবার সময় ভেবেছিলাম এই কঠিন শৈতপ্রবাহের সকালে নিশ্চয় হলে গিয়ে দেখব ভীড় তেমন নাই। দর্শকেরা হয়ত পরের শোগুলোতে ভীড় করবে। কিন্তু সিনেমা শুরু হবার এক ঘন্টার বেশি আগে পৌঁছে গিয়েও দেখি তরুণ আর তরুণ - অর্থাৎ আমার অনুমান একেবারেই ভুল। সেই আশির দশকের পরে আর বাংলাদেশের সিনেমা হলে যাওয়া হয়নি নানান কারণে। কেবল মাস ছয়েক আগে এক বার বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। যে হিসাবে তরুণ বলছি তাদের জন্ম সেই আশির দশকে। সিনেপ্লেক্সের তুলনায় বলাকা চত্তরে একটা বাড়তি সুবিধা পেয়েছিলাম। লাইনে দাঁড়ানো হবু দর্শক সকলকে সহজেই এক ক্যামেরার চোখে একবারে ধরে দেখে বোঝার একটা সুবিধা ছিল সেখানে। বুঝেছিলাম দর্শকেরা প্রায় সবাই স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ধরণের। নতুন প্রজন্ম। অনুমানে মনে হলো, বড় জোর এর দশ ভাগ হবে তরুণী। একটা প্রাথমিক ভাল লাগাও কাজ করেছিল তাদের সকলের উৎসাহের কথা ভেবে যে, ফারুকী ও তার দলবল তরুণদের মাঝে অন্তত এইটুকু জনপ্রিয়তা বা আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে যে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এবং কনকনে শৈত্যপ্রবাহের এই সাতসকালে গরম-ওম ফেলে তারা সিনেমা হলে ছুটে এসেছে। এসব দিক, ব্যাখ্যা নিয়ে ভাবছিলাম। ফলে একটা ভাল লাগাও কাজ করেছিল এই ভেবে যে এই প্রজন্মের কিছু অংশের সাথে বসে সিনেমাটা উপভোগ করা যাবে। দুঘন্টার সিনেমা, তাই একটু ঢিলেঢালা সময় জ্ঞানে, এগারোটায় সিনেমা শুরু হয়েছিল।
এর আগে বাংলাভিশন টিভিতে চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে ঘটনাচক্রে টেলিভিশন’ নিয়ে প্রচারিত প্রায় এক ঘন্টার প্রমো-টা দেখেছিলাম। সেখানে সিনেমার গানগুলো সিনেমার কলাকুশলীসহ উপস্থাপন করা হয়েছিল। এরও আগে ‘টেলিভিশন’ টিমের কোরিয়া সফর সম্পর্কে যেসব মিডিয়া রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল তা দেখেছিলাম। এটুকু ছিল আমার পূর্ব ধারণা অথবা পুঁজি, যা নিয়ে সেদিন সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। যদিও এসব থেকে কী নিয়ে এই সিনেমা সে কাহিনীর খোঁজখবর রাখা যায়নি,রাখিনি। আবার ঠিক কি নিয়ে একটা সিনেমা দেখতে এসেছি,কি দেখব এখানে বিশেষ তেমন প্রত্যাশাও কাজ করেনি। এসব না থাকলেও, ফারুকী ও তার দলবল কি ভাবছে, কি করছে এখন,তা বুঝবার দেখার একটা সুযোগ,ফলে সে নিয়ে একটা ভাল কৌতুহল অবশ্যই ছিল।

কাহিনী সংক্ষেপ
যারা ছবিটি দেখেন নি,(কিম্বা দেখবেন না)তাদের সুবিধার জন্য সারকথায় গল্পটি পেশ করছি। তবে এক্ষেত্রে আমাকে সহায়তা করেছেন আমাদের আরেকজন তরুণ ছবি পরিচালক,তাসমিয়া আফরিন মৌ। তাঁর বয়ানে গল্পটা হচ্ছে এরকমঃ

টেলিভিশন -এই গল্পের শুরু এমন এক গ্রামে যেখানে নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোন উপায় নেই। সেই গ্রামে ইন্টারনেট চাট করে তরুণেরা কেউ তবে টেলিভিশন প্রবেশের অনুমতি নেই। গ্রামের চেয়ারম্যান ধার্মিক পরহেজগার যার একচ্ছত্র প্রভাব আধিপত্যে গ্রামে টেলিভিশন দেখা বা কেনার অনুমতি কারো নেই। তবে মুসলমান ছাড়া অন্য কোন ধর্মের মানুষ টেলিভিশন কিনলে নীতিগত কারণে তাকে বাধা দিতে পারে না কারণ, তার ধর্মে “টেলিভিশন” দেখায় নিষেধ নেই।
গল্পের শুরুতে একজন টেলিভিশন সাংবাদিক (বাংলাভিশন) এই চেয়ারম্যানের (শাহির কাজী রুমি) সাক্ষাৎকার নিতে আসে যার সাথে চেয়ারম্যান জবাব দিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। পরিস্থিতি খারাপ জায়গায় যেতে পারে তাই সাক্ষাতকার শেষ করে দেয়া হয়। দেখা যায় চেয়ারম্যান আবার প্রথম আলো পত্রিকা পড়েন,তবে পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞাপনগুলো আগেই সাদা কাগজ দিয়ে চেয়ারম্যানের সহচর ঢেকে দিয়েছে। চেয়ারম্যানের পরিচিতি একজন খুবই ভালো মানুষের,তার এলাকায় জনপ্রিয় এবং সবাই তার কথা মান্য করে। চেয়ারম্যানের একমাত্র ছেলে সুলেমান (চঞ্চল চৌধুরী) প্রেম করে সেই গ্রামের এক উচ্চ মধ্যবিত্ত প্রবাসী ব্যক্তির কন্যা কোহিনূরের (নুসরাত ইমরোজ তিশা) সাথে,যে কম্পিউটার চালনায় দক্ষ। সুলেমান বাবার কথার বাধ্য ছেলে,বাবার প্রতি তার সর্মথন আছে। বাবার ব্যবসা দেখা শোনা করলেও তার মোবাইল ফোন কেনার অনুমতি নেই। সুলেমানের কর্মচারি ও সহকারী মজনু (মোশাররফ করিম) এক ছল খাটিয়ে চেয়ারম্যান বাবার কাছ থেকেই মোবাইল কেনার অনুমতি পাইয়ে দেয় সোলেমানকে। আবার মজনু ছেলেবেলা থেকে কোহিনূরের খেলার সাথী ছিল। সে মনে মনে কোহিনূরকে ভালোবাসে,এক সময় তাকে বলেও ফেলে। অন্যদিকে সুলেমানের সাথে কোহিনূরের প্রেমে নিয়মিত সহায়তা করলেও,মজনু নানাভাবে কোহিনূরকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
ঝামেলা বাধে সেই গ্রামে এক হিন্দু শিক্ষক টেলিভিশন নিয়ে প্রবেশ করলে। হিন্দু ধর্মে টেলিভিশন দেখার কোন সমস্যা নেই,এই ধারণার কারণে চেয়ারম্যান অনেক ভেবেচিন্তে তাকে বাধা দেয় না। তবে শর্ত দেয়,কোন মুসলমান তার বাসায় টেলিভিশন দেখতে যেতে পারবে না। পরবর্তীতে হিন্দু শিক্ষক এই শর্ত মেনে চলতে পারে না দুইটি কারণে। এক. গ্রামের মানুষের অত্যাধিক আগ্রহের জন্য চাপ তৈরী হয়। দুই. তার কোচিং সেন্টার টেলিভিশনের আকর্ষণে জমজমাট হয়ে উঠে।
মুসলমানরা হিন্দু শিক্ষকের বাসায় টেলিভিশন দেখতে যায় এই খবর পেয়ে চেয়ারম্যান সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সেখানে একদিন হাজির হয়। সেই টেলিভিশনের নিয়মিত দর্শক কোহিনূর সেখানে ওদিনও উপস্থিত ছিল। বেয়াদবির অপরাধে সবার সামনে কোহিনূরকে কান ধরে উঠবস করায় চেয়ারম্যান। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে কোহিনূর প্রথমে সুলেমানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়,পরে সুলেমানকে শর্ত দেয় টেলিভিশন কিনে বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সে সম্পর্ক মূল্যায়ন করবে।
সুলেমান বাধ্য হয়ে তাই করে। বাবার লোকজনের সাথে তারা মারামারি হয়। চেয়ারম্যান পিছু হঠে। আবার পরে সুলেমানের অপরাধবোধ তৈরী হয়,সে মাফ চায়,তার বাবা তাকে মাফ করেও দেয়।
ওদিকে চেয়ারম্যান হ্বজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়,কিন্তু পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে হবে বলে তিনি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে ম্রিয়মান হয়ে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ছবি তুলে পাসপোর্ট করেন কিন্তু ঢাকায় এসে বুঝতে পারেন তিনি হ্বজ এজেন্সি দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। তিনি যেতে পারছেন না। মনভাঙ্গা সেই পরিস্থিতিতে বাড়িতে না ফিরে তিনি এক হোটেলে খানাদানা বন্ধ রেখে পড়ে থাকেন। তার ম্রিয়মানতা ভাঙ্গে ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনি শুনে। পাশের রুমের টেলিভিশনে তিনি হ্বজ দৃশ্য দেখতে পান। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে হোটেলে নিজের রুমের টেলিভিশন ছাড়েন এবং কাঁদতে কাঁদতে টেলিভিশনের সাথে গলা মেলান। নিজেকে সমর্পন করে দেন বোকা বাক্সের আদর্শে। এই হোল মোটামুটি গল্প।

ঝাপসা ফোকাস বা বিষয়নিষ্ঠাহীন গল্প
ছবি তোলা বা টেলিভিশন দেখা ঠিক না – এক প্রত্যন্ত গ্রামের চেয়ারম্যান এক বয়স্ক মুরুব্বীর এই মুল্যবোধের সঙ্গে একালের অবারিত মিডিয়ার যুগ – এই দুই এর সংঘাতকে অনুষঙ্গ করে আবর্তিত হতে চেয়েছে সিনেমার কাহিনী। এক বাক্যে এভাবে বললাম বটে,কিন্তু লিখতে গিয়ে টের পাচ্ছি এক বাক্যে এটা বলা কতটা ঠিক হচ্ছে। দ্বিধা আমার নিজের,কিন্তু ভেবে দেখলে দ্বিধার উৎস আমি নই। কারণ,সিনেমায় এটা স্পষ্ট যে গল্পকার বা পরিচালক গল্পের ফোকাস বা নিষ্ঠা অস্পষ্ট করে ফেলেছেন। চেয়ারম্যানের মনের বা বিশ্বাসের সংঘাতের জায়গাটিকে মুখ্য করে রাখতে পারেননি,ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় সেই ফোকাসটা থাকেনি। তাছাড়া বিজ্ঞান বা টেকনোলজির সঙ্গে ধর্মের দ্বন্দ্ব খুবই ক্লিশে,প্রাচীন ছকে তিনি বুঝেছেন,আর সেভাবেই মীমাংসা করেছেন। ছবি এই দ্বন্দ্বকে নতুন কোন দিক থেকে আমাদের বুঝতে সহায়তা করে নি।
চেয়ারম্যান গ্রামের কাউকে টেলিভিশন দেখতে দেন না – এই পটভুমির উপর দাঁড়িয়ে আরেকটি আলাদা গল্প এখানে আছে। চেয়ারম্যানের ছেলে সুলেমান (চঞ্চল),তাঁর প্রেমিকা (তিশা) আর ওদিকে বাসার বা ব্যবসায়ের কর্মচারী (মোশাররফ) এই তিনজনের ট্রয়কা প্রেমও সিনেমার মধ্যে গল্পের মুখ্য ফোকাস হয়ে উঠেছে। এই উপ-গল্প ও চরিত্র তিনটা এত সময়,বিস্তার ও ট্রিটমেন্ট পেয়েছে যে কখনও মনে করার কারণ ঘটেছে যে এটাই গল্পের ফোকাস। আবার ওদিকে গল্প শেষ হচ্ছে - চেয়ারম্যানকে নিজের মুল্যবোধ বা বিশ্বাস ধরে রাখতে অক্ষমতার পরিবেশে ফেলে দিয়ে;হ্বজে যাবার জন্য আপোষ করে নিজের ছবি তোলা আবার প্রতারিত হয়ে হ্বজে না যেতে পেরে টিভিতে হ্বজ দেখে লাব্বায়েক লাব্বায়েক ধবনিতে শতচ্ছিন্নে ভেঙে পড়ার ভিতর দিয়ে। ফলে চেয়ারম্যানের আত্ম-সংঘাত কি গল্পের ফোকাস? না কি এটা কেবল গল্পের পটভুমি,যে-পটভুমিতে দাঁড়িয়ে অন্য এক প্রেমের গল্প আছে, সেটাই গল্পের মুল বিষয় – এই দুই এর মধ্যে গল্পের ফোকাস দোল খেয়ে ফিরেছে। কোথাও তা স্থির হয়ে বসতে পারেনি,কিম্বা দুই গল্পের মধ্যে কোন শক্ত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি।
ফলে লিখতে গিয়ে আমিও দ্বিধায়। এই দ্বিধা বেশ জটিল। সমস্যাটা সিনেমা দেখার অর্ধ সময়ের পর বা ইন্টারভ্যাল থেকেই টের পাচ্ছিলাম। কারণ ততক্ষণে পরিস্কার হয়ে গেছে যে,চেয়ারম্যানের চরিত্র ও তার সংঘাত – সেই দিকে গল্প বিস্তারের আর সময় নাই,এই দিকটি আর উপযুক্ত ট্রিটমেন্ট পাবে না। সেই সুযোগ আর গল্পকার পাবেন না বা নিবেন না। অথচ গল্প শেষ হচ্ছে যেখানে সে অনুসারে এটাই গল্পের ফোকাস; সার কথায় যে চরিত্রটা উপযুক্ত ট্রিটমেন্ট পায়নি।
কোন গল্প সাজানোর সময় সেটা নানা দিকে যেতে পারে,নানান বিস্তারে যেতে হয়,একটা পরিস্থিতি তৈরীর প্রয়োজন থাকে। কোন দিকটায় গল্প কতটুকু বিস্তার হবে তা নির্ভর করে গল্পকার কোনটা গল্পের মুখ্য বিষয় করতে চাইছেন তার উপর,সেই প্রয়োজন দ্বারা নির্ধারিত। টিভি সিরিয়ালের তুলনায় সিনেমার ক্ষেত্রে এটা মেনে চলতেই হয়। গল্পের ফোকাস বিচারে সিরিয়ালে প্রত্যেক পর্বেই আলাদা আলাদা ফোকাস চাইলে রাখা সম্ভব। আর সিরিয়ালে পর্ব কয়টা হবে,সেই হিসাবও কিছু অদলবদলে দৈর্ঘ্য অদলবদলের সুযোগ বেশি থাকে। তার সীমার বাঁধন অন্তত সিনেমার মত ২-৩ ঘন্টা মেপে সীমাবদ্ধ নয়। ফলে গল্পের ফোকাস বিচারে সিনেমার স্ক্রিপ্ট সাজাতে হয় একটা কিছুকে মুখ্য দৃষ্টিনিবদ্ধ করে, আর সে হিসাবে বর্ণনার নানান দিকগুলো সামঞ্জস্যপুর্ণ বিস্তার করে ।
তবুও ধরে নেয়া যাক, ‘টেলিভিশন’ সিনেমার -স্ক্রিপ্টের ফোকাস হিসাবে গল্পকারের মনে চেয়ারম্যানই ছিল মূল। কিন্তু এই ধরে নেয়া নিয়ে আমরা বেশিদুর অগ্রসর হতে পারি না। সেক্ষেত্রে প্রধান গরমিল বেঁধে যায় মোশাররফের চরিত্রটা। কারণ এই চরিত্র সেক্ষেত্রে একেবারেই নাও যদি থাকে তাতে গল্প ও তার ফোকাসের কোন সমস্যা হয় না। অথচ সিনেমায় ঘটেছে উলটা,মোশাররফের চরিত্রটা যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ ও বড়। যথেষ্ট প্রমিন্যান্ট একটা চরিত্র করা হয়েছে এটাকে । এবং এমনভাবে তা করা হয়েছে যে মনে হয়েছে,চঞ্চল যদি তিশার প্রেমিক হতে পারে তবে কোন যুক্তিতে মোশাররফও সমান প্রতিদ্বন্দ্বী ও যোগ্য প্রার্থী নয়। নায়িকার সাথে তাঁর সম্ভাব্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রেমিক হিসাবে বরং মোশাররফকেই বেশি যোগ্য করে দেখানো হয়েছে। ফলে এতে দর্শকের মনে সাজেশন দেয়া হয়েছে যে,এর একটাই কারণ মোশাররফের সোশাল ক্লাস,সোশাল ক্ষমতা চঞ্চলের চেয়ে নীচে। ফলে গল্পের একটা নতুন ডাইমেনশন এখানে তৈরি হয়েছে। অথচ কেন এই গুরুত্ব,মুল ফোকাসের বাইরে এই বিস্তার -এর কোন প্রাসঙ্গিকতা ছবিতে হাজির নাই। ফলে মোশাররফ চরিত্র হয়ে গেছে উদ্দেশ্যবিহীন। অন্যভাবে বললে,এই দিকটাকে প্রমিন্যান্ট করার কারণে স্ববিরোধী একটা ইঙ্গিত তৈরি হয়েছে যেন এটা গল্পের ফোকাস। ফলে গল্পে চেয়ারম্যান চরিত্রের সাথে তুলনায় মোশাররফ চরিত্র বিস্তারে, ট্রিটমেন্টে অন্যায্যতা ও অসামঞ্জস্যতা চোখে ভাসে। কমবেশি একইভাবে আবার দিশা ও সুলেমানের (চঞ্চলের) সম্পর্ককেও কখন গল্পের মুল বিষয় মনে হয়েছে। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও মোশাররফ এই দুই চরিত্রের কোনটাকেই এমন প্রমিন্যান্ট ও ডিটেইল করার কোন কারণ থাকে না। এই দিক থেকে ফিল্ম হিশাবে ছবিটি দেখতে বসে একটা বড় অস্বস্তি টের পাওয়া গেছে। এটা গল্পকার কেন করলেন তার ব্যাখা খুঁজে পাওয়া যায় না।
তবু গল্পকার গল্পের ফোকাস ঠিক রাখতে পেরেছিলেন কি পারেন নি সে প্রশ্ন উহ্য রেখে বলা যায় খুব সম্ভবত তিনি ভেবেছিলেন,চেয়ারম্যান কেন্দ্রিক চরিত্র ও তাঁর সমস্যাটাই গল্পের ফোকাস। অনুমান করছি গল্পকার এটাই চেয়েছিলেন। নইলে নামও দেবেন কেন ‘টেলিভিশন? নাম দিতে পারতেন ত্রিমুখী প্রণয় বা এইরকম কিছু।

গল্পের মুখ্য দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট
ছবি দেখার পর আমাদের অনেকে বলছিলেন, একালে টেলিভিশন দেখা যাবে না -এমন বয়ান আকড়ে ধরে থাকার লোক কি আছে? আবার যদি ধরে নেই কোনাকাঞ্চি কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুএকজন রয়ে গেছেন তাহলে সেই চেয়ারম্যান আবার ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পড়েন কিভাবে? ধর্মচিন্তা,নীতিনৈতিকতা বা সুনির্দিষ্ট ভাবে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বদ্ধমূল ধারণারই উদ্গীরণ ঘটেছে চেয়ারম্যানের চরিত্রে। এই চরিত্র আমাদের কাছে তুলে ধরবার জন্য দেখান হচ্ছিল যে পত্রিকায় ছাপা এড জাতীয় ছবিগুলোর উপর ছোট সাদা কাগজের তালি দিয়ে ঢেকে তিনি পত্রিকা পড়েন। যুক্তির দিক থেকে হয়ত কথা সত্যি। তবুও আমাদের মানতে হয় যে, রেয়ার ও ব্যতিক্রম চরিত্র নিয়েও তো গল্পস্ক্রিপ্ট হয়। এমনকি কাল্পনিক এমন রেয়ার চরিত্র বানিয়ে নিয়েও ভাল স্ক্রিপ্ট হতে পারে। এধরণের ফিকশিয়াস চরিত্রের গল্প কোন বড় সমস্যা নয়। আর সিনেমায় চুলচেরা বাস্তবতা খোঁজার চেয়ে গল্প কি বলতে চায় তা মোটামুটি ধরা গেলেই চলে;তাতে সবকিছু খাটি রিয়েলিসটিক না হলেও দর্শক সেসব ত্রুটি উপেক্ষা করে গল্প বুঝতে রাজি থাকে বলেই আমার ধারণা। ফলে এটা কোন বড় পয়েন্ট নয়। সিনেমার চরিত্র বাস্তব রিয়েলিসটিক হতেই হবে এমন দাবী জোরদার ছিল আশির দশকে আমাদের এদিকে। সে দাবী যথেষ্ট ভেবে চিন্তে তোলা হয় নাই সেটা এখন প্রতিষ্ঠিত যদিও এখনও কাউকে কাউকে তুলতে দেখা যায়। আমাদের বস্তুবাদিতা ফিকশনের ক্ষমতা, তাতপর্য বুঝতে অক্ষম ছিল। তাই সস্তা বস্তুবাদিতার খপ্পড়ে পড়া আশির দশক সহজেই সে তর্কে হেরেছিল। সম্ভবত এই বিতর্কের ইতিহাস না জানা থাকায় এখনও বিচ্ছিন্নভাবে অনেককে আমরা এমন পুরানো তর্ক তুলতে দেখি।
কিন্তু আজকের আধুনিক জীবনের সাদা চোখে,ছবি তোলা ঠিক না এই অর্থে টেলিভিশন দেখা ঠিক না -এতটুকু যদি কাউকে বলি - এমন ধারণা শুনলে আমরা বলব এটা একটা অচল ধারণা। সিনেমা শেষে পরিচালকও প্রমাণ করেছেন যে চেয়ারম্যান একটা ‘অচল মাল’। কিন্তু সমস্যা হলো,এটা তো একটা সহজ স্বতঃসিদ্ধ ষ্টেটমেন্টে। দ্বন্দ্ব কনফ্লিক্ট কই? একটা ‘অচল মাল’ দেখিয়ে এথেকে আর কতটুকু দ্বন্দ্ব কনফ্লিক্ট টেনেটুনে হাজির করা যাবে? সিনেমার গল্পে দ্বন্দ্ব কনফ্লিক্ট - সেখান থেকে টান টান টেনশন – চাইলে টেনশনের আরও টুইষ্ট বা মোচড় - আর শেষে সে টেনশনের নিরসন তৈরি করে সিনেমা্র গল্প বানানো হবে। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়,গল্পকার-পরিচালক এই প্রশ্ন মোকাবিলা করতে গিয়ে আগেই ধরে নিয়েছেন, টেলিভিশন দেখা না দেখার দ্বন্দ্বটা হলো,‘ধর্মের কুপমন্ডুকতা বনাম প্রগতিবাদিতা’ এমনই সরল অর্থাৎ ব্যাপারটা সেই পুরানা সেকুলারিজম বনাম ইসলামের দ্বন্দ্ব। আর এই দ্বন্দ্বের সরল সমাধান আমরা জানি, তা হলো ইসলামের উপরে আধুনিকতার বিজয়। যেন গল্প-স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গল্পকার বা পরিচালক কুপমন্ডুকতার উপর সেকুলারিজমের বা আধুনিক জীবনের বিজয়ের ওপর এক গাথা লিখে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এটা একটা ক্লিশে বিজয়গাথা বা প্রপাগান্ডা হতে পারে – নতুনদিনের নতুন ভাবনার সিনেমা হবে কি না, সেটা সন্দেহ। এই ধরনের ক্লিশে জিনিস দিয়ে পুরানা ভাবনাকে নতুন ভাবে ঘটনার বিন্যাসের মধ্য দিয়ে ভিন্ন ভাবে দেখাবার আগ্রহ তৈরী করবে না। পুরানা জিনিসই মনে হবে। ঘটনাকে নতুন করে দেখবার,দেখানোর আগ্রহ তৈরি করবে না।
কিন্তু একালে টেলিভিশন দেখা যাবে না এমন রেয়ার ও ব্যতিক্রমী বয়ানধারী চরিত্র হাজির করে যদি শেষে তাকে একটা ‘অচল মাল’ বলে নাকচ করে দেয়া হয় তাহলে তা গল্প হওয়া খুবই কষ্টকর। ‘ব্যতিক্রমী লোক অচল’ এটাই তো স্বতঃসিদ্ধ। তাহলে সেখান থেকেই গল্প-স্ক্রিপ্ট কতটুকুই বা আগাবে,বের হবে? অন্যভাবে বললে, সিনেমার গল্প-স্ক্রিপ্টে এক বা একাধিক দ্বন্দ্ব কনফ্লিক্ট -সেখান থেকে টান টান টেনশন - আর শেষে সে টেনশনের নিরসন -এভাবে মোটাদাগে কোন গল্পের একটা মৌলিক কাঠামো থাকে ধরে নিলে,সেক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রমী লোক অচল’ এমন স্বতঃসিদ্ধ ধারণার উপর দাঁড়িয়ে ও থেকে আবার দ্বন্দ্ব কনফ্লিক্ট বের করা আসলেই কঠিন। কারণ স্বতঃসিদ্ধ ধারণা মানে আগেই যা নিরসিত,ফলাফল আগেই নির্ধারিত। দ্বন্দ্ব কনফ্লিক্ট বের করার আগেই এটা ছিবড়া। স্ক্রিপ্ট ন্যারেশন করতে করতে কনফ্লিক্ট–টেনশন-নিরসন এভাবে ধাপে ধাপে না হয়ে নিরসিত দ্বন্দ্ব দিয়ে শুরু করা মানে আগেই গল্পকে হত্যা করা বা এর আর গল্পমুল্য নাই না বললেও এর গল্পমুল্য আগেই দুর্বল হয়ে থাকে। তাই ঘটেছে এখানে।

ছবির ভিলেন কে? না থাকার সমস্যা

দর্শকের চোখে ভিলেন বা নেতি চরিত্র যদি সবল ঘৃণা তৈরি করতে পারে তবে গল্পকার সার্থক। দর্শকের জন্য সেক্ষেত্রে উপযুক্তভাবেই ভিলেন বা নেগেটিভ চরিত্র ঘৃণিত। কিন্তু গল্পকারের কাছে? তাঁর কাছে ঘৃণিত আর প্রিয় বলে কিছু নাই;কারণ নেগেটিভ চরিত্র নির্মাণ আর নায়ক বা পজিটিভ চরিত্র নির্মাণ তার কাছে একই কথা, একই কাজের দুই দিক। কোনটাই তার কাছে এতটুকু কম গুরুত্বের নয়। অন্যভাবে বলা যায়,শক্ত নেগেটিভ চরিত্র নির্মাণ করতে পারলে একমাত্র তখনই তুলনায় এবং বিপরীতে পজিটিভ চরিত্রটা ততই শক্তপোক্ত হয়। নেগেটিভ চরিত্র যত শক্তপোক্ত তা ততটাই বিপরীত চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলে,জেগে উঠবার শর্ত তৈরি করে। অনেকটা পরিমিত মাত্রার সাদা-কালোর কনট্রাস্টের মত। নেগেটিভ চরিত্র নির্মাণের সময় তাঁর পক্ষে সম্ভাব্য সমস্ত ন্যায্যতা,শক্ত যুক্তির অভাব খামতি ঘটলে সব শেষ। এর কারণে,কোনভাবেই এ থেকে পজিটিভ চরিত্র দাঁড়াবে না,গল্প-স্ক্রিপ্টও মাঠে মারা যেতে বাধ্য। এটা মনে করা বেকুবি যে যেটা নেগেটিভ চরিত্র সেই চরিত্র তো শেষে পরাজিতই দেখানো হবে;তাহলে আর এর মুখের ডায়লগে সম্ভাব্য পুঙ্খানুপুঙ্খ সব যুক্তি,বিবেচনা, পরিস্থিতি দেবার দরকার কী? না,বরং নেগেটিভ চরিত্রের পক্ষে সম্ভাব্য পুঙ্খানুপুঙ্খ সব যুক্তি,বিবেচনা ও পরিস্থিতি – এক কথায় আপাত ন্যায্যতাগুলো থাকার পরও পালটা একটার পর একটা তা নাকচ করার একটা প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়েই একমাত্র পালটা চরিত্রটা ইতিবাচক বা নায়ক হয়ে উঠে। ফলে কোনটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক চরিত্র হবে এটা স্রেফ গল্পকার বা পরিচালকের আগাম ধরে নেবার বিষয়ই নয়। পরতে পরতে নির্মাণ করার বিষয়। এক অর্থে ভাল গল্পকার অর্থাৎ ভিজুয়াল গল্পকার মানে হলো, মানুষের মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া,কষ্ট-সুখ,ভাল লাগা-মন্দ লাগা, হতাশা-উচ্ছ্বাস ইত্যাদি নিয়ে সফল মুন্সিয়ানায় খেলা করতে পারা। এটা কোনভাবেই গল্পকারের নিজেই কেবল দর্শক হয়ে যাওয়া নয়। গল্পকার যদি আগেই ধরে নেয়,চেয়ারম্যান চরিত্র তো ঘৃণিত এক রক্ষণশীল ‘এযুগের অচল মাল -যেটা গল্পকার করতেই পারে না -ফলে ঐ চরিত্রের পক্ষে আর শক্ত সাফাই জাষ্টিফিকেশন কি থাকতে পারে তো -সেক্ষেত্রে তিনি আর গল্পকার নয়,বড়জোর তিনি একজন কেবলই দর্শক। বলা বাহুল্য এতে স্ক্রিপ্ট-সিনেমার ওখানেই মৃত্যু ঘটে।
যেমন ‘টেলিভিশন’ গল্পে নেগেটিভ চরিত্র কে? চেয়ারম্যান? আর বিপরীতে পজিটিভ চরিত্র তার ছেলে সুলেমান? কিংবা সুলেমানের উপর শর্ত বা প্রণোদণাদাত্রী হিসাবে নায়িকা? সিনেমায় কোনটাই একেবারে স্পষ্ট নয়। তবে আকার ইঙ্গিত আছে মাত্র। আবার,চেয়ারম্যান কি নৈতিক বা মরাল দিক থেকে কোথাও স্খলিত? মোটেও না। কোথাও কোন দৃশ্যে তিনি তা নন। তার একটাই অপরাধ তিনি একটা ভ্যালু অথবা বিশ্বাস যেভাবে বুঝেছেন তাতে অটল। এভাবে তো নেগেটিভ চরিত্র গড়া কঠিন। বিপরীতে,ওদিকে সুলেমান? সে কি কোন সুনির্দিষ্ট ভ্যালু অথবা বিশ্বাস লালন বা ধারণ করে? মোটেই না,এমন কোন লক্ষণও নাই। আর নৈতিক বা মরাল দিক থেকে সে চেয়ারম্যানের ধারে কাছে নয়। বরং তুলনায় কার্য-স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্ততপক্ষে সে একজন ম্যানিপুলেটর; সে ছলনা বা মিথ্যা আশ্রয়ী। এর চেয়েও বড় কথা সে চেয়ারম্যানের বিপরীতের নতুন আধুনিক সমাজের একজন ভোক্তা কনজুমার কেবল,এবং বাছবিচারহীন,কর্তাসত্ত্বাহীন। ফলে এই চরিত্র নেগেটিভের চরিত্রের তুলনায় খাটো,মোটেও পজিটিভ নয়। সে ভাবেও নির্মিত হয়নি। করা কঠিনও। অথচ আকার ইঙ্গিতে এটাকে ইতিবাচক বলার চেষ্টা আছে মাত্র।

ওদিকে চেয়ারম্যান চরিত্রের পরিণতি হলো,অচল মাল,সমাজের সাথে আনফিট । তিনি কম্প্রোমাইজ করে হ্বজে যাবার টেকনিক্যাল কারণে ছবি তুলতে বাধ্য হচ্ছেন আবার হ্বজ কোম্পানীর শঠতায় পড়ে যেতে পারেন নাই,প্রতারিত হয়েছেন। কিন্তু এসব কোনটাই তাঁর বিশ্বাস,মুল্যবোধে হঠাৎ ঘাটতি এসেছে সেজন্য তিনি করেছেন তা নয়। বরং,প্রতারিত হবার জন্য তিনি দায়ীই নন। নতুন আধুনিক সমাজ যা তাকে করতে বাধ্য করছে তাই তিনি করেছেন,এর পরেও তিনি প্রতারিত।

কমন শত্রু -গল্পকারের আত্মসমর্পণ
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, চেয়ারম্যানের মুল্যবোধ ও বিশ্বাস ধরে রাখার ক্ষেত্রে যা বাধা বা শত্রুর ভুমিকায় তা হলো,নতুন পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কের সমাজ বা দুনিয়া,অথবা এর গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া টেলিভিশন টেকনোলজি। আর ওদিকে তার ছেলে সুলেমান ঐ সমাজেরই ভোক্তা,কনজুমার মাত্র,এবং সে বাছবিচারহীন, কর্তাসত্ত্বাহীন। অর্থাৎ উভয়েরই শত্রু একই। কিন্তু তা সত্বেও সেই কমন শত্রু ফেলে পিতা-পুত্র এক আপতিক বিরোধে জড়িয়ে মুখোমুখি হয়ে গেছে,আর তাদের কমন শত্রুই এই বিরোধ তৈরির কারণ। অথচ এইদিকটা গল্পকার দেখতে পাচ্ছেন এমন কোন ইঙ্গিতও নাই। ফলে পিতা চেয়ারম্যান বা পুত্র সুলেমান এই শত্রুর কাছে সারেন্ডার করছেন না,আসলে আত্মসমর্পণ করে ফেলেছেন খোদ গল্পকার ও পরিচালক।
কিন্তু এর মানে কি আমি পিতা-পুত্রকে পিছনের ফেলে আসা কোন সময়ে, সমাজে ফিরে যেতে বলছি, মোটেই না। তবে সে জন্য একটা বোধোদয়,আত্ম উপলব্ধি বা আত্মসচেতনতার দিকেও তাদেরকে যেতে হবে। সে কাজ গল্পকার করতে পারতেন হয়ত। কথাটা অন্যদিক থেকে তুলব।
গল্পের মুল প্রসঙ্গ, ছবি না তোলা বা দেখা,সেই সুত্রে টিভি না দেখা। আর সিনেমায় এই ধারণার পরিণতি দেখানো হয়েছে এই মুল্যবোধ ও বিশ্বাসকে বলি দিয়ে। একধরণের প্রশ্নহীন ও আগাম অনুমান দিয়ে সরাসরি ধরে নেয়া হয়েছে,ছবি না তোলা বা দেখা,সেই সুত্রে টিভি না দেখা -এই ধারণাটাই ভুল, পশ্চাৎপদ ধারণা। সোজাসাপ্টা এক সরলীকরণ সমাধান টেনে অন্তত বলা হয়েছে -এটা অচল ধারণা। সমস্যা সঙ্কটটাকে কোন ক্রিটিক্যাল দিক থেকে দেখার চেষ্টাও সেখানে নাই। যেন,নিস্তরঙ্গ ফ্লাট ধরে নেয়া হয়েছে ছবি না তোলা বা দেখা -এটা স্রেফ বিশ্বাস মাত্র। প্রশ্নহীন ধরে নেয়া হয়েছে এটা কুপমন্ডুকতা অথবা নেহায়তই এক রক্ষণশীলতা। কেন এই বিশ্বাস,এই বিশ্বাস এমন কেন,কোথা থেকে আসছে, কারণ কি? -সে প্রশ্ন তোলার বা খুজে দেখার চেষ্টা কোথাও নাই। ধরেই নেয়া হয়েছে,এটা স্রেফ বিশ্বাস মাত্র,ওর পিছনে কোন যুক্তি বা ব্যাখ্যা নাই। চেয়ারম্যানের মুখ দিয়ে সে সম্পর্কে কোন যুক্তি বা ব্যাখ্যা না দিয়ে চেয়ারম্যান চরিত্রটাকে পুষ্ট হতে দেয়া হয় নাই। ফলে সে একটা ক্লাউন;অচল মাল ছাড়া আর কিছুই হয়ে উঠতে পারে নি।
[দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে দেখুন, পরের পোষ্টে Click This Link
।]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×