দ্বিতীয় ও শেষ পর্বঃ
প্রথম পর্বের জন্য দেখুন, Click This Link
গল্পের বিষয়বস্তু বাছাই
এযুগে টেলিভিশন দেখে না, দেখতে দেয় না – এখান থেকে শুরু করে কৌতুককর অনেক কাহিনী তৈরি করা যেতেই পারে। খুবই সহজ কাজ সেটা। কিন্তু গল্পকার যা ভেবেই গল্পের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করুন না কেন, চিন্তার বিষয়বস্তু হিসাবে এই প্রসঙ্গটা গভীর ও সিরিয়াস।
প্রথম কথা হলো,প্রশ্নটা ছবি তোলা বা না তোলার একেবারেই না। কারণ, ইসলামের দিক থেকে মানুষ,জীবজন্তু বা যে কোন প্রাণ কোন প্রকার ছবি,অক্ষর ইত্যাদি চিহ্নব্যবস্থায় প্রতিফলন ঘটানো বা তাকে নিছকই মূর্তি করে তুলে সৃষ্টবস্তুর মূল সত্তাকে গৌণ করে ফেলার বিরুদ্ধে ইসলাম আপত্তি জানায়। এটা একটা দিক। আরেকটি জটিল ও গভীর দিক হচ্ছে,নিরাকার ধারণা। ইসলামে নিরাকার বা আল্লাহর নিরাকার ধারণা একটা ফান্ডামেন্টাল বিষয়। এটা একেবারেই মৌলিক ধারণা। আবার এটা নেহায়তই ইসলামের জন্য নয়,মানুষের চিন্তা,ভাব, দর্শনের জট খুলবার জন্য এক মৌলিক ও সিরিয়াস ধারণা। অজান্তে অজ্ঞতায় সেই গুরুত্বপুর্ণ দিক যাতে মানুষ হারিয়ে না ফেলে তা থেকে সাবধান থাকতেই ছবি তোলা বা না তোলার,আকার দেয়া না দেয়ার প্রসঙ্গটা এসেছে।
আকার দিয়ে নিরাকারের ধারণা ধরা যায় না। আকার দিয়ে নিরাকারের ধারণা ধরতে গেলেও তা ‘অধরা’ই থেকে যাবে। আর আকারের ভিতর নিরাকার ধারণা তো অধরা থেকে যাবারই কথা। কারণ তখনও আকারের নেতি হিসাবেই নিরাকারের চিন্তা করা হয়,দার্শনিক হেগেলের ভাষায় ‘আকার’-এর মধ্যস্থতায় নিরাকারের হাজির হওয়া। তবু মানুষ আকার,আইকন,চিহ্ন করে,করে ফেলে। করতেই হয়। কোন কিছু বুঝতে নেবার প্রচেষ্টার প্রথম মুহুর্ত থেকেই এই স্ববিরোধটা ঘটে। কিন্তু ইসলাম দাবি করে নিরাকারকে কোন মধ্যস্থতা ছাড়া চিন্তা করবার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ইসলাম আমরা মানি বা না মানি এই প্রস্তাবের দার্শনিক গুরুত্বকে যতো হাল্কা আমরা গণ্য করি, ব্যাপারটা মোটেই হাল্কা ব্যাপার নয়। ফলে ছবি দেখা না দেখার বিষয়টা সেই জায়গা থেকে এসেছে। আসলে ছবি দেখা বা সে অর্থে টেলিভিশন দেখা আদৌ নিষিদ্ধ কিনা ইসলামের ভেতর থেকেও তার তত্ত্ব-উপায় আছে। চেয়ারম্যানের চরিত্রের মধ্য দিয়ে তার নৈতিক সিদ্ধান্তকে মুখ্য করে আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ দিকে যাবার সুযোগ ছিল। কিন্তু তাকে একটা হাস্যকর চরিত্রে পরিণত করা হয়েছে।
এ বিষয় নিয়ে যাঁরা লিখবার অধিকারী,তাঁরা লিখবেন। তবে আমার নিজের কাছে যেসকল প্রশ্নগুলো হাজির হয় তার কিছুটা নমুনা দিলে বোঝাতে পারব,ছবিতে টেলিভিশন দেখা না দেখাকে যতো ক্যারিকেচার পরিণত করা হয়েছে,আকার/নিরাকারের তর্ক আরও অনেক গভীর ও জটিল।
যেমন, উচ্চারণে যদি ধরা বুঝা শুরু করতে চাই,তাহলে নিরাকার ধারণা তো একমাত্র নৈ-স্বরে,নৈ-স্বরাকারে অথবা নৈ-উচ্চারণেই ধরতে পারার কথা,আলাদা আলাদা শব্দ-উচ্চারণে, স্বরে না। জানি ওরাল বা গলার স্বরে নিরাকার ধরা যাবে না,তবু ওরাল স্বরই আমাদের ভরসা। অধরা ভাবের ভিতর দিয়ে ওরাল স্বরের সীমাবদ্ধতা খেয়াল রেখেই নিরাকার ধারণা করা সম্ভব। অন্তত অর্থহীন স্বর তাকে হতেই হবে। যেমন আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশীয় সনাতন ধর্মীয় আবহে গড়ে উঠা রাগ সঙ্গীত,তা অর্থহীন স্বর অথবা অনন্ত অর্থের এক স্বর হবার পিছনে এটা ছিল অন্তত একটা কারণ। ধ্রুপদি সঙ্গীতে ইসলামের বিশেষ আগ্রহের এটা একটা কারন হতে পারে।
নানান অক্ষর-বর্ণমালা দিয়ে আমরা আমাদের লেখা পুস্তক সাজাই,ওদিয়ে ধারণা ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু নিরাকারের ধারণা? একমাত্র অক্ষরগুলোর বিভেদ নিরাকরণে ঘুচলেই নিরাকার ধারণা আসতে পারে। তবু আলাদা আলাদা অক্ষর না আঁকলে,চিহ্ন আইকনে তাদের বিভেদ না করে নিলে লেখা বা পুস্তকে কোন ভাব, ধারণা ধরা অসম্ভব। এটা স্ববিরোধ এবং এই সীমাবদ্ধতা খেয়াল রেখেই নিরাকার ধারণা করা সম্ভব।
ভিজুয়ালাইজেশন বা ছবিতে দেখা। এতে আলাদা আলাদা ছবি সব,ছবি চিহ্ন আইকনের বিভেদ আমাদের শিখতেই হয়। জানা ঘটে। এই বিভেদের ভিতর দিয়েই এই সীমাবদ্ধতা খেয়াল রেখেই এবার চোখ বন্ধ করলে নিরাকার ধারণা করা সম্ভব।
একটা চকমকে কাগজে আল্লাহু লিখলে ঐ কাগজ সেটা আল্লাহ নয়। তা থেকে আল্লাহকে উচ্চারণ করে পড়ে স্বরে,লিখিত অক্ষরে অথবা অক্ষর দেখে ভিজুয়ালাইজেশন ধরা যাবে না। তবু আমরা আল্লাহু লেখা কাগজ দেখি আমাদের মনে একটা ভাব তৈরি হয়। আমাদের কালচারে তা ফুটে উঠে। ঐ কাগজ কেউ অজান্তে পায়ে দলে দিলে কিছু হবার কথা না কারণ ঐ কাগজ নিজে আল্লাহু নয়। কিন্তু পায়ে দলা যদি ডেস্পারেট এটেম্পট হয় তবে ঐ ভাব গুণাহ কাজ বলে মানা হয়;আমাদের কালচার তা ধারণ করে চলে। সাবধান থাকার পরামর্শ ইঙ্গিত জারি রাখে।
আমরা সবাই আলাদা আলাদা নাম ধারণ করি। একের থেকে অন্যের বিভেদ,তফাত না করলে চিনা জানা মনে রাখা সম্ভব না। প্রকৃতিতে যাই দেখি তাকেই এক একটা আলাদা আলাদা নাম দেই। এগুলো আমাদের চিনা, জানা,মনে রাখা সচেতনতা, আত্ম-সচেতনতা প্রক্রিয়ার অংশ। কিন্তু নিরাকার ধারণার একটা ব্যত্যয় তো বটেই এটা। জানাজানি সচেতনতার প্রক্রিয়ায় এই স্ববিরোধ এবং এই সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সতর্ক খেয়াল রাখলেই তবে নিরাকার ধারণা করা সম্ভব। ফলে সেদিকটা বিবেচনা করে আমরা আল্লাহর গুণবাচক অর্থ –সমার্থক নাম রাখি, একটা কালচার গড়ে ঊঠেছে। যদিও তাতে সবদিক সামাল দেয়া যায়নি। প্রকৃতিতে এত কিছু কত কত দেখি আমাদের অনেক নামবাচক শব্দ দরকার। সব কুলকিনারা করা যায়নি। কেবল মানুষের নামের ব্যাপারটায় একটা কালচার তৈরি হয়েছে দেখি আমরা, যদিও সেটাতেও ভাঙ্গা গড়া আছে।
পশ্চিম দিকে, কাবা শরীফের দিকে কেবলা বেধে নামাজ পড়ার নিয়ম। এর মানে কি আর দশ দিকে আল্লাহ নাই? ধারণাটা কি এমন? মোটেই না। এটা ঠিক পুব-পশ্চিমের ব্যাপার না,বরং দশ দিক কেন্দ্রে এসে সমপাতিত হয়, মিলে মিশে একাকার নিরাকার হয়। নৈ-দিক হয়ে যায়। মানুষের ঐক্য,একটা একতাবদ্ধ মানুষের কমিউনিটি গড়ার উদ্দেশ্যের কথা মাথায় রেখে একই কেবলা অভিমুখী করে,কিন্তু নিরাকারের উপাসনার প্রতীকায়িত ঘটনা এটা। এখানে বেশ মজার কিন্তু গভীর একটা দিক আছে। ধরা যাক,ওখানে কাবা ঘর নাই। কিন্তু দুনিয়ার দশ দিকের নানান স্থান অবস্থানের মানুষ সবাইকে একই দিকে অভিমুখী বা কেবলা করতে গেলেও প্রতিটা দিকের অবস্থানের মানুষকে ঐ নির্দিষ্ট অবস্থানের সাপেক্ষে একটা দিকের কথা বলতে হত এভাবে অসংখ্য বা দশ দিকগুলো একটা বিন্দুতে সমপাতিত হয়। সেক্ষেত্রে সব অবস্থানের দিকের সেই সমপাতিত স্থান হলো যেন কাবা শরীফ। এতে দশ দিকের দশ দশ রকম মানুষের ভিন্নতার সমস্যা মিটিছে – একমুখী করা গেছে। যদিও ব্যবহারিক দিক থেকে তখনও আবার একটা আইকন হিসাবে কাবা শরীফ এতে থেকে গেছে। এটা আকারের দুনিয়ায় নিরাকারের ধারণা আনার ব্যবহারিক সমস্যা।
এমন অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। প্রতিমুহুর্তে নানান আকার দেয়ার ঘটনা ঘটছে;চিহ্ন,প্রতীক আইকনে দুনিয়াও নানান আকার প্রকারে হাজির। আমাদের চিনা,জানা,মনে রাখার সচেতনতা, আত্ম-সচেতনতা প্রক্রিয়া জারি রাখতে গিয়ে নিরাকার ধারণার একটা ব্যত্যয় ঘটিয়েই একমাত্র এগুলো করা সম্ভব। তাই এই আপাত স্ববিরোধ। কিন্তু মুল প্রসঙ্গ,এই কাজ করতে গিয়ে এই স্ববিরোধে আমরা যেন নিরাকার ধারণা হারিয়ে না ফেলি। তাই প্রসঙ্গটা আসলে ছবি তোলা বা না তোলার একেবারেই নয়,মুল প্রসঙ্গ নিরাকারের ধারণা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি,বেকুবি অজ্ঞতায় না ডুবে যাই। হারিয়ে চিন্তার,ভাব,দর্শনের চরম সঙ্কটে না পড়ি।
কাজেই মুল ইস্যু নিরাকারের ধারণা রক্ষা করা। নিরাকারের ধারণা ফেলে,ভুলে আমরা যেন চিন্তার গলিঘুপচিতে আটকে না যাই। এইখান থেকেই সতর্কতায়,নবীজির কোন ছবি আঁকা বা আদল দেয়া নিষিদ্ধ। লালনের শিষ্যরা একই কারণে লালনের ছবি বা মুর্তির বিরুদ্ধে। যাতে সেই ছবি,আইকন প্রতীকের ফেরে পড়ে কেবল এসব প্রতীকই সত্য,মুখ্য হয়ে না যায় আর নিরাকারের কনসেপ্ট এর নীচে চাপা পড়ে গড়াগড়ি না খায়। লালনের অনুসারীদের ক্ষেত্রে অবশ্য বলা হয় তাঁরা ছবি পূজা করেন না,মানুষ ভজনা করেন। ফলে নবীজির কোন ছবির ব্যাপারে ইসলাম কেন এত কঠোর এটা স্রেফ মোল্লাদের কুপমন্ডুকতা,পশ্চাদপদতা বা রক্ষণশীলতা একেবারেই নয়। এর পিছনে শক্তিশালী দার্শনিক কারণ আছে এবং আমাদের তা রক্ষা করা দরকার।
অতএব, ‘টেলিভিশন’ সিনেমায় যেভাবে টেলিভিশন দেখা না দেখা বলে অতি সরলীকরণ করে বিষয়টা আনা হয়েছে এটা ইসলামের কোন বিষয়ই নয়,মুল প্রশ্ন ইসলামের নিরাকার ধারণা। একদিকে পিতা বা চেয়ারম্যান যেমন নিরাকার ধারণার বদলে টেলিভিশনে আটকে গেছেন অন্যদিকে পুত্র সোলেমান বা তার নায়িকা টেলিভিশন দেখতেই হবে এই বেহুদা মুক্তির বিপ্লবীপনায় আটকে গেছেন। আর ডন কুইকজোটের যুদ্ধ লড়েছেন। কেউই এই ছদ্ম-লড়াই থেকে বের হবার পথ তালাশ করেন নাই। এই তালাশের প্রথম কাজ হত - কেন এই বিশ্বাস,এই বিশ্বাস এমন কেন,পিছনের কথা,বয়ানগুলো অনুসন্ধান,বুঝবার চেষ্টা করা। গল্পকার সেদিকে তার গল্প প্ররোচিত করতে পারতেন। ফলে সেটা গল্পের পরিসমাপ্তি অর্থাৎ দ্বন্দ্ব নিরসন করে একটা বা অনেকভাবে সমাধান হতে পারত।
গল্পে যেটা সবচেয়ে দৃষ্টিকটু তা হলো, নায়িকা যেভাবে নায়ককে টেলিভিশনকে মুক্ত করার শর্ত দিয়েছে। নায়িকা যদি সুলেমানকে ভালবাসেই তবে কেন তাঁর হবু শ্বশুর কেন এমন,তিনি ঠিক কি বলতে বুঝাতে চান - সেটা বুঝবার কোন দায়িত্বই সে অনুভব করে নাই। ধরেই নিয়েছে শ্বশুরের উৎখাতেই তার মুক্তি,তাদের প্রেমের মুক্তি - ফলে সুলেমানকে প্ররোচনামুলক শর্ত।
এই বয়ানটা বাছবিচারহীন ধরে নেয় তথাকথিত আধুনিকতা বনাম ইসলামের লড়াইটাই হচ্ছে প্রগতিশীলতার লড়াই। অথচ এটা অনিবার্য এমন নয়। আবার এর মানে এও নয় যে এনলাইটমেন্ট অথবা আধুনিকতা থেকে মানুষের কিছুই নেবার নাই। আসলে মুল প্রশ্ন হলো,বাছবিচার করতে শিখা। ক্রিটিক করতে শিখা। আধুনিকতাকে টপকে যাওয়া। স্বভাবতই এর প্রথম কাজ জিনিষটা কি তা আকরে মূল-সহ বুঝা। তবেই না বাছবিচার,ক্রিটিক! এটা অবশ্যই সমর্পণ না। বরং মানুষের অনন্ত সম্ভাবনা মনে রাখা।
যা হতে পারত
উপ-শিরোনাম দেখে মনে করার কারণ নাই যে যা হতে পারত সেসবের সীমা টেনে দিচ্ছি। না মোটেই তা নয়। কি হতে পারত সারকথায় এর কিছু ধারণা দিচ্ছি কি বলতে চাই তা বুঝানোর জন্য। যা হতে পারতঃ
১। টেলিভিশন দেখা না দেখার দ্বন্দ্বকেই মুখ্য করে প্রকারান্তরে চেয়ারম্যান কেন এমন, ঠিক কি বলতে বুঝাতে চায় তা - নায়িকা বা নায়ক যে কেউ একজনকে দিয়ে - সেটা বুঝবার উদ্যোগের ভিতর দিয়ে গিয়ে কোন একটা সমাধান,এভাবে দ্বন্দ্ব নিরসনে গল্পের এক মানবিক পরিসমাপ্তি হতে পারত। গল্পকার গল্পে চেয়ারম্যান কেন টেলিভিশন দেখার বিরোধিতা করছে এর কারণ কী সেটা গুমর হিসাবেই রেখে দিয়েছেন। এটা গুমরাহ রেখে দেয়াটাই এই গল্পের ভিত্তি একমাত্র যা থেকে একে সেকুলারিজম বনাম ইসলামের লড়াই অথবা তথাকথিত ধর্মীয় রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে আধুনিকতার লড়াই হিসাবে একে খাড়া করা যায়। অথচ উলটা এই গুমোরকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব কনফ্লিক্ট – উত্তজনা টেনশন চরমে নেবার পর গুমোর ভেঙ্গে দেখানো ভিতর দিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসন করা যেতে পারত। তাতে এই ছবি আমাদের সামাজিক চিন্তায় চিন্তা করার ভিন্ন দ্বার খুলতে পারত।
২। গল্পকার বা পরিচালক ধরা যাক,নিজের তৈরি টেলিভিশন দেখা না দেখার দ্বন্দ্ব নিজেও সমাধান করতে চায় না, বা দেখাতে চায় না। কিন্তু একটা মানবিক সমাধানের পরিসমাপ্তি আকুতি তাঁর আছে,সে চায়। এই মানবিক সমাধান অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সে খুজছে এটাই সে ফুটিয়ে তুলতে পারত। ফলে খোলা রেখে দিতে পারত। এটা বলছি,গল্পকার বা পরিচালক একদিকে একজন বিশ্বাসী বয়স্ক লোকের কোন ত্রুটি,(যা সে বিশ্বাস করে তাই সে করেছে) কোন স্খলন দেখাতে পারেনি বা দেখায় নি অথচ তাকে বিশ্বাসের বাইরে যেতে বাধ্য করেছে কিন্তু গিয়েও সে প্রতারিত হয়েছে যার জন্য সে কোনভাবেই দায়ী নয়। অন্যদিকে নায়িকা এক টেলিভিশন দেখার লোভ এতই অমানবিক ও লোভী যে এতে হবু শ্বশুর মরল কি বাঁচল তাতে তার কিছু যায় আসে নাই। এসবের বিপরীতে এটা কমপক্ষে একটা মানবিক সমাধান হত পারত। সিনেমা দেখার পর দর্শকও সেসব প্রশ্নে নানান সামাজিক তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে এর সমাধান খুজে ফিরত। কিন্তু এই গল্পে গল্পকার সহজেই পরিণতি দিয়েছেন,এটা নেহাতই এক রক্ষণশীল ‘অচল মালের’ সমস্যা।
৩। এটা হতেই পারে যে গল্পকার বা পরিচালকের টেলিভিশন দেখা না দেখার দ্বন্দ্ব সমাধান কি করে করবে তা নিজের কাছে জানা নাই। কিন্তু আমাদের সমাজের চেয়ারম্যান ধরণের চরিত্র কে,কেন এটা এমন - তা সে আন্তরিকভাবে অনুসন্ধিতসু,সে বুঝতে চায়। ফলে বিশ্বাসী বয়স্ক মানুষটা কি রকম সব অমীমাংসিত সঙ্কটে পড়েছে এর কেবল মানবিক কষ্ট,সাফারিং - এর সব দিক সে খুটিয়ে প্রকাশ করতে পারত। এটাই তার মুল ফোকাস হতে পারত।
উপরে আমি সম্ভাব্য তিনটা ফোকাস ও পরিণতির কথা বলেছি। এখানেই থামলাম। এর মানে এমন নয় যে আর কোন কিছু হতে পারে না। বরং এমন অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু তা হবে না,হয় নাই। কারণ,যতক্ষণ আগাম ধরে নেয়া থাকবে যে,টেলিভিশন দেখা না দেখার দ্বন্দ্বটা হলো,‘ধর্মের কুপমন্ডুকতা বনাম প্রগতিবাদী’ এমনই সরল অর্থাৎ সেকুলারিজম বনাম ইসলামের দ্বন্দ্ব আর আমরা এভাবে বুঝা দ্বন্দ্বের সমাধান জানি, তা হলো ইসলামের উপরে আধুনিকতার বিজয় ততক্ষণ আমাদের গল্পগুলো ‘টেলিভিশন’ এর মত এমনই হবে। আর গল্পে দ্বন্দ্ব কনফ্লিক্ট দুর্বল হবে, ফলে গল্পই দুর্বল থেকে যাবে।
গল্পকার যা ভেবেই গল্পের বিষয়বস্তু নির্ধারণ বাছাই করুন না কেন,চিন্তার বিষয়বস্তু হিসাবে এই প্রসঙ্গটা গভীর ও সিরিয়াস। যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে তাই এই ধরণের সিরিয়াস বিষয়কে গল্পের বিষয়বস্তু করতে হবে। নইলে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫