দক্ষিন প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি মারকোয়েসা দ্বীপপুঞ্জের কোন একটি দ্বীপ - মুল্যায়ন বা মান নির্নয়ের কোন নিয়মই এখানে খাটে না। সময় শব্দটির কোন অর্থ নেই এখানে। হাজার বছরের অতীত এখানে এসে যেন থেমে গেছে। সামনের বিশাল মহাসাগরে তীরের সন্ধান মিলবে ৪,৩০০ মাইল দুরে দক্ষিন আমেরিকায়। অবশ্য দুরত্বও এখানে অর্থহীন। কারন দৃষ্টি চলে কেবল দিগন্ত পর্যন্ত। তারপর কোথায় কি আছে বা কতদুর আছে আর প্রভাব মনের ওপর পড়ে না।
সুর্যসন্তান টিকি আমাদের আদি পুরুষ। ভগবানও বটে। সুদুর অতীতের কোন একসময়ে মহাসাগরের ওপারে একটি বিরাট দেশে ছিল আমাদের বাস। আমাদের আদি পুরুষ টিকি বা কনটিকির নেতৃত্বে আমরা সাগর পাড়ি দিয়ে চলে আসি এই মহাসাগরের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য দ্বীপে আর এই সব দ্বীপে আবার আমরা গড়ে তুলি আমাদের নিজেদের আবাসভুমি। - কৌতুহলী গল্পবাজ এক দ্বীপবাসী বৃদ্ধ পলিনেশিয়ান নিজের মনেই বলেছিল তার অতীতের কাহিনী।
প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপবাসী আর তাদের রহস্যময় অতীত লেখক থর হেয়ারডেল কে এমনভাবে আকৃষ্ট করেছিল যে, মারকোয়েসা থেকে ফিরে এসে একমাত্র পলিনেশিয়ানদের কথা ছাড়া অন্য কিছুই তখন তার মাথায় ঢুকত না। বেশ কয়েক বছর ধরে পড়াশুনা আর দেশি-বিদেশি অনেক জাদুঘর পাঠাগার ঘুরে অনেক কিছুই জানা হল। জানা হল পলিনেশিয়ানদের আদি বাসভুমি দক্ষিন আমেরিকার পেরু অঞ্চল। শক্তিশালী ইনকাদের আগমন ও দখল হয়তো তাদের দেশান্তরি হওয়ার অন্যতম কারন। দেবতা কনটিকি তার অনুচরদের মহাসাগর পার করে নানা দ্বীপে ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু কিভাবে? সাতার দিয়ে? প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়ার মতো কোন জাহাজ বা নৌকা তখনো তো ছিল না। তাহলে?
শুধুমাত্র ব্যক্তিগত একটি ধারনা বা উপলব্ধি যাচাই করার জন্যে লেখক বছর দশেক ঘুরেছেন দেশ-বিদেশের বহু জ্ঞানী-গুনী ও বিজ্ঞানীদের পেছনে; কিন্তু লাভ হয়নি। নিজের বিশ্বাস যে ভুল নয় সেটা প্রমান করার জন্যে পাঁচজন সহযাত্রী নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে তিনি ভেসে পড়েন হাজার-দেড় হাজার বছর আগের পদ্ধতিতে তৈরী কাঠের ভেলায় চড়ে। পাড়ি দেন ৪,৩০০ মাইল। তৈরী হয় এক অসাধারন অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী, যেটা নিছক মনগড়া নয়।
এক নি:শ্বাসে পড়ে শেষ করলাম বইটা। মানুষের যেকোন অসম্ভবকে সম্ভব করার চাবিকাঠি হল তার জেদ আর একগুয়েমি। কাজটা করতে গিয়ে অনেকে প্রানও হারান। কখনও সাফল্য আসে কখনও আসে না। কিন্তু কাজটা শুরুর থেকেই তৈরী হয় আরেকটি ইতিহাস তৈরীর বীজ।
সবাইকে বইটা পড়ার আমন্ত্রন রইল।