somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প কৃষ্ণপক্ষের রাত

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কৃষ্ণপক্ষের রাত


১.
মধ্য হেমন্তের কৃষ্ণ পক্ষের রাত। সুদীপ তার ঘুমন্ত স্ত্রী শিউলির দিকে তাকিয়ে থাকে। বয়স বেড়ে গেছে। এখন শিউলির আর আগের মতো রুপের জৌলুশ নেই। সুদীপ বিরক্ত হয়। পাশ ফিরে শুয়ে থাকে। ঘুম আসে না তার। সে ছটফট করে। উঠে গিয়ে ব্যালকোনিতে দাঁড়ায়। সুদীপের দোতলা বাড়ির পিছন দিকে একটা বড় ডোবা। রাত গভীর হলে সেখানে অজস্র জোনাকির মেলা বসে। সে দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সুদীপের মালার কথা মনে পড়ে। তার চোখ হঠাৎ চকচক করে ওঠে। সে দেখতে পায় মালার কচি শরীরের সৌন্দর্য লেহন করছে সে। আচমকা চিকন একটা ডাকে সুদীপ চমকে ওঠে। কে যেন সুদীপ বলে তাকে ডাকছে। ভয়ে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে। সুদীপ নড়াচড়া করতে পারে না। তার খুব কাছেই সে মালার উপস্থিতি টের পায়। ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সুদীপ। সে ঘামতে থাকে।


২.
কমল তার বাবা মার প্রথম সন্তান। কথিত আছে, কমল জন্ম নেয়ার আগে তার মা রসশিলা দেবীর স্থানীয় ব্রাহ্মণ শর্মা ঠাকুরের সাথে একটা গভীর প্রণয়ের কথা। গ্রাম্য সমাজে নীচ শুদ্রের মেয়ের সাথে ব্রাহ্মণ ঠাকুরের এই অজ্ঞাত সম্পর্কের কারণেই কমল তার স্বাভাবিক শারীরিক গঠন নিয়ে জন্ম নিতে পারেনি। জন্মের পর থেকেই কমলের শরীরের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বৃদ্ধ মানুষদের মতো ছিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার এই শারীরিক গঠন আরও বেশি খারাপ হতে থাকে। দাঁত একটাও অবশিষ্ট ছিল না। শরীর থেকে প্রতিনিয়ত সাদা সাদা খরি ওঠে। কেউ তার পাশে ভিড়তে চায় না। তবে সহজ সরল কমলকে তার এই অবস্থার জন্য কখনো বিষণ্ণ হতে দেখা যায়নি। কিন্তু ছোট বনের জামাতা সুদীপের দুরভিসন্ধির জালে আটকা পড়ে কমল। চতুর সুদীপের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল দূর গহীন গ্রামের চপলার। চপলা যখন ১ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন সুদীপ চপলার বিধবা মাকে টাকা দিয়ে হাত করে নেয় এবং চপলাকে বিয়ে দেয় কমলের সাথে। সে বিয়ে বেশিদিন টিকেনি। এক মেয়ে শিশুর জন্ম দিয়ে চপলা পালিয়ে যায় অসুস্থ্য স্বামীর বাড়ি ছেড়ে। কিন্তু সুদীপ তার নিত্য নতুন কামনার সঙ্গিনীর সংখ্যা বাড়াতেই থাকে। একটা আইনসম্মত সম্পর্কের ভিত্তির জন্য সুদীপ কমলকে আবারো বিয়ে দেয়। এবারের কন্যা মালা। বয়স মাত্র ১৫ বছর। গ্রাম্য মেয়ের স্বামীর ঘর করবার দূর্বার ইচ্ছে পূরণ হয়েছিলো। সুদীপ মালাকে নিয়মিত দেখতে যেত তার শহরের আভিজাত্য, স্ত্রী আর ১৬ বছরের ছেলেকে ফেলে রেখে। এই নিয়মিত সহাবস্থানের কারণ হেতু মালা উদ্বিগ্ন ছিল। ছোটো কিশোরী একসময় টের পায় তার ভেতরে নতুন একজনের উপস্থিতি। সে সুদীপকে চিঠি লেখে। লোক মুখে খবর দেয়, সুদীপ যেন একবারের জন্য হলেও তার শ্বশুর বাড়িতে মালাকে দেখতে আসে। দিন যায়। মালার শরীর ভারি হতে থাকে। কমল বুঝতে পারে না কেন তার চঞ্চলা স্ত্রী এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সেদিন পূর্ণিমার রাতে মালা ঘর বন্ধ করে হাতে গরু বাঁধার দড়ি নিয়ে। নিশুতি রাতে কাক পক্ষীও ঘুমিয়ে। মালা গলায় দড়ি দেয়।
পরদিন সকালে দুর্বল দরজা ভেঙ্গে মালার লাশ বের করতে ঝামেলা হয়নি। ছোট শরীর ঝুলে ছিল ঘরের সেলিঙ্গের বাঁশের সাথে বাঁধা দড়িতে। মালার মৃত্যু কাউকেই ভাবায়নি। সুদীপ এসেছিল। মালার বের হওয়া জিভের উপর ভনভন করতে থাকা মাছির আনাগোনা দেখে উগলে বমি করে দেয় সুদীপ। টাকা দিয়ে পুলিশকে হাত করে। নির্ঝঞ্ঝাট শব দাহের পর বাড়ির সবাই মালাকে দেখতে লাগলো। কখনো গোয়াল ঘরে, কখনো মালার ঘরে ফাঁস দিয়ে ঝুলে থাকা হাস্যরত মালার উপস্থিতি আর গভীর রাতে বাড়ির পুকুর ঘাঁটে অবিরাম সুদীপ সুদীপ স্বরে কান্না বাড়ির কারোর অজ্ঞাত রইলো না।


৩.
সুদীপ তার জমে যাওয়া শরীরে একটা শীতল হাতের স্পর্শে চমকে ওঠে। তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। শুধু অস্পষ্ট একটা গোঙ্গানির আওয়াজ। শিউলি স্বামীর গোঙ্গানি শুনে উঠে আসে। জড়িয়ে ধরে সুদীপকে। হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।


৪.
রাত তখন তিনটা। সুদীপ শুনতে পায় মালা কাঁদছে আর সুর করে সুদীপ সুদীপ বলে তাকে ডাকছে। সুদীপ উঠে দাঁড়ায়। মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে যায় ভেসে আসা শব্দের উৎসের দিকে। দরজা খুলে রাস্তায় বের হয়। উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটতে থাকে। সুদীপ বাড়ির পেছনের ডোবার কাছাকাছি পৌঁছে দেখে মালা ডোবার জলে দাঁড়িয়ে মিট মিট করে হাসছে। অপূর্ব সাজে মালাকে কোন অপ্সরীর মতো মনে হয় সুদীপের। কামনার মোহে সুদীপ এগিয়ে যায় ডোবার জলে। একটু একটু করে নামতে থাকে ডোবায়। মালার মায়াময় হাসিতে গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয় সুদীপ। রাতের গভীরতা শেষে মালার অট্টহাসি ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে ডোবার জলে যেখানে কিছুকাল আগে সুদীপ সব ভুলে কামনার জলে খেলবে বলে এগিয়ে এসেছিল।



৭৩টি মন্তব্য ৭৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×