somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প 'দিনকাল'

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোদের ঝলকানি অগ্রাহ্য করে রিক্সায় উঠলো মহিন। প্লাস্টিকের কারুকাজ করা রিক্সা। হুড তোলা রিক্সায় বসে মনে হলো কেউ তাকে দেখছে না। না দেখারই কথা; রঙ বেরঙের প্লাস্টিকের পর্দা ঝুলানো চোখ পর্যন্ত। চোখ আটকে গেছে ক্ষুদ্র জগতে। খুব পরিচিত যেন রংগুলো। স্কুলের দফতরি ডেকে বললো, মহিন তোমার বড় ভাই তোমাকে ডাকছে। স্কুলের আপার কাছে অনুমতি নিয়ে মহিন ৫ম শ্রেণী পড়ুয়া বড় ভাই মিহিরের ক্লাসে গিয়ে দেখলো তার বড় ভাই ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দু হাত দিয়ে হাফ প্যান্টটা টেনে ধরে রেখেছে। মিহিরের ক্লাস টিচার মিহিরকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বললেন। পথে দু ভাই এর কথা হচ্ছে –

মহিন - ভাইয়া, আমার বাথরুম পেলে আমি ক্লাসের আপাকে বলে বাথরুমে যাই। তুমিও আপাকে বললা না কেন?

মিহির - বলতে ইচ্ছে করেনি। মহিন শোন, বাড়িতে কাউকে কিন্তু বলবি না। ঠিক আছে?

মহিন – ঠিক আছে।

মিহির – ছাগলের বাচ্চাটাকে দেখেছিস? কি সুন্দর। চল একে বাড়িতে নিয়ে যাই।

মহিন – চলো ভাইয়া। কেউ নাই এখন। কোলে তুলে নেই একে।

রিক্সায়ালা - মামা কই নামবেন?

মহিন - কোথায়? অহ, আর একটু সামনে যান।

ইসমাইল ভাই তো এমন করেনি আগে। দুদিন আগেও রাজি ছিলো পেমেন্ট ছাড়া ডেলিভারি দিতে অথচ আজকে একদম চেঞ্জ হয়ে গেলো। আমার প্রোডাক্ট প্রয়োজন আগামীকাল, টাকা হাতে নেই। এখন কিভাবে এতো টাজা ম্যানেজ করবো আমি?

মহিন - ভাইয়া, আমার বাথরুম পেলে আমি ক্লাসের আপাকে বলে বাথরুমে যাই। তুমিও আপাকে বললা না কেন? আপাকে বললা না কেন? আপাকে তো বলেনি। আমি বলেছিলাম। আমি বুঝে নিয়েছিলাম, বলতে হয়। ভাইয়া বুঝলো না কেন?

আজকের রোদ ভীষণ কড়া কিন্তু ভাল লাগছে খুব। ঐ যে লাল কৃষ্ণচুড়া গাছটা; কী অদ্ভুত সুন্দর লাল হয়ে আছে। এতো টাকা কোথায় পাবো এখন? জানি না। সিলেট শহরে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার পথে এমন কিছু কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ ছিল। এখনো আছে। লাল লাল টকটকে ফুল রোদের তেজে আরো বেশি লাল দেখায়। ফুলগুলো হাত দিয়ে ধরতে ইচ্ছে হতো। কখনো হাতে নেবার সুযোগ হয়নি। অথচ মানুষ? কী সহজেই ধরা যায়। হাসান, তৌকির, আজাদ, মিস্টু কিছুই জানে না। আমিও জানতে দেইনি ওদের। ওরাও কি মানুষ ধরা শিখে ফেলেছে? খুব অপরাধের কাজ যেন। খুব নিষিদ্ধ, কেউ জানলে কারো সামনে উঁচু গলায় কথা বলা যাবে না। সারাজীবন গায়ে একটা অবজ্ঞার বাঁকা হাসির পরশ লেগে থাকবে। কেউ কাউকে বলছি না আমরা। মিস্টুর কলিগকে নিয়ে তাহির কিছু বলেছিল। কথাটা সত্যি বা মিথ্যা হোক, শুনে একটু ভাল লেগেছিল। এখন তো খারাপ লাগার সময় না। আমি তো জেনেছি অনেক আগেই খারাপ লাগতে নেই। অথচ আজাদকে বলেছিলাম, ছি ছি মিস্টু এমন করতে পারলো? আমাদের ব্যাচে সে-ই তো সবচেয়ে ভাল মেয়ে ছিল। ভাল মানে যার বিরুদ্ধে কোন কু-কথা শুনা যায়নি। এখন শোনা যায়, তাতেই কি সে খারাপ হয়ে গেল? তার শরীরে কি অবজ্ঞার বাঁকা হাসির পরশ লেগে গেল? সে কি এখন ঘরে বাইরে সবার কাছে ভিন্নভাবে পরিচিত হবে? একজন মানুষের পরিচয়ের বাইরেও তার একটা ভিন্ন পরিচয় থাকবে। সবাই মিস্টুকে ভিন্ন পরিচয়ে চিনতে পছন্দ করবে। কথায় কথায় জানতে চাইবে তার ব্যক্তি জীবনের কথা। মহিন একটু ঘাবড়ে গেল বোধ হয়। এতোটা ভাবনা যদিও তার ভাবা ঠিক নয়, সে ছেড়ে দিয়েছে ভাবনার জীবন। জেনে যাওয়া বিষয় শুধু নিজেই জানা থাকা নিরাপদ। অন্যকে জানানোর মানে অতিরিক্ত ঝামেলা বাড়ানো। এভাবে খারাপ কি আছি! শুধু ভেতরটা না হয় মরে গেল। পচে গিয়ে সেখানে আর কিছু রইলো না। থাকার ভেতর তো শুধু একটা নরম হৃদয়, চোখ ভর্তি কান্না, রাজ্যের অভিমান; এগুলোই ছিল। এখন আর নেই। কারো প্রতি একটু টান, বুকের ভেতর ষোল শিকে আটকে থাকা প্রাণ, এমন কোন বিষয় নেই আর। পরিচয় ছিল তাদের সাথেও, খুব আপনজন ছিল; এখন নেই। সব আপনজন কখনো সারাজীবন জীবন জুড়ে থাকে না। নতুন মানুষ জন্ম নেয়, বড় হয়, তার নিজের মত চলতে শেখে, জানতে জানতে অভিজ্ঞ বন্ধু হয়ে যায়। শোক এক সময় হারিয়ে যায়। শুধু মাঝে মাঝে কাঠফাটা রোদে কোথা থেকে কে যেন মনে করিয়ে দেয়, তোমার অস্তিত্তের কথা। শান্ত স্নিগ্ধ সন্ধ্যা, পুতুল খেলার বয়সে চোখ মুখে ছোট্ট পৃথিবী জানার আগ্রহ। ছোট্ট পৃথিবীর ভাল লাগা নিয়ে দিন পেরুনো। হুট করে মনে ভেসে ওঠে আম খাওয়ার ভীষণ দুপুরের কথা। দুপুরের অলস ঘুমে সবাই ঘুমিয়ে আছে আর ছোট্ট ছেলেটি আকাশ দেখছে আর আম খাচ্ছে। ছোট্ট হাতের কবজি বেয়ে তার আমের রস বেয়ে বেয়ে পড়ছে। আকাশে অসংখ্য ঘুড়ি। লাল-নীল-সবুজ-সাদা, কোনটা দুই রঙের, কোনটা চার রঙের। কোনটার বিরাট বড় লেজ, কোনটা লেজ ছাড়াই। ঘুড়ি চিনে ফেলার বয়সটা থেকে যেত যদি! আমি না হয় ঘুড়ি চিনলাম না, আমি না হয় ৭ দিনে সপ্তাহ হবার হিসেব বুঝলাম না। এমন দিনে যদি কেটে যেত জীবনটা তবে আজ বারবার মনের ভেতর ছোট ছোট অসহ্য শৈশব এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ত না।

ভাবনার ঘুড়িটা কেটে গেল। রিক্সা থেকে নেমে অফিসে গেল মহিন। ইসমাইল হোসেনের টাকার বিষয়ে খোঁজ পাওয়া গেল। কোম্পানির যেহেতু প্রোডাক্ট প্রয়োজন আগামীকাল আর দ্বিতীয় কোন ভেন্ডর স্বল্প সময়ে ম্যানেজ করা সম্ভব না, তাই অফিস পুরো টাকাই পে করবে তবে ইসমাইল হোসেনকে তার স্বেচ্ছাচারিতার জন্য কোন এক সময় পস্তাতে হবে। বেশ ভাল সমাধান, ইসমাইলের পস্তানোর সময় পর্যন্ত মহিন যদি অফিসে সার্ভাইভ করতে পারে তাহলে খুব একটা আনন্দের দিন হবে সেদিন। অফিস রুমে বসতে না বসতেই ফোন, ইসিমাইল হোসেন মোটর বাইক এক্সিডেন্ট করেছে। খুব সিরিয়াস অবস্থা।

ফোনটা রেখে মহিন ব্যস্ত হয়ে পড়লো তার দৈনন্দিন কাজে। এমন ঘটনা অঘটনা প্রতিদিনই ঘটে যাচ্ছে। কান দেয়ার সময় কোথায়? তারচেয়ে হাতের কাজ শেষ করি, এরপর দেখা যাক পরবর্তীতে কি ঘটে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×