somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ষ্টেট অফ কুয়েতে দুইদিন

০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ষ্টেট অফ কুয়েত দুইদিন
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:২২
শেয়ার করুন:

আমি এখন কুয়েত, ভ্রমণ নয় ব্যবসাও ব্যক্তিগত কাজে আমাকে আসতে হয়েছে। যদিও কুয়েত আসা সহজ না সবার জন্য এবং বিশেষ করে কেই যদি এশিয়ান বা আফ্রিকা কোন দেশ থেকে আসেন তা হলে তো বিড়ম্বনার শেষ নেই। বর্তমান সময়ে বিশ্বে যে কয়টি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ রয়েছে তারমধ্যে এক নম্বর আসনে রয়েছে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের সোনার বাংলাদেশ। গত ২৮শে অক্টোবরের আগে এই শীর্ষে ছিল ইরাক, নাইজেরিয়া এবং এমানুসারে বাংলাদেশ ছিল পঞ্চম স্থানে। পরম করুণাময়ের অশেষ মেহেরবানীতে ২৮শে অক্টোবরের পর থেকেই সেই শীর্ষ অবস্থান দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ।এরপরও যারা আসে তাদের ভোগান্তি কম হয় না। বাংলাদেশী পাসবোর্ড থাকার দরুন আমাকেও এই ভোগান্তির শিকার হতে হলো। প্রথমেই বলেছি ভ্রমণে নয় কাজে এসেছি চব্বিশ ঘন্টা সময়ে কতটুকুই বা দেখা যায় জানা যায়। আমাকে যে ব্যবসার কাজে আসা হয়েছে তা পুন পুন স্বরণ করিয়ে দিলেন অগ্রজ জনাব আখতার মোহাম্মদ সেলিম রহমান, এমডি রয়েল বেঙ্গল এয়ারলাইন্স। যা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশী প্রবাসীদের বিনোয়োগ দ্বারা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে এবং ফরহাদ হোসাইন যিনি এ্যারোনিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং রয়েল বেঙ্গল এয়ারলাইন্সের একজন প্রতিষ্ঠাতা ও অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক। আমার বিলম্ব হচ্ছে দেখে উনাদের বিদায় দিলাম এয়ারপোর্ট থেকে। উনারা চলে গেলেন হোটেলের দিকে আর আমাকে এয়াপোর্ট বসে অপেক্ষা করতে হলো। আহ! অপেক্ষা কি যে কষ্টের তা একমাত্র ভোক্তভোগীরাই বলতে পারবেন। আরবীতে অপেক্ষার ব্যাপারে একটি প্রবাদ আছে তা হলো- সহীহ্ হাদীসেরও অংশ বিশেষ এবং তা ব্যপক প্রচলিত-'আল ইনতেজারো আশাদ্দু মিনাল মাউত' যা বাংলায় অর্থ হলো-অপেক্ষঅর চাইতে মুত্যু ভালো। অনেকক্ষণ বসার পর এদিক সেদিক ঘুরছিলাম তখনি একজন কাছে বললো দেশী কই যাইবেন? উনার পরনের ইউনিফর্ম দেখে বুঝলাম উনি কে বা কি করেন এখানে। উনার জবাবে বললাম আসলাম তো ভাই এখন যাবতো কাল। এই করে আলাপ জমে উঠলো এক এক করে কয়েকজস বাঙালী ভাই এসে হাজির হলেন। আমার অপেক্ষার যন্ত্রণাটাও আস্তে আস্তে প্রশমিত হতে লাগলো। ঘন্টা কয়েকের আলাপে মোটামোটি গোটা কুয়েতের চিত্র জানতে পেলাম। বাংলাদেশে যেমন শোনা কথা আমলে পরিণত হয়, যেমন কেউ একজন বললো- এই শুনছো আগামী পরশুদিন থেকে হরতাল, ব্যাস আর যায় কই? সেইদিন হরতাল পালিত হয়, মধ্যপ্রাচ্যে সেই শোনা কথাই আইন। গোটা মধ্যপ্রাচ্যের অর্ধেকের বেশি দেশ ভ্রমণ করে আমার যা অভিঞ্জতা অর্জন হয়েছে এবং বাস্তবতা দেখার সোভাগ্য হয়েছে তা থেকে বলতে পারি আমাদের সমাজ বা বাংলাদেশী সমাজ প্রায় শোনা কথায় কান দেওয়া একটি গর্হিত কাজ। এবং মুসলমান হিসেবে তা মোটেই ঈমানী আওতায় পড়ে না। এমনিতেই গীবত, বা ছোগলখুরী করা বা না জেনে বলা পাপ।এরমধ্যে কেউ শুনে যদি কারো কাছ থেকে শুনে আবার অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দেয় সত্য মিথ্যা যাচাই না করে তা হলে সেটা হবে মহাপাপ। প্রত্যেক দায়িত্ববানদের উচিত হবে এই সব পাপ থেকে বিরত থাকা।
এয়ারপোর্টে বাঙালী ভাইদের সাথে আলাপ থেকে আড্ডা যখন অপ্যায়নে পরিণত হল তখনি আমার মূল অপেক্ষার পালা সমাপ্তি হলো। সামান্য সময়ের আলাপ অপ্যায়নের মাধ্যেমে কাছে আসা বাঙালী প্রবাসী ভাইদের থেবে বিদায় নিয়ে হোটেলে দৌড়ালাম। কুয়েতের বিখ্যাত হোটেল সাফিরে এসে রুমে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় কয়েকটি ফোন করেই ঘুমের জগতে ডুব দিলাম। ঠিক ফজরের আজানের সাথে সাথেই জাগিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম সাফির হোটেলের সুদর্শনী ফিলিপিনো রিসিপসনিস্ট মহিলাকে। কিন্তু জাগালেন খুবই ভদ্র ও কথায় দক্ষ ভালো কন্ঠের একজন পুরুষ। উনাকে আগে দেখিনি তবে বুঝলাম উনি ইন্ডিয়ানই হবেন। সালাতুল ফজর আদায় করে নাস্তার টেবিলে গেলাম সেখানেও দেখি সবাই বাংলাদেশী। আমার জন্য তো মজা। যেখানে যাচ্ছি সেখানেই পাচ্ছি স্বদেশী প্রবাসী। খুব ভোরে গরম চা পান করা আর তার উপর পাউরুটি বা টোষ্ট বিস্কুট এর স্বাদই আলাদা। যাই হোক প্রিয় সেলিম
ভাই এবয় ফরহাদ ভাই গেলেন একদিকে এবং আমিও আমার সাথী ক্যাপ্টেন ইয়াচ্ছার অন্যদিকে। নির্ধারিত কাজ শেষ করে হোটেলে ফিরলাম যখন তখনি ফিরে আসার তাগদা মনের মধ্যে এলো।না আসার মতো কিছুই নেই। কারণ ভিসা মাত্র চব্বিশ ঘন্টার, বাংলাদেশী পাসবোর্ড বিধায় শর্তযুক্ত। সময় কম কাজ বেশি। এরপরও সাহস করে ড্রাইভারকে বললাম সিটিটা ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য। সিটিটা ঘুরে দেখে না গেলে কি হয়! ভ্রমণপ্রিয় মানুষ আমি কাজে এসেছি বলে কি পিপাসা মিঠবে না। এতদ্রুত দেখেছি এরপরও মনে হয় কিছুই দেখা হয়নি। অবশ্য বিশাল বিশাল বিল্ডিং ও লম্বাটে মেুভূমি ছাড়া দেখার মত তেমন কিছুই নেই কুয়েতে।যত বাহাদুরী কুয়েতীদের তা হচ্ছে মহান রাব্বুল আ'লামীনের প্রদত্ত্ব বিশাল খনিজ সম্পদ। এরমধ্যে জ্বালানী তেল অন্যতম, তাও বর্তমানে আমেরিকান প্রহরাধীন। কুয়েতের পুরো নাম হলো-দাউলাত আল কুইয়্যাত, যার রাজধানী হলো কুয়েত। আরেকটি প্রধান শহর আস সাল ম্যিয়াহ। গোটা দেশের জনসংখ্যা হলো প্রায় ১২ লক্ষের মতো। কুয়েতীদের চেয়ে বিদেশীই বেশি, সবাই কর্মজীবি। আনুপাতিক হারে দেখলে কুয়েতী হবে শতকরা ৪৭ ভাগ অন্যান্য আরব দেশের হবে শতকরা ৩০ ভাগ, ইরানী ৫ ভাগ, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী, বাংলাদেশীসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের লোক প্রায় ২৭ভাগ। আয়তনে ছোট, তবে সারা পৃথিবীতে কুয়েতের দীনারের মূল্যে অনেক বেশি। কুয়েতের এক দিনারে প্রায় চার ডলার পাওয়া যায়। কুয়েত আরবের অন্যান্য দেশ থেকে বেশি রক্ষণশীল ও কঠোর। কুয়েতের আমীর জনাব আব্দুল আল সাবাহ্ মারা যাবার পরে যিনি আমীর হয়েছেন তাহার নাম হলো- সাবা আল আহমদ আল সাবাহ, এবং প্রধান মন্ত্রী হলেন শেখ নাসের।তবে বর্তমানের আমির বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন দেশে, দুবাইতে যেমন সমদ্র চুরি করে সমুদ্রের বুকে প্রসাদসম অট্টালিকা তৈরী করা হচ্ছে, তেমনি কুয়েতেও সেই পথ ধরা হয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোয়া দেখতে পেলাম। এতেদিন কুয়েতে অফুরন্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এগুতে পারেনি। কুয়েতীরা ঝাঁকে ঝাঁকে দুবাইতে চলে যায় দৈনন্দিন বাজারের জন্য। মাত্র ৪৫ মিনিটের ফ্লাইট। তবে বর্তমানে কুয়েতীরা দুবাইর সাথে তাল মিলিয়ে তাদের দেশেও পরিবর্তন এনেছে। কুয়েতে বিদেশীরা এখনও কম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে অন্যান্য দেশের তুলনায়। এরমধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশীরা। বিভিন্ন দালালের খপ্পরে পড়ে টাকা খরচ করে চলে আসে এখানে। এখানে এসেই দুর্ভোগে পড়ে যায়। একজন ক্লিনার বললো মাস শেষে বেতন পায় কুয়েতী ৫০ দিনার। থাকা এবং খাওয়া অবশ্য ফ্রি। আইন কানুন খুবই কঠোর বিদেশীদের জন্য। এই কঠিনও কঠোরতার মধ্যে প্রবাস জীবন চালিয়ে যাচ্ছে, আর অবদান রাখছে কুয়েতকে আধুনিক ভাবে রুপান্তরিত করতে। ঘড়ির কাটা দ্রুতভাবে ঘুরছে। ড্রাইভার বললো সময় শেষ, আমারও ফ্লাইট ধরতে হবে তাই ছুটলাম এয়ারপোর্টের দিকে। কিন্তু মনে কষ্ট থেকে গেল, এই ভেবে যে ভেতরে ঢুকেও পুরোপুরি ভাবে দেখতে পেলাম না দেশটিকে।



লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ষ্টেট অফ কুয়েত দুইদিন ;


৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×