somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষক এবং শিক্ষাদান

২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে অনেকেরই ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। কিন্তু শিক্ষক সে কি জন্য হবে বা শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের কি দিবে এটা হয়ত অনেকেই ভাবে না। নলেজ জানলেই যে ভালো শিক্ষক হওয়া যায় এটি বেশির ভাগ সময়ই ঠিক না। নলেজ আহরন আর নলেজের ট্রান্সমিশন এক জিনিস না। অনেকে হয়ত অনেক নলেজ আহরন করতে পারে কিন্তু ছাত্রদের মাঝে সেটার ট্রান্সমিশের সঠিক ধারনা না থাকায় শিক্ষাদান অনেক সময় হয়ে উঠে বিরক্তির কারন। আবার শিক্ষাদানের চেয়ে টাকা পয়সা অর্জন বা সমাজে সন্মান অর্জনে বেশি নজর থাকায় শিক্ষাদানকে এফেকটিভ করতে কোন চেষ্টাই করা হয় না। এমন হওয়ার কারন হলো সমাজের প্রতি আমাদের দর্শন আমাদের দৃষ্টিভংগি। আমরা যদি সব পেশাকেই সন্মান করতে পারতাম তাহলে যে যে পেশাকে ভালোবাসে সে সে পেশাকে বেছে নিতে পারত। ফলে সবাই সবার সামর্থ্যর সবটুকু দিয়ে সমাজের সব ক্ষেত্রে সঠিক এবং যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারতো।

আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র তখন আমাদের এক স্যার ক্লাশে ঢুকেই বলত এই সাবজেক্ট পরে কি করবা, অথচ উনার উচিত ছিলো ছাত্রদের কে তৈরী করে দেয়া, লড়াই করার মানসিকতা তৈরী করে দেয়া , একজন ছাত্র যাতে তার মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করা চেষ্টা করা। অথচ এমনটি হয়নি কারন উনি যে শিক্ষক হয়েছেন এটি হয়ত ও নিজেও এনজয় করতে পারেন না, সমাজের অন্যান্য পেশাতে সন্মান না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পেশাকে বেচে নিয়ে নিজের সন্মান বাচিয়ে রেখে অনেক ছাত্রের জীবনের স্বপ্নকেই হয়ত চুরমার করে দিচ্ছেন সেদিকে হয়ত ভ্রুক্ষেপ করারও অবকাশ নেই।

বিদেশে ছাত্র শিক্ষকের ইভাল্যুয়েশন করে, প্রতিটি কোর্সে শিক্ষকদের শিক্ষাদানের ইভাল্যুয়েশন ফর্ম থাকে যেটি ছাত্রদের দিয়ে পুরন করিয়ে নিয়ে নিজের শিক্ষাদানের লেভেল যাচাইয়ের একটি ক্ষেত্র রাখা হয় যাতে করে শিক্ষাদানকে আরো ভালো করা যায় এবং যাতে করে ছাত্ররা শিক্ষাকে আনন্দের সাথে গ্রহন করতে পারে। আমাদের দেশে এসবের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষাদান কিছুটা বা অনেক সময় ছাত্রদের জন্য এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের স্বরূপ হিসেবে দেখা যায়। শিক্ষকদের মাঝে এসবের চর্চা তৈরী করে শিক্ষাদানকে আরো আধুনিক এবং ছাত্রদের জন্য উপভোগ্য হিসেবে তৈরী করা যেতে পারে।

আবার বিদেশে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যেমনঃ ক্যাথিড্রাল লেকচার, প্রব্লেম বেইস লার্নিং। শিক্ষাকে আনন্দময় করতে নানা রকম পদ্ধতি প্রয়োগ করে ছাত্রের একই ধরনের লেকচারের প্রতি অরুচী দুর করা হয়। প্রতিটি কোর্সকে ক্যাথিড্রাল লেকচার, ছাত্রদের সেমিনার, গ্রুপ ল্যাবে ভাগ করে উপভোগ্য করে তোলা হয় তেমনি শিক্ষরাও নানাভাবে ছাত্রদের মেধার স্বাভাবিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। ছাত্রদের উতসাহদান একটি অন্যতম বিষয়। আমাদের দেশে ছাত্র শিক্ষকদের চেয়ে বেশি জানা পাপ। যদি এমন কোন প্রশ্ন করে যেটা শিক্ষকের জানা নেই তাহলে শিক্ষক প্রায়ই ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয় পাছে না তার দূর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে সহপাঠীর মত আচরন বিরাজ করে ফলে সহজ পরিবেশে ছাত্ররা যেমন নিজেদের জানার আগ্রহ সহজেই প্রকাশ করতে পারে তেমনি শিক্ষকও ছাত্রদের বিষয়ে জেনে সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে।

প্রি-স্কুল বা প্রাইমারী স্কুল গুলোতে বিভিন্ন জিনিস শিক্ষাদানের পাশাপাশি ছাত্রদেরকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করা হয়। যাতে করে তাদের মধ্যে মনের বিকাশ হয় স্বাভাবিকভাবে। আমারা যেমন বইয়ে পড়ি রাস্তা পার হতে জেব্রা ক্রোসিংয়ের মাধ্যমে পার হতে হয় সেখানে উন্নত বিশ্বে ছোট ছোট বাচ্ছা গুলোকে দলবেধে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে শেখানো হয় কিভাবে রাস্তা পার হতে হবে, কিভাবে সিগন্যাল বুঝে দাড়াতে হবে। এখানে ছোট ছোট বাচ্ছা গুলোকে সব কিছুই হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে ছোট বেলা থেকে তাদের মধ্যে আত্নসন্মানবোধ তৈরী করে দেয়া হয়। আমাদের দেশের মায়েরা যেসব বাচ্চার টয়লেট করার পর পরিষ্কার করে দনে ঐরকম বাচ্চারা এখানে নিজের কাজ নিজেই করা শেখে কারন স্কুলেই ওদের সব শিক্ষা দেয়া হয় হাতে কলমে ফলে একটি সুস্থ্য এবং আত্ননির্ভরশীল শ্রেনী তৈরী হয় এভাবে একটি আন্তনির্ভরশীল জাতি তৈরী হয়। আমাদের দেশে বার বার রাস্তার সিগনাল বাতির পরিবর্তন করা হয় কিন্তু ছোট ছোটো বাচ্চাগুলোকে যদি শিক্ষাদান শুরু করে দেয়া হয় তাহলে একটি সময় পর সমাজে একটি সচেতন শ্রেনী তৈরী হবে যারা কিনা দেশটাকে পরিবর্তন করতে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারবে।

সমাজ ও দেশকে পরিবর্তন করতে চাইলে শিক্ষা ও শিক্ষাদানের পদ্ধতির পরিবর্তন আবশ্যক। কারন শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বাস্তব জ্ঞানের প্রসার না ঘঠাতে পারলে জাতির বাস্তব কোন পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়।

দেশের শিক্ষার পরিবর্তনের জন্য ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে থেকে জেলা পর্যায়ে সেরা শিক্ষক এবং ছাত্র নির্বাচন করে ছাত্র ও শিক্ষকদের গ্রুপ তৈরী করে সেসব ছাত্র-শিক্ষকদের দেশের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উন্নত বিশ্বে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে এতে করে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় ঘটবে ফলে সেই প্রতিনিধি দেশের বিদ্যমান সমাজের মধ্যে তার শেয়ারের মাধ্যমে কিছু শিখতে পারবে।

একদল ভালো শিক্ষক যেমন একদল ভালো ছাত্র তৈরীতে ভূমিকা রাখতে পারে তেমনি একদল ভালো ছাত্র একটি জাতি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। আর তাই শিক্ষকদের শিক্ষাদানের ব্যাপারে আরো বেশি যত্নশীল হওয়া যেমন প্রয়োজন তেমনি শিক্ষক সমাজকে সময়োপযোগী করে তোলার জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকাও আবশ্যক।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×